শিশুদের গ্রেফতার বা আটক রাখা বিষয়ক বিধান
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, The Code of Criminal Procedure, 1898 এর ৫৪ ও ৫৫ ধারা অনুযায়ী শিশুদের গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু শিশু আইন, ২০১৩ এর ৪৪(১) ধারার বিধানমতে ৯ বছর বয়সের নিম্নে কোন শিশুকে গ্রেফতার বা আটকরাখা যায় না এবং শিশু আইন, ২০১৩ এর ৪৪(২) ধারার বিধানমতে শিশুকে গ্রেফতার করার পর গ্রেফতারকারী পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতারের কারণ, স্থান, অভিযোগের বিষয়বস্তু ইত্যাদি সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তাকে অবহিত এবং প্রাথমিকভাবে তার বয়স নির্ধারণ করে নথিতে লিপিবদ্ধ করার নির্দেশনা রয়েছে। আবার যদি কোন সুনির্দিষ্ট অপরাধে কোন শিশুকে আটক করা হয় তবে থানার শিশু বিষয়ক ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্ত শিশুর পিতামাতা ও প্রবেশন অফিসারকে অবহিত এবং শিশুর বয়স নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করার নির্দেশনা রয়েছে।
এই আইনের ধারা ৪৮ এর বিধান সাপেক্ষে আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুকে গ্রেফতার বা আটকের পর হতে বিচার কার্যক্রমের যেকোন পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রমের পরিবর্তে শিশুর পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক, নৃতাত্ত্বিক, মনস্তাত্ত্বিক ও শিক্ষাগত পটভূমি বিবেচনাপূর্বক, বিরোধীয় বিষয় মীমাংসাসহ তার সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিতকল্পে বিকল্পপন্থা (diversion) গ্রহণ করার নির্দেশনা রয়েছে।
শিশু আইনের ধারা ৫২(১) এর বিধানমতে ফৌজদারি কার্যবিধিসহ বা আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইন বা এই আইনের অন্য কোন বিধানে ভিন্নরূপ যা কিছুই থাকুক না কেন, কোন শিশুকে গ্রেফতার করার পর এই আইনের অধীন মুক্তি প্রদান বা বিকল্প পন্থায় প্রেরণ করা অথবা তাৎক্ষণিকভাবে আদালতে হাজির করা সম্ভবপর না হলে শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা শিশুটিকে, ক্ষেত্রমত, তাঁর মাতা-পিতা এবং তাঁদের উভয়ের অবর্তমানে তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা, ক্ষেত্রমত, বর্ধিত পরিবারের সদস্য বা প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে শর্ত ও জামানত সাপেক্ষে, অথবা, শর্ত ও জামানত ব্যতীত জামিনে মুক্তি প্রদান করার বিধানও রয়েছে্যেছ
আইনের ধারা ৫২(২) ধারার বিধানমতে উপ-ধারা (১) এর অধীন কোন শিশুকে জামিনে মুক্তি প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অপরাধ জামিনযোগ্য বা জামিন অযোগ্য কি না তা শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা তা বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। তবে ৫২(৩) ধারার বিধানমতে অপরাধের প্রকৃতি গুরুতর বা ঘৃণ্য প্রকৃতির হলে বা জামিন প্রদান করা শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থের পরিপন্থী হলে বা জামিন প্রদান করা হলে সংশ্লিষ্ট শিশু কোন কুখ্যাত অপরাধীর সাহচর্য লাভ করতে পারে বা নৈতিক বিপদের সম্মুখীন হতে পারে বা জামিন প্রদান করা হলে ন্যায় বিচারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট শিশুকে জামিন বা মুক্তি নাও দিতে পারেন। এক্ষেত্রে গ্রেফতার বা আটকের পর ভ্রমণের সময় ব্যতীত ২৪ (চব্বিশ) ঘন্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট শিশুকে নিকটস্থ শিশু আদালতে হাজির করার বিধান রয়েছে।
উপরোল্লিখিত বিধানাসমূহ সত্ত্বেও যদি কোনো শিশুকে পুলিশ The Code of Criminal Procedure, 1898 এর ৫৪ ও ৫৫ ধারায় গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতকে শিশু আইন, ২০১৩ এর বিধান সাপেক্ষে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
(সূত্র: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এর হাইকোর্ট বিভাগের ২৯ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখের ১১ নম্বর সার্কুলার)
0 Comments