সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

মুসলিম আইনে হেবা (hiba in law)

What is a hiba in Islamic law?; What is an example of a hiba?; What are the heba rules?; হিবা এর উদাহরণ কি?; Difference between Hiba and gift; What is Hiba in Muslim law; Supreme Court judgement on oral hiba; What is Hiba in property; Hiba in Islam; Revocation of Hiba; hiba-bil-iwaz case law; hiba-bil-iwaz means;


প্রশ্ন: আমি একজন সরকারি চাকরিজীবী। ইসলাম ধর্মের অনুসারী। বয়স ৫৪ বছর। আমার তিনটি কন্যাসন্তান। ঢাকায় আমার একটি বাড়ি আছে; গ্রামেও কিছু জমিজমা আছে। সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি। ধর্মমতে আমি মারা যাওয়ার পর এই সম্পদের পূর্ণ মালিক যেহেতু মেয়েরা হবে না, তাই একটু চিন্তিত। মেয়েরাও চায় আমি থাকতে থাকতে কিছু একটা করি। একবার ভেবেছিলাম মেয়েদের নামে সব লিখে দেব; পরে ভাবলাম হেবা করব। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। একেকবার মনে হয়, হঠাৎ যদি আমার কিছু বিক্রি করার দরকার পড়ে আর মেয়েরা তখন যদি রাজি না হয়। সব ধরনের চিন্তা মাথায় এসে এখন দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। আমি এখন একটা সঠিক পরামর্শ চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক


উত্তর: যেহেতু আপনার কোনো ছেলে নেই, তাই আপনার অবর্তমানে উত্তরাধিকার হিসেবে আপনার ভাইয়ের ছেলেরা আপনার সম্পত্তির একটি অংশ পাবেন। সে ক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার সম্পত্তির সম্পূর্ণ বা কিছু অংশ স্ত্রী ও মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান, তাহলে তা হেবা দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে জীবিত অবস্থায় তাঁদের নামে হস্তান্তর করে দিতে হবে। দান করার সঙ্গে সঙ্গে ওই সম্পত্তি হস্তান্তরও করতে হবে।

দানকে মুসলিম আইনে হেবা বলা হয়ে থাকে। কারও কাছ থেকে প্রতিদান বা বিনিময় ছাড়া কোনো কিছু নিঃশর্তে প্রদান করাকে বলে দান। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ (টিপি অ্যাক্ট)-এর ১২২ ধারা অনুসারে সম্পত্তিদাতা কোনো ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করলে এবং গ্রহীতা বা গ্রহীতার পক্ষে কোনো ব্যক্তি ওই সম্পত্তি গ্রহণ করলে তাঁকে দান বলা হয়। দান বা হেবা বৈধ হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়-

• দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণা প্রদান।
• গ্রহীতার পক্ষ থেকে দান গ্রহণ বা স্বীকার করা।
• দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির দখল প্রদান।

হেবার ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে, মা-বাবা ও সন্তানের মধ্যে, ভাই-ভাই, বোন-বোন অথবা ভাই-বোন, দাদা-দাদি, নাতি-নাতনি ও নানা-নানির সম্পর্কের মধ্যে নামমাত্র ১০০ টাকা ফিতে রেজিষ্ট্রেশনের সুযোগ পাওয়া যাবে।

একবার সম্পত্তি দান বা হেবা করার পর আদালতের ডিক্রি ছাড়া বাতিল করা যাবে না। তবে দানপত্র সম্পাদন করলেও সম্পত্তি হস্তান্তর করা না হলে কিছু ক্ষেত্রে তা বাতিল হতে পারে।

হেবা শুধু মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। তবে দান যেকোনো ধর্মের লোকেরাই করতে পারেন। দানের ক্ষেত্রেও দাতা ও গ্রহীতার সম্পূর্ণ সম্মতি থাকতে হয়। প্রতিটি হেবা দান দলিলের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। ২০০৫ সালের আগস্ট মাস থেকে হেবা করা সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক। জীবিত অবস্থায় যদি মেয়েদের ও স্ত্রীর নামে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে চান, তাহলে তা হেবা দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রির মাধ্যমে করতে পারেন। অন্য উত্তরাধিকারীরা এ বিষয়ে কোনো আপত্তি করতে পারবেন না।

আপনি জানিয়েছেন, যদি সব সম্পত্তি দানের পর আপনার কোনো টাকার প্রয়োজন হয় এবং মেয়েরা সেই সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি না হন, তখন কী হবে? এ কারণে সব সম্পত্তি দান করা নিয়ে দ্বিধায় আছেন। সে ক্ষেত্রে আপনি সম্পত্তির কিছু অংশ আগেই বিক্রি করে টাকা ব্যাংকে রেখে মেয়েদের নমিনি করে রাখতে পারেন। তা ছাড়া সব সম্পত্তি হস্তান্তর করে মেয়েদের থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়েও রাখতে পারেন।

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি এমন একটি দলিল, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তাঁর পক্ষে ওই দলিলে বর্ণিত বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে আরেকজন ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা অর্পণ করেন। আমমোক্তারনামা বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে দলিলে সম্পত্তি বিক্রির ক্ষমতা দেওয়া থাকলে চাইলে আপনি সম্পত্তি বিক্রিও করতে পারবেন। তবে তা মেয়েদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে হওয়াই ভালো এবং আগে থেকে বিষয়টি তাঁদের জানিয়ে রাখবেন। যেহেতু পাওয়ার অব অ্যাটর্নি একটি আইনগত দলিল, কাজেই এটি অবশ্যই লিখিত হতে হবে। সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

আশা করি, নিজেই এবার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।


পরামর্শ দিয়েছেন-
বিজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোট

উৎস: প্রথম আলো।

Post a Comment

0 Comments