সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

নাবালক সন্তানের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত (Guardianship and custody of minor in Bangladesh)


সন্তানের অভিভাবকত্ব আইন ২০২৩; অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন ১৮৯০ pdf; সন্তানের অভিভাবকত্ব আইন ২০২৩ pdf; সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি; তালাকের পর সন্তান কার কাছে থাকবে সন্তানের অভিভাবকত্ব আইন; হিন্দু আইনে অভিভাবকত্ব; মুসলিম পারিবারিক আইনে নাবালকের অভিভাবক; Who is the legal guardian of a child in Bangladesh?; What is the child custody law in Bangladesh?; What is the Guardian and Wards Act 1890 in Bangladesh?; বাংলাদেশে শিশুর আইনগত অভিভাবক কে?; নাবালকের অভিভাবক ও সম্পত্তি রক্ষক; Guardianship law in Bangladesh; Guardianship under Muslim law in Bangladesh; Guardianship certificate Bangladesh; Custody of child in Muslim law; Child custody after divorce in Bangladesh; Who is the legal guardian of a child after divorce; guardian and wards act, 1890 pdf; Minor Act in Bangladesh;

নাবালক সন্তানের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত (Guardianship and custody of minor in Bangladesh)


বাংলাদেশে সন্তানের অভিভাবকত্ব (Guardianship) এবং হেফাজত (Custody) সম্পর্কিত আইন মূলত মুসলিম পারিবারিক আইন, হিন্দু পারিবারিক আইন, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ এবং খ্রিস্টান পারিবারিক আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। এর পাশাপাশি, অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন ১৮৯০ (Guardians and Wards Act, 1890) এই বিষয়ে একটি সাধারণ আইন হিসেবে কার্যকর। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. অভিভাবকত্ব (Guardianship)

অভিভাবকত্ব বলতে আইনের ভাষায় বোঝায়—নাবালক, নির্বোধ ও উন্মাদ— যারা নিজের দেখাশোনা নিজে করতে অক্ষম, তাদের তত্ত্বাবধানের আইনগত ক্ষমতা বা অধিকার।  এতে তাদের বিশেষ করে সন্তান সম্পর্কে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার (যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সম্পত্তি) অন্তর্ভুক্ত। মুসলিম আইনে নাবালকের অভিভাবকত্বকে উইলায়াত-ই নফস(Wilayat-e nafs) বলা হয়.

The Guardians and Wards Act, 1890 এর ধারা ৪(২) অনুযায়ী,  অভিভাবক হলো এমন ব্যক্তিকে বোঝায় যার উপর কোন নাবালকের শরীর, সম্পত্তি বা শরীর ও সম্পত্তি উভয়ের তত্বাবধানের ভার রয়েছে। এ আইনের ধারা ২৪ অনুযায়ী প্রতিপাল্যের শরীরের অভিভাবকের উপর অভিরক্ষা ন্যস্ত থাকবে। অর্থাৎ অভিভাবক একই সাথে অভিভাবকত্ব এবং তত্বাবধান বা নাবালকের ও নাবালকের সম্পত্তির দেখাশুনা করবেন।

মুসলিম আইন অনুযায়ী নাবালকের অভিভাবকত্ব (Guardianship)

  1. পিতা নাবালক সন্তানের প্রাথমিক ও স্বাভাবিক অভিভাবক অভিভাবক। সম্পত্তিসহ নাবালকের সবকিছুর ওপর পিতার নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং তিনি এগুলোর প্রকৃত অভিভাবক। তবে যদি পিতা মৃত্যুবরণ করেন বা যোগ্য না থাকেন, তাহলে দাদা অভিভাবক হতে পারেন।


  1. মা সাধারণত সন্তানের অভিভাবক নন, তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে আদালত মাকে অভিভাবক হিসাবে নিয়োগ করতে পারে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে উচ্চ আদালত এক রায়ে মাকেও অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর তথ্য সংক্রান্ত ফরম পূরণের ক্ষেত্রে বাবা, মা এবং আইনগত অভিভাবক যে কোনো একজনের নাম ব্যবহার করলেই চলবে।

নাবালকের বিষয় সম্পত্তির অভিভাবক ক্রমানুসারে হবেন—

 ১। পিতা

 ২। পিতা কর্তৃক উইল দ্বারা নিযুক্ত ব্যক্তি; 

৩। পিতার পিতা (দাদা, পিতামহ);এবং তা না হলে সর্বশেষ

৪। পিতামহ কর্তৃক উইল দ্বারা নিযুক্ত ব্যক্তি।


এ চার শ্রেণীর ব্যক্তিকে নাবালকের আইনগত অভিভাবক বলা যাবে। আপনজনের অধিকার বলে অন্য কোনো নিকট আত্মীয় নাবালকের সম্পত্তির অভিভাবক হতে পারবে না। এমনকি নাবালক সন্তানের মা, আপন ভাই, বা আপন চাচাও না।


এক্ষেত্রে প্রশ্ন থাকে যে, তাহলে  নাবালক(Minor) কারা?


দেখুন Majority Act,1875(সাবালকত্ব আইন) আইনের ধারা ৩-এ বলা আছে যে ১৮ বছর পূর্ণ হলে নাবালকত্বের অবসান ঘটে। অর্থাৎ ১৮ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিকে নাবালক বলা হয়। 


আবার ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুসারে ১৬ বছরের কম বয়সের সব ব্যক্তি নাবালক। 


২০১৭ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ২(১) ধারাতে ২১ (একুশ) বৎসর পূর্ণ করেননি এমন কোন পুরুষ এবং ১৮ (আঠারো) বৎসর পূর্ণ করেননি এমন কোনো নারীকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক (নাবালক) বলা হয়েছে। 


শিশু আইন-২০১৩ এর ধারা-৪ অনুযায়ী বিদ্যমান অন্য কোন আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, অনুর্ধ্ব ১৮ (আঠার) বৎসর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যক্তি শিশু হিসাবে গণ্য হইবে’। 


পেনাল কোডের ৩৬১ ধারা মতে, পুরুষের ক্ষেত্রে ১৪ বছর এবং নারীর ক্ষেত্রে ১৬ বছরের কম বয়স্করা নাবালক।


বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ২(৬৩) তে ১৪(চৌদ্দ) বৎসর বয়স পূর্ণ করেন নাই এমন কোন ব্যক্তি "শিশু" হিসেবে   বলা হয়েছে।


মানসিক স্বাস্থ্য আইন, ২০১৮ এর ২(৯) ধারায় 'নাবালক (Minor)' বলতে ১৮(আঠারো) বৎসর বয়সের নিম্নে কোনো ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে।

হিন্দু আইন অনুযায়ী নাবালকের অভিভাবকত্ব (Guardianship)

সনাতন হিন্দু আইনে কোন ছেলে/মেয়ের ভালোমন্দ বুঝার বয়স হলেই তাকে সাবালক হিসেবে গণ্য করা হতো। দায়ভাগ মতবাদ অনুসারে, একজনের বয়স ১৫ হলে ও মিতাক্ষরা মতে ১৬ বছর হলে সাবালক হয়। তবে ১৮৭৫ সালে "ভারতীয় সাবালকত্ব আইন"(বাংলাদেশে প্রযোজ্য) পাস হওয়ার পর থেকে কোন নারী বা পুরুষ ১৮ বছর পূর্ণ হলে সাবালক বলে গণ্য হয়। এ আইনে উল্লেখ আছে যে, হিন্দু ও মুসলিমদের ক্ষেত্রে বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং দত্তক ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে এ আইন সমভাবে প্রযোজ্য হবে। হিন্দু আইনে অভিভাবকত্ব বলতে বুঝায়, নাবালকের জীবন ও বিষয়-সম্পত্তির নিরাপত্তা পরিচালনার দায়িত্ব আইনসম্মতভাবে পালন করাই হচ্ছে অভিভাবকত্ব।

  1. হিন্দু আইনে পিতা একমাত্র প্রকৃত ও স্বাভাবিক অভিভাবক এবং পিতা জীবিত অবস্থায় অন্য কেউ অভিভাবক হতে পারবেন না।

  2. পিতা যদি জীবিত থাকেন তবে সে যে কোন বয়সের নাবালকের দায়িত্ব ও অভিভাকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন ও তার অভিভাকত্বই মাতার চাইতে উর্ধ্বে থাকবে। তবে পিতা যদি দ্বিতীয় বিয়েতে আবদ্ধ হন সেক্ষেত্রে মাতা তার নাবালিকা কন্যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন।

  3.  পিতার অনুপস্থিতিতে বা অযোগ্যতায় মাতা তার নাবালিকা কন্যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন। 

  4. বাংলাদেশের আইনানুযায়ী হিন্দু বাবাই শুধুমাত্র উইল বা ইচ্ছাপত্রের মাধ্যমে একজন নাবালক ও তার সম্পত্তির অভিভাবক নিয়োগ করতে পারবেন। কিন্তু, একজন মা তার নাবালক সন্তানের অভিভাবক নিয়োগ করতে পারবেন না। তবে আদালত অনেক সময় একজন মায়ের ইচ্ছাকে সম্মান প্রদান করতে পারেন। 

  5. মা যদি তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে থাকেন তবে তিনি সন্তানের অভিভাবকত্ব হারাবেন।  

  6. হিন্দু আইনে দত্তক গ্রহণের আইনগত অধিকার আছে। দত্তক গ্রহণের পর নাবালক দত্তক পুত্রের অভিভাবকত্ব তার স্বাভাবিক পিতা-মাতার নিকট হতে দত্তক পিতা-মাতার নিকট বর্তায়। একজন দত্তক সন্তান প্রকৃত সন্তানের সমপরিমাণ সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে।

Ebanglalibrary তে বলা হয়েছেঃ ‘হিন্দু আইন অনুসারে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ নাবালকের অভিভাবক হুইবার জন্য পর পর ক্ষমতাপন্ন :–

(১) পিতা। পিতাই নাবালক পুত্রের স্বাভাবিক অভিভাবক। পিতা ইচ্ছা করিলে নাবলিক পুত্রের জন্য উইলদ্বারা অভিভাবক নিযুক্ত করিয়! যাইতে পারেন (৩১ বোম্বাই ৪১৩)। কিন্তু পিতা যদি নাবালক পুত্রকে দত্তকরূপে দান করিয়া থাকেন, তাহা হইলে তিনি অবশ্য আর ঐ পুত্রের অভিভাবক থাকিতে পারেন না; দত্তক গ্রহীতা পিতামাতাই অভিভাবক হইবেন। জন্মদাতা পিতা অপেক্ষা দত্তকগ্রহীতা মাতাই অভিভাবকরূপে অগ্রগণ্য (গঙ্গাপ্রসাদ বঃ হরকান্ত, ১৫ কলি: উইক্‌লিনোট ৫৫৮)। এমন কি, জন্মদাতা পিতা অপেক্ষা দত্তকগ্রহীতা পিতার মাতা অগ্রগণ্য অভিভাবক বলিয়া স্থির হইয়াছে (৪ পাটনা ১০৯)। কিন্তু দত্তকগ্রহীতা পিতার বা মাতার মৃত্যুর পর তাহাদের নিকটাত্মীয় না থাকিলে জন্মদাতা পিতাই পুনরায় ঐ বালকের অভিভাবক হইবেন (১৫ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস ৫৫৮)।

(২) মাতা। পিতার পর মাতাই স্বাভাবিক অভিভাবক। তবে যদি পিতা উইল দ্বারা অন্ত কাহাকেও অভিভাবক নিযুক্ত করিয়া থাকেন, তাহা হইলে স্বতন্ত্র কথা। মাতা যদি নিজে নাবালক হন, তাহা হইলেও তিনি তাহার নাবালকপুত্রের অভিভাবক হইতে পারিবেন। ধৰ্ম্মান্তর গ্রহণ করিলে বা পুনরায় বিবাহ করিলে তিনি আর পুত্রের অভিভাবক থাকিতে পরিবেন না।

নাবালকের পিতামহ অপেক্ষা বা ভ্রাতা অপেক্ষা মাতাই অগ্রগণ্য অভিভাবক (২৮ এলাহাবাদ ২৩৩; বীরেশ্বর ব: অম্বিক, ৪৫ কলিকাতা ৬৩০)। মিথিলা আইনে পিতা অপেক্ষা মাতাই নাবালকের শরীর ও সম্পত্তি সম্বন্ধে অগ্রগণ্য অভিভাবক (যশোদা বঃ নিত্যলাল, ৫ কলিকাতা ৪৩)।

বহুপত্নীবিশিষ্ট কুলীন ব্রাহ্মণের সন্তানগণ সম্বন্ধে পিতা অপেক্ষা মাতাই ষোগ্যতর অভিভাবক হইবেন, কারণ কবে কোথায় কোন পত্নীর গর্তে তাঁহার সন্তান জন্মিয়াছে, পিতা হয়তো তাহা অবগতই নহেন, তিনি তাহার সন্তান সম্বন্ধে কোন সন্ধানও হয়তো রাখেন না (৩ উইক্‌লি রিপোর্টার ১৯৪)।

বিমাতা কখনও সপত্নীপুত্রের অভিভাবক হইতে পারে না। কিন্তু যে স্থলে নাবালকের অন্য কোনও আত্মীয়-স্বজন নাই সেক্ষেত্রে একজন অপরিচিত ব্যক্তি অপেক্ষা বিমাতাকে আদালত অভিভাবকরূপে নিযুক্ত করিবেন (সুন্দরমণি ব: গোকুলানন্দ, ১৮ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস ১৬০)।

মাতাই জারজ সন্তানের স্বাভাবিক অভিভাবক। কিন্তু মাতা যদি ঐ সন্তানকে তাহার পিতা কর্তৃক প্রতিপালিত হইবার জন্য ছাড়িয়া দিয়া থাকেন, তাহা হইলে তিনি আর ঐ সন্তানকে পাইতে পারেন না; কারণ সে স্থলে ঐ সন্তানকে মাতার নিকট দিলে তাহার উপকার না হইয়া অপকার হইবারই সম্ভাবনা।

(৩) পিতা ও মাতার অভাবে ভ্রাতা অভিভাবক হইবেন।

(৪) তদভাবে পিতৃকুলের আত্মীয়; যথা পিতামহ, পিতৃব্য, প্রপিতামহ ইত্যাদি। বিমাতা অপেক্ষা পিতামহী অভিভাবকরূপে নিযুক্ত হইবেন (৭ উইক্‌লি রিপোর্টার ৩২০)।

(৫) তদভাবে মাতৃকুলের আত্মীয়:—যথা, মাহামহ, মাতুল। উপরোক্ত ব্যক্তিগণ নাবালক কন্যারও অভিভাবক। কিন্তু কন্যার বিবাহ হইয়া গেলে, স্বামীই নাবালক স্ত্রীর অভিভাবক। স্ত্রীর দ্বিতীয় সংস্কার না হইয়া থাকিলেও বা পিতৃগৃহে থাকিলেও স্বামীই অভিভাবক হইবেন।

স্বামীর মৃত্যুর পর নাবালক বিধবার শ্বশুর, ভাসুর, দেবর প্রভৃতি স্বামীকুলের জ্ঞাতিগণই অভিভাবক হইবেন। তাহাদের অভাবে পিতা, মাতা, ভ্রাতা প্রভৃতি অভিভাবক হইতে পারেন (ক্ষুদিরাম বঃ বনোয়ারী, ১৬ কলিকাতা ৫৮৪; সতীশ বঃ কালিদাস, ৩৪ কলিকাতা ল জাৰ্ণাল ৫২৯)। যথা, বিধবার ভ্রাতা অপেক্ষা স্বামীর ভাগিনেয়কে আদালত অভিভাবকরূপে নিযুক্ত করিবেন (১৬ কলিঃ ৫৮৪)। যদি ঐ বিধবা অল্পবয়স্ক (১২ কি ১৩ বৎসর বয়স্ক) বালিকা হয় তাহা হইলে তাহার স্বামীকুলের দূরজ্ঞাতি অপেক্ষা পিতাই অভিভাবক থাকা বাঞ্ছনীয় (৩৩ এলাহাবাদ ২২২)।’ (সূত্র:https://www.ebanglalibrary.com/lessons/০৩-নাবালক-ও-অভিভাবক-তৃতীয়/)

গার্ডিয়ান ওয়ার্ডস অ্যাক্ট, ১৮৯০: আদালত সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থকে বিবেচনা করে অভিভাবক নির্ধারণ করে। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সন্তানের অভিভাবকত্ব খ্রিষ্ট ধর্মমতেও এ ক্ষেত্রে বাবা স্বাভাবিক অভিভাবক। কিন্তু কোনো বিয়ে ভেঙে গেলে সহজ একটি প্রশ্ন ওঠে নাবালক সন্তানের অভিভাবকত্ব কে পাবে? ডিভোর্স অ্যাক্ট ১৮৬৯-তে এ ব্যাপারে কিছু দিক-নির্দেশনা রয়েছে। তা ছাড়া, বাংলাদেশে প্রচলিত অভিভাবকত্ব-সংক্রান্ত আইন অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০ খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রযোজ্য। যে কোনো বিবাহবিচ্ছেদ বা জুডিশিয়াল সেপারেশনের সময় আদালত নাবালকের অভিভাবকত্ব নির্ণয় করে দেন। এ ব্যাপারে আদালতের নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে। তবে সন্তানের কল্যাণ বা মঙ্গল প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলে মাকে অভিভাবকত্বের অধিকার দিলেও মা হন আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক। যদি মায়ের ধর্মবিশ্বাস ভিন্ন হয়ে যায়, সন্তানকে অবশ্যই তার বাবার ধর্মবিশ্বাসের আলোকে প্রতিপালন করতে হবে। আর যদি মা সেভাবে প্রতিপালনে ব্যর্থ হন, তাহলে সন্তানের অভিভাবকত্ব হারাতে পারেন। আবার আদালত বাবার বাবা অর্থাৎ দাদাকেও অভিভাবকের দায়িত্ব দিতে পারেন, যদি মায়ের অর্থনৈতিক অবস্থা সচ্ছল না থাকে।(উৎস-সন্তানের অভিভাবকত্বে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর হোক- সিরাজ প্রামাণিক)

২. হেফাজত (Custody)

হেফাজত বলতে বোঝায় সন্তানের দৈনন্দিন যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব। এটি সাধারণত মা অথবা পিতার কাছে দেওয়া হয়। ইসলামি আইন অনুযায়ী, মা তার সন্তানদের শারীরিক হেফাজত করলেও, পিতা সন্তানের অভিভাবক হিসেবে অব্যাহত থাকে কারণ তার সন্তানকে আর্থিকভাবে সমর্থন করার কথা। মুসলিম আইনে নাবালকের হেফাজতকে হিজানাত ( Hizanat) বলা হয়

যাইহোক, এটি লক্ষ করা উচিত যে বিরাজমান সামাজিক ব্যবস্থার অধীনে যেখানে পিতা একমাত্র আর্থিক অবদানকারী নন এবং মা আর্থিক দায়িত্ব ভাগ করে নেন এবং অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের আর্থিক চাহিদার প্রধান অবদানকারী হন, তখন 'অভিভাবকত্ব' এর বিশেষাধিকার ব্যক্তি এবং সম্পত্তি' তার মধ্যেও ন্যস্ত করা উচিত (PLD 1963)।

হাদিসের আলোকে এবং শিশুর হেফাজতে নিয়ে আসা মামলার বিষয়ে নবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর সিদ্ধান্তের আলোকে, শিশুর হেফাজতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তিনটি নীতি বিবেচনা করা হয়েছে–

প্রথমত, মা যতক্ষণ পর্যন্ত পুনরায় বিয়ে না করেন ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তানের হেফাজতের অগ্রাধিকার অধিকার রাখেন।

দ্বিতীয়ত, এমন পরিস্থিতিতে যেখানে বাবা-মা উভয়েই ভিন্ন ধর্ম স্বীকার করেন, সেখানে সন্তানের হেফাজত সেই পিতা-মাতার কাছে যেতে হবে যিনি ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করেন এবং

সবশেষে যখন শিশুটি ৭ বছর পেরিয়ে যায় তখন তাকে পিতামাতার মধ্যে একজনকে পছন্দ করার জন্য বলা । একবার একটি শিশু পরিণত বয়সে পৌঁছে গেলে, তিনটি বিবেচনা করতে হবে, পিতামাতার ধর্ম, সন্তানের পছন্দ, সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থ এবং কল্যাণ।

মুসলিম আইন অনুযায়ী:

কন্যা সন্তান: মায়ের অধিকার থাকে ৯ বছর বয়স পর্যন্ত। পুত্র সন্তান: মায়ের অধিকার থাকে ৭ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের পর পিতার অধিকার আসে। তবে সন্তানের মঙ্গল এবং স্বার্থ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। আদালত যদি মনে করে মায়ের বা পিতার অধিকার সন্তানের জন্য ক্ষতিকর, তবে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়।

মোল্লা রচিত মোহামেডান আইনের নীতিমালার ৩৫৭ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, পিতা এবং পৈত্রিকসূত্রে সম্পর্কিত কোনো পুরুষ সাত বছর বয়সী একটি ছেলের হেফাজতে পাওয়ার অধিকারী।

অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুর হেফাজতের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে The Guardian and Wards Act, 1890 এর ১৭ ধারায় শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ এবং মঙ্গল অগ্রগণ্য বিষয় হিসাবে সর্বাগ্রে বিবেচ্য। উক্ত ধারায় বিধৃত হয়েছে যে নাবালকের কল্যাণ বিবেচনায় আদালত নাবালকের বয়স, লিঙ্গ এবং ধর্ম, প্রস্তাবিত অভিভাবকের চরিত্র ও নাবালকের সাথে তার সম্পর্কের নৈকট্য, নাবালকের মৃত পিতা-মাতার ইচ্ছা, যদি থাকে, এবং প্রস্তাবিত অভিভাবকের সাথে নাবালকের বা নাবালকের সম্পত্তির বিদ্যমান বা পূর্ববর্তী সম্পর্ক বিবেচনা করবেন। এছাড়াও শর্ত রয়েছে যে যদি নাবালক একটি নিজস্ব বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত তৈরি করার জন্য যথেষ্ট বয়সী হয়, তাহলে আদালত সেই পছন্দটি বিবেচনায় নিতে পারেন।

কী কী কারণে মা সন্তানের হেফাজারিত্ব বা জিম্মাদারিত্ব হারান— ১. নীতিহীন জীবনযাপন করলে; ২. যদি এমন কারো সঙ্গে তার বিয়ে হয়, যিনি শিশুটির নিষিদ্ধ স্তরের মধ্যে ঘটলে তার ওই অধিকার পুনর্জীবিত হয়; ৩. সন্তানের প্রতি অবহেলা করলে ও দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে; ৪. বিয়ে থাকা অবস্থায় বাবার বসবাসস্থল থেকে দূরে বসবাস করলে; ৫. যদি সে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করে; ৬. যদি সন্তানের পিতাকে তার জিম্মায় থাকা অবস্থায় সন্তানকে দেখতে না দেয়।

যাহোক, এখানে উল্লেখ্য,বর্তমানে বাংলাদেশে সন্তানের হেফাজত (child custody ) সংক্রান্ত আইন এবং এবিষয়ে মোকদ্দমার সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে ঢাকা মহানগর ও জেলায় ৩ টি পারিবারিক আদালত রয়েছে। এই আদালত সমূহ মূলত সন্তানের হেফাজত, অভিভাকত্ব , দেনমোহর ও স্ত্রী সন্তানের ভরণপোষণ সংক্রান্ত মোকদ্দমা সমূহের বিচার করেন। যদিও ইসলামী শরীয়তের আইনে সন্তানের হেফাজতের অধিকার বিষয়ে সন্তানের লিঙ্গ , বয়স , তালাকের পর মায়ের পুনঃবিবাহ ইত্যাদি বিধান আছে তবে বাংলাদেশের পারিবারিক আদালত ক্রমান্বয়ে welfare of child অথবা সন্তানের ‘সার্বিক কল্যাণ’ ও তার সঠিক ও সুন্দর বিকাশ কে মাথায় রেখে নাবালক সন্তানের হেফাজত বিষয়ে আদেশ ও রায় দিচ্ছেন। হিন্দু আইন অনুযায়ী: বাংলাদেশে হিন্দু ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী, নাবালক বা নাবালিকার হেফাজত সাধারণত "Guardians and Wards Act, 1890" এবং হিন্দু ধর্মীয় বিধানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তবে এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, হিন্দু আইন ধর্মীয় ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, এবং এতে সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনা করা হয়। গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট, ১৮৯০ (Guardians and Wards Act, 1890) আইন অনুযায়ী, নাবালকের স্বাভাবিক এবং আইনগত অভিভাবক হলেন পিতা। পিতার অনুপস্থিতিতে বা অভিভাবক হিসেবে অযোগ্যতায় মাতা অথবা আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োজিত ব্যক্তি অভিভাবক হতে পারেন। সন্তানের হেফাজত সাধারণত মায়ের কাছে দেওয়া হয়, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। তবে, পিতা যদি প্রমাণ করতে পারে যে মা অযোগ্য, তবে পিতার হেফাজত পাওয়ার সুযোগ থাকে। খ্রিস্টান আইন অনুযায়ী: সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থকে বিবেচনা করে আদালত সিদ্ধান্ত নেয়।

৩. আদালতের ভূমিকা

বাংলাদেশের আদালত (জেলা আদালত বা পারিবারিক আদালত) অভিভাবকত্ব ও হেফাজতের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে:

  • সন্তানের শারীরিক ও মানসিক মঙ্গল।
  • সন্তানের বয়স এবং লিঙ্গ।
  • মা-বাবার আর্থিক অবস্থান।
  • সন্তানের পছন্দ (যদি সে যথেষ্ট পরিণত হয়)।
  • সন্তানের শারীরিক ও মানসিক মঙ্গল।
  • সন্তানের বয়স এবং লিঙ্গ।
  • মা-বাবার আর্থিক অবস্থান।
  • সন্তানের পছন্দ (যদি সে যথেষ্ট পরিণত হয়)।

৪. গার্ডিয়ান ওয়ার্ডস অ্যাক্ট, ১৮৯০-এর ভূমিকা

এই আইনের অধীনে আদালত সন্তানের অভিভাবকত্ব বা হেফাজত নির্ধারণ করতে পারে যদি:

  • উভয় পক্ষ সন্তানের অধিকার নিয়ে বিরোধে থাকে।
  • সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজন হয়।

বিভিন্ন দেশে শিশু অভিভাবকত্ব আইন 


কোন দেশে বাবা, কোন দেশে মা, আবার কোন দেশে দুইজনই শিশুর আইনগত অভিভাবক। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর শিশু কার অধিকারে বা সঙ্গে থাকবে তা নিয়েও আইনের পার্থক্য আছে বিভিন্ন দেশে ৷ তা নিচে তুলে ধরা হলো–



ভারতে মায়ের অধিকার আগে 

হিন্দু মাইনরিটি অ্যান্ড গার্ডিয়ানশিপ অ্যাক্ট ১৯৫৬ অনুযায়ী, পাঁচ বছরের নিচে হিন্দু শিশুর অভিভাবকত্ব পাবে তার মা। বর্তমানে আদালতের রায়ে বাবা-মা দুইজনকেই আইনগত অভিভাবকত্ব দেয়া হয়, যাতে দুইজনের সঙ্গেই শিশুর যোগাযোগ থাকে। একক অভিভাবকত্বের প্রশ্নে মাকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়। যদি মা সম্মতি দেন বা অসমর্থ হন কিংবা শিশু যদি ১৩ বছরোর্ধ হয় এবং নিজে সিদ্ধান্ত নেয় এমন ক্ষেত্রে বাবা অভিভাবকত্ব পেতে পারেন। 


পাকিস্তানে নতুন আইনে অভিভাবকত্বের অধিকার

১৮৯০ সালের আইন সংশোধন করে ২০২২ সালে নতুন 'গার্ডিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট ২০২০' পাস করেছে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষন এই আইন অনুযায়ী, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হলে সাত বছর বয়স পর্যন্ত শুধু মা অভিভাবকত্বের অধিকার পাবেন। আর মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে তা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানো বা ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত। এক্ষেত্রে মা অসমর্থ হলে যথাক্রমে নানি, দাদি, বোন, খালা, ফুপুসহ নারী আত্মীয়রা অভিভাবকত্ব পাবেন।


আফগানিস্তানে বাবার অধিকার 

'আফাগানিস্তানের সিভিল ল' অনুযায়ী ছেলে শিশু সাত বছর ও মেয়ে শিশু নয় বছর পর্যন্ত দেখাশোনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব মায়ের। তালাকের ক্ষেত্রে আদালত ভরনপোষণের জন্য বাবাকে মাসে ২০০০ থেকে ৩০০০ আফগান মুদ্রা দেয়ার নির্দেশ দিতে পারে। নির্দিষ্ট বয়সের পর অভিভাবকত্ব পায় বাবা বা বাবার দিকের কোনো পুরুষ আত্মীয়। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে চাচা বা চাচাত-ফুপাত ভাইরাও আইনত অভিভাবকত্বের অধিকার পেতে পারে।


বিবাহ বিচ্ছেদের পর জাপানে  অভিভাবকত্ব পায় শুধু একজন 

জাপানের পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে সন্তানের অভিভাবকত্ব ও দায়িত্ব যৌথভাবে দুইজনের উপর থাকে। তবে বিবাহ বিচ্ছেদের পর বাবা অথবা মা যেকোন একজন সন্তানের আইনগত অধিকার পান। বিবাহ বিচ্ছেদের সময়ই এই বিষয়ে দুইজনকে একমত হতে হয়। না হলে পরবর্তীতে আদালত এই সিদ্ধান্ত দেয়। অবিবাহিত বাবা- মায়ের সন্তানের ক্ষেত্রে শুধু মা অভিভাবকত্ব পান।


জার্মানিতে শিশুর স্বার্থ আগে 

বিয়ের মাধ্যমে, যৌথ অভিভাবকত্বের ঘোষণা অথবা পারিবারিক আদালতের রায়ে জার্মানিতে বাবা-মা দুইজনই সন্তানের অভিভাবকত্ব পান, অন্যথায় মা অভিভাবক হন। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হলেও অভিভাবকত্বে সাধারণত পরিবর্তন হয় না। তবে ১৪ বছরের উপরের সন্তানের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সম্মতিতে আদালত একজনের অভিভাবকত্ব মঞ্জুজুর করতে পারে। যেকোন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে শিশুর স্বার্থ ও কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেয় জার্মানির পারিবারিক আদালত।


যুক্তরাষ্ট্রে বাবা-মায়ের সমানাধিকার 

যুক্তরাষ্ট্রে বিবাহ বিচ্ছেদের সময় সন্তানের অভিভাবকত্বের বিষয়টিরও সুরাহা হয়। সাধারণত বিবাহিত অবস্থায় এবং বিচ্ছেদের পরও সন্তানের উপর বাবা-মায়ের সমান অভিভাবকত্ব থাকো শিশু কার সঙ্গে থাকবে সেটি নির্ধারণে আদালত শিশুর নিজের ইচ্ছা, বাবা-মা, ভাই-বোন ও নিকট আত্মীয়দের মত নেয়। থাকার জায়গা, স্কুল, লোকালয় এবং যার সঙ্গে থাকবে তার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যসহ 'শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থকে' অগ্রাধিকার দেয়া হয়।

(Source:https://www.dw.com/bn/অভিভাবকত্ব-আইনের-বার্ধক্যকাল-উপনীত/a-62561102)


Case references

  1. Deva Nand vs. Anandmani, 1921,39 Mad. 915

  2. Skinner vs. Orde, 1871, 14 M.I.A 309

  3. Soonder Narain vs. Bennud Ram, 1879, 4 Cal. 76

  4. Mallapa vs. Anant Balkrishna, 1936, 38 Bom. L.R. 941

  5. Jalal Uddin vs. Kshirode, 12 DLR, 433

  6. Amritha vs. Siromani, 1938, Mad. 757

  7. Nagindas vs. Bhimrao, 1943, Bom. 117

  8. Aslzwani Kumar vs. Fulkurthat, 77 CWN 349

  9. Nilufar Majid Vs Mokbul Ahmed 1984 BLD 79;

  10. Kaymat Ali Sakidar and others Vs Jainuddin Talukdar 14 DLR 657;

  11. Md. Abu Baker Siddique Vs S.M.A. Bakar and others 38 DLR AD 106;

  12.  Major (Retd) Rafiq Hasan Farook Vs Zeenat

  13. Rahana and 3 others 4 MLR AD 273

Post a Comment

0 Comments