বাংলাদেশে হিন্দু আইনের অধীনে দত্তক
(Adoption in Hindu Law in Bangladesh)
হিন্দু আইনে দত্তক [adoption in Hindu Law]
দত্তক অর্থ যে পরিবারে বালক জন্মগ্রহণ করেছে সে স্থান হতে অন্য (গ্রহীতার) পরিবারে স্থানান্তর। মূল কথা হলো, অন্যের পুত্রকে হিন্দু আইনের বিধান অনুযায়ী নিজ পুত্ররূপে গ্রহণ করাকে দত্তক গ্রহণ বলে। হিন্দু আইন অনুযায়ী অন্যের পুত্রকে নিজের পুত্র বলে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করাকে 'দত্তক' বলে। সাধারণ ভাষায় দত্তক পুত্র বলতে পোষ্যপুত্রকে বুঝায়। দত্তক পুত্র যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে, সে পরিবারে লালিত-পালিত না হয়ে অন্য পরিবারে লালিত-পালিত হয়। পিতা-মাতার পরিবারের পরিবর্তে দত্তক পুত্র অন্য পরিবারে পুত্রের মর্যাদায় লালিত-পালিত হয়।
Ramdulal v. Surbala Dasya; 14 DLR 810 মামলা রায়ে বলা হয়েছে যে, “Adoption is a supernatural emancipation and mundane reasons include establishment of heirs and preservation of the adopter's lineage.”
"হিন্দু আইনে দত্তক গ্রহণ হচ্ছে সুদূর প্রসারিত পার্থিব এবং আধ্যাত্মিক প্রভাব পূর্ণ একটি আনুষ্ঠানিক কার্য যা সাধারণত লিখিত দলিলের মাধ্যমে তা সৃষ্টি করা হয়ে থাকে। দত্তক গ্রহণ ও প্রদানের মাধ্যমে একজন বালককে তার জন্মগত পরিবার হতে বাহির করে যে তাকে দত্তক গ্রহণ করে তার পরিবারে স্থানান্তর করা হয় [পেরুলমল বনাম গভর্নমেন্ট অব পাকিস্তান (১৯৬৩) ১৫ ডিএল আর (এস সি) ৫৮]।"
হিন্দু শাস্ত্রীয় বিধান অনুযায়ী এবং শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠানাদি পালনপূর্বক দত্তক গ্রহণ করা হয়। দত্তক দেওয়ার ফলে পুত্রের প্রতি নিজ পিতামাতার সকল অধিকার ও কর্তব্যের পরিসমাপ্তি ঘটিয়া দত্তক গ্রহীতা পিতা মাতার উপর ঐ সকল অধিকার ও কর্তব্য অর্পিত হয় এবং দত্তক পুত্র সকল দিক হতে দত্তক পিতামাতার বৈধ বিবাহের সন্তান হিসেবে পরিগণিত হয়। প্রাচীন আর্যদের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল দত্তক গ্রহণের রীতি। উৎপত্তির দিক দিয়ে দত্তক গ্রহণ ধর্মীয় তাৎপর্য বিবর্জিত ছিল। হিন্দু সমাজে এমন অনেক উদাহরণ আছে যেখানে নিজ পুত্র জীবিত থাকা সত্ত্বেও অনেক হিন্দু দত্তক গ্রহণ করছে।
'দত্তক' প্রথার পার্থিব ধর্মীয় দিক [secular and religious aspect of adoption]
দত্তক গ্রহণ বা দত্তক প্রদান আর্য সমাজের একটি প্রচীনতম পন্থা। প্রথম দিকে অর্থাৎ দত্তক প্রতা উদ্ভব ব্যাপারে উহার সাথে কোন ধর্মীয় অনুশাসন জড়িত ছিল না। এটি ছিল ব্যক্তি বিশেষের হৃদয়গত ব্যাপার। আন ঔরসজাত সন্তান থাকা সত্ত্বেও অনেকে দত্তক পুত্র গ্রহণ করত। কারণ, নিজের বংশানুকম প্রতিষ্ঠিত রাখবার জন্য দত্তক ছিল একটি বিকল্প ব্যবস্থা।
আর্য-সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল পার্থিব ব্যাপারে ধর্মীয় বিধানের আরোপ। দত্তক যদি ধর্মসঙ্গত উপায়ে স্বীকৃত না হয তাহলে দুত্তক পুত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান তথা- পূজা, পিও দান প্রভৃতি কাজে বৈধ অধিকার লাভ করতে পারবে না। দত্তক গ্রহণের সময় গ্রহীতাকে শাস্ত্র মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয়- "আমি আমার পিতৃপুরুষের বংশধারা রক্ষার উদ্দেশ্যেই দত্তক গ্রহণ করলাম।"
শাস্ত্রবাণী যা-ই হোক না কেন, দত্তক গ্রহণের মূল লক্ষ্য হল পার্থিব উদ্দেশ্য সাধন। এ সম্বন্ধে আইনশাস্ত্রজ মেইন বলেন যে, পিও দান প্রভৃতি ধর্মীয় কার্যে পুত্র সন্তানের প্রয়োজন থাকলেও নেহায়েত দীন-দরিদ্র ব্যক্তিরা দত্তক গ্রহণের দায়িত্ব নিতে পারে না। কাজেই, সেক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুশাসন শুধু সম্পন্ন ব্যক্তিদের সুবিধার কথাই নির্দেশিত করে।
দত্তক গ্রহণের উদ্দেশ্য(Purpose of Adoption)
প্রধানতঃ দুটি কারণে হিন্দু আইনে দত্তক নেওয়ার বিধান প্রচলিত। একটিকারণ ধর্মীয় এবং অন্যটি পার্থিব কারণ। মুনিবর বশিষ্ট সাবধান বাণী উচ্চারণ করেন "পুত্রহীনদের স্বর্গে কোন স্থান নাই।" তার অর্থ হলো পুত্রহীনগণ নরকে বাস করতে হবে। যার পুত্র, পৌত্র এবং প্রপৌত্র নাই মৃত্যুর পর তার আত্মা পিণ্ড পাওয়ার আশা করতে পারে না। যদিও একজন মৃত ব্যক্তি তার নিম্নতর তিনপুরুষ অর্থাৎ পুত্র, পৌত্র এবং প্রপৌত্র হতে সরাসরি পিণ্ড পাওয়ার অধিকারী। এই ধরনের বিবেচনাকে ধর্মীয় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। আধ্যাত্মিক কল্যাণার্থে পিণ্ড ও তর্পণ লাভের উদ্দেশ্যে নিজ পুত্রের বিকল্প স্বরূপ দত্তক গ্রহণ করা হয়। বস্তুতঃ পিতৃঋণ পরিশোধ করে পূর্বপুরুষগণকে 'পুত' নামক নরক (পুন্নাম নরক) হতে উদ্ধার এবং পিতৃপুরুষের বংশধারাকে চলমান রাখার তাগিদে ও আধ্যাত্মিক এবং পারলৌকিক মঙ্গল সাধনার্থে হিন্দু আইনে আবহমান কাল হতে দত্তক গ্রহণের বিধান প্রচলিত রয়েছে। এটাই দত্তক গ্রহণের ধর্মীয় কারণ বা উদ্দেশ্য। হিন্দু দার্শনিকরা বলেছেন "একজন মানুষ তিনটি ঋণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে:
ঋষিদের (ঋষিদের) ঋণ,
ঈশ্বরের কাছে ঋণ এবং
পূর্বপুরুষের কাছে ঋণ।"
এই ঋণগুলি একটি পুরুষ সন্তানের জন্ম দিয়ে নিষ্কাশন করা হয় যে বেদ অধ্যয়ন করে এবং যজ্ঞ করে। একই কারণে হিন্দু আইনে পুত্রকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আবার প্রত্যেক মানুষই নিজ বংশের ধারাবাহিকতা চালু রাখতে চায়। সকল ব্যক্তিরই ইচ্ছা থাকে যে, মৃত্যুর পরও তাহার পুত্র পৌত্রাদির মাধ্যমে তার নাম এই পৃথিবীতে আরও অধিক সময় চালু থাকুক [সীতারাম বনাম হরিহর (১৯১১) ৩৫ বোম ১৬৯, ১৮০)। এই ধরনের বিবেচনাকে পার্থিব কারণ বলা যেতে পারে। এই কারণে নিজের পুত্র, পৌত্র বা প্রপৌত্র না থাকলে তাকে দত্তক গ্রহণ করতে হয়। পুত্রহীন অবস্থায় মৃত্যু হলে তার সম্পত্তি অন্যত্র চলে যায়, তা কেউই চায় না। দত্তক গ্রহণের মাধ্যমে সে পারিবারিক সম্পত্তিকে নিজ বংশের মধ্যে রাখতে পারে। এটাই দত্তক গ্রহণের পার্থিব কারণ বা উদ্দেশ্য।
[রামদাসী বনাম সরলা বালা দাস (১৯৬২) ১৪ ডিএল আর ৮১০] মামলায় ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতি (বিচারপতি হাসান) হিন্দু শাস্ত্রসমূহ আলোচনা করে বলেন যে দত্তক গ্রহণের দ্বিবিধ উদ্দেশ্য রয়েছে। উদ্দেশ্য দুইটির একটি হচ্ছে দত্তক গ্রহণকারী ও তার পূর্বপুরুষদের আধ্যাত্মিক কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং অপরটি হচ্ছে একজনকে উত্তরাধিকারী হিসেবে লাভ করে দত্তক গ্রহণকারীর নামকে পৃথিবীর বুকে চিরস্থায়ী করা। এই উদ্দেশ্য সমূহের প্রথমটিকে ধর্মীয় ও দ্বিতীয়টিকে পার্থিব উদ্দেশ্য বলা হয়।
মনুর মতে দত্তক দানের কার্যকে জলদান বা তর্পণের দ্বারা সুনিশ্চিত প্রয়োজন। হিন্দু বিবাহ রীতি অনুযায়ী যেভাবে কন্যা বিবাহে কন্যাদান করা হয় সেইভাবে দত্তক পুত্রদান করা হয় এবং এই উভয় প্রকারের দান একই ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, একই রীতির বহিঃপ্রকাশ।
'বশিষ্ট' তার শাস্ত্রাংশে বলেন "বীর্য ও রক্তের সৃষ্ট পুত্র তাহার পিতামাতার নিকট হইতে নির্গত হয়, এমন কারণ হইতে ফলের উৎপত্তি হয় তাহাকে দান, বিক্রয় বা ত্যাগ করার ক্ষমতা পিতামাতা উভয়ের রয়েছে। কিন্তু কোন ব্যক্তিকে তাহার একমাত্র পুত্রকে দান বা গ্রহণ করিতে দিবে না, কারণ তাহাতে পূর্বপুরুষের অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পাদনের জন্য বংশধর সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অবশ্যই পিতৃ পরিবার থাকিতে হইবে। অথবা কোন স্ত্রীলোককে তাহার স্বামীর বিনা অনুমতিতে পুত্র দান বা গ্রহণ করিতে দিবে না। যদি কেহ কোন পুত্র দত্তক লইতে চায় তাহা হইলে তাহাকে অবশ্যই আত্মীয় স্বজনদিগকে একত্রিত করিতে হইবে, রাজাকে বিনীতভাবে জানাইতে হইবে এবং তারপর তাহার বাসগৃহের মধ্যে বেদ হইতে মন্ত্র পাঠ করতঃ যজ্ঞাগ্নিতে নৈবদ্য অর্পণ করিয়া দত্তকের মাধ্যমে সেই বালককে পুত্ররূপে গ্রহণ করিতে হইবে, যে বালক তাহার নিকট সম্বন্ধযুক্ত অথবা যদি এরূপ কাহাকেও পাওয়া না যায় তাহলে দূর সম্বন্ধযুক্ত কোন বালককে গ্রহণ করিতে হইবে। কিন্তু যদি বালকের গোত্র সম্বন্ধে সন্দেহের উদ্রেক হয়, তাহা হইলে সেই দূরতম আত্মীয়কে শূদ্র হিসাবে গণ্য করিতে দাও। বালকের শ্রেণি বা বর্ণ অবশ্যই জানিতে হইবে, কারণ এক দত্তক পুত্রের মাধ্যমে দত্তক গ্রহণকারী বহু পূর্বপুরুষকে উদ্ধার করিবে। যদি তাহাকে দত্তক গ্রহণের পর বৈধ পুত্র জন্মে তাহা হইলে দত্তক পুত্র দত্তক পিতার সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ লাভ করিবে।
সনকের উপমায় বলা হয়েছে যে, "বালক অবশ্যই পুত্রের প্রতিকৃতি বহন করিবে।" আবার সনকের উপমার মূল অর্থ যাহাই থাকুক না কেন দত্তক মীমাংসা ইহাকে এইভাবে ব্যাখ্যা করিয়াছে যে দত্তক বালককে এইরূপ হইতে হইবে, "যাহার মাতার উপর 'নিয়োগ' পদ্ধতি প্রয়োগ করিয়া দত্তক প্রহনকারী সন্তান উৎপাদন করিতে পারিত।" ইউরোপীয় পণ্ডিতগণ সনকের উপমার ব্যাখ্যা করিতে গিয়া বলেন, "বালককে এইরূপ হইতে হইবে যাহার মাতাকে, যখন কুমারী ছিল, দত্তক পিতা বিবাহ করিতে পারিত।"
[ভগবান সিং বনাম ভগবান (১৮৯৮) ২১ এলা ৪১২] মামলায় প্রিভি কাউন্সিল দত্তক মীমাংসায় দেওয়া অর্থকে গ্রহণ করে এবং এই মর্মে সিদ্ধান্ত দেন যে, যে বালকের মাতার উপর দত্তক গ্রহণকারী 'নিয়োগ' প্রয়োগ করিতে কিংবা যাহার মাতাকে দত্তক গ্রহণকারী বিবাহ করিতে না পারিত তাহাকে দত্তক গ্রহণ করা অবৈধ। এই নিষেধাজ্ঞা অবশ্য শুদ্রদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ইহাকে ভিত্তি করে অতিসম্প্রতি বহু মামলায় কন্যার পুত্র, ভগ্নীর পুত্র এবং মাতার ভগ্নীর পুত্রের ক্ষেত্রে দত্তক গ্রহণ নিষেধাজ্ঞাকে সীমাবদ্ধতায় রেখেছে। উচ্চতর তিন শ্রেণির হিন্দুদের বিষয়ে আদালত এই মর্মে রায় দিয়েছেন যে, প্রথা দ্বারা অনুমোদিত হইয়া থাকিলে এই নিয়মের দ্বারা কোন দত্তক গ্রহণ নিষিদ্ধ ঘোষিত হইয়া থাকিলেও তাহা বৈধ দত্তকরূপে পরিগণিত হইতে পারে।
উপরক্ত দত্তক গ্রহণের বৈধতার ক্ষেত্রে 'ফ্যাকটাম ভ্যলেট' নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিয়া থাকে। তবে দত্তক গ্রহণের ঘটনা ও ইহার বৈধতার মধ্যে পার্থক্য রহিয়াছে।
[রঘুনাথ সিংহ হাজারী বনাম আব্দুর রশিদ (১৯৫৮) ৮ ডিএল আর ৫৭৭] মামলায় বলা হয়েছে যে, দত্তক গ্রহণের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ কিংবা উক্ত অনুষ্ঠানের স্বীকৃতি হয়ত কোন ব্যক্তিকে দত্তক গ্রহণের বৈধতাকে অস্বীকার করা হইতে বিরত রাখিতে পারে, কিন্তু ইহা ঐ দত্তক গ্রহণের বৈধতা বা দত্তক গ্রহণকারীর যোগ্যতাকে প্রশ্ন করার পথে কোনরূপ বাধা সৃষ্টি করিতে পারে না।
বৈধ দত্তক গ্রহণের উপাদান বা শর্তাবলী
(Essential conditions of a valid adoption)
(১) দত্তক গ্রহণের যোগ্যতা: হিন্দু দত্তক গ্রহণকারী ব্যক্তি আইনগতভাবে দত্তক গ্রহণের উপযুক্ত না হইলে কোন দত্তক গ্রহণ বৈধ হইবে না। অর্থাৎ কোন দত্তক গ্রহণই বৈধ হইবে না, যদি দত্তক গ্রহণকারী ব্যক্তি আইনগতভাবে দত্তক গ্রহণের উপযুক্ত না হয়। এ শর্তমতে দত্তকগ্রহণকারীকে একজন সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন পুরুষ ব্যক্তি হইতে হইবে। এবং তাহার নিজের ভালোমন্দ বুঝিবার বা বিচার করিবার বয়স হওয়া প্রয়োজন। দায়ভাগ বিধান মতে বাংলাদেশে কোন ব্যক্তির বয়স ১৫ বৎসর হইলে সে তাহার ভালোমন্দ বিচার করার বয়স হইয়াছে বলিয়া আইনতভাবে অনুমিত হয়। মিতাক্ষরা শাসিত অঞ্চলে ১৫ বৎসরের স্থলে ভালো মন্দ বুঝিবার বয়স ১৬ বৎসর ধরা হয়। দত্তক নেওয়ার সময় দত্তক গ্রহীতার কোন পুত্র, পৌত্র অথবা প্রপৌত্র (স্বাভাবিক বা দত্তকী) থাকিলে দত্তক নেয়া যায় না। একজন অবিবাহিত কিংবা বিপত্নীক পুরুষের দত্তক নিতে কোন বাধা নেই। কোন দত্তক গ্রহণে দত্তক গ্রহণকারীর স্ত্রী সম্মতি না দিলেও কিংবা দত্তক গ্রহণের সময় দত্তক গ্রহণকারীর জানামতে তাহার স্ত্রী গর্ভবতী থাকিলেও দত্তক গ্রহণকারী দত্তক গ্রহণ করিতে পারিবে।
(২) দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন: দত্তক গ্রহণে উপযুক্ত ব্যক্তি নিজে দত্তক গ্রহণ করিতে পারে অথবা সে তাহার দত্তক গ্রহণের এই ক্ষমতাকে তাহার স্ত্রীর উপর অর্পণ করিতে পারে।
(নারায়ণ বনাম নানা (১৮৭০) ৭ বোম এইচসি এসি ১৫৩] মামলায় বলা হয়েছিল যে, হিন্দু আইনে মহিলাদের মধ্যে একমাত্র স্ত্রী তাহার স্বামীর জন্য দত্তক গ্রহণ করিতে পারে। স্ত্রী তাহার স্বামীর জীবদ্দশায় স্বামীর স্পষ্ট বা ব্যক্তি অনুমতি ছাড়া দত্তক গ্রহণ করিতে পারে না।
[নরেন্দ্র বনাম দীননাথ (১৯০৯) ৩৬ ক্যাল ৮২৪] মামলায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, "স্ত্রী বা বিধবা কোন ক্ষেত্রেই তাহার নিজের জন্য কোন পুত্র দত্তক লইতে পারে না। দত্তক অবশ্যই তাহার স্বামীর জন্য গ্রহণ করিতে হইবে। কোন স্ত্রীলোক তাহার নিজের জন্য কোন পুত্র দত্তক গ্রহণ করিয়া থাকিলে তাহা অবৈধ হইবে এবং এই দত্তকের ফলে গৃহীত পুত্রের উপর কোন আইনগত অধিকার বর্তাইবে না।
উপমহাদেশের কতিপয় অঞ্চলে স্বামী স্পষ্টভাবে স্ত্রীকে ক্ষমতা প্রদান না করিয়া থাকিলে তাহার বিধবা স্ত্রী দত্তক গ্রহণ করিতে পারে না। আবার কতিপয় অঞ্চলে এরূপ ক্ষমতা না দেয়া থাকিলেও স্ত্রী দত্তক গ্রহণ করিতে পারে।
(৩) দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান: যে ব্যক্তি দত্তক গ্রহণের উপযুক্ত সেই ব্যক্তি তাহার স্ত্রীকে নিজের জীবদ্দশায় তাহার মৃত্যুর পর দত্তক গ্রহণের জন্য ক্ষমতা অর্পণ করিতে পারে। মৃত্যুর সময় স্বামী মিতাক্ষরা যৌথ পরিবারের সদস্য থাকিলেও সে তাহার স্ত্রীকে দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে স্ত্রী দত্তক গ্রহণের সময় বা দত্তক গ্রহণ ক্ষমতা প্রয়োগের সময় সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন এবং ভালো-মন্দ বিচার করার মত বয়স ও যোগ্যতা অর্জন করিতে হইবে। মৃত্যুর সময় স্বামী মিতাক্ষরা যৌথ পরিবারের সদস্য থাকিলেও তাহার স্ত্রীকে দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করিতে পারে। বোম্বে ও মাদ্রাজ মতপন্থী অনুযায়ী বিপরীত মর্মে কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকিলে স্বামীর ক্ষমতা ছাড়াই বিধবা দত্তক গ্রহণ করিতে পারে। তবে মিথিলা মতপন্থি অনুযায়ী অনুরূপ ক্ষমতা দেয়া থাকিলেও বিধবা কখনই দত্তক গ্রহণ করিতে পারে না।
(৪) দত্তক প্রদানের যোগ্যতা: যে ব্যক্তি নিজ পুত্রকে দত্তক দিবে তাহাকেও আইনগতভাবে উপযুক্ত বলিয়া গণ্য হইতে হইবে। এই শর্তে কেবলমাত্র পিতা ও মাতাই কেবল দত্তক দেওয়ার অধিকারী। পিতার জীবিতকালে তাহার পুত্রকে মাতা পিতার বিনা অনুমতিতে কাহারো নিকট দত্তক দিতে পারে না। দত্তক দেওয়ার অধিকার একান্তভাবে পিতা মাতার নিজস্ব অধিকার। এ অধিকার হস্তান্তর করা যায় না বা কাহারো উপর অর্পণ কার যায় না। পুত্রকে দত্তক দেওয়ার মৌলিক অধিকার পিতার। যেহেতু দত্তক দেওয়ার কোন আইনগত যোগ্য ব্যক্তি থাকে না সেহেতু এ কারণে একজন মাতৃ পিতৃহীনকে দত্তক দেয়া যায় না।
[শিব প্রসাদ বনাম নটবর লাল (১৯৪৯) বোম ৩১৮) মামলায় আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন যে, পিতার বীনা অনুমতিতে পুত্রকে দত্তক দেয়া যায় না। পিতা যদি মস্তিষ্ক বিকৃত হওয়ার কারণে অক্ষম হন অথবা সন্ন্যাসব্রত গ্রহণে সংসার ত্যাগী হন, কিংবা পিতার মৃত্যুর পর দত্তক দিতে পিতার যদি কোন প্রকাশ্য অথবা অপ্রকাশ্য বা ইঙ্গিতে নিষেধ না থাকে তাহলে মাতা দত্তক দিতে পারেন।
(৫) দত্তক দেওয়ার অধিকার: দত্তক দেওয়ার অধিকার একান্তভাবে পিতামাতার নিজস্ব অধিকার এবং একমাত্র তাহারাই এই অধিকার প্রয়োগ করিতে পারেন। [শ্যাম সিংহ বনাম শান্তা বাঈ (১৯০১) ২৫ বোম ৫৫১] মামলায় আদালত সিদ্ধান্ত দেন যে, "দত্তকে বাস্তব পুত্র দানের কাজটি অন্যের উপর অর্পণ করা যায়। কারণ এই জাতীয় কাজে বিচক্ষণতা প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না।" ১৮৫০ সালের কাষ্ট ডিসএ্যাবিলিটি রিমূভ্যাল অ্যাক্টের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি নিয়ম হলো "যে হিন্দু পিতা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিয়াছে তিনি তাঁহার এই ধর্মান্তরের জন্য তাঁহার হিন্দু পুত্রকে দত্তক দেওয়ার অধিকার হইতে বঞ্চিত হইবেন না; কিন্তু যেহেতু দত্তকে বাস্তব পুত্রদানের কাজটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে জড়িত সেহেতু পুত্রদানের কাজটি অপর কোন হিন্দু ব্যক্তির উপর অর্পণ করিতে হইবে। দত্তক ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে জড়িত বিধায় একজন অনাথকে দত্তক নেয়া যায় না। কারণ তাহাকে দত্তক দেয়ার কোন আইনগত যোগ্য ব্যক্তি নাই।
(৬) দত্তকীর আইনগত যোগ্যতা: যাহাকে দত্তক হিসাবে গ্রহণ করা হইবে, তাহাকেও অবশ্যই আইনগতভাবে দত্তকের উপযোগী বলিয়া গণ্য হইতে হইবে। কোন দত্তক গ্রহণই বৈধ হইবে না যদি না যে ব্যক্তিকে দত্তক পুত্ররূপে গ্রহণ করা হইবে সে আইনগতভাবে দত্তকের উপযোগী বলিয়া গণ্য হয়। যে ব্যক্তিকে দত্তক পুত্ররূপে গ্রহণ করিতে হইবে তাহাকে অবশ্যই নিম্ন বর্ণিত যোগ্যতা সম্পন্ন হইতে হইবে—
(ক) হিন্দু হইতে হইবে,
(খ) পুরুষ (বালক) হইতে হইবে,
(গ) দত্তক পিতার একই বর্ণের হইতে হইবে।
একই বর্ণের মধ্যস্থিত উপবর্ণের মধ্যে অনুষ্ঠিত দত্তক গ্রহণ বৈধ বলিয়া স্বীকৃত হইবে (সুধাংশু শেখর বনাম অনাথ বন্ধু (১৯৭৬) ২৮ ডিএল আর ৩১৩],
(ঘ) এইরূপ ব্যক্তি হইবে, যাহার মাতাকে দত্তক পিতা আইনগতভাবে বিবাহ করিতে পারিত; কন্যার পুত্রকে দত্তক গ্রহণে, নিষেধাজ্ঞা থাকিলেও সে নীতি শীতল হইয়া গিয়াছে।
কন্যার পুত্রকে দত্তক গ্রহণ করা যাইবে [বিমল চন্দ্র চৌধুরী বনাম শুভ্রমণিয়া কৃষ্ণা চৌধুরী (১৯৯৪) ৪৬ ডিএল আর ৯০]
(ঙ) এরূপ ব্যক্তি হইতে হইবে যে বোবা ও বধির নয়।
(চ) এরূপ ব্যক্তি হইবে যাহার উপনয়ন হয় নাই বেঙ্গল বেনারস, বিহার ও উড়িষ্যাতে উপনয়নের পূর্বে দত্তক গ্রহণ করিতে হয়, মাদ্রাজেও একই নিয়ম অনুসরণ করা হয়। তবে দত্তক পুত্র যদি দত্তক পিতার একই গোত্রের হয় তাহা হইলে উপনয়নের পরও দত্তক গ্রহণ করা যায়। তবে এক্ষেত্রে দত্তক পুত্রের বিবাহের পূর্বে দত্তক গ্রহণ করিতে হইবে। আবার বোম্বে অঞ্চলে যে কোন বয়সের ব্যক্তিকে দত্তক গ্রহণ করা যায়। দত্তক হিসাবে গ্রহণের পূর্বেই দত্তক পুত্রের উপনয়ন হইতে পারে, সে দত্তক পিতা অপেক্ষা বয়ষ্ক হইতে পারে, বিবাহিত এবং সন্তান সন্ততির পিতাও হইতে পারে।
(ছ) মাদ্রাজ, নাগপুর এবং এলাহাবাদে সে এরূপ ব্যক্তি হইবে যাহার বিবাহ হয় নাই।
(জ) সে এরূপ ব্যক্তি হইবে যে সে অনাথ নয় (আব্দুল মান্নান বনাম মুহম্মদ সুলতান কাজী (১৯৮২) ৩৪ ডিএলআর ২৩৬)।
(ঝ) সে অপর ব্যক্তি কর্তৃক পূর্বে দত্তক পুত্র হিসাবে গৃহীত হয় নাই,
(ঞ) সে তাহার পিতমাতার একমাত্র পুত্র নয়।
[শ্রীবালুসু বনাম শ্রীবালুসু (১৮৯৯) ২১ মাদ ৩৯৮] মামলায় প্রিভি কাউন্সিল পূর্ববতী নজীরসমূহ পর্যালোচনা করিয়া এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে একমাত্র পুত্রকেও "ফ্যাক্টাম ভ্যালিট" নীতি অনুযায়ী দত্তক দেওয়া ও গ্রহণ করা যায়।
(৭) বাস্তব আদান-প্রদান: কোন দত্ত-ই বৈধ হবে না, যদি না দত্তক গ্রহণ বাস্তব আদান-প্রদানের দ্বারা সম্পূর্ণ হয়। দত্তক পুত্রকে বাস্তবভাবে তাহার নিজের পিতার পরিবার হতে তাহার দত্তক পিতার পরিবারে আদান-প্রদান করিতে হইবে। দত্তক গ্রহণের বৈধতার জন্য বাস্তব আদান-প্রদান করিতে হইবে এবং ইহা একান্ত অপরিহার্য। আইনে আদান-প্রদানের কোন বিকল্প নাই। দত্তকে সম্মতি প্রকাশ বা দত্তক আদান প্রদান না হইয়া থাকে তবে তা বৈধ দত্তকে পরিণত হইবে না। দত্তক নেওয়ার অধিকারকে অপর কোন ব্যক্তির নিকট অর্পণ করা যায় না, তবে পিতা অথবা মাতা বাস্তব পুত্র দানের কাজটিকে সম্পাদনের জন্য অপর কোন বিশেষ ব্যক্তিকে ক্ষমতা দিতে পারে।
[দান ও গ্রহণের কাজ শুধুমাত্র দ্বিজ বা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, শুদ্রদের ক্ষেত্রেও ইহা একান্ত অপরিহার্য [বীরেশ্বর বনাম অর্ধ্ব চন্দের (১৮৯২) ১৯ ক্যাল ৪৫২, ৪৬১]।
(৮) স্বাধীন সায় বা সম্মতি: স্বাধীন সায় ব্যতীত দত্তক গ্রহণ বৈধ হয় না। দত্তক গ্রহণের সময় দত্তক গ্রহণকারী, দত্তকদাতাও দত্তক পুত্রের, যদি সে প্রাপ্তবয়ষ্ক হয়, স্বাধীন সায়ের প্রয়োজন হয়। যদি মিথ্যা বর্ণনা, বলপ্রয়োগ, প্রতারণা, অনুচিত প্রভাব অথবা ভুলের দ্বারা দত্তক গ্রহণের সায় গ্রহণ করা হয় তাহা হইলে সে সায় স্বাধীন সায় বলিয়া বিবেচিত হইবে না এবং যে ব্যক্তির সম্মতিকে উপরোক্তভাবে গ্রহণ করা হয় তাহার ইচ্ছাক্রমে ঐ দত্তক গ্রহণ বাতিলযোগ্য বলিয়া গণ্য হইবে। একবার বৈধ দত্তক গ্রহণ অনুষ্ঠিত হইলে দত্তক পিতা অথবা দত্তকের অপর পক্ষগণ ইহাকে বাতিল করিতে পারে না; কিংবা দত্তক পুত্র তাহার দত্তকী অবস্থাকে প্রত্যাখান করিয়া নিজ পরিবারে ফিরিয়া আসিতে পারে না। একবার দত্তক গ্রহণ আইনগতভাবে সম্পূর্ণ হইলে দত্তক পুত্রকে তাহার দত্তক পিতার পরিবারে নবজাতক ব্যক্তি হিসাবে গণ্য করা হয় এবং তাহার নিজ পিতার পরিবারের সহিত তাহার সকল সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে।
(১) বালিকা দত্তকী: যদিও দত্তক গ্রহণে একমাত্র বালক ব্যতীত অপর কোন
ব্যক্তিকে দত্তক গ্রহণ করা শাস্ত্রসম্মত নয়, কিন্তু উপমহাদেশের কতিপয় অঞ্চলে বালিকা দত্তক গ্রহণ প্রচলিত আছে। বোম্বে ও কোলকাতা হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী পেশাদার নর্তকীরা যে কন্যা গ্রহণ করে তাহা প্রথাসিদ্ধ হইলেও অবৈধ, কারণ ঐ পেশাকে নীতিহীন বলিয়া গণ্য করা হয়। কিন্তু মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এই দত্তক গ্রহণ, যদি বালিকাকে বেশ্যাবৃত্তির কাজে ব্যবহার করা না হয়, তাহা হইলে ইহা বৈধ। প্রথা দ্বারা অনুমোদিত হইলে একত্রে দুইটি বালিকাকেও দত্তক গ্রহণ করা যায়।
(১০) জাতিচ্যুত ও ধর্মচ্যুত কোন জাতিচ্যুত পুত্রের উপস্থিতিতে দত্তক গ্রহণ করা যায় না। দত্তক গ্রহণের সময় দত্তক গ্রহণকারীর কোন পুত্র, পৌত্র বা প্রপৌত্র থাকিতে পারিবে না। কোন ব্যক্তি জাতিচ্যুত হইলেও সে হিন্দু থাকিয়া যায়, তাহার হিন্দুত্ব নষ্ট হয় না। কিন্তু যদি কোন পুত্র হিন্দুধর্ম পরিত্যাগ করিয়া অন্য ধর্ম গ্রহণ করে এবং অপর কোন পুত্র, পৌত্র বা প্রপৌত্র না থাকে, তাহা হইলে পিতামাতা অন্য পুত্র দত্তক লইতে পারে।
(১১) দত্তহোম অনুষ্ঠান দত্তক নেয়ার সময় দত্তক নেয়া উপলক্ষে যদি কোন যজ্ঞানুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয় তাহাকে দত্তহোম বলে। দত্তক গ্রহণের সময় সকল ক্ষেত্রে দত্তহোম অনুষ্ঠান আবশ্যক কি না সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।
দ্বিজ হিন্দু শ্রেণির হিন্দুদের মধ্যে যখন দত্তকপুত্র ও দত্তকপিতা একই গোত্রভুক্ত হয় তখন সে ক্ষেত্রে দত্তহোম অনুষ্ঠান অপরিহার্য ভালুবাঈ বনাম গোবিন্দ (১৯০০) ২৪ বোম ২১৮) অন্যান্য ক্ষেত্রে দত্তহোম প্রয়োজন আছে কি না সে সম্বন্ধে মতবিরোধ রহিয়াছে।
[সিঙ্গাম্মা বনাম ভেনকাটাচারণু (১৮৬৮) ৪ মাদ এইচসি ১৬৫) মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে "মাদ্রাজে এমনকি ব্রাহ্মণদের মধ্যে দত্তক গ্রহণে দত্তহোম অথবা অপর কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দরকার হয় না। এ মামলার রায় ক্ষত্রিয় ও ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়।
কন্যার পুত্রকে দত্তক গ্রহণের সময় দত্তহোম অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হয় না (স্বামী নাথ বনাম ভগীসন (১৯৪০) মাদ ৯৮]
আবার [আত্মারাম বনাম মধুরাম (১৮৮৪) ৬ এলা ২৭৬ (এফ বি)] মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট এই মন্তব্য করেন যে কন্যা কিংবা ভ্রাতার পুত্র দত্তক গ্রহণে কেবলমাত্র আদান প্রদানই যথেষ্ট দত্তহোমের কোন প্রয়োজন হয় না।
বোম্বে হাইকোর্ট অবশ্য সকল প্রকার দত্তক গ্রহণে দত্তহোম অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে। মূলত দত্তক গ্রহণ কালে দত্তহোম অনুষ্ঠান পালন করিতে হইবে হিন্দু শ্রাস্ত্রে এরকম কোন অবশ্যপালনীয় আদেশ নাই।
সুতরাং দত্তহোম ব্যতীত অন্যান্য শর্তানুযায়ী দত্তক গ্রহণ করিলে তাহা 'ফ্যাকটাম ভ্যালিট' নীতি অনুযায়ী সকল বর্ণের হিন্দুদের জন্য আইন সিদ্ধ হইবে।
[সুধাংশু শেখর বনাম অনাথ বন্ধু (১৯৭৬) ২৮ ডিএল আর ৩১৩] মামলায় বলা হয়েছিল যে, দত্তক গ্রহণে বাস্তব আদান-প্রদানের কিংবা বালকের নিজ পিতার মৃত্যুর পরেও সম্পাদন করা যায়। দত্তক গ্রহণের জন্য কোন আনুষ্ঠানিক উৎসবের প্রয়োজন হয় না। আইন অনুসারে যাহা প্রয়োজন তাহা হইতেছে দত্তক পিতাকে বিবাহিত এবং দত্তক পুত্রকে অবিবাহিত হইতে হইবে। দত্তক পিতার পরিবারে দত্তক পুত্রের স্থান সহজাত পুত্রের অনুরূপ।
স্বামীর বিনা-অনুমতিতে স্ত্রী কোন দত্তক পুত্র গ্রহণ করতে পারে কি?
(Can a wife adopt a son without her husband's consent?)
মহর্ষি বিশিষ্ট বিধবা কর্তৃক দত্তক গ্রহণের যে নীতি নির্ধারিত করেছেন তা নিম্নরূপঃ "স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে কোন হিন্দু নারী দত্তক গ্রহণ করতে পারে না, কিংবা সে দত্তক প্রদানেরও অধিকারী নয়।"
এ নীতির বিচারে এ কথা বলা যায় যে, হিন্দু বিধবা আদৌ দত্তক গ্রহণ কিংবা দত্তক দানের সম্পূর্ণরূপে অধিকারহীনা নয়। কিন্তু স্বামীর অনুমতি কখন গ্রহণ করতে হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট অভিমত এতে সংযোজিত বা নিরূপিত হয়নি। এ বিষয় সম্পর্কে বিচার-বিশ্লেষণ কতে গিয়ে বিভিন্ন পন্থী হিন্দু সমাজ বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।
এক শ্রেণীর ব্যবহার শাস্ত্রবিদ পণ্ডিত মনে করেন যে, দত্তক গ্রহণের সময় অবশ্যই স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। ইহার অর্থ এ দাঁড়ায় যে, বিধবার দত্তক গ্রহণের কোন অধিকার নেই। অন্যদল মনে করেন যে, 'স্বামী' শব্দটি অর্থ ব্যাপক। বিধবার স্বামীত্ব তার অভিভাবকদের উপরই ন্যস্ত হয়ে থাকে। অন্য আর এক দল মনে করেন যে, যেহেতু মৃত স্বামীর আত্মার সদগতির জন্যই পুত্র গ্রহণ অপরিহার্য, সেহেতু স্বামী যদি এ ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা না করে থাকে, তাহলে বিধবার দত্তক গ্রহণে কোন প্রকার আপত্তি থাকতে পারে না।
বিভিন্ন সংহিতা পন্থী হিন্দু সমাজ বিশিষ্ট প্রণীত নীতি বিভিন্নভাবে গ্রহণ করে থাকে। মৈথিল পন্থী বা মিথিলা অঞ্চলের হিন্দু সমাজ মনে করে যে, স্বামীর পূর্ব অনুমতি ভিন্ন কোন বিধবাই দত্তক গ্রহণ করতে পারে না। অর্থাৎ দত্তক গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বামীর মতামত অবশ্যই প্রয়োজনীয়। মাদ্রাজী সম্প্রদায়ের মতে, স্বামীর মৃত্যুকালে স্ত্রী পৃথক থাকলে এবং সে অবস্থায় স্ত্রী বিধবা হলে স্বামীর ক্ষমতাধিকার ছাড়াই স্ত্রী দত্তক পুত্র গ্রহণ করতে পারেন।
অপরদিকে, বাংলাদেশের লোকেরা মনে করে যে, স্বামীর জীবদ্দশায় পত্র দত্তক গ্রহণে স্বামীর অনুমতি পেলে, স্বামীর মৃত্যুর পরও তা কায়েম থাকে। দত্তক গ্রহণে অনুমতি প্রাপ্ত বিধবা তার বৈধব্যকালেও দত্তক গ্রহণের অধিকারী হয়। বোম্বাই, পাঞ্জাব এবং মাদ্রাজের হিন্দু সমাজ বিধান দিয়েছে যে, কোন বিধবা স্বামী কিংবা তার কোন জ্ঞাতির অনুমতি অনুসারে দত্তক গ্রহণ করতে পারে।
সুতরাং, এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে যে, নিজের ইচ্ছানুসারে কোন বিধবাই দত্তক গ্রহণের অধিকারী নয়। স্বামীর অনুমতি বা তার অবর্তমানে স্বামী স্থানীয় কর্তা ব্যক্তির মতামত অবশ্যই গ্রহণ করতে হয়।
প্রসঙ্গক্রমে, অনুমতির ধরন প্রসঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। দত্তক গ্রহণের ব্যাপারে স্বামীর অনুমতি ত্রিবিধ হতে পারে। যথা- মৌখিক বা বাচনিক, লিখিত এবং উইল। এসব ক্ষেত্রে স্বামী যদি কোন শর্ত আরোপ করে থাকে তাহলে তা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হতে হবে, অন্যথায় দত্তক গ্রহণ বৈধ হবে না।
পত্নী নাবালিকা হলেও স্বামীর অনুমতিক্রমে দত্তক গ্রহণে তার কোন বাধা থাকতে পারে না। কিন্তু পত্নী যদি হাবা হয়, তাহলে তার দত্তক গ্রহণসিদ্ধ হবে না।
আবার কোন বিধবা যদি অসৎ জীবন যাপন করে, কিংবা পুনরায় স্বামী গ্রহণ করে, তাহলে সে দত্তক গ্রহণের অধিকার হতে বঞ্চিত হবে। তবে, আনুষ্ঠানিক প্রায়শ্চিত্তমূলক কার্য সম্পাদন করলে তার দত্তক গ্রহণে কোন বাধা হয় না।
কয়েকটি ক্ষেত্রে অবশ্য বিধবার দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা নিঃশেষিত হয়ে যায়। যেমন-
(ক) যদি দত্তক পুত্র স্ত্রী বা সন্তান বা নিকট আত্মীয় যেমন মা রেখে মারা যায়, সেক্ষেত্রে বিধবা পুনরায় দত্তক গ্রহণে করতে পারে না। এক্ষেত্রে স্বামীর পূর্ব অনুমতি থাকলেও উহা আইনগত কার্যকরী হতে পারে না। দায়ভাগ বিধানের ইহা একটি অপরিবর্তনীয় বিধি।
(খ) কোন যৌথ পরিবারের এক ভাই মারা গেলে অন্য ভাই সম্পূর্ণ সম্পত্তির অধিকারী হয়। দ্বিতীয় ভাইয়ের মৃত্যু হলে তার স্ত্রী গোটা সম্পত্তির মালিক হয়। এক্ষেত্রে প্রথম ভাইয়ের স্ত্রী যদি দত্তক গ্রহণ করে, তবে তা বৈধ হবে না।
বিধবার দত্তক গ্রহণ
কোন স্বামী জীবদ্দশায় স্ত্রীকে দত্তক নেয়ার অনুমতি দিলে স্ত্রী বিধবা অবস্থায় স্বামীর নির্দেশ অনুযায়ী দত্তক নিতে পারেন আবার নাও নিতে পারেন। এই বিষয়ে কোন বাধ্যবাধকতা নাই। দীর্ঘদিন এ ক্ষমতা প্রয়োগ না করিলেও তাহা তামাদি হইবে না। একজন মহিলা বিধবা হওয়ার ৩০ বৎসর পরেও স্বামীর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দত্তক নিতে পারেন। স্ত্রীকে একবার ক্ষমতা দিয়ে স্বামী প্রয়োজন বোধে তাহা প্রত্যাহারও করতে পারে।
হিন্দু মহিলাদের দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা সম্পর্কে বশিষ্টের শাস্ত্রাংশ সমধিক উল্লেখযোগ্য। বশিষ্ট বলেন "কোন মহিলাকে তাহার স্বামীর সম্মতি ব্যতীত কোন পুত্র দত্তক দিতে অথবা দত্তক লইতে দিবে না।" এতে প্রতিয়মান হয় যে, হিন্দু মহিলারা দত্তক গ্রহণে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত নয়। তবে হিন্দু মহিলাদের ক্ষেত্রে একমাত্র স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন মহিলা দত্তক গ্রহণ করিতে পারেন না। স্ত্রী শুধু তাহার স্বামীর জন্য দত্তক গ্রহণ করিতে পারে। উপরোক্ত শাস্ত্রাংশ অনুযায়ী কেবলমাত্র স্বামীর অনুমতি থাকিলে স্ত্রী দত্তক গ্রহণ করিতে পারে। কিন্তু এই অনুমতি কখন দেওয়া প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ বিভিন্ন মতামত উপস্থাপন করিয়াছেন। কোন কোন শাস্ত্রবিদগণ মনে করেন এই অনুমতি অবশ্যই দত্তক গ্রহণের সময় দিতে হবে। সেজন্য বিধবা কখনই দত্তক গ্রহণ করিতে পারে না। অপর শ্রেণির শাস্ত্রবিদগণ মনে করেন বিধবা তাহার স্বামীর সগোত্রীয়দের মধ্যে যাহারা তাহার অভিভাবক তাহাদের অনুমতি লইয়া দত্তক গ্রহণ করিতে পারে। ব্যবহার শাস্ত্রবিদদের তৃতীয় একটি দল মনে করেন যে, যেহেতু
স্বামীর মৃত আত্মার কল্যাণার্থে দত্তক গ্রহণ করা হয় সুতরাং স্বামীর নিকট হইতে বিপরীত মর্মে কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকিলে দত্তক গ্রহণে স্বামীর সম্মতিকে অনুমান করিয়া লইতে হইবে। তবে স্বামীর জীবদ্দশায় স্বামীর সম্মতি ব্যতীত স্ত্রী কখনো দত্তক গ্রহণ করিতে পারে না। এ বিষয়ে সকল মতপন্থীই একমত।
মিথিলা মতপন্থীদের মতে দত্তক গ্রহণের সময় স্বামীর সম্মতি একান্তভাবে প্রয়োজন। সুতরাং বিধবা কখনই দত্তক গ্রহণ করিতে পারে না। এমনকি তাহার স্বামী কর্তৃক ব্যক্ত ক্ষমতা দেওয়া থাকিলেও পারিবে না।
বেঙ্গল এবং বেনারস মতপন্থিরা বশিষ্টের শাস্ত্রাংশকে এইভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, স্বামী তার জীবদ্দশায় দত্তক গ্রহণের জন্য ব্যক্ত সম্মতি দিয়া থাকিলে তাহার মৃত্যুর পর সেই সম্মতি অনুযায়ী তাহার বিধবা স্ত্রী দত্তক গ্রহণ করিতে পারিবে। এই ক্ষমতা ব্যক্ত অথবা অব্যক্ত হতে পারে।
বোম্বে মতপন্থিরা মনে করেন, স্বামীর মৃত্যুর পর তাহার আত্মার কল্যাণে যখন দত্তক গ্রহণ করা হইবে সে ক্ষেত্রে বশিষ্টের এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হইবে না। অর্থাৎ বিধবা তাহার স্বামীর অনুমতি ছাড়াই দত্তক গ্রহণ করিতে পারিবে।
মাদ্রাজ মতপন্থিরা মনে করেন যে সকল সপিণ্ড স্বামীর মৃত্যুর পর তাহার বিধবা স্ত্রীর অভিভাবক হইবে, বিধবা সেই সকল অভিভাবকদের অনুমতি লইয়া দত্তক গ্রহণ করিতে পারে। তবে বিধবা তাহার স্বামীর সপিণ্ডদের অনুমতি ব্যতীত দত্তক গ্রহণ করিতে পারিবে না। এনকি স্বামীর মৃত্যুর সময় স্ত্রী পৃথক বসবাস করিলেও এই অনুমতি গ্রহণ করিতে হইবে। দত্তক গ্রহণে স্বামী কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিলে বিধবা কখনো দত্তক গ্রহণ করিতে পারিবে না।
[মাগনি বাঈ গুলাল চান্দ বনাম সুগম চান বাইখাম চান্দ (১৯৫১) ৩ ডিএলআর (পিসি) ২৫১] মামলায় বলা হয়েছিল যে, মাদ্রাজ এবং পাঞ্জাব ব্যতীত ভারতের অন্য সকল অঞ্চলে প্রথানুসারে জৈনদের মধ্যে বিধবা সম্মতি ছাড়াই দত্তক গ্রহণ করিতে পারে। এবং যদি কেহ ইহার বিপরীতে কোন পারিবারিক বা স্থানীয় প্রথা দাবি করে তবে তাহা প্রমাণের ভার তাহার উপর।
বিধবা তার স্বামীর অনুমতি ব্যতীত দত্তক গ্রহণের শর্তসমূহ
১। স্বামী যদি ব্যক্ত বা অব্যক্ত কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিয়া থাকে তাহা হইলে বিধবা দত্তক গ্রহণ করিতে পারিবে না।
২। যদি মৃত্যুকালে বিধবার স্বামী পৃথক থাকে তাহা হইলে তাহাকে দত্তক গ্রহণের জন্য তাহার শ্বশুরের অনুমতিই যথেষ্ট। যদি শ্বশুর জীবিত না থাকে তাহা হইলে তাহাকে তাহার স্বামীর সপিণ্ডদের অনুমতি লইতে হইবে।
৩। স্বামী অবিভক্ত কোপার্সনার এবং বিভক্ত সপিণ্ড রাখিয়া মারা গেলে বিধবাকে অবিভক্ত কোপার্সনারদের অনুমতি লইতে হইবে।
৪। মৃত্যুকালে যদি বিধবার স্বামী একান্নবর্তী থাকে তাহা হইলে দত্তক গ্রহণের জন্য তাহার শ্বশুরের অনুমতি লইতে হইবে এবং দত্তক গ্রহণের জন্য এই অনুমতিই যথেষ্ট। যদি শ্বশুর জীবিত না থাকে তাহা হইলে তাহার স্বামীর ভ্রাতা অথবা অন্যান্য সেই সকল উত্তরাধিকারীদের অনুমতি লইতে হইবে যাহাদের উপর উত্তরজীবী নীতি অনুসারে তাহার স্বামীর স্বত্ব বর্তাইবে।
৫। স্বামীর আত্মীয়দের সম্মতি গ্রহণ করার পর বিধবার দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা তাহার স্বামীর সহিত সহব্যাপী হইয়া পড়ে।
৬। মৃত্যুকালে স্বামী একান্নবর্তী থাকলে এবং পরবর্তীতে কোপার্সনারগণ পৃথক হইলেও বিধবা তাহাদের সম্মতি লইয়া দত্তক গ্রহণ করিতে পারে।
বোম্বের যে কোন বিধবা স্বামীর অনুমতি ব্যতীত দত্তক গ্রহণের শর্তাবলি
১। স্বামী যদি ব্যক্ত বা অব্যক্ত কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিয়া থাকে তাহা হইলে বিধবা দত্তক গ্রহণ করিতে পারিবে না।
২। যদি মৃত্যুকালে বিধবার স্বামী পৃথ থাকে এবং যদি বিধবা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি লাভ করিয়া থাকে তাহা হইলে তাহাকে দত্তক গ্রহণের জন্য তাহার স্বামীর সপিওদের অনুমতির প্রয়োজন হইবে না।
৩। যদি দুই বা ততোধিক বিধবা থাকে তাহা হইলে জ্যেষ্ঠ বিধবা কনিষ্ঠা বিধবাদের সম্মতি ছাড়াই দত্তক গ্রহণ করিতে পারিবে।
৪। মৃত্যুকালে যদি বিধবার স্বামী একান্নবর্তী থাকে এবং যদি বিধবা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি লাভ না করিয়া থাকে তাহা হইলে তাহাকে দত্তক গ্রহণের জন্য তাহার স্বামীর জ্ঞাতিদের সম্মতি ছাড়াই দত্তক গ্রহণ করিতে পারিবে।
একমাত্র বোম্বে মতবাদ ব্যতীত অন্য সকল মতবাদ অনুযায়ী বিধবা তাহার নিজের ক্ষমতায় দত্তক গ্রহণ করিতে পারে না। স্বামী কর্তৃক ক্ষমতা প্রাপ্ত হইয়া তাহাকে কতগুলি সীমাবদ্ধতা সহকারে দত্তক গ্রহণ করিতে হয়। দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা স্বামীর এবং এই ক্ষমতা তাহার স্ত্রীর উপর ন্যস্ত করিতে পারে।
হিন্দু আইনে প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ব্যক্তি এবং যাহার ভালো-মন্দ বিচার করার বয়স হইয়াছে সে তাহার স্ত্রীকে তাহার মৃত্যুর পর পুত্র দত্তক লইবার জন্য ক্ষমতা অর্পণ করিতে পারে। দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা একমাত্র স্ত্রীকেই দেয়া যায় অন্য কোন ব্যক্তিকে নয়। স্ত্রীর সাথে অন্য কাউকে যৌথভাবে এ ক্ষমতা দেয়া হলে তাহা বাতিল হয়ে যাবে। তবে কোন হিন্দু তাহার স্ত্রীকে কোন বিশেষ ব্যক্তির সহিত পরামর্শ সাপেক্ষে দত্তক গ্রহণ করার নির্দেশ দিতে পারে। এ ধরনের শর্তের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যক্তির সহিত পরামর্শ না করিয়া দত্তক গ্রহণ করিলে তাহা অবৈধ হইবে। যদি কোন ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক বিধবা থাকে এবং যদি দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা কেবলমাত্র তাহাদের মধ্যে একজনকে দেওয়া হইয়া থাকে তাহা হইলে সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাপ্রাপ্ত বিধবা অন্যান্য বিধবাদের সহিত পরামর্শ না করিয়া দত্তক গ্রহণ করিতে পারে। যদি পৃথকভাবে প্রত্যেক বিধবাকে ক্ষমতা দেয়া হয় তাহলে জ্যেষ্ঠ বিধবা দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা প্রয়োগে অগ্রাধিকার পাইবেন। দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা মৌখিক বা লিখিত আকারে দেয়া যায়। আবার লিখিত আকারে হলে রেজিস্ট্রি করতে হয়। তবে উইলের মাধ্যমে হলে রেজিস্ট্রি করার প্রয়োজন হয় না।
যদি বিধবাকে কোন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা দেয়া হয় তাহা হইলে সে সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সে আর দত্তক গ্রহণ করিতে পারিবে না [মুতসদ্দি লাল বনাম কুন্দন লাল (১৯০৬) ২৮ এলা ৩৭৭]।
স্বামীর নিকট হইতে দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা পাইয়া থাকিলেও বিধবা তাহা আইনগতভাবে মানিতে বাধ্য নয়। কোন বিধবাকে প্রদত্ত দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা ব্যবহার করিতে বাধ্য করা যাইবে না। সুতরাং তাহার সেই ক্ষমতা ব্যবহার না করা পর্যন্ত উত্তরাধিকারিত্বের ন্যস্তকরণ স্থগিত করা যায় না (জয় কুমার দত্ত বনাম সীতানাথ দত্ত (১৯৫২) ৪ ডিএলআর ৪০০]।
যেখানে স্বামী দত্তক গ্রহণের জন্য অন্য কোন বালকের নাম উল্লেখ করিয়া গিয়াছে সেখানে বিধবার স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। বিধবার দত্তক গ্রহণের ক্ষমতার উপর কোন বিশেষ সীমাবদ্ধতা আরোপ করা না থাকিলে সে এক অবিবাহিত ব্যক্তিকে দত্তক গ্রহণ করিতে পারে।
[মানিক্যমালা বনাম নন্দকুমার (১৯০৬) ৩৩ ক্যাল ১৩০৬] মামলায় প্রিভি কাউন্সিল মন্তব্য করেন 'যদি একবার বিধবার স্বামীর সম্পত্তি তাহার উপর না বর্তাইয়া তাহার স্বামীর মৃত পুত্রের উত্তরাধিকারীদের উপর বর্তায় তাহা হইলে তাহার দত্তক গ্রহণের ক্ষমতার পরিসমাপ্তি ঘটে এবং পরবর্তীতে ঐ সম্পত্তি তাহার নিকট প্রত্যাবর্তন করিলেও তাহার দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা আর পুনরুজ্জীবিত হয় না।
অসতী বিধবার দত্তক গ্রহণ
বোম্বে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, বিধবা অসতী হইলেও অপর কোন ব্যক্তিকে দত্তক গ্রহণের প্রয়োজনীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করার উদ্দেশ্যে নিয়োগ করিয়া দত্তক গ্রহণ করিতে পারে। মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী দত্তক গ্রহণে অসতীত্ব কোন প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করে না; তবে যে বিধবা প্রকৃতপক্ষে ব্যভিচারিণীর ন্যায় জীবনযাপন করিতেছে এবং গর্ভবতী সে দত্তক গ্রহণ করিতে পারে না। যে দত্তক গ্রহণে শূদ্রদের ন্যায় কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি সম্পাদনের প্রয়োজন হয় না সেখানে বিধবা অসতী হইলেও দত্তক গ্রহণ করিতে পারে।
যে বিধবা অসতী অবস্থায় জীবনযাপন করে অর্থাৎ যে বিধবা স্বেচ্ছায় ব্যভিচারিণী হিসাবে জীবনযাপন করে অথবা যে বিধবা পুনরায় বিবাহ করিয়াছে অথবা অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করিয়াছে সে দত্তক গ্রহণ করিতে পারে না। কিন্তু যদি কোন বিধবা মার্জনীয় এবং প্রায়শ্চিত্ত অসতীত্ব ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে প্রায়শ্চিত্ত করিয়া থাকে তাহা হইলে সে অসতীত্ব তাহার দত্তক গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করিবে না।
কোলকাতা হাইকোর্ট এই মর্মে রায় দেন যে, অসতী বিধবা তাহার স্বামী প্রদত্ত ক্ষমতা বলেও দত্তক গ্রহণ করিতে পারে।
বিধবার দত্তক গ্রহণের ক্ষমতার পরিসমাপ্তি
১। বিধবা দত্তক নিলে পরে দত্তকী পুত্র যদি দত্তকী মাতা ব্যতীত অন্য কোন নিকটবর্তী উত্তরাধিকারী রাখিয়া মারা যায়, তবে বিধবার পুনরায় দত্তক নেওয়ার ক্ষমতা লোপ পায়।
যেমন বিধবা একটি দত্তক নিলেন, সেই দত্তক অবিবাহিত অবস্থায় মারা গেলে বিধবা দত্তকী মাতা মৃত দত্তকের উত্তরাধিকারীণী হইবে। এ অবস্থায় বিধবা পুনরায় দত্তক নিতে পারিবেন; কিন্তু ঐ দত্তক যদি বিবাহিত অবস্থায় স্ত্রী রাখিয়া মারা যায়, তবে দত্তকের মৃত্যুর পর তাহার ত্যাজ্যবিত্ত সম্পত্তি দত্তকের বিধবা স্ত্রী পাইবে। এই অবস্থায় দত্তকের বিধবা স্ত্রীকে বঞ্চিত করিয়া দত্তকী মাতা পুনরায় দত্তক গ্রহণ করিতে পারিবে না। এমনকি পরে দত্তকের বিধবা দত্তকের মাতাকে ওয়ারিশ রাখিয়া মারা গেলেও পুনরায় দত্তক গ্রহণ করিতে পারিবে না। অর্থাৎ দত্তকী পুত্র যদি দত্তকী মাতা ব্যতীত অন্য কোন নিকটবর্তী ওয়ারিশ রাখিয়া মারা যায়, তবে দত্তকী মাতার পুনরায় দত্তক নেওয়ার ক্ষমতা লোপ পায়। আর সেই ক্ষমতা একবার লোপ পাইলে তাহা আর পুনরুজ্জীবিত হয় না।
২। অঞ্চল বিশেষে কোন বিধবা অসতী হইলে দত্তক নেওয়ার ক্ষমতা লোপ পায়।
৩। একজন বিধবার পুনরায় বিবাহ হইলে তাহার দত্তক নেওয়ার ক্ষমতা লোপ পায়। বিধবার পুনরায় বিবাহ হইলে সে তাহার পূর্ব স্বামীর দেওয়া ক্ষমতাবলে আর দত্তক নিতে পারে না।
দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা একবার পরিসমাপ্তি ঘটলে তাহা চিরতরে বিলুপ্ত হয় এবং উহাকে আর কখনই পুনরুজ্জীবিত করিতে পারে না। এমনকি যদি পুত্রের নিকট উত্তরাধিকারীদের মৃত্যুর পর সম্পত্তি বিধবার নিকট প্রত্যাবর্তন করে তাহা হইলেও বিধবার দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা পুনরুজ্জীবিত হয় না [মানিক্য মালা বনাম নন্দ কুমার (১৯০৬) ৩৩ ক্যাল ১৩০৬]।
স্বামী মৃত্যুকালে কোন পুত্র, পৌত্র এবং প্রপৌত্র (স্বাভাবিক অথবা দত্তকী) রাখিয়া মারা গেলে বিধবার দত্তক নেওয়ার পূর্ব ক্ষমতা থাকিলেও তাহা লোপ পায়।
হিন্দু আইনে একমাত্র পুত্রকে কি দত্তক দেওয়া যেতে পারে? এ প্রসঙ্গে একটি সিদ্ধান্তিত মামলার উল্লেখ করে আলোচনা কর। [Can an only son be adopted under Hindu Law? Discuss with reference to a leading case]
একমাত্র পুত্র সন্তানকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করা বা প্রদান করা বৈধ কিনা সে সম্পর্কে বিভিন্ন মুনিঋষি বিভিন্ন মত পোষণ করে থাকেন। এ সব মুনিঋষিগণের মধ্যে বশিষ্ট, যৌনক, বুদ্ধনাস প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।
বশিষ্ঠের মতে, একমাত্র পুত্র সন্তানকে যেহেতু পিতৃ বংশের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য থাক প্রয়োজন, সেহেতু তাকে দত্তক হিসেবে দান বা গ্রহণ করা উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে যৌনকের অভিমত হল এই যে, কোন পিতার একমাত্র সন্তানকে দান করা কখনই উচিত নয়। কিন্তু অনেক সন্তানের পিতাকে আগ্রহভরে ইহা করা উচিত। বন্ধনাস যৌনকের মত সমর্থন করেন।
মুনিঋষিগণের এ অভিমত আদেশমূলক না সুপারিশমূলক, তা নিয়ে নানা মতভেদ দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করা যেতে পারে।
১৮৬৮ সালে কলকাতা হাইকোর্ট প্রথম বারের মত উপেন্দ্র নাথ বনাম রাণী প্রসন্ন মামলায় রায় দেন যে, একমাত্র পুত্রকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ বা প্রধান অবৈধ। মহামান্য বিচারপতি দ্বারকা নাথ মিত্র তাঁর রায়ে বলেন যে, হিন্দু সমাজে দত্তক গ্রহণ বা প্রদান, ধর্মীয় অনুভূতি হতে উৎসারিত হলেও ইহার জাগতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে অস্বীকার করা যায় না।
সুতরাং, একমাত্র পুত্রকে দত্তক হিসেবে দান বা প্রদান অবৈধ। কিন্তু শ্রী বালাসু বনাম শ্রী বালাসুর মামলায় প্রিভি কাউন্সিল এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, একমাত্র পুত্রকে দত্তক গ্রহণ বা প্রদান করা নিগতভাবে বৈধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ মুনিঋষিগণের অভিমত উল্লেখ করে প্রিভি কাউন্সিল মন্তব্য করেন যে, তাঁদের মধ্যে কেহই সরাসরি একমাত্র পুত্রের দত্তক প্রদান বা নিষিদ্ধ করেননি। তাদের আবেদন ছিল নৈতিকতার উপর ভিত্তিশীল-- সবাসরি বাতিল বা নাকচ নয়। সুতরাং, একমাত্র পুত্রকে দত্তক হিসেবে গ্রহন বা প্রদান আইনগতভাবে বৈধ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।
একমাত্র পুত্র দত্তক গ্রহণ
একমাত্র পুত্রকে দত্তক গ্রহণের বৈধতা ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত অমীমাংসিত ছিল এবং এ বিষয়ে উপমহাদেশের হাইকোর্ট সমূহের মধ্যে পরস্পর বিরোধী নজির প্রচলিত ছিল। বেঙ্গলে একমাত্র পুত্রের দত্তক গ্রহণকে বৈধ বলিয়া গণ্য করা হইত। মাদ্রাজ এবং এলাহাবাদে অবশ্য একমাত্র পুত্রের দত্তক গ্রহণকে বৈধ বলিয়া গণ্য করা হইত।
একমাত্র পুত্রের দত্তক গ্রহণের বিরুদ্ধে 'বশিষ্ট' ও বৌদ্ধায়ন বলেনঃ 'কোন ব্যক্তিকে একমাত্র পুত্র দান বা গ্রহণ করিতে দিবে না। কারণ তাহকে পূর্ব পুরুষদের অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পাদনের জন্য অবশ্যই পিতার পরিবারে অবস্থান করিতে হইবে।'
'সনক' বলেন যে, "যে ব্যক্তির একটি মাত্র পুত্র আছে সে যেন কখনই ঐ পুত্রকে দান না করে।"
হিন্দু শাস্ত্রে একমাত্র পুত্রের দত্তক গ্রহণ সম্পর্কে যে নিষেধাজ্ঞা লিপিবদ্ধ ছিল এবং রাজা উপেন্দ্রলাল রায় বনাম রাণী প্রসন্নময়ী মামলায় বিচারপতি দ্বারকানাথ মিত্র হিন্দু আইন ও ধর্মের অবিচ্ছেদ্যতা সম্পর্কে যে মন্তব্য করেন তাহা বিস্তারিত আলোচনা করেন।
মনু দত্তক গ্রহণকে ধর্মের কারণে ব্যবহার করতে উপদেশ দেন কিন্তু কোন অপুত্রক হিন্দুর উপর পুত্র দত্তক গ্রহণের জন্য কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নাই।
"বশিষ্ট" এর শাস্ত্রাংশের উপর মন্তব্য করিতে গিয়া প্রিভি কাউন্সিলের বিজ্ঞ বিচারক মন্ডলী মতামত দেন যে, "বশিষ্ট' সন্তানসন্ততির উপর পিতার কার্যত অসীম ক্ষমতার কথা বলিয়াছেন এবং একমাত্র পুত্রকে দত্তক দেওয়া বা নেওয়া উচিৎ নয়। তাহাদের মতে উহাকে একমাত্র এই বলিয়া ব্যাখ্যা করা যায় যে, 'বশিষ্ট' তাহার কথিত শাস্ত্রাংশে শুধুমাত্র পিতার নিকট অনুরোধ করিয়াছেন যে, 'তিনি যে তাহার একমাত্র পুত্রকে দত্তকের মাধ্যমে আদান-প্রদান করার ক্ষমতা ব্যবহার না করেন। পিতার ক্ষমতাকে এ বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয় নাই।
"শানক" এর শাস্ত্রাংশ সম্বন্ধে প্রিভি কাউন্সিল বলেন যে একমাত্র পুত্রকে দত্তক না দেওয়ার নির্দেশ একাধিক পুত্রকে দত্তক দেওয়ার নির্দেশের মত একই ভাষায় ব্যক্ত করা হইয়াছে। যেখানে দুইজন পুত্র আছে সেখানে একজন পুত্রকে দান করা শাস্ত্রাংশ নিষেধ করিয়াছেন; ইহা কোনভাবে বাধ্যতামূলক হইতে পারে না। এ কারণে 'সানক' এর শাস্ত্রাংশকেও কেবল নৈতিক আদেশ বলিয়া গ্রহণ করা হইয়াছে।
বিচারপতি মিত্রের মতে 'দত্তকের বিষয়বস্তু হিন্দুধর্ম হইতে অবিচ্ছেদ্য এবং ধর্মীয় ও আইনগত নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সকল পার্থক্য দত্তক গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলিয়া ধরিয়া লইতে হইবে। এই মন্তব্য সম্পর্কে প্রিভি কাউন্সিলের বিজ্ঞ বিচারক মন্ডলী বলেন যে, ইহা যুক্তিপূর্ণ নয় কারণ বিশ্বের কোন আইন ব্যবস্থাই আইনত কর্তব্যের কার্যক্ষেত্রকে ধর্মীয় বা নৈতিক কর্তব্যের সহিত সমবিস্তৃত করিতে পারে না। এ বিষয়ে হিন্দু আইন কোন ব্যতিক্রম নয়।
প্রিভি কাউন্সিলের বিচারক মন্ডলী ইহাও নির্দেশ দেন যে, উপমহাদেশের অনেক অংশে প্রথানুসারে একমাত্র পুত্রের দত্তক গ্রহণ বৈধ এবং ইহার ফলে সামাজিক পদাবনতি ঘটে না। প্রিভি কাউন্সিল এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, উল্লেখিত শাস্ত্রাংশ কোল সুপারিশমূলক, কোন ক্রমে বাধ্যতামূলক নয়'। সুতরাং একমাত্র পুত্রকে দত্তক গ্রহ। করা আইনগতভাবে বৈধ।
ভাগিনেয় বা বোনের পুত্রকে দত্তক গ্রহণ
কোন দত্তক গ্রহণই বৈধ হইবে না যদি না যে ব্যক্তিকে দত্তক পুত্ররূপে গ্রহণ করা হইবে সে আইনগতভাবে দত্তকের উপযোগী বলিয়া গণ্য হয়। যে ব্যক্তিকে দত্তক পুত্ররূপে গ্রহণ করিতে হইবে তাহাকে অবশ্যই নিম্ন বর্ণিত যোগ্যতা সম্পন্ন হইতে হইবেঃ
(ক) হিন্দু হইতে হইবে,
(খ) পুরুষ (বালক) হইতে হইবে,
(গ) দত্তক পিতার একই বর্ণের হইতে হইবে।
একই বর্ণের মধ্যস্থিত উপবর্ণের মধ্যে অনুষ্ঠিত দত্তক গ্রহণ বৈধ বলিয়া স্বীকৃত হইবে [সুধাংশুশেখর বনাম অনাথ বন্ধু (১৯৭৬) ২৮ ডিএল আর ৩১৩],
(ঘ) এইরূপ ব্যক্তি হইবে, যাহার মাতাকে দত্তক পিতা আইনগতভাবে বিবাহ করিতে পারিত; কন্যার পুত্রকে দত্তক গ্রহণে, নিষেধাজ্ঞা থাকিলেও সে নীতি শীথিল হইয়া গিয়াছে।
কন্যার পুত্রকে দত্তক গ্রহণ করা যাইবে [বিমল চন্দ্র চৌধুরী বনাম শুভ্রমণিয়া কৃষ্ণা চৌধুরী (১৯৯৪) ৪৬ ডিএল আর ৯০]
(ঙ) এরূপ ব্যক্তি হইতে হইবে যে বোবা ও বধির নয়।
(চ) এরূপ ব্যক্তি হইবে যাহার উপনয়ন হয় নাই বেঙ্গল বেনারস, বিহার ও উড়িষ্যাতে উপনয়নের পূর্বে দত্তক গ্রহণ করিতে হয়, মাদ্রাজেও একই নিয়ম অনুসরণ করা হয়। তবে দত্তক পুত্র যদি দত্তক পিতার একই গোত্রের হয় তাহা হইলে উপনয়নের পরও দত্তক গ্রহণ করা যায়। তবে এক্ষেত্রে দত্তক পুত্রের বিবাহের পূর্বে দত্তক গ্রহণ করিতে হইবে। আবার বোম্বে অঞ্চলে যে কোন বয়সে ব্যক্তিকে দত্তক গ্রহণ করা যায়। দত্তক হিসাবে গ্রহণের পূর্বেই দত্তক পুত্রের উপনয়ন হইতে পারে, সে দত্তক পিতা অপেক্ষা বয়ষ্ক হইতে পারে, বিবাহিত এবং সন্তানসন্ততির পিতাও হইতে পারে।
(ছ) মাদ্রাজ, নাগপুর এবং এলাহাবাদে সে এরূপ ব্যক্তি হইবে যাহার বিবাহ হয় নাই।
(জ) সে এরূপ ব্যক্তি হইবে যে সে অনাথ নয় [আব্দুল মান্নান বনাম মুহম্মদ সুলতান কাজী (১৯৮২) ৩৪ ডিএলআর ২৩৬]।
(ঝ) সে অপর ব্যক্তি কর্তৃক পূর্বে দত্তক পুত্র হিসাবে গৃহীত হয় নাই,
(ঞ) সে তাহার পিতমাতার একমাত্র পুত্র নয়।
[ভগবান সিং বনাম ভগবান (১৮৯৮) ২১ এলা ৪১২] মামলায় প্রিভি কাউন্সিল দত্তক মীমাংসায় দেওয়া অর্থকে গ্রহণ করে এবং এই মর্মে সিদ্ধান্ত দেন যে, যে বালকের মাতার উপর দত্তক গ্রহণকারী 'নিয়োগ' প্রয়োগ করিতে কিংবা যাহার মাতাকে দত্তক গ্রহণকারী বিবাহ করিতে না পারিত তাহাকে দত্তক গ্রহণ করা অবৈধ। এই নিষেধাজ্ঞা অবশ্য শূদ্রদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ইহাকে ভিত্তি করে অতিসম্প্রতি বহু মামলায় কন্যার পুত্র, ভগ্নীর পুত্র এবং মাতার ভগ্নীর পুত্রের ক্ষেত্রে দত্তক গ্রহণ নিষেধাজ্ঞাকে সীমাবদ্ধতায় রেখেছে।
সনকের উপমায় বলা হয়েছে যে, "বালক অবশ্যই পুত্রের প্রতিকৃতি বহন করিবে।" আবার সনকের উপমার মূল অর্থ যাহাই থাকুক না কেন দত্তক মীমাংসা ইহাকে এইভাবে ব্যাখ্যা করিয়াছে যে দত্তক বালককে এইরূপ হইতে হইবে, "যাহার মাতার উপর 'নিয়োগ' পদ্ধতি প্রয়োগ করিয়া দত্তক গ্রহণকারী সন্তান উৎপাদন করিতে পারিত।" ইউরোপীয় পণ্ডিতগণ সনকের উপমার ব্যাখ্যা করিতে গিয়া বলেন, "বালককে এইরূপ হইতে হইবে যাহার মাতাকে, যখন কুমারী ছিল, দত্তক পিতা বিবাহ করিতে পারিত।"
উচ্চতর তিন শ্রেণির হিন্দুদের বিষয়ে আদালত এই মর্মে রায় দিয়েছেন যে, প্রথা দ্বারা অনুমোদিত হইয়া থাকিলে এই নিয়মের দ্বারা কোন দত্তক গ্রহণ নিষিদ্ধ ঘোষিত হইয়া থাকিলেও তাহা বৈধ দত্তকরূপে পরিগণিত হইতে পারে।
তবে ইহা স্মরণ রাখিতে হইবে যে, যদি প্রথা সিদ্ধ হয় তাহা হইলে কন্যার পুত্র, ভগ্নীর পুত্র এবং মাতার ভগ্নীর পুত্রকেও বৈধভাবে দত্তক গ্রহণ করা যায়।
উপরম্ভ দত্তক গ্রহণের বৈধতার ক্ষেত্রে 'ফ্যাকটাম ভ্যলেট' নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিয়া থাকে। তবে দত্তক গ্রহণের ঘটনা ও ইহার বৈধতার মধ্যে পার্থক্য রহিয়াছে।
[শ্রীবালুসু বনাম শ্রীবালুসু (১৮৯৯) ২১ মাদ ৩৯৮) মামলায় প্রিভি কাউন্সিল পূর্ববর্তী নজীরসমূহ পর্যালোচনা করিয়া এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে একমাত্র পুত্রকেও "ফ্যাক্টাম ভ্যালিট" নীতি অনুযায়ী দত্তক দেওয়া ও গ্রহণ করা যায়।
বৈধ দত্তকের ফলাফল
অনেক সময় দত্তক গ্রহণকে নবজন্ম বলে আখ্যায়িত করা হয়। দত্তক গ্রহণকে পুনঃজন্ম বলে ধরা যেতে পারে। কারণ দত্তক নেওয়ার ফলে বালক তাহার নিজের পিতার পরিবার ত্যাগ করিয়া এবং ঐ পরিবারের সহিত সকলপ্রকার সংযোগ ছেদ করিয়া দত্তক পরিবারে আগমন করে এবং সেখানে সে এমনভাবে তাহার স্থান করিয়া লয় যে, সে যেন ঐ পরিবারের একজন সদস্য হিসাবে জন্মগ্রহণ করিয়াছে। অর্থাৎ কতিপয় বিষয় ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে দত্তকী পুত্র দত্তকী পিতার স্বাভাবিক পুত্রের মর্যাদা ও অধিকার নিয়া নূতন পরিবারে আসে। ব্যতিক্রমগুলি নিম্নরূপঃ
১। দত্তকী তাহার স্বভাবিক পিতামাতার সংসারে থাকিলে যাহাদের বিবাহ করিতে পারিত না, দত্তকী হওয়ার পরও তাহাদের বিবাহ করিতে পারিবে না। কারণ দত্তকী হওয়ার পর আইনত অধিকারের পরিবর্তন হইলেও পূর্বের রক্তের সম্পর্ক পরিবর্তন হয় না বা মুছে যায় না।
২। উত্তরাধিকারে বঞ্চিত কোন ব্যক্তি কোন দত্তক নিলে দত্তকী ব্যক্তি তাহার দত্তকী পিতামহের কোন সম্পত্তির উত্তরাধিকারিত্ব প্রাপ্ত হয় না।
যেমন- "ক" তাহার এক অন্ধ পুত্র 'খ' ও অন্ধ পুত্রের এক সুস্থ পুত্র 'গ' কে রাখিয়া মারা গেল। এ ক্ষেত্রে 'ক' এর যাবতীয় সম্পত্তি অন্ধ পুত্রের এক সুস্থ পুত্র 'গ' অর্থাৎ 'ক' এর পৌত্র পাইবে। যদি 'ক' এর অন্ধ পুত্র 'খ' এর কোন পুত্র না থাকিত এবং সে কোন দত্তক 'ঘ' কে গ্রহণ করিলে ঐ দত্তকী পৌত্র পরিচয়ে 'ঘ' "ক" এর সম্পত্তি পাইবে না।
৩। একজন দত্তক নেওয়ার পর যদি দত্তকী পিতা অপর একটি স্বাভাবিক পুত্র জন্ম দেয় তবে ব্যতিক্রম হবে নিম্নরূপ:
(ক)। বাংলাদেশে দত্তকী পুত্র দত্তকী পিতার ত্যাজ্য বিত্তের ১/৩ অংশ পায়। এই নিয়ম শুদ্রের বেলায় প্রযোজ্য নহে। শুদ্রের ক্ষেত্রে দত্তকী পুত্র স্বাভাবিক পুত্রের সহিত সমান অংশ পায় [অতিশ মোহন বনাম নিরোদ মোহন ২০ সি ডব্লিউ এন ৯০১]
(খ)। বেনারস মতপন্থি অনুযায়ী দত্তকী পুত্র দত্তকী পিতার ত্যাজ্য বিত্তের ১/৪ অংশ পায়।
(গ)। বোম্বে ও মাদ্রাজ মতপন্থি অনুযায়ী দত্তকী পুত্র দত্তকী পিতার ত্যাজ্য বিত্তের ১/৫ অংশ পায়।
(ঘ)। দত্তক পুত্র তাহার স্বাভাবিক পিতার নিকট হইতে উত্তরাধিকারী সূত্রে কোন সম্পত্তি পায় না। তবে দত্তকের পূর্বে তাহার নিজস্ব কোন সম্পত্তি থাকিলে দত্তকের পরও সেই সম্পত্তিতে তাহার পূর্ববৎ অধিকার থাকে।
দত্তক গ্রহণের ফলে দত্তক পুত্রের উপর নতুন অধিকার ও দায়িত্ব অর্পিত হইবে। ইহার ফলে সে তাহার দত্তক পিতার পরিবারে নিষিদ্ধ পর্যায়ের মধ্যে বিবাহ করিতে পারিবে না, এবং তাহার দত্তক পিতার সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করিবে। হিন্দু আইনে পার্থিব এবং আধ্যাত্মিক সকল বিষয়ে দত্তকপুত্র সহজাত পুত্রের সমপর্যায়ে অবস্থান করে । অনাথ বন্ধু গুহ বনাম সুধাংসু শেখর দে (১৯৭৯) ডিএলআর (এডি) ৩১২)।
দত্তক গ্রহণকে পুনঃজন্ম বলে ধরা যেতে পারে বলা হলেও দত্তক পুত্র সম্পূর্ণরূপে অতীতকে মুছিয়া ফেলিয়া দত্তক পরিবারে তাহার জীবন শুরু করে না, কারণ সে তাহার সহিত তাহার রক্তের সম্পর্ক বহন করে।
যেক্ষেত্রে শেষ জীবিত কোপার্সনারের মৃত্যুর পর সম্পত্তি তাহার উত্তরাধিকারীদের, যেমন তাহার বিধবা স্ত্রী অথবা কোন কোপার্সনারের উপর অর্পিত হয়, সেক্ষেত্রে পূর্বমৃত কোন কোপার্সনারের বিধবা স্ত্রীর দত্তক গ্রহণের ক্ষমতা লোপ পায়।
এই অভিমতকে [অনন্ত বনাম সংকর (১৯৪৪) বোম) মামলায় প্রিভি কাউন্সিল বাতিল করে দেন। এ মামলার সিদ্ধান্ত ছিল যে, দত্তক পুত্রের অধিকার দত্তক পিতার মৃত্যুর তারিখ হইতে আরম্ভ হয় এবং যখনই দত্তক গ্রহণ করা হউক না কেন সত্য বলিয়া ধরিয়া লইতে হইবে যে, দত্তক পুত্র দত্তক পিতার মৃত্যুর সময় তাহার পুত্ররূপে সম্পর্কিত ছিল সুতরাং দত্তক পিতার মৃত্যুর সময় যদি কোন কোপার্সনার অবস্থিত থাকে তাহা হইলে জীবিত কোপার্সনারের মৃত্যুর ফলেই ইহার পরিসমাপ্তি ঘটুক অথবা অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে পরবর্তী বাটোয়ারা অনুষ্ঠিত হওয়ার ফলেই ইহার পরিসমাপ্তি ঘটুক মৃত কোপার্সনারের বিধবা স্ত্রী বৈধভাবে কোন দত্তক গ্রহণ করিয়া থাকিলে প্রথম ক্ষেত্রে শেষ জীবিত ওয়ারিশের হাতে অবস্থিত সম্পত্তি হইতে ঐ ওয়ারিশ বঞ্চিত হইবে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বাটোয়ারা শেষ হইয়া যাইবে। এবং দত্তক পুত্র তখন পারিবারিক সম্পত্তিতে অংশ দাবি করিতে পারিবে যেন পরিবার তখনো যৌথ রহিয়াছে এবং কোন বাটোয়ারা অনুষ্ঠিত হয় নাই। এই মতবাদকে পশ্চাদমুখী মতবাদ বলে।
এই পশ্চাদমুখী মতবাদের ব্যতিক্রম আছে তাহা হলো যদি দত্তক পিতার মৃত্যুর পর হইতে দত্তক গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কোন পুরুষ বা মহিলা উত্তরাধিকারী আইনগতভাবে পারিবারিক সম্পত্তি হস্তান্তর করিয়া থাকে, তাহা হইলে তাহা দত্তক পুত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর হইবে। বিধবা অথবা বিধবা মাতা দত্তক গ্রহণ করিলে যে সম্পত্তি তাহার উপর ন্যস্ত হইয়াছিল সে সম্পত্তি তাহার নিকট হইতে দত্তক পুত্রের উপর বর্তাইবে।
তবে যদি দত্তক গ্রহণের পূর্বে কোন বৈধ হস্তান্তর হইয়া থাকে তাহা হইলে হস্তান্তর বলবৎ থাকিবে। অন্য কোন অবস্থায় দত্তক গ্রহণের ফলে কোন ব্যক্তিকে তাহার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না [রাম দাসী পাল বনাম সরলা দাস্যা (১৯৬২) ১৪ ডিএল আর ৮১০)।
উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি কোন সগোত্রীয়ের নিকট বর্তায় এবং ঐ সগোত্রীয়ের মৃত্যুর পর যদি কোন পুত্র দত্তক গ্রহণ করা হয়, তাহা হইলে সগোত্রীয়ের উত্তরাধিকারীর উপর যে সম্পত্তি অর্পিত হইয়াছে দত্তক গ্রহণের ফলে তাহাকে সে সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না [জিভাজি বনাম হনমন্ত (১৯৫০) বোম ৫১০)।
[জিভাজি বনাম হনমস্ত (১৯৫০) বোম ৫১০) মামলার রায় (শ্রীনিবাস বনাম শ্রী (১৯৭৩) ২ এস সি সি ৩২৭] মামলার রায়ের মাধ্যমে অনুমোদন করিয়াছেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট।
কৃত্রিম পুত্র
১৯৫৬ সালে হিন্দু দত্তক আইন পাস হওয়ার পূর্বে পর্যন্ত ভারতের মিথিলা ও উহার সন্নিবেশিত অঞ্চল (জেলা) সমূহে কৃত্তিম দত্তহ গ্রহণ প্রচলিত ও সেখানকার আইন দ্বারা স্বীকৃত ছিল। পুরুষ এবং মহিলা উভয়েই এইরূপ দত্তক গ্রহণ করিতে পারিত। এরূপ দত্ত গ্রহণের বৈশিষ্ট্য ছিল নিম্নরূপ:
১। এই নিয়মে কৃত্তিম দত্তক নেয়ার জন্য দত্তকী পুত্রের সম্মতির প্রয়োজন হইত। সেই কারণে এরূপ দত্তকীকে কমপক্ষে ১৬ বছর বয়সি হইতে হইত।
২। কৃত্তিম দত্তক নিতে হইলে দত্তক এবং দত্তকী পিতার একই বর্ণ হইতে হইত। দত্তক পুত্রের বয়স ও দত্তক পিতার সহিত দত্তকীর সম্পর্কের কোন বিবেচনার বিষয় ছিল না।
৩। কৃত্তিম দত্তক গ্রহণের কোন অনুষ্ঠান এমনকি দত্তকের শারীরিকভাবে আদান-প্রদানেরও দরকার ছিল না।
'কৃত্তিম দত্তক গ্রহণের বৈধতার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা কোন দলিলের প্রয়োজন হয় না [কমলা প্রসাদ বনাম মুরলী মনোহর (১৯৩৪) ১৩ পাট ৫৫০)।
৪। এই নিয়মে স্বামী ও স্ত্রী আলাদাভাবে দত্তক গ্রহণ করিতে পারিত। স্বামী তার নিজের জন্য একটি এবং স্ত্রীও তার নিজের জন্য আরেকটি কৃত্তিম দত্তক পুত্র গ্রহণ করিতে পারিত। কৃত্তিম দত্তক পুত্র নিতে স্ত্রীর স্বামীর অনুমতির প্রয়োজন ছিল না। বিধবা তার স্বামীর সপিন্ডের সম্মতি ছাড়াই তাহার নিজের জন্য দত্তক নিতে পারিত। স্বামীর অনুমতি থাকিলেও বিধবা স্বামীর জন্য দত্তক নিতে পারিত না।
৫। কৃত্তিম দত্তক তাহার স্বাভাবিক পিতা এবং দত্তকী পিতা উভয়ের নিকট হইতে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাইত। অর্থাৎ কৃত্তিম পুত্র তাহার জন্মগত পিতার পরিবারের উত্তরাধিকার হারায় না। দত্তক পরিবারে যে ব্যক্তি তাহাকে দত্তক গ্রহণ করিয়াছে সে কেবল তাহার নিকট হইতে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি লাভ করিতে পারে, অপর কোন ব্যক্তির নিকট হইতে নয়।
0 Comments