রিট (Writ) কি? রিটের উৎপত্তি হয়েছে কোথা থেকে? রিট পিটিশন (Writ Petition) কি? রিট জারীর এখতিয়ার কোন আদালতের? রীটের প্রকারভেদ কিংবা এবং হাইকোর্ট বিভাগ স্ব-উদ্যোগে [suo motu] রিট জারি করতে পারে কিনা?
রিট (Writ) পিটিশন
সংবিধান সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগকে শুধুমাত্র একটি বিষয়ে আদি (Original) এখতিয়ার দিয়েছে তাহলো সংবিধানের ১০২ নং অনুচ্ছেদ। সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ দেশের সকল নাগরিককে দিয়েছে মৌলিক অধিকার। নাগরিকের এরূপ মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে তা বলবৎ করার এবং বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনাকে কার্যকর করার এখতিয়ারই হলো হাইকোর্ট বিভাগের রিট এখতিয়ার। আর তাই কোন নাগরিক মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগে যে আবেদন করতে পারেন তাই হলো রিট আবেদন বা রিট পিটিশন। এরূপ পিটিশন পেলে হাইকোর্ট বিভাগ সংবিধানের ১০২ নং অনুচ্ছেদের ক্ষমতা বলে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার যে আদেশ দিতে পারেন তাই হলো রিট।
রিটের উৎপত্তি ও শ্রেণী:
রিটের উৎপত্তি হয় ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ডের রাজা বা রানী জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য বা অধিকার ক্ষুন্ন হবে এমন কোন কাজ থেকে রাজ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরত রাখার জন্য তাদের উপর রিট জারি করতেন। কালক্রমে এ রিট জনগণের একটি অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। ব্রিটিশ শাসনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও রিটের প্রচলন অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে রিট সম্পর্কে আলোচনা থাকলেও সেখানে পাঁচ প্রকার রিটের উল্লেখ নেই তবে উক্ত অনুচ্ছেদে প্রতিটি রিটের যে উপাদান বর্ণিত হয়েছে তার বিশ্লেষণ অনুযায়ী নিম্নোক্ত রিট রয়েছে–
(১) Writ of Prohibition (প্রহিবিসন):নিষেধাজ্ঞা মূলক রিট;
(২) Writ of Certiorari ( ছারসিওরারি):উৎপ্রেষণ রিট (আদেশ অকার্যকর ঘোষণা);
(৩) Writ of Mandamus (ম্যান্ডামাস):নির্দেশনামূলক রিট;
৪) Writ of Quo Warranto (কুয়া ওয়ারেন্টো):কারণ দর্শানোর রিট;এবং
(৫) Writ of Habeas Corpus (হেবিয়াস কর্পাস):বন্দি প্রদর্শন রিট।
Writ of Prohibition (প্রহিবিসন):নিষেধাজ্ঞা মূলক রিট
অধস্তন আদালত, ট্রাইব্যুনাল, কর্তৃপক্ষ, সংস্থা বা কোন ব্যক্তি তার এখতিয়ার বহির্ভূত কোন কাজ বা স্বাভাবিক ন্যায়-নীতিকে ব্যাহত করে এমন কোন কাজ করতে উদ্যত হলে তা থেকে বিরত রাখার জন্য হাইকোর্ট বিভাগ কারো আবেদনের প্রেক্ষিতে যে নিষেধ আদেশ প্রদান করেন তাই হলো নিষেধাজ্ঞামূলক রিট (It is an order to the Lower Court, Tribunal or any body not to do the act in violation of natural justice. It's a preventive remedy)।
Writ of Certiorari ( ছারসিওরারি):উৎপ্রেষণ রিট (আদেশ অকার্যকর ঘোষণা)
প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ বা কোন অধস্তন আদালত/ট্রাইব্যুনালের কোন কার্যধারা বা আদেশ আইনানুগ না হয়ে থাকলে হাইকোর্ট বিভাগ সে আদেশকে অকার্যকর ঘোষণা করে যে আদেশ দিতে পারেন তাই হলো উৎপ্রেষণ রিট বা Certiorari Writ. It's a Corrective Remedy.
Writ of Mandamus (ম্যান্ডামাস):নির্দেশনামূলক রিট
অধস্তন আদালত, ট্রাইব্যুনাল, কর্তৃপক্ষ, সংস্থা বা কোন ব্যক্তি আইনের করণীয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পারলে বা আইনগত দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করলে বা অনুরূপ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে হাইকোর্ট বিভাগ ঐ দায়িত্ব পালনের জন্য যে আদেশ দিতে পারেন তাই হলো নির্দেশনামূলক বা হুকুম জারি রিট।
Writ of Habeas Corpus (হেবিয়াস কর্পাস):বন্দি প্রদর্শন রিট
আইনগত কর্তৃত্ব বা বৈধ কারণ ব্যতীত সরকার বা কোন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যক্তিকে আটক করলে তাকে আদালতের সম্মুখে হাজির করার আদেশ হাইকোর্ট বিভাগ দিতে পারেন, এরূপ আদেশই হলো বন্দি প্রদর্শন রিট (To have the body before the Court) |
Writ of Quo Warranto (কুয়া ওয়ারেন্টো):কারণ দর্শানোর রিট
কোন সরকারি পদে অধিষ্ঠিত বলে বিবেচিত ব্যক্তি কোন কর্তৃত্ব বলে উক্ত পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলে হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করলে হাইকোর্ট বিভাগ কথিত পদাধিকারীকে তার পদে অধিষ্ঠিত থাকার কর্তৃত্ব প্রর্দশন করার যে আদেশ দিতে পারেন তাই হলো কারণ দর্শানোর রিট (To explain by what authority to assume the office)।
রিট দায়ের করতে পারেন:
অধস্তন আদালত, ট্রাইব্যুনাল, কর্তৃপক্ষ, সংস্থা বা কোন ব্যক্তির প্রদত্ত আদেশ/সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ (aggrieved) হয়েছেন এমন যে কোন ব্যক্তি তার অধিকার সুরক্ষার জন্য হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগ নিজ ইচ্ছায় (Suo Moto) রিট জারি করতে পারেন না। রিট জারির ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা স্বেচ্ছাধীন (Discretionary) নয়। অবশ্যই কোন ব্যক্তিকে রিট পিটিশন দায়ের করতে হবে। ফৌজদারি কার্যবিধি'র ৪৯১ ধারায়ও হাইকোর্ট বিভাগের বন্দি প্রদর্শন (Habeas Corpus) রিট জারির ক্ষমতা রয়েছে, তবে এ ধারার আদেশ মানে কারো মৌলিক অধিকার বলবৎ করা নয় এটি হাইকোর্ট বিভাগের বিবেচনামূলক আদেশ প্রদানের ক্ষমতা।
যে আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন চলবে না
বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ বা শৃংখলা বাহিনী সংক্রান্ত আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত আদালত বা ট্রাইব্যুনাল এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের কোন আদেশ-নির্দেশের উপর রিট চলবে না।
অনুচ্ছেদ ১০৯: অনুসারে অধস্তন আদালতের উপর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হাইকোর্ট বিভাগের থাকবে।
অনুচ্ছেদ ১১০ : হাইকোর্ট বিভাগ অধস্তন কোন আদালতে বিচারাধীন। কোন মামলায় সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আইনের কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা জনগুরুত্ব সম্পন্ন বিষয় জড়িত আছে মনে করলে সে মামলাটি ঐ আদালত হতে প্রত্যাহার করে নিয়ে নিষ্পত্তি করতে পারেন।
0 Comments