সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

অনুপস্থিতিতে বিচার(Trial in absentia) কি? আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিশদ আলোচনা

What does absentia mean in law?; What does issued in absentia mean?; What is the meaning of absentia?; আইনে অনুপস্থিতি বলতে কী বোঝো?; Trial in absentia in Bangladesh; Trial in absentia CrPC; what is the effect if there is a trial in absentia?; Trial in absentia civil case; When is trial in absentia allowed; Trial in absentia example; Trial in absentia Rules of court; Admonished trial in absentia; What is the CR case in Bangladesh?; What is absentia law?; What is the right to a speedy trial in Bangladesh?; বাংলাদেশের সি আর কেস কি?; Trial in absentia CrPC; Trial in absentia meaning; Trial in Session Court in Bangladesh; Trial in absence of accused; Crpc 339c; Criminal Procedure Code; Criminal law in Bangladesh; What happens if accused is absent in court;


অনুপস্থিতিতে বিচার(Trial in absentia) কি? কখন আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার করা যায়?


ফৌজদারি বিচারের মূল উদ্দেশ্য ন্যায়বিচার অর্জন এবং আইনের শাসন বজায় রাখা। সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে "To be present before the court' অভিযুক্তের কর্তব্য ও অধিকার। কোন ঘোষিত অপরাধী (proclaimed offender) যদি ট্রায়াল এড়ানোর জন্য (to evade trial) পালিয়ে যায়, এবং তাকে গ্রেপ্তার করার কোন সম্ভাবনা (prospect) না থাকে, তবে আদালত তার অনুপস্থিতিকে বিবেচনায় না নিয়ে উপস্থিত মনে করে (as if he were present) বিচারকার্য চালিয়ে যাবে, যাকে আইনি পরিভাষায় Trial in absentia বলা হয়।

 

অনুপস্থিতিতে বিচার(Trial in absentia)

 

‘Trial in absentia’  ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ 'অনুপস্থিতিতে বিচার' Trial in Absence(TIA) সম্পর্কের ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৩৯ () ধারার ১নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে যে, যেক্ষেত্রে ৮৭ ৮৮ ধারার বিধান পালন করার পর আদালতের এইরূপ বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, আসামীকে যাতে গ্রেফতার বা বিচারের জন্য প্রেরণ করা না যায় তার জন্য আসামী ফেরারী হয়েছে বা আত্মগোপন করেছে এবং তাকে গ্রেফতার করার আশু সম্ভাবনা নেই তবে অপরাধ আমলে গ্রহণকারী আদালত সরকারি গেজেটে বিজ্ঞপ্তি এবং কমপক্ষে দুইটি বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উক্ত ব্যক্তিকে আদেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিবেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা আসামী নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজির না হলে সেই ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার বিচার করা হবে। 

 

মোটকথা, অভিযুক্ত বা আসামীকে আদালতে হাজির করার যৌক্তিক প্রচেষ্টা চালানোর পরেও যদি তাকে হাজির করা সম্ভব না হয়, তখন তার অনুপস্থিতিতেই(Absence) বিচারকাজ চলানো যাবে।  উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, জনি মণির মধ্য  দীর্ঘদিন যাবত প্রভাব-প্রতিপত্তির লড়াই চলছে। এরই জের ধরে একদিন জনির সন্ত্রাসী বাহিনী মণিকে হত্যা করে। ফলশ্রুতিতে, ফৌজদারী আদালতে জনির বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের হয়। কিন্তু জনি ইতিমধ্যে আত্মগোপন করে, আদালত জনিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। ঐদিকে পুলিশ বারবার তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েও তার হদিছ পায় না। জনিকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না বলে মামলার বিচারিক কার্য প্রলম্বিত(Prolonged) হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

 

২নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, আসামী হাজির হওয়ার পর জামিনপ্রাপ্ত হয়ে ফেরারী হলে বা হাজির না হলে নম্বর উপধারার নিয়ম প্রযোজ্য হবে না এবং আদালত তার সিদ্ধান্ত উল্লেখপূর্বক উক্ত আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার করতে পারবেন। সাজা প্রাপ্ত আসামী হাজির হওয়ার বা ধরা পড়ার পর হতে তার প্রাপ্ত দন্ডের মেয়াদ গণনা হবে।

 

অনুপস্থিতিতে বিচারের ইতিহাস(History of trials in absentia)

 

অনুপস্থিতিতে বিচারের(trial in Absentia) ধারণাটি প্রাচীন রোমান আইন থেকে উদ্ভূত। রোমান আইনে এমন ব্যবস্থা ছিল যেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তি উপস্থিত না থাকলেও আদালত তার বিরুদ্ধে বিচার চালাতে পারতো। এটি মূলত রোমান সাম্রাজ্যের সুশৃঙ্খলতা বজায় রাখার জন্য চালু করা হয়েছিল, কারণ অনুপস্থিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তি করার মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকে সচল রাখা যেতো।

 

মধ্যযুগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে Trial in Absentia একটি প্রচলিত পদ্ধতি হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিরোধিতার ক্ষেত্রে ধরনের বিচার বেশ দেখা যেতো। ইংল্যান্ডে কয়েকটি ধর্মীয় রাজনৈতিক বিদ্রোহের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা উপস্থিত না থাকলেও তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার রায় প্রদান করা হয়। মধ্যযুগীয় ফ্রান্সেও চূড়ান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো।

 

১৮ শতকের শেষের দিকে ফরাসি বিপ্লবের সময় অনেক রাজনৈতিক অপরাধীর বিরুদ্ধে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার পরিচালিত হয়। এই সময়ের অন্যতম একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ফরাসি বিপ্লবকালীন Reign of Terror, যেখানে অনেক রাজনৈতিক বিরোধীর বিরুদ্ধে অনুপস্থিতিতেই রায় দেয়া হয়েছিল। পরে, নেপোলিয়ন বোনাপার্টের শাসনামলে নেপোলিয়নিক কোড(The Napoleonic Code) চালু করা হয়, যা সিভিল -এর ভিত্তি স্থাপন করে। এই কোডে  Trial in Absentia এর জন্য সুনির্দিষ্ট বিধান রাখা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ইউরোপের বিভিন্ন সিভিল সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত হয়।

 

বর্তমানে, আন্তর্জাতিক আইনেও কিছু শর্ত সাপেক্ষে Trial in Absentia-এর অনুমোদন রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) অনুপস্থিতিতে বিচারের অনুমতি দেয় না, কারণ তাদের মতে এটি ন্যায়বিচারের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে, যেমন অভিযুক্ত ব্যক্তি পালিয়ে গেলে বা নিজে উপস্থিত না হলে,  UN-backed tribunal এবং  International Criminal Tribunal for the former Yugoslavia (ICTY) এবং International Criminal Tribunal for Rwanda (ICTR) এর মতো সংস্থাগুলো অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতেই বিচার সম্পন্ন করেছে।

 

সিভিল (Civil Law) সিস্টেমের অনেক দেশে(ফ্রান্স,ইতালি, চীন ইত্যাদি) অভিযুক্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতেও (Trial in Absentia) বিচার করার বিধান রয়েছে। তবে এর প্রয়োগ এবং গ্রহণযোগ্যতা দেশের আইনি কাঠামো, প্রয়োজনীয় শর্তাবলী এবং ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তার উপর নির্ভর করে। যেমন ফ্রান্সে Trial in Absentia আইনসম্মত এবং প্রচলিত। ফরাসি দণ্ডবিধিতে (Penal Code) উল্লেখ করা হয়েছে যে, গুরুতর অপরাধ বা ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই অনুপস্থিত থাকেন, তবে তার বিরুদ্ধে অনুপস্থিতিতেই বিচার চালানো যায়। তবে স্পেনে সাধারণত Trial in Absentia পরিচালিত হয় না। তবে কিছু গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে এটি অনুমোদিত। আবার জার্মানিতে Trial in Absentia-এর কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালা  অনুসরণ করা হয় এবং বিশেষত গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযুক্তের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।

 

অন্যদিকে কমন সিস্টেমের দেশগুলোতে(যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য অঙ্গীভূত সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশগুলো) অনুপস্থিতিতে বিচার (Trial in Absentia) সাধারণত সীমিত এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুমোদিত নয়। কমন সিস্টেমে অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে এসব দেশে Trial in Absentia পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতে উপস্থিত না থাকে এবং আদালত মনে করেন যে, তার অনুপস্থিতিতে বিচার করা গেলে ন্যায়বিচার ক্ষুণ্ণ হবে না, তবেই এটি অনুমোদিত হয়।২০২৩ সালে Trial in Absentia (অনুপস্থিতিতে বিচার) নিয়ে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (BNSS) তে প্রভূত পরিবর্তন আনা হয়েছে যা বিচার ব্যবস্থাকে দ্রুত কার্যকরী করতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ফৌজদারী কার্যবিধিতে আসামীপক্ষের অনুপস্থিতিতে বিচারের কোন বিধান রাখা হয়নি। কিন্তু ১৯৮২ সালে ২৪ নম্বর অধ্যাদেশবলে আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচারের বিধান বা “Trial in absentia” নামে একটি ব্যতিক্রম নীতি যুক্ত করা হয় এবং ১৯৯১ সালে নীতিতে কিছুটা সংযোজন করা হয়। 



অনুপস্থিতিতে বিচারের(Trial in Absence) বৈধতা 

 

অনুপস্থিতিতে বিচার বা trial in absentia এর বৈধতা নির্ভর করে আসামির অধিকার, বিচার প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা এবং আইন অনুসরণের উপর। সাধারণত এটি বৈধ তখনই বিবেচিত হয় যখন আদালত নিশ্চিত হয় যে আসামি ইচ্ছাকৃতভাবে বিচারে উপস্থিত হচ্ছেন না বা বিচার এড়ানোর চেষ্টা করছেন। এর বৈধতা নির্ধারণে নিন্মোক্ত মূল বিষয় রয়েছেঃ

 

আসামিকে নোটিশ প্রদান: বিচার শুরু করার আগে আসামিকে যথাযথভাবে নোটিশ দেওয়া এবং আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়। যদি আসামি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যান বা নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে অনুপস্থিতিতে বিচার হতে পারে। তবেআসামী ফেরারী হয়নি। অথচ ম্যাজিস্ট্রেট দায়রা জজ কর্তৃক আসামীর আদালতে হাজির হওয়ার তারিখ উল্লেখ না করার ফলে আসামী বিচারকারী আদালতে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থায় আসামীর বিচার অবৈধ হবে।(৩৬ ডিএলআর ২৬৩; বিএলডি ২১)

 

আইনজীবীর অধিকার: যদি আসামি অনুপস্থিত থাকেন, তবে তার পক্ষে একজন আইনজীবী উপস্থিত থাকার অধিকার রয়েছে যা আদালত নিশ্চিত করবে। তাই বলা হয়েছে যে, মৃত্যুদণ্ডযোগ্য কোন কৃত অপরাধে অভিযুক্ত (charged) কোন ব্যক্তির শাস্তি প্রদান তার পক্ষে তার আইনজীবির প্রতিনিধিত্ব ছাড়া অবৈধ হবে। ধরনের মামলায় আসামীকে রক্ষা করার জন্য কোন আইনজীবী নিযুক্ত হয়েছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব আদালতের। সম্পর্কে ১৯৬০ সনের Legal Remembrancer's Manual-এর দ্বাদশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, "মৃত্যুদণ্ডযোগ্য কোন কৃত অপরাধে অভিযুক্ত (charged) প্রত্যেক ব্যক্তিকর সময় আইনগত সহায়তা দিতে হবে এবং আদালতের উচিত হবে আসামীকে রক্ষার্থে তার পক্ষে তার বক্তব্য পেশের জন্য একজন উকিল নিযুক্ত করা। অবশ্য আসামী নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম এই মর্মে উকিল প্রত্যয়ন করে থাকলে উকিল নিয়োগের প্রয়োজন হবে না।" এই মামলায় আসামীর পক্ষে কোন আইনজীবী উপস্থিত ছিল না। মামলাটির কার্যক্রম শুরু করার পূর্বে নিম্ন আদালতের উচিত ছিল আসামীকে রক্ষার জন্য একজন উকিল নিয়োগ করা। কিন্তু তা করা হয়নি বলে নিম্ন আদালত কর্তৃক ৩০২ ধারায় প্রদত্ত শাস্তি রদ করা হল এবং মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য নিম্ন আদালতে ফেরত পাঠানো হল যাতে আসামীর পক্ষে একজন উকিল নিযুক্ত হতে পারে এবং সেই উকিল মামলায় সাক্ষীদের প্রদত্ত জবানবন্দী জেরা করার সুযোগ পেতে পারে।[৩৬ ডিএলআর ৩৩৩]

 

পুনর্বিচার বা আপিলের অধিকার: সাধারণত, অনুপস্থিতিতে রায় হলে আসামির কাছে পরবর্তীতে আপিল করার বা পুনর্বিচারের জন্য আবেদন করার সুযোগ থাকে। এটি নিশ্চিত করে যে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকে।

 

বাংলাদেশে ফৌজদারি কার্যবিধির অধীনে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালনা করা বৈধ। তবে, আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার আইন (যেমন, আন্তর্জাতিক নাগরিক রাজনৈতিক অধিকার সনদ বা ICCPR) অনুযায়ী এটি শুধুমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে অনুমোদিত যেখানে আসামি ইচ্ছাকৃতভাবে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

 

বাংলাদেশে অনুপস্থিতিতে বিচারের জন্য  আইনি কাঠামো(Legal Framework to trial in Absentia in Bangladesh)

 

একটি দেশের ফৌজদারি বিচারের একটি অংশ হিসাবে ট্রায়াল প্রসিডিউর মূলত পদ্ধতিগত ফৌজদারি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বাংলাদেশে অনুপস্থিতিতে বিচার কার্যটি ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮ অন্যান্য বিশেষ আইনের বিচারের মৌলিক বিধানগুলোর সমন্বয়ে পরিচালিত হয়। নিচে সেই আইনগুলো দেওয়া হলো:

 

আইনের নাম

আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার সম্পর্কে আলোচ্য ধারার বিধান

) The Code of Criminal Procedure,1898

ধারা ৩৩৯()() বলা হয়েছে যে,  যেক্ষেত্রে ৮৭ ৮৮ ধারার বিধান পালন করবার পর আদালতের বিশ্বাস করবার কারণ থাকে যে, আসামীকে যাতে গ্রেফতার বিচারে সোপর্দ করা না হয় সেজন্য সে পলায়ন করেছে বা আত্মগোপন করেছে এবং তাকে গ্রেফতার করবার আশু সম্ভাবনা নেই, সেক্ষেত্রে নালিশী অপরাধ আমলে গ্রহণকারী আদালত [বহুল প্রচারিত কমপক্ষে দুইটি বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত] আদেশ দ্বারা উক্ত ব্যক্তিকে আদেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেই আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দিবেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উক্ত নির্দেশে ব্যর্থ হলে তার অনুপস্থিতিতে তার বিচার অনুষ্ঠিত হবে।

 

ধারা ৩৩৯()() বলা হয়েছে যে, আসামীকে হাজির করবার পর কিংবা আসামী হাজির হবার পর অথবা জামিনে মুক্ত হবার পর যেক্ষেত্রে আসামী পলায়ন করে কিংবা হাজির হতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে () উপধারায় বর্ণিত পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে না এবং নালিশী অপরাধের জন্য এরূপ ব্যক্তির বিচার করতে উপযুক্ত আদালত এরূপ করবার কারণ লিপিবদ্ধ করে তার অনুপস্থিতিতেই এরূপ ব্যক্তির বিচার করবেন।

) নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০

 

ধারা ২১() বলা হয়েছে যে, যদি ট্রাইব্যুনালের এই মর্মে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ থাকে যে—-

 

() অভিযুক্ত ব্যক্তি তাহার গ্রেফতার বা তাহাকে বিচারের জন্য সোপর্দকরণ এড়াইবার জন্য পলাতক রহিয়াছে বা আত্মগোপন করিয়াছেন; এবং

  

() তাহার আশু গ্রেফতারের কোন সম্ভাবনা নাই, তাহা হইলে ট্রাইব্যুনাল অন্তত: দুইটি বাংলা দৈনিক খবরের কাগজে প্রজ্ঞাপিত আদেশ দ্বারা, আদেশে উল্লিখিত সময়, যাহা ত্রিশ দিনের বেশী হইবে না, এর মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিতে পারিবে এবং উক্ত সময়ের মধ্যে যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালে হাজির হইতে ব্যর্থ হন, তাহা হইলে ট্রাইব্যুনাল তাহার অনুপস্থিতিতে বিচার করিতে পারিবে।

 

ধারা ২১() () যদি কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালে হাজির হইবার পর বা তাহাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার পর বা তাহাকে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক জামিনে মুক্তি দেওয়ার পর পলাতক হন, তাহা হইলে তাহার ক্ষেত্রে উপ-ধারা () এর বিধান প্রযোজ্য হইবে না, এবং সেইক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল, কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া, অভিযুক্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তাহার বিচার সম্পন্ন করিতে পারিবে।

) আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩

(The International Crimes Tribunal Act, 1973)

[আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার সম্পর্কে ধারাটি The International Crimes (Tribunals) (Second Amendment) Act, 2012 এর মাধ্যমে ২০১২ সালে সন্নিবেশিত হয়েছিল]

ধারা ১০()()তে বলা হয়েছে যে,যেখানে ধারা এর উপ-ধারা () এর অধীনে একটি কার্যক্রম শুরু হয়, ট্রাইব্যুনাল, উক্ত ধারার উপ-ধারা () এর অধীনে বিচারের তারিখ নির্ধারণ করার আগে, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে পলাতক বা নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে যাতে তাকে বিচারের জন্য হাজির করা না যায়, এই ধরনের বিচারের জন্য ধারা-২২ এর অধীনে প্রণীত পদ্ধতির বিধিতে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে তার অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালনা করতে পারে।

 

ধারা ১০()()তে বলা হয়েছে যে,যেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে উপ-ধারা () এর অধীনে বিচার করা হয়, ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দিতে পারে যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্য সরকারের খরচে একজন কৌঁসুলি নিযুক্ত থাকবেন এবং এই ধরনের কাউন্সেলকে প্রদত্ত ফিও নির্ধারণ করতে পারেন।

) বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪(The Special Powers Act, 1974) 

[বিশেষ ক্ষমতা (সংশোধন) আইন-১৯৯১  এর মাধ্যমে ১৯৯১ সালে ধারা ২৭() প্রতিস্থাপিত হয়েছিল।

ধারা ২৭() ধারাতে বলা হয়েছে, যে ক্ষেত্রে কোন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের এইরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, একজন আসামি পলাতক হইয়াছে অথবা নিজেকে লুক্কায়িত রাখিতেছে এই উদ্দেশ্য যে, তাহাকে যেন গ্রেফতার করিতে পারা না যায় এবং বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালে হাজির করিতে পারা যায় এবং তাহাকে গ্রেফতার করিবার আশু সম্ভাবনা নাই, তাহা হইলে ট্রাইব্যুনাল ব্যাপক প্রচার সংখ্যা সম্বলিত অন্ততপক্ষে দুইটি বাংলা সংবাদপত্রে প্রকাশিত আদেশ দ্বারা উক্ত আসামিকে নির্দেশ দান করিবেন যেন আদেশ উল্লিখিত সময়ের মধ্যে সে ট্রাইব্যুনালের সম্মুখে হাজির হয়, এবং সেই ব্যক্তি যদি উক্তরূপ নির্দেশ পালন করিতে ব্যর্থ হয়, তাহা হইলে তাহার অনুপস্থিতিতেই তাহার বিচার কর হইবে।

 

আবার ধারা ২৭(৬এ) ধারাতে বলা হয়েছে,যে ক্ষেত্রে আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করিবার পর অথবা আসামি স্বয়ং হাজির হইয়া জামিনে মুক্তিলাভের পর পলাতক হয় অথবা ট্রাইব্যুনালে হাজির না হয়, তাহা হইলে উপধারা ()-এর বিধান প্রযোজ্য হইবে না এবং তখন ট্রাইবুন্যাল আসামির অনুপস্থিতিতেই তাহার বিচার সম্পন্ন করিবার সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করিবার পর অনুরূপভাবে তাহার বিচার সম্পন্ন করিবেন।




বাংলাদেশে অনুপস্থিতিতে বিচারের জন্য শর্তসমূহ(The conditions for trial in absentia)

অথবা, কখন আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার(Trial in absentia)করা যায়?

 

বিচারের সময় আসামীকে হাজির থাকতে হয়-এটাই সাধারণ নিয়ম। আসামীর বিরুদ্ধে কে কি বলছে, কিভাবে বলছে, তা শুনার দেখার অধিকার আসামীর আছে। এক পর্যায়ে আসামীকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু যদি এমন অবস্থা হয় যে, আসামী কিছুতে ধরা পড়ছে না, সে সার্থকভাবে সকল ওয়ারেন্ট এড়িয়ে বেড়াচ্ছে, তবে সে চরম পরিস্থিতিতে তার উপস্থিতি ছাড়াই তার বিচার কাজ সম্পন্ন করা যায়। তবে একটা শর্ত আছে। তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিতে হবে খবরের কাগজের মাধ্যমে গেজেটের মাধ্যমে। সে যদি হাজির হয়, তবে তার সামনেই বিচার হবে আর সে যদি হাজির না হয়, তখন তার অনুপস্থিতিতেই বিচার হবে। এক কথায়, ক্রমাগতভাবে আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করার পর আদালত আসামীর অনুপস্থিতেই বিচারকাজ শুরু করবেন। যাক বাংলাদেশে অনুপস্থিতিতে বিচারের জন্য যেসব শর্তসমূহ প্রতিপালন করতে হয় তা নিচে তুলে ধরা হলো

 

) ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৩৯ () ধারার ১নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে যে, যেক্ষেত্রে ধারা-৮৭ ধারা-৮৮ এর বিধান পালনের  পর আদালতের এইরূপ বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, আসামীকে যাতে গ্রেফতার বা বিচারের জন্য প্রেরণ করা না যায় তার জন্য আসামী ফেরারী হয়েছে বা আত্মগোপন করেছে এবং তাকে গ্রেফতার করার আশু সম্ভাবনা নেই তবে অপরাধ আমলে গ্রহণকারী আদালত সরকারি গেজেটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

 

.) কমপক্ষে দুইটি বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উক্ত ব্যক্তিকে আদেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিবেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা আসামী নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজির না হলে সেই ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার বিচার করা হবে। 

 

) আদালতকে নিশ্চিত করতে হবে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি সত্যিই গ্রেফতার থেকে পালিয়ে গেছে এবং তার উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আদালতের এই সন্তোষ Trial in Absentia শুরু করার পূর্বশর্ত;

) The Code of criminal procedure এর ৮৭ ধারার অধীনে ধরনের লিখিত আদেশ রুজু করার পর যেকোন সময় আদালত ইচ্ছা করলে The Code of criminal procedure এর  ৮৮ ধারার অধীনে পলাতক আসামীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক (Attachment of property) করতে পারবেন।

 

তাছাড়া কিছু নজির আমলে নিয়ে আসামী বা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফ্রেমিংয়ের ৯০ দিন পর Trial in Absentia শুরু করা যেতে পারে। 

 

মোটকথা, আসামীর উদ্দেশে বিশেষ একটি লিখিত ঘোষণা জারি করতে হবে; আসামীকে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতের সামনে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিতে হবে;আদালতকে দুটি বহুলপ্রচারিত বাংলা সংবাদপত্রে আসামীর উদ্দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিতে হবেএরূপ শর্ত প্রতিপালনের পর আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য শুরু করা যায়। তবে আসামী যদি বিচারকাজ শুরুর পূর্বে একটিবারও আদালতের সামনে হাজির হয়ে থাকে কিংবা আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন নিয়ে থাকে এবং পরে আদালতের সামনে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকে, সেক্ষেত্রে উল্লিখিত শর্ত পালন ছাড়াই  আদালত আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পারবেন।

 

 

Post a Comment

0 Comments