সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কি? বাংলাদেশে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নিয়ে আলোচনা(Supreme Judicial Council)

What is the Supreme Judiciary Council?; What is Article 96 of the Bangladesh Constitution?; How many judges were in the Supreme Court?; সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সংখ্যা কতজন?; Supreme Judicial Council Bangladesh; Supreme Court of Bangladesh; সুপ্রিম কোর্ট কজ লিস্ট; Judges of supreme court of bangladesh; Bangladesh supreme court daily Cause List; www.supremecourt.gov.bd notices; Supreme court Appellate Division Cause List; Supreme Court Bar Association; বাংলাদেশের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কি?; Supreme Judicial Council কি?; সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সদস্য কত জন; সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাংলাদেশ; সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন; সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কি; সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কে; সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কি; সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কী; সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কিভাবে গঠিত হয়; সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরল; সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল; সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সদস্য কতজন; সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল; সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাংলাদেশ; supreme judicial council of bangladesh;


 সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কি? বাংলাদেশে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের ইতিহাস আলোচনা করুন।

সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল(Supreme Judicial Council)


সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল হলো একটি বিচারিক সংস্থা, যা বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। এই কাউন্সিল সাধারণত বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত এবং প্রয়োজনে তাদের অপসারণের জন্য ব্যবস্থাগ্রহণ করে। বাংলাদেশে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়েছিল ১৯৭৮ সালে, যখন সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়।


বাংলাদেশে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের ইতিহাস


১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর সালের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগে ৯৪—১১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বিচারবিভাগ সম্পর্কিত বিধানাবলী সন্নিবেশ করা হয়েছে। সংবিধানের ৯৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের পদের মেয়াদ এবং তাঁদের অপসারণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে।  সংবিধান প্রবর্তনের পর ১৯৭৫ সালে ৪র্থ সংশোধনী থেকে শুরু করে ২০১৪ সালে ১৬তম সংশোধনী পর্যন্ত সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত এই সংবিধানের  ৯৬ নম্বর অনুচ্ছেদটি অন্তত ৬ বার সংশোধন করা হয়েছে। 


১৯৭৯ সালে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে উক্ত অনুচ্ছেদে প্রথমবারের মতো সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি প্রবর্তন করা হয়। সংবিধানের  নিন্মোক্ত সংশোধনীগুলোর মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন এবং সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের বিধান প্রবর্তন করা হয়—


  1. সংবিধান (চতুর্থ সংশোধন) আইন, ১৯৭৫ 

  2. The Second Proclamation (Seventh Amendment) Order, 1976 

  3. The Second Proclamation (Tenth Amendment) Order, 1977 

  4. সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯ 

  5. The Martial Law Proclamation (First Amendment) Order, 1982 

  6. The Constitution Final Revival Order, 1986 

  7. সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ 

  8. সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) আইন, ২০১৪


ধারাবাহিক আলোচনা


হস্তলিখিত ১ম সংবিধানে সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত বিধান


হস্তলিখিত প্রথম সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের দফা-২ তে সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত বিধানে বলা হয়েছিল— 


“প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্য কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাবে না।’’


এখানে বলা হয়েছে যে, সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ২টি কারণ রয়েছে— ক) অসদাচরণ (Misbehaviour) এবং খ) অসামর্থ্যতা (Incapacity)। আর এই ২টি বিষয় প্রমাণিত হওয়ার পর সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য দ্বারা সমর্থিত প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করতে হতো। অর্থাৎ মূল সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে জাতীয় সংসদের উপর অর্পণ করা হয়েছিল।  


১৯৭৫ সালে সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের বিধান


১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর প্রথমবারের মতো সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের বিধানটি পরিবর্তন করা হয়। .১৯৭৫ সালের ২৫ শে জানুয়ারি তারিখে ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতাটি জাতীয় সংসদের কাছ থেকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতির নিকট অর্পণ করা হয়। 


সংবিধান (চতুর্থ সংশোধন) আইন, ১৯৭৫ অনুচ্ছেদ: ৯৬ দফা: (২) বলা হয়েছিল যে—


"অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতির আদেশ দ্বারা কোন বিচারককে তাঁহার পদ হইতে অপসারিত করা যাইবে: তবে শর্ত থাকে যে, কোন বিচারককে তাঁহার সম্পর্কে প্রস্তাবিত ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাইবার যুক্তিসঙ্গত সুযোগদান না করা পর্যন্ত তাঁহাকে অপসারিত করা যাইবে না।”


এখানে বলা হয়েছে যে, অসদাচরণ বা অসামর্থ্য বিষয়টি বহাল রাখা হলেও চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতাটি জাতীয় সংসদের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির উপর অর্পণ করা হয়। 


উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট রাতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পরবর্তীকালে মার্শাল ল( Martial law) বা সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্তৃক ১৯৭৬ সালের ১১ই আগস্ট The Second Proclamation (Seventh Amendment) Order, 1976 জারি করা হয়। আর এই Proclamation এর মাধ্যমে  প্রতিস্থাপিত সংবিধানের ১০৫নম্বর অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতাটি রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে জাতীয় সংসদের উপর পুনরায় অর্পণ করা হয়।


The Second Proclamation (Seventh Amendment) Order, 1976 এর মাধ্যমে সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১০৫ এ এইভাবে বলা হয়েছে যে—


"প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত সুপ্রীম কোর্ট বা হাইকোর্টের কোন বিচারককে অপসারিত করা যাইবে না।”


অর্থাৎ এই ফরমানের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানে উল্লেখিত সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের প্রস্তাবের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির আদেশ দ্বারা সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের বিধানটি পুনঃপ্রবর্তন করা হয়।


সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রবর্তন 


১৯৭৭ সালের ০১ ডিসেম্বরে জারিকৃত The Second Proclamation (Tenth Amendment) Order, 1977 এর মাধ্যমে ৯৬ অনুচ্ছেদে ২,৩,৪,৫,৬,৭ ও ৮  নম্বর দফা প্রতিস্থাপন করে সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের বিষয়ে প্রথমবারের মতো সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রবর্তন করা হয়।


৯৬ অনুচ্ছেদের দফা-২তে বলা হয়েছিল–

“এই অনুচ্ছেদের নিম্নরূপ বিধানাবলী অনুযায়ী ব্যতীত কোন বিচারককে তাঁহার পদ হইতে অপসারিত করা যাইবে না।” 


৯৬ অনুচ্ছেদের দফা-৩তে বলা হয়েছিল–

"একটি সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকিবে যাহা এই অনুচ্ছেদে  "কাউন্সিল" বলিয়া উল্লেখিত হইবে এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকদের মধ্যে পরবর্তী যে দুইজন কর্মে প্রবীণ তাঁহাদের লইয়া গঠিত হইবে:"



প্রতিস্থাপিত অনুচ্ছেদটির ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর দফাতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের দায়িত্ব ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে।  


সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯


১৯৭৯ সালের ০৬ এপ্রিল তারিখে  সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর দ্বারা সামরিক শাসনামলে প্রণীত Proclamation সমূহ অনুমোদন ও সমর্থনের মধ্য দিয়ে সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের বিষয়ে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটিকে সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অঙ্গীভূত করা হয়।



২য় বার  সামরিক শাসনামলে বিচারকদের অপসারণের বিধান


১৯৮১ সালের ৩০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পরবর্তীকালে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে তৎকালীন জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেকে চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর(Chief Martial Law Administrator) ঘোষণা করে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো জারি করেন সামরিক শাসন। 


এ পর্যায়ে সংবিধান স্থগিত করে The Martial Law Proclamation (First Amendment) Order, 1982 মোতাবেক সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতাটি সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল থেকে সরিয়ে চীফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এর উপর অর্পণ করা হয।


The Constitution Final Revival Order, 1986 এর মাধ্যমে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল 


১৯৮৬  সালে সংসদ কর্তৃক পাসকৃত The Constitution Final Revival Order, 1986 এর মাধ্যমে সংবিধান বলবৎ করার মধ্য দিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত বিধানটি পুনর্বহাল করা হয়।

 

সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১


২০০০ সালে দায়ের করা রিট পিটিশন নং- ৬০১৬/২০০০ পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ ২০০৫ সালের ২৯শে আগস্টে প্রচারিত রায়ে অবৈধ, বাতিল ও অস্তিত্বহীন-মর্মে ঘোষণা করে “সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯” বাতিল করে দেয়।  এরপর ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রচারিত রায়ে আপিল বিভাগ “সিভিল পিটিশন ফর লীভ টু আপীল নং- ১০৪৪-১০৪৫/২০০৯” খারিজ করে দেয়। 


ফলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের বিষয়ে প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানসহ বাতিল হয়ে যায়। সামরিক শাসনামলে প্রণীত সকল Proclamation বা ফরমান। ফলে সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতটি পুনরায় রাষ্ট্রপতির উপর চলে যায়।  


পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত সুপ্রীম কোর্টের এমন রায় প্রচারের পরপরই ২০১১ সালের ৩০ জুন পাসকৃত সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের বিষয়ে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদটি প্রতিস্থাপন করা হয়।


সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) আইন, ২০১৪ এ বিচারকদের অপসারণের বিধান

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাসকৃত ১৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত বিধানটি আবার বাতিল করে সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি জাতীয় সংসদের উপর পুনরায় অর্পণ করা হয় যা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বরে কার্যকর হওয়া হস্তলিখিত প্রথম সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের দফা-২ তে যেভাবে বলা হয়েছিল ঠিক সেভাবেই রাখা হয়।


অর্থাৎ “প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্য কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাবে না।’’(সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের দফা-২)


সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের সংক্রান্ত রিট পিটিশন 


সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী Advocate Asaduzzaman Siddiqui and others ২০১৪ সালের ০৫ নভেম্বর একটি রিট পিটিশন(রিট পিটিশন নং- ৯৯৮৯/২০১৪) দায়ের করেন। 


দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৬ সালের ০৫মে প্রচারিত রায়ে ষোড়শ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক মর্মে– ঘোষণা করে বাতিল করে দেয়।  এরপর হাইকোর্ট বিভাগের উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে ‘’সিভিল আপীল নং- ০৬/২০১৭’’(Government of Bangladesh & others VS Advocate Asad-uzzaman Siddiqui & others) দায়ের করে। কিন্তু ২০১৭ সালের ৩জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে প্রচারিত রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক দায়েরকৃত আপিলটি খারিজ করে দেয়।


ফলে বহাল থেকে যায় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা রায়টি আর যার ফলশ্রুতিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের বিষয়ে পুনরায় বহাল হয়ে যায় ৫ম ও ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান।



যদিও রায় প্রচারের পরপরই রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের এই রায়ের বিরুদ্ধে রায়টি পুনর্বিবেচনার দাবিতে দায়ের করে একটি রিভিউ পিটিশন। কিন্তু ২০২৪ সালের ২০শে অক্টোবর প্রধান বিচারপতি জনাব সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ০৬ সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহ উক্ত রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দেন। তাঁর এই চূড়ান্ত রায়ের মধ্য দিয়ে বহাল হয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ বিষয়ক সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত বিধানটি।


ফলে এখন থেকে সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি আর জাতীয় সংসদ কিংবা নির্বাহী বিভাগ কিংবা রাষ্ট্রপতির একক ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর থাকছে না বরং এখন থেকে সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ করতে হলে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত বিধানটি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।


সার্কভূক্ত দেশগুলোতে বিচারপতিদের অপসারণ/ সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনপদ্ধতি 

সার্কভুক্ত (SAARC) দেশগুলোর মধ্যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিচারপতিদের কার্যক্রম তদারকি এবং তাদের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশেষ সংস্থা বা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তবে এই দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নামে ব্যবস্থা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বিদ্যমান। অন্য দেশগুলোতে এই ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে বিচারপতিদের আচরণ তদারকি ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে—

১. বাংলাদেশ

বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের আওতায় প্রধান বিচারপতি (চেয়ারম্যান) এবং সুপ্রীম কোর্টের দুই জ্যেষ্ঠ বিচারপতির সমন্বয়ে  সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়। সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ বা শারীরিক/মানসিক অযোগ্যতার অভিযোগ তদন্ত করে এবং প্রয়োজন হলে রাষ্ট্রপতিকে তাদেরকে  অপসারণের সুপারিশ করে।

২. পাকিস্তান

পাকিস্তানের সংবিধানের ২০৯ অনুচ্ছেদে প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের ০২জন সিনিয়র বিচারপতি এবং ০২জন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়ে  সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই কাউন্সিল বিচারপতিদের বিরুদ্ধে আনীত অসদাচরণের অভিযোগ তদন্তপূর্বক অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের অপসারণের জন্য রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ প্রদান করে থাকে।

৩. ভারত

ভারতে সরাসরি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নেই তবে বিচারপতিদের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। সংবিধানের ১২৪(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে হলে সংসদের উভয় কক্ষের বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়।

৪. শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কায় সরাসরি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নেই। তবে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রীম কোর্টের ০২জন জ্যেষ্ঠ বিচারপতির সমন্বয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষাপূর্বক অপসারণ এবং শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কার্যের তদারকির দায়িত্ব পালন করে।

৫. নেপাল
নেপালেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নেই। তবে নেপালের বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত বিধান মূলত Constitution of Nepal, 2015 এর অনুচ্ছেদ-১০১ ও অনুচ্ছেদ-১০২ এবং Judicial Council Act-2016 এর ৫,৭,৮,৯,১১,১২ ও ১৬ ধারা  অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তারা Judicial Council Act, 2016 এর আওতায় আইনমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি,সুপ্রীম কোর্টের ০১জন সিনিয়র বিচারপতি এবং ০১জন প্রবীণ আইনজীবী নিয়ে বিচারপতিদের অপসারণ, শৃঙ্খলাজনিত অভিযোগ তদন্ত এবং সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। 


৬. মালদ্বীপ

Constitution  of the  Republic of Maldives-2008 এর অনুচ্ছেদ- ১৫১এবং অনুচ্ছেদ- ১৫২ এর আওতায় Judicial Service Commission বিচারপতিদের নিয়োগ, শৃঙ্খলা রক্ষা, এবং অপসারণের বিষয়টি দেখভাল করে। এক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি,রাষ্ট্রপতি মনোনীত প্রতিনিধি এবং বিচার বিভাগের প্রতিনিধিগণের সহায়তা নেওয়া হয়।

৭. ভুটান
The Constitution of The Kingdom of Bhutan এর আর্টিকেল-২১ এর সেকশন-১০, আর্টিকেল-২৭ এবং আর্টকেল-৩১ এর বিধানানুযায়ী বিচারপতির অপসারণের জন্য সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন নিয়ে ভুটানের রাজা চূড়ান্তভাবে অপসারণ করেন।

৮. আফগানিস্তান

বিচারপতির অপসারণের ক্ষেত্রে The Constitution of Afghanistan-2006 এর আর্টিকেল ১১৮ (১) অনুযায়ী  বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ও তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্ট ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। আর্টিকেল ১১৮ (২) এর বিধান অনুযায়ী যদি তদন্তে অসদাচরণ বা কোনো গুরুতর আইন লঙ্ঘন প্রমাণিত হয়, তাহলে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ অনুমোদন প্রয়োজন হয়। সংবিধানের আর্টিকেল ১১৮ (৩) তে বলা আছে যে, সংসদের অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি উক্ত বিচারপতিকে অপসারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে বিচারপতির অপসারণের ক্ষেত্রে সুপ্রীম কোর্ট তদারকির দায়িত্ব পালন করে। 

বিভিন্ন দেশে বিচারপতি অপসারণ এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ মামলার তালিকা:

বাংলাদেশ 

  • Bangladesh vs. Asaduzzaman Siddiqui (16th Amendment Case, 2017)
  • State vs. Khandaker Delwar Hossain (5th Amendment Case, 2010)
  • Justice S.K. Sinha Controversy (Judicial Independence Case, 2017)
  • Constitutional Petition on Judicial Misconduct (2015)
  • Re: Allegations against High Court Judges (2022)
  • Md. Ruhul Amin vs. Bangladesh (Judicial Accountability)
  • President's Reference on Judicial Ethics (1998)
  • Supreme Court Bar Association Petition on Judiciary (2021)
  • Justice Qumrul Islam Siddiqui Case (2011)
  • High Court Allegations Review Case (2023)

ভারত 

  • V. Ramaswami Impeachment Case (1993)
  • Justice Soumitra Sen Case (2011)
  • Justice Dipak Misra Controversy (2018)
  • Prashant Bhushan Contempt Case (2020)
  • NJAC (National Judicial Appointments Commission) Case (2015)
  • Re: Veeraswami Case (1991)
  • Judges Transfer Case (1981)
  • Ashok Pande vs. Supreme Court of India (2018)
  • Indira Jaising vs. Supreme Court of India (Judicial Transparency)
  • A.D.M. Jabalpur Case (Habeas Corpus, 1976)


পাকিস্তান 

  • Supreme Judicial Council vs. Chief Justice Iftikhar Muhammad Chaudhry (2007)
  • Al-Jehad Trust vs. Federation of Pakistan (1996)
  • Sharaf Faridi vs. Federation of Pakistan (1989)
  • Re: Justice Sajjad Ali Shah Removal (1997)
  • Munir Hussain Bhatti vs. Pakistan Bar Council (2011)
  • Judges' Restoration Case (2009)
  • Constitutional Petition for Judicial Independence (2015)
  • Justice Qazi Faez Isa Case (2020)
  • Sheikh Liaquat Hussain Case (1999)
  • Yousuf Raza Gilani vs. Federation of Pakistan (2012)

যুক্তরাষ্ট্র 

  • Samuel Chase Impeachment (1804)
  • Walter Nixon vs. United States (1989)
  • Alcee Hastings Impeachment Case (1989)
  • David W. Lanier Case (1997)
  • Robert Archibald Case (1913)
  • Claiborne Impeachment Case (1986)
  • Justice Abe Fortas Controversy (1969)
  • Douglas Impeachment Attempts (1970)
  • Re: William O. Douglas Scandal (1953)
  • Nixon vs. United States (Judicial Review Case, 1993)

মালয়েশিয়া 

  • Salleh Abas Tribunal Case (1988)
  • Suffian Tribunal Case (1987)
  • Judges Appointment Review Case (2010)
  • Government of Malaysia vs. High Court Judge (2019)
  • Judicial Misconduct Allegations Case (2021)
  • Chief Judge Tribunal Case (2005)
  • Constitutional Crisis over Judicial Removal (1988)
  • Judicial Reforms Review Case (2009)
  • Justice Hamid Sultan Abuse of Power Allegation (2020)
  • Judicial Independence Case (1995)

যুক্তরাজ্য 

  • Removal of Sir Jonah Barrington (1830)
  • Chief Justice Coke Case (1616)
  • Aaron Burr Controversy (1807)
  • Judge Jeffrey Archer Impeachment (2000)
  • Re: Judiciary Act of 1875 Reform
  • Justice Douglas Appeal Case (1955)
  • Judges' Misconduct Review Case (2012)
  • Scotland Judiciary Accountability Case (2010)
  • Lord Chancellor Controversy (2003)
  • British Judicial Reform Act Case (2005)

কানাডা
  • Re: Justice Matlow Case (2003)
  • Justice Lori Douglas Case (2011)

কেনিয়া
  • Trusted Society of Human Rights vs. Attorney General (2011)
  • Judicial Vetting Board Case (2012)

দক্ষিণ আফ্রিকা
  • Justice John Hlophe Misconduct Case (2021)

অস্ট্রেলিয়া
  • Justice Lionel Murphy Case (1986)

ফ্রান্স
  • Constitutional Council Judicial Review Case (2017)

জার্মানি
  • Federal Judge Misconduct Allegations (2018)




Post a Comment

0 Comments