ফুটবলের আইন
ফুটবলের কথা
ফুটবলের আইন নিয়ে আলোচনা করার আগে ফুটবল নিয়ে কিছু কথা বলা নেহায়েত অপ্রাসঙ্গিক হবে না। কেননা যে কোন খেলার আইন-কানুন জানার আগে সে খেলার ইতিহাস জানা দরকার। ইতিহাস জানা থাকলে আইন আরো সহজ হয়ে ওঠে। আর খেলা জানতে-শিখতে এবং দেখতে আইন জানা খুবই প্রয়োজন। আইন জানা থাকলে সে খেলা আরো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
পৃথিবীর অন্যান্য ফুটবল প্রিয় দেশের মত বাংলাদেশেও এ খেলার জনপ্রিয়তা শীর্ষে। ফুটবল সারা বিশ্বের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। এ খেলার বিস্তৃতি ও ব্যাপ্তি সারা বিশ্ব ব্যাপি। অত্যাধিক জনপ্রিয়তার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। ফুটবল খেলা হয় না এমন দেশ পৃথিবীতে নেই বললেই চলে। আজ সারা পৃথিবী শাসন করছে ফিফা।
ফুটবল একটি অতি প্রাচীন খেলা। কবে, কখন, কোথায় এ খেলার উৎপত্তি তা আজ খুঁজে বের করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। কে যে প্রথম ফুটবলে লাথি মারেন সে তথ্যও অনুদ্ঘাটিত। কালের অতলে বিলীন হয়ে গেছে সে বিমূর্ত মুহূর্তটি। ফুটবলের জন্মের সঠিক দিন ক্ষণ খুঁজে বের করা না গেলেও এটি যে একটি অতি প্রাচীন খেলা তা নিয়ে সন্দেহ নেই ক্রীড়া গবেষকদের মধ্যে। বিভিন্ন প্রাচীন জনপদ ও লোক কাহিনীতে ফুটবলের সাথে মিল আছে এমন খেলার বিবরণ পাওয়া যায়।
প্রাচীন কালে গ্রীস ও রোমের বিভিন্ন অঞ্চলে যে ফুটবল খেলা হতো তার সাথে আজকের রাগবি ফুটবলের যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সুদূর মেক্সিকোতেও ফুটবল খেলার কথা শোনা যায়।
ফুটবলের উৎপত্তি
আগেই বলা হয়েছে ফুটবল অতি প্রাচীন খেলা হওয়ায় এ খেলার উৎপত্তি নিয়ে যথেষ্ট মত পার্থক্য রয়েছে। সত্যিকারের ফুটবলের উৎপত্তিস্থল আজো সঠিকভাবে নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। মতভেদ থাকলেও ফুটবলের উৎপত্তির ব্যাপারে অনেক ক্রীড়া ঐতিহাসিককেই চীনের ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করতে দেখা যায়। ধারনা করা হয়, চীনেই প্রথম ফুটবলের আবিষ্কার ঘটে। তবে অনেককে আবার জাপানের নাম বলতে শোনা যায়।
মেক্সিকোতে ফুটবলের গোল হতো উচু দেয়ালে বা গাছের ডালে বাঁধা বলয়ের ভেতর দিয়ে বল ঢোকাতে পারলে। ক্যানভাসের মাঝখানে একটা গোলাকার ছিদ্র হতো গোল পোস্ট। এ খেলায় খোলোয়াড়ের সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকতো না। ফলে একটা জটলার সৃষ্টি হতো।
রোমানদের মধ্যে ফুটবল ছিল সবচে' জনপ্রিয়। তখন রোমানরা ফুটবল খেলাকে বলতো "হারপাসটাম"। ধারনা করা হয় রোমানরাই ফুটবলকে ইউরোপের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় প্রথম এবং এ খেলার বিস্তৃতি, প্রসার ও জনপ্রিয়তা দান করে। ফুটবলের মধ্য যুগে ইউরোপের ইতালিতে ফুটবল প্রভৃত জনপ্রিয়তা লাভ করে। ইতালির বিভিন্ন শহরে নিয়মিত ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে থাকে। তবে এ সময় ফুটবলের আইন-কানুন না থাকায় মাঠের নির্দিষ্ট পরিসীমা এবং খেলোয়াড়ের সংখ্যা নির্ধারিত ছিল না। প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত থাকতো ফুটবল মাঠ। আর এতে অংশ নিত শত শত খেলোয়াড়। এই খেলা তখন ইতালিতে 'মিলিস' নামে সুপরিচিত ছিল। কোন নিয়মের আওতায় না থাকায় এই গণ খেলাটি প্রয়শই বিপদজনক অবস্থায় রূপ নিতো। ইতালি ছড়িয়ে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এ খেলা ছড়িয়ে পড়ে।
মধ্য যুগে ফুটবল যখন একটি বিপজ্জনক খেলায় রূপ নেয় তখন ঐ সব দেশের রাজন্যবর্গ বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন। দেশের যুবকেরা ফুটবল খেলতে গিয়ে যদি আহত হয়ে পড়ে তাহলে তাদের সেনাদলে যথেষ্ট সংখ্যক সৈন্য পাওয়া যাবে না। ফলে রাজারা ফুটবল বন্ধের পাঁয়তারা করতে লাগলেন। কিন্তু জনগণ তাতে ক্ষান্ত হলো না। বরং ফুটবলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চললো।
সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরকে ফুটবল খেলার অনুমতি দেয়া হয়।
১৮৪৮ সালে এসোসিয়েশন ফুটবল বা সরকারের গোড়া পত্তন হয়। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্তঃ স্কুল প্রতিযোগিতা শুরু করে। এছাড়াও যারা স্কুলে পড়ে না এমন উৎসাহীদের জন্য ফুটবল শেখার ব্যবস্থা করে। তারাই প্রথম ফুটবলের আইন প্রনয়ন করে। এই আইনে হাতের ব্যবহার সীমিত করে দেয়া হয়। গোল পোস্ট তিনটি পোস্ট দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হয়। ১৮৫০ সালে ইংল্যান্ডের সেফিল্ডে প্রথম ফুটবলের ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬০ সালে সকার এবং রাগবিকে পৃথক ফুটবলে বিভক্ত করা হয়।
১৮৬৩ সালে ইংল্যান্ডের ১১টি ফুটবল ক্লাবের প্রতিনিধি মিলিত হয়ে ফুটবল এসোসিয়েশন গঠন করে। ১৮৬৬ সালে এ্যাসোসিয়েশন ও শেফিল্ড ক্লাবের মধ্যে এক চুক্তি হয়। এই আইন অনুসারে ১৮৬৯ সালে গোল কিক্, ১৮৭২ সালে কর্ণার কিক্ ও ১৮৭৪ সালে খেলায় রেফারি নিযুক্ত করা হয়।
১৮৭২ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। গ্লাসগোয় অনুষ্ঠিত এ ম্যাচে ইংল্যান্ড খেলে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
ইংল্যন্ডকে আধুনিক 'ফুটবলের জনক' বলা হয়। তারাই ফুটবলকে সারা বিশে ছড়িয়ে দেয় এবং জনপ্রিয় করে তোলে। এমনকি সেভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রাজিলেও তারা ফুটবলকে নিয়ে যায়। উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে পৃথিবীতে ফুটবল জনপ্রিয় হয়ে পড়ে।
১৯০৪ সালের ২১শে মে ফ্রান্সের প্যারিসে ইউরোপের ৭টি দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠকে ফেডারেশন ইন্টারন্যশনাল দ্যা ফুটবল এ্যসোসিয়েশন (ফিফা) গঠিত হয়। যা ফুটবলের উন্নয়নকারী ও নিয়ন্ত্রক। তিনি নিজেকে সাত ৩.৫
১০০১৯৩০ সালে আয়োজন করা হয় বিশ্বকাপ ফুটবলের। উরুগুয়ে প্রথম বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে। অলিম্পিকে ফুটবল অন্তর্ভূক্ত হয় ১৯০৮ সালে। এশিয়ান গেমস ১৯৫১ সালে, ইউরোপীয়ান কাপ ১৯৬০ সালে, বিশ্ব ক্লাব কাপ ১৯৬০ সালে, এশিয়ান ক্লাব ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ ১৯৬৭ সালে শুরু হয়।
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর ফুটবল নতুন উদ্যোমে শুরু হয়। ফুটবলের উন্নয়নের জন্য গঠিত হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাফুফের তত্ত্বাবধানে ১৯৭২ সালে ঢাকায় ফুটবল লীগ শুরু হয়। তা'ছাড়া খুলনা, রাজশাহী, ও চট্টগ্রাম সহ সারা দেশে পরবর্তীতে ফুটবল লীগ শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে জাতীয় ফুটবল ও '৭৪ সালে জাতীয় যুব ফুটবল শুরু হয়। ১৯৮০ সালে ফেডারেশন কাপ ফুটবল শুরু হয়। এছাড়া আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুল প্রতিযোগিতা ছাড়াও প্রতিটি জেলা ও থানা পর্যায়ে লীগ সহ বিভিন্ন ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ফিফার রুলস বুকস অনুসারে নিচে ফুটবলের আইন তুলে ধরা হলো—
প্রথম আইন: খেলার মাঠ
১.১ খেলার মাঠ
খেলার মাঠ অবশ্যই সমতল এবং সমকোণী চতুর্ভূজ হবে। এই চতুর্ভুজ মাঠ নিম্নরূপ–
(ক) ১০৯.৮x৭৩.২ মিটার বা ১২০x৮০ গজ।
(খ) ১০৫.২২x৬৮,৬৩ মিটার বা ১১৫x৭৫ গজ।
(গ) ১০০.৬৫x৬৪.০৫ মিটার বা ১১০x৭০ গজ।
(ঘ) ৯১.৫x৫৪.৯ মিটার বা ১০০×৬০ গজ। (ছোটদের জন্য)
বিঃ দ্রঃ বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলার ১০৫.২২০৬৮.৬৩ মিটার বা ১১৫০৭৫ গজ অথবা ১০০.৬৫০৬৪.০৫ মিটার বা ১১০০৭০ গজ মাঠ হয়ে থাকে।
১.২ টাচ্ লাইন
সমকোণী চতুর্ভুজ মাঠের লম্বা দুই বাহুকে টাচ্ লাইন বলে। এই টাচ্ লাইন ০.৭-০.১২ মিটার বা ৩-৫ ইঞ্চি চওড়া হবে এই টাচ্ লাইনকে মাঠের ভেতরের অংশ ধরা হয়।
১.৩ গোল লইন
সমকোণী চতুর্ভুজের দুই বাহুকে গোল লাইন বলে। এই গোল লাইন ০.৭-০.১২মিটার বা ৩-৫ ইঞ্চি চওড়া হবে এবং এই গোল লাইনকে মাঠের ভেতরের অংশ বলে ধরা হবে।
১.৪ সেন্টার লাইন
খেলার মাঠ সমভাবে দ্বিখন্ডিত করার জন্য মাঠের ঠিক মাঝামাঝি টাচ্ লাইনের মধ্য বিন্দু থেকে অপর পাশের টাচ্ লাইনের মধ্য বিন্দু পর্যন্ত একটি রেখা টানা হয়। এই ৩০০ রেখাকে সেন্টার লাইন বলে। প্রতিটি রেখা একই মাপের হতে হবে। অত
১.৫ সেন্টার সার্কেল
সেন্টার লাইনের মধ্য বিন্দুকে কেন্দ্র করে ৯.১৫ মিটার বা ১০ গজ ব্যসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত আঁকা হয়। সেন্টার সার্কেলের মধ্য বিন্দু থেকে প্রারম্ভিক কিক্ দিয়ে খেলা আরম্ভ হয়। খেলা আরম্ভকারী দলের খেলোয়াড় মধ্য বিন্দুতে রাখা বলের পিছনে দন্ডায়মান থাকে এবং বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা সেন্টার সার্কেলের বাইরের নিজ এলাকায় দাঁড়িয়ে প্রারম্ভিক কিকের অপেক্ষায় থাকবে।
১.৬ গোলপোষ্ট
গোল লাইনের মধ্য বিন্দুকে কেন্দ্র করে দু'পাশে ৩.৬৬ মিঃ বা ৪ গজ করে দূরে গোল লাইনের উপর ৭.৩২ মিঃ বা ৮ গজ দূরত্বে দু'টি গোলপোস্টের খুঁটি বসানো হয়। খুঁটির উপর দুই মাথা আঁড়খুঁটি দিয়ে যুক্ত করার পর মাটি থেকে আঁড়খুঁটির নিচ পর্যন্ত উচ্চতা ২.৪৪ মিঃ বা ৮ ফুট হয়। খুঁটি এবং আঁড়খুঁটি ০.৭-০.১২ মিটার বা ৩-৫ ইঞ্চির কম বা বেশি চওড়া হবে না। গোলপোস্টের খুঁটি ও আঁড় খুঁটি কাঠের বা ইস্পাতের হতে পারে।
১.৭ গোল এরিয়া
গোল লাইনের সাথে সমকোণ করে গোল লাইনের উপর ডান দিকে ৫.৫ মিটার বা ৬ গজ ও বাঁ দিকে ৫.৫ মিটার বা ৬ গজ লম্বা দুটি সরল রেখা টেনে রেখা দুটিকে মাঠের ভেতরের দিকে গোল লাইন সমান্তরাল আরেকটি রেখা দিয়ে যুক্ত করা হয়। এই তিন রেখা এবং আংশিক গোল লাইনের জায়গার নাম 'গোল এরিয়া'।
১.৮ পেনাল্টি এরিয়া
গোল লাইনের সাথে সমকোণ করে গোল পোস্টের গোল লাইনের উপর ডান দিকে ১৬.৫ মিটার বা ১৮ গজ এবং বাঁ দিকে ১৬.৫ মিটার বা ১৮ গজ দূরে মাঠের ভেতরের ১৬.৫ মিটার বা ১৮ গজ লম্বা দুটি সরল রেখা টেনে রেখা দুটিকে মাঠের ভেতরের দিকে গোল লাইনের সমান্তরালে আরেকটি রেখা দিয়ে যুক্ত করা হয়। এই তিন রেখা এবং আংশিক গোল লাইনের ভেতরের জায়গার নাম 'পেনাল্টি এরিয়া'।
১.৯ পেনাল্টি স্পট
গোল পোস্টের মধ্য বিন্দু অথবা গোল লাইনের মধ্য বিন্দু থেকে সমান্তরাল করে মাঠের ভেতরের দিকে ১১মিঃ বা ১২ গজ দূরে একটি জায়গা বিন্দু দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। এর নাম 'পেনাল্টি স্পট'। এটাই পেনাল্টি কিক্ মারার চিহ্নিত স্থান।
১.১০ পেনাল্টি আর্ক
পেনাল্টি স্পটকে কেন্দ্র করে ৯.১৫ মিটার বা ১০ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে মাঠের ভেতরে একটি বৃত্তচাপ আঁকা হয়। এর নাম 'পেনাল্টি আর্ক'।
১.১১ কর্ণার এরিয়া
চতুর্ভুজ মাঠের প্রতিটি কোণাকে কেন্দ্র করে মাঠের ভেতরের দিকে ০.৯২ মিটার বা ১ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে গোল লাইন ও টাচ্ লাইন ছুঁয়ে একটি বৃত্তাংশ আঁকা হয়। ১ গজ ব্যাসার্ধের প্রতি বৃত্তাংশের ভেতরের জায়গার নাম কর্ণার এরিয়া। কর্ণার কিক মারার সময় কর্ণার এরিয়ার ভেতরে বল বসাতে হয়। টাচ্ ও গোল লাইনের মিলিত চার কেন্দ্র কোণের প্রতি কোণে মাটির উপরে কমপক্ষে ১.৫ মিটার বা ৫ ফুট উঁচু করে ০.২৫ মিঃ বা ১ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের দন্ডের ওপর একটি করে পতাকা থাকবে।
সেন্টার লাইনের বরাবর উভয় দিকের টাচ্ লাইনের ১মিঃ বা ১ গজ দূরে কোণার পতাকার অনুরূপ ১ টি করে পতাকা বসানো হয় সৌন্দর্যের জন্য। এটা না বসালেও চলে।
১.১২ মাঠের সাজ-সজ্জা
গোল লাইন, টাচ্ লাইন, পেনাল্টি আর্ক, কর্ণার এরিয়া, গোল এরিয়া, পেনাল্টি এরিয়া, সেন্টার সার্কেল, এক কথায় মাঠের সমস্ত রেখা সাদা রং বা চুন দিয়ে ০.১২ মিঃ বা ৫ ইঞ্চির বেশি বা ০.৭মিঃ বা ৩ ইঞ্চির কম চওড়া করে আঁকা যাবে না। মাঠের সমস্ত দাগ (গোল পোস্টসহ) এক মাপের হবে। অর্থাৎ ০.৭ মিঃ নচেৎ ০.১২ মিঃ। মাঠের জামা সমস্ত লাইন ও গোল পোস্টের খুঁটি, আঁড় খুঁটি এবং কোণার পতাকা দন্ড খেলার মাঠের অংশ বলে গণ্য হবে। গোল পোস্টের পেছন দিকে মাঠ সংলগ্ন জাল থাকে। জাল এমনভাবে টানানো হয় যাতে গোল কিপারের চলাফেরা করতে কোন অসুবিধা না হয়।
দ্বিতীয় আইন: খেলার বল
২.১ গোলাকৃতি বলের পরিধি ০.৬৮ মিঃ হতে ০.৭১ মিঃ অর্থাৎ ২৭ ইঞ্চি হতে ২৮ ইঞ্চি হবে।
২.২ বলের আচ্ছাদন চামড়ার হবে এবং চামড়ার ওপরে প্লাস্টিকের প্রলেপ দেয়া যেতে পারে।
২.৩ বলের বাইরের আচ্ছাদনে খেলোয়াড়ের জন্য বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর কোন জিনিস ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
২.৪ খেলার শুরুতে হাওয়া ভর্তি বলের ওজন ১৪ আউন্সের কম এবং ১৬ আউন্সের বেশি হবে না।
২.৫ খেলা আরম্ভ করার সময় রেফারি কর্তৃক মনোনীত বল দিয়ে খেলা হবে।
২.৬ রেফারির অনুমোদন ছাড়া খেলা চলাকালীন সময়ে বল পরিবর্তন করা যাবে না।
তৃতীয় আইন: খেলোয়াড় সংখ্যা
৩.১ দুই দলের মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হবে।
৩.২ খেলা আরম্ভ করার সময় প্রতি দলে খেলোয়াড়ের সংখ্যা ১১ জনের বেশি এবং ৭ জনের কম হবে না।
৩.৩ প্রতি দলে উল্লেখিত খেলোয়াড়ের মধ্যে ১ জন অবশ্যই গোল-কিপার থাকবে।
৩.৪ ফিফা এবং এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী যে কোন সময় যে কোন দলে ২ (দুই) জন খেলোয়াড় বদলি করা যেতে পারে।
৩.৫ আঞ্চলিক খেলার নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী বেশি খেলোয়াড় বদলি করা যেতে পারে। তবে সাংগঠনিক বিধিতে তা উল্লেখ থাকতে হবে।
৩.৬ চ্যারিটি ও প্রদর্শনী খেলায় বেশি খেলোয়াড় বদলি করা যেতে পারে। তবে খেলার পূর্বে প্রতিযোগী দলের সাথে আলাপ আলোচনা করে রাখতে হবে এবং সেটা খেলা আরম্ভের পূর্বে অবশ্যই রেফারিকে জানিয়ে দিতে হবে।
৩.৭ সাময়িক খেলা বন্ধ থাকা অবস্থায় রেফারিকে জানিয়ে যে কোন খেলোয়াড় গোল কিপারের সাথে জায়গা বদল করে নিতে পারে।
৩.৮ খেলার সময়িক বিরতির সময়ে যে কোন খেলোয়াড়ের পরিবর্তে নতুন খেলোয়াড় মাঠে যেতে পারবে তবে তাকে রেফারির অনুমতি সাপেক্ষে মধ্য রেখা দিয়ে ঢুকতে হবে।
৩.৯ খেলার মধ্য বিরতির সময় খেলোয়াড় পরির্তন করলেও কার পরিবর্তে কে মাঠে নামবে তাও রেফারিকে সময়মত জানাতে হবে।
চতুর্থ আইন: খেলোয়াড়ের সাজ-সরঞ্জাম
৪.১ কোন খেলোয়াড় এমন কোন জিনিস খেলার সময় ব্যবহার করতে পারবে না, যা অন্য খেলোয়াড়ের পক্ষে বিপদের কারণ হতে পারে।
৪.২ ফুটবল খেলার বুটের ওপরের অংশ নরম চামড়া দিয়ে তৈরি হবে। নিচের অংশও চামড়ার অথবা কৃত্রিম বস্তুর হতে হবে। গোড়ালী বিহীন বুটের তলা সমান থাকবে। বুটের নিচের গুটিগুলি ভাল শক্ত চামড়া, রাবার, এলুমিনিয়াম
জবা প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস দিয়ে তৈরি হতে পারে। গুটিগুলি লম্বা ১ ইঞ্চি এবং চওড়া আধা ইঞ্চির বেশি হবে না। খেলোয়াড়দের অসুবিধা বা বিপদ হতে পারে এমন ধাতুর তৈরি কোন জিনিস বুটের নিচে বা পাশে বেরিয়ে থাকতে পারবে না।
৪.৩ প্রতিযোগিতামূলক খেলায় খেলোয়াড়দেরকে জার্সি, শার্ট, হাফ প্যান্ট, ফুল মোজা, বুট, স্কিন গার্ড পরে অবশ্যই খেলায় অংশ নিতে হবে।
8,8 প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশগ্রহণকারীগণ খেলোয়াড়দের জার্সি অবশ্যই হাফপ্যান্টের ভেতর দিতে হবে।
৪.৫ দু'দলের খেলোয়াড়দের জার্সির রং এক হয়ে গেলে রেফারি একটি দলের জার্সি পরিবর্তনের ব্যবস্থা করবেন।
৪.৬ ধাতু নির্মিত কোন জিনিস যেমন, হাত ঘড়ি, চশমা, আংটি, তাবিজ বা বেল্ট, বিপদজনক হতে পারে ইত্যাদি পরে খেলা নিষেধ।
৪.৭ গোল-কিপারের পরিহিত পোষাকের রং অন্যান্য খেলোয়াড়দের জার্সির রংয়ের সাথে যেন মিলে না যায়। সর্বদাই যেন এক নজরে রেফারি কর্তৃক গোল-কিপারকে চেনার উপায় থাকে।
৪.৮ প্রতিযোগিতামূলক খেলায় প্রতিটি খেলোয়াড়ের পরিহিত জার্সির অবশ্যই পিঠের নম্বর ২৫ সেঃমিঃ, বুকের নম্বর ১০ সেঃমিঃ এবং হাফ প্যান্টের নম্বর ১০ সেঃমিঃ লম্বা হতে হবে।
৪.৯ প্রতিযোগী প্রত্যেক দলের অধিনায়কের জার্সির হাতায় ০.০২৫ মিঃ বা ১ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ব্যান্ড থাকতে হবে।
৪.১০ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী খেলেয়াড়েরা আন্ডার প্যান্ট ব্যবহার করতে পারবেন। তবে তা প্যান্টের রংয়ের সাথে মিল থাকতে হবে।
পঞ্চম আইন: রেফারি
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ফুটবল খেলা পরিচালনা করার জন্য নির্ধারিত প্রতিযোগিতা খেলার আয়োজক সংগঠক সংস্থা কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তিকে রেফারি বলা হয়। ফুটবল খেলা চলাকালীন সময়ে মাঠের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান ব্যক্তিই হলেন 'রেফারি'।
৫.১ রেফারি খেলা পরিচালনার জন্য মাঠে নামা মাত্রই শুধু খেলা, খেলোয়াড়, বল নির্বাচন, এবং লাইন্সম্যানদ্বয়ের উপরেই কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা রাখেন না। এমন কি ঐ নির্ধারিত সময়ে মাঠে কর্তব্যরত পুলিশ বাহিনীর উপর হুকুমজারী করার ক্ষমতাও রাখেন। তা ছাড়া খেলা চলাকালীন সময়ে রেফারির দেয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অথবা খেলার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষেরও হস্তক্ষেপ চলবে না।
৫.২ রেফারি দু'জন লাইন্সম্যানের সাহায্যে খেলা পরিচালনা করবেন। তাছাড়া চতুর্থ বা স্ট্যান্ডবাই রেফারি মাঠের মধ্যে রেখার বাইরে নির্দিষ্ট স্থানে বসে তার নির্ধারিত কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করবেন।
৫.৩ খেলা আরম্ভ হবার পূর্বেই রেফারি ও লাইন্সম্যানদ্বয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারী দলের ড্রেসিং রুমে বা মাঠে প্রবেশের পূর্বে খেলোয়াড়দের হাতের আংটি, তাবিজ, গলার চেইন প্রভৃতি পরা থাকলে এগুলো খুলে ফেলার নির্দেশ দেবেন এবং সীন গার্ড ও মোজা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আছে কি না এবং হাতের নখ সঠিকভাবে কাটা আছে কি না পরীক্ষা করে দেখবেন। অর্থাৎ খেলোয়াড়ের শরীরে এবং বুটে আঘাত লাগার মত দ্রব্যাদি আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখবেন। যদি কোন খেলোয়াড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় তাদের সাথে অসদাচরণ বা দুর্ব্যবহার করে তবে তাকে ঐ খেলা হতে রেফারি বিরত রাখতে পারবেন, তবে তার পরিবর্তে অন্য খেলোয়াড় খেলতে পারবে।
৫.৪ রেফারি মাঠে প্রবেশের পরে (খেলা শুরু হবার পূর্বে) কোন খেলোয়াড় যদি অভদ্র ব্যবহার বা অসদাচরণ করে, তবে রেফারি ইচ্ছে করলে তাকে ঐ খেলায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখতে পারবেন। তবে তার পরিবর্তে অন্য খেলোয়াড় খেলতে পারবে।
৫.৫ যদি খেলা চলাকালে কোন কারণে রেফারি অপরাগ হন তখন (ফিফার বর্তমান আইন অনুযায়ী) স্ট্যান্ডবাই রেফারি তার হয়ে খেলা পরিচালনা করবেন।
৫.৬ খেলা আরম্ভ হবার পূর্বে রেফারি তার লাইন্সম্যানদ্বয়ের সাথে আলোচনা করে কার্যক্রম ও দায়িত্ব ঠিক করে নেবেন। লাইন্সম্যানদ্বয়কে গোল পোস্টের জাল ও খেলার মাঠের দু'পাশ ও দাগগুলো এবং খেলার সরঞ্জাম পরীক্ষা করার ভার দেবেন এবং কে কোন পার্শ্ব-রেখায় থাকবেন তা ঠিক করে দেবেন।
৫.৭ খেলা আরম্ভের পূর্বে রেফারি খেলার জন্য উপযুক্ত বল মনোনীত করবেন। খেলার জন্য বল মনোনয়নে রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
৫.৮ খেলা আরম্ভের জন্য উভয় দলের অধিনায়কের সামনে রেফারি মুদ্রা নিক্ষেপের মাধ্যমে টস করবেন। টসে জয়ী দল তাদের ইচ্ছেমত মাঠের যে কোন দিক বেছে নেবে এবং প্রারম্ভিক কিকের সুযোগ পাবে।
৫.৯ রেফারি ঘড়ি ধরে হিসেব রেখে নির্ধারিত সময়ে খেলা আরম্ভ ও শেষ করবেন এবং খেলার মধ্য সময়ে বিরতি দেবেন।
৫.১০ রেফারির মতে কোন কারণে বা দুর্ঘটনায় খেলার কিছু সময় নষ্ট হলে নষ্ট সময়টুকু খেলিয়ে রেফারি খেলার নির্ধারিত সময়ের ঘাটতি পূরণ করবেন। মধ্য বিরতির পূর্বের নষ্ট সময় মধ্য বিরতির আগে এবং বিরতির পরের নষ্ট সময় মধ্য বিরতির পরে যোগ করে খেলাবেন।
৫.১১ রেফারির দেয়া প্রথম প্রারম্ভিক কিকের নির্দেশের সময় থেকে খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত খেলার মাঠে রেফারির মতামত ও সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য করা হবে।
৫.১২ খেলা চলার সময় রেফারির বিনা অনুমতিতে মাঠ থেকে কোন খেলোয়াড় বেরিয়ে গেলে এবং পুনঃপ্রবেশ করলে রেফারি তাকে সতর্ক করবেন বা সাময়িকভাবে মাঠের বাইরে রাখতে পারেন।
৫.১৩ কথায়, কাজে এবং ব্যবহারে খেলোয়াড় রেফারির কোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিরাগ বা অসন্তুষ্টি দেখালে রেফারি তাকে সতর্ক করে দেবেন।
৫.১৪ কোন খেলোয়াড় প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের প্রতি অসদাচরণ করলে রেফারি অপরাধী খেলোয়ারকে শাস্তি দিলে যার প্রতি অসদাচরণ করা হয়েছে সেই খেলোয়াড় সন্তুষ্ট না হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে প্রতি হিংসাপরায়নভাবে পাল্টা অসদাচরণ করলে প্রথম অসদাচরণের উপর নেয়া রেফারির সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে এবং রেফারি দ্বিতীয় অসদাচরণের বিরুদ্ধে অসদাচরণের গুরুত্বানুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। কেননা একই সময়ে দু'রকমের অপরাধ আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
৫.১৫ খেলা চলাকালে কোন খেলোয়াড় অপর পক্ষের কিক মারার সময় সামনে অঙ্গ ভঙ্গি করলে, লাফালে, জোরে চিৎকার ইত্যাদি করে অসুবিধার সৃষ্টি করলে রেফারি সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে সতর্ক করে দেবেন বা হলুদ কার্ড দেখাতে পারেন।
৫.১৬ খেলার সময় কোন খেলোয়াড় মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হলে রেফারি সময়িকভাবে খেলা বন্ধ রাখবেন এবং যত শীঘ্র সম্ভব আহত খেলোয়াড়কে মাঠ থেকে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করবেন এবং সাথে সাথে খেলা শুরু করার ব্যবস্থা নেবেন।
৫.১৭ কোন খেলোয়াড় খেলা চলাকালে ব্যথা পাওয়ার ভান করে সমর্থকদের উত্তেজনা এবং সহানুভূতি যোগাতে চেষ্টা করেছে বলে রেফারি যদি মনে করেন তবে উক্ত খেলোয়াড়কে সাবধান বা হলুদ কার্ড দেখাতে পারবেন।
৫.১৮ রেফারি যেটা ব্যক্তিগতভাবে দেখতে পারেননি বা তার দৃষ্টিতে আসেনি সে ক্ষেত্রে রেফারি ইচ্ছে করলে লাইন্সম্যানদ্বয়ের মতামত নিতে পারবেন।
৫.১৯ রেফারি লাইন্সম্যানের সংকেত গ্রহণ না করলেও হাত উঠিয়ে লাইন্সম্যানের সংকেত দেখছেন বলে জানাবেন।
৫.২০ প্রত্যেক খেলোয়াড় পূর্ণ খেলার আধমন্তাধি সময়ে বিশ্রাম পাবার অধিকার আছে। তাই রেফারি অবশ্যই সে সুযোগ দেবেন। অতিরিক্ত সময়ের খেলায় দু'দলের মাঠ অদল-বদল ছাড়া কোন বিশ্রাম নেই।
৫.২১ প্রারম্বিক-কিক, পেনাল্টি কিক এবং কমন বলের সময় রেফারি অবশ্যই বাঁশি বাজিয়ে সংকেত দেবেন।
৫.২২ লীগ খেলা ছাড়া অমীমাংসিতভাবে খেলা শেষ হলে অতিরিক্ত সময়ে খেলার জন্য রেফারি আবার টস্ করে খেলা শুরু করবেন।
৫.২৩ খেলতে খেলতে খেলোয়াড়ের বুট খুলে গেলে অকুস্থল থেকে রেফারি ইনডিরেক্ট-কিক করার নির্দেশ দেবেন।
৫.২৪ ইচ্ছাকৃত হ্যান্ডবল করে খেলার সৌন্ধর্য নষ্ট করলে রেফারি অপরাধী খেলোয়াড়কে হলুদ কার্ড প্রদর্শন করে তার বিরুদ্ধে ফ্রি-কিক করার নিদেশ দেবেন।
৫.২৫ খেলা চলাকালে কোন ব্যক্তি, প্রশিক্ষক মাঠের প্রান্ত বা পার্শ্ব রেখায় দাঁড়িয়ে কথায়, ইশারায় বা ভঙ্গিতে খেলোয়াড়দের উপদেশ দিতে চেষ্টা করলে রেফারি তাকে বাধা দিবেন এবং প্রয়োজনে তাকে মাঠ থেকে বের করে দিতে পারেন।
৫.২৬ খেলা চলাকালে কোন খেলোয়াড় ইচ্ছাপূর্বক সময় নষ্ট করলে রেফারি তাকে তার অপরাধের গুরুত্বানুযায়ী মৌখিকভাবে সতর্ক বা হলুদ কার্ড প্রদর্শন করতে পারেন।
৫.২৭ অংশগ্রহনকারী খেলোয়াড় ও লাইন্সম্যানদ্বয় ব্যতীত রেফারির অনুমতি ব্যতিরেকে কেউ মাঠে প্রবেশ করতে পারবে না।
৫.২৮ পূর্ব সতর্কীকরণ ছাড়াই মারাত্মক অসদাচরণের জন্য অপরাধী খেলোয়াড়কে সরাসরি 'লাল কার্ড' দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দিতে পারেন। রেফারি বহিষ্কৃত খেলোয়াড়ের নামসহ বিস্তারিত তথ্যাদি ও নিজ মন্তব্যসহ ২৪ ঘন্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পেশ করবেন। লাল কার্ড প্রাপ্ত খেলোয়াড়কে অবশ্যই ড্রেসিং রুমে চলে যেতে হবে।
৫.২৯ বিপক্ষীয় খেলোয়াড়ের আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে বলে জোড়া কাঁচি (সিজার কিক) এবং গেড়ালি কিক আইন বিরুদ্ধ। এ ধরণের কিকে প্রয়োজনবোধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অপরাধী খেলোয়াড়কে রেফারি সতর্ক করে দিয়ে বিপক্ষকে 'ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক' দেবার নির্দেশ দেবেন।
নিম্নোক্ত কারণে রেফারি সাময়িকভাবে বা স্থায়ীভাবে খেলা স্থগিত করতে পারেন। তবে রেফারি কর্তৃপক্ষের নিকট বিস্তারিত ঘটনা ও নিজের মন্তব্যসহ ২৪ ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট পেশ করবেন—-
ক) খারাপ আবহাওয়ার জন্য;
খ) পর্যাপ্ত আলো না থাকলে;
গ) মাঠ খেলার অযোগ্য হয়ে গেলে;
ঘ) হঠাৎ ঝড় বা তির্যক বৃষ্টি শুরু হলে বা মাঠের দাগ অস্পষ্ট হয়ে গেলে;
ঙ) পানি জমে বল ভাসলে;
চ) দর্শকবৃন্দ জোরপূর্বক মাঠে প্রষেশ করলে বা হস্তক্ষেপ করলে এবং খেলার পরিবেশ না থাকলে;
ছ) খেলার মাঠে সাজ-সরঞ্জামাদি ঠিক না থাকলে;
জ) দু'দলের খেলোয়াড়গণ মারামারিতে লিপ্ত হলে;
ঝ) কোন দল খেলতে অস্বীকার করলে;
ঞ) খেলা চলাকালে খেলোয়াড় রেফারির সিদ্ধান্ত অমান্য করলে;
ট) যদি কোন দল অথবা দলের খেলোয়াড়েরা খেলার মাঠে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
ফুটবল খেলা চলাকালে রেফারির করণীয়
১.গোল পোস্ট জটলার মুখে খেলার সময় রেফারি এমন দূরত্বে অবস্থান করবেন, যেখান থেকে সমস্ত ঘটনা পরিষ্কারভাবে দেখা যায়।
২.কোন ঘটনা রেফারির চোখ এড়িয়ে গেলে সে সম্পর্কে লাইন্সম্যানের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতেও পারেন।
৩.খেলা চলাকালে খেলার রেফারি অবশ্যই মাঠের ভেতরে থাকবেন।
৪.দর্শকদের উচ্ছৃংখলতা, সূর্যের আলো অথবা অন্যান্য যে কোন অসুবিধার জন্য দু'জন লাইন্সম্যানকে একদিকেই নিয়ে খেলা চালানো যেতে বাধা নেই। এ ক্ষেত্রে রেফারিকে অপর পাশের পুরো টাচ্ লাইন দেখতে হবে।
৫.রেফারি খেলা চালানোর সময় ডায়াগোনাল অর্থাৎ দু'পেনাল্টি বক্সের কোনাকোনি দৌড়ে খেলা পরিচালনা করবেন। তাতে দু'জন লাইন্সম্যানের চোখের সামনে থাকবে।
৬.খেলার আরম্ভে প্রতিদ্বন্দ্বি দলের ম্যানেজার বা প্রশিক্ষক নিজ নিজ দলের খেলোয়াড়ের নামের তালিকা রেফারির কাছে পেশ করে থাকেন। খেলা শেষ হবার পর রেফারি ঐ তালিকার উপর খেলার শুরু, বিরতি, এবং শেষ হবার সময় এবং খেলোয়াড়ের নাম বরাবর কার্যক্রম, গোলের সংখ্যা ও সময়, অসদাচরণজনিত ব্যবহার ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করে প্রতিযোগিতার সংশ্লিষ্ট সংগঠক কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করবেন।
৭. খেলা সময়িক বন্ধের (খেলা চলাকালীন সময়ে) সময় রেফারিকে স্ট্যান্ডবাই বা চতুর্থ রেফারির প্রতি নজর দিতে হবে। কারণ, সে সময় খেলোয়াড় বদলি বা অন্য কোন সংকেত রেফারির জন্য থাকতে পারে।
৮.কমন বলে রেফারি অবশ্যই দু'পক্ষের দু'জন খেলোয়াড়ের মাঝে বল ড্রপ দেবেন।
৯.খেলার উপযোগী বা অনুপযোগী আলোর বিচার করতে রেফারি মাঠের কেন্দ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে উভয় গোলে বল দৃষ্টিগোচর হয় কিনা দেখবেন।
ষষ্ঠ আইন: লাইন্সম্যান
একটি খেলায় দুজন লাইন্সম্যান থাকবেন। তাদের কর্তব্য হবে কখন বলটি খেলার বাইরে গেল তা পতাকা দিয়ে সংকেত দেয়া এবং কোন দল থ্রোইন করবে, গোল-কিক হবে না কর্ণার-কিক হবে বা অফসাইড হবে সেগুলো রেফারিকে জানানো।
৬.১ লাইন্সম্যানের দায়িত্ব ও কর্তব্য—-
(ক) খেলা আরম্ভ হওয়ার আগেই রেফারির কাছে হাজিরা দিয়ে নির্দেশ গ্রহণ করা।
(খ) লাইন্সম্যান আইন অনুযায়ী খেলা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রন করতে রেফারিকে সকল রকম সাহায্য সহযোগিতা করবেন।
(গ) প্রতিযোগী দলকে সময়মত মাঠে নামাবেন।
(ঘ) রেফারির সিদ্ধান্তে সন্দেহ বা দ্বিমত পোষণ না করে প্রশ্নাতীতভাবে তা মেনে নেয়া।
(ঙ) খেলা চলাকালে কোন ঘটনা রেফারির দৃষ্টি এড়িয়ে গেলে লাইন্সম্যান তৎক্ষনাৎ পতাকা উত্তলন করে রেফারির দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন এবং প্রয়োজনে মতামত জানাবেন। রেফারি লাইন্সম্যানের মতামত গ্রহণ করতেও পারেন, নাও করতে পারেন। কারণ সব ব্যাপারে রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
(চ) প্রয়োজন ছাড়া লাইন্সম্যান পতাকা নিচের দিকে নামিয়ে রাখবেন।
(ছ) খেলোয়াড়ের দুর্ব্যবহার ও অসদাচরণের জন্য পতাকা তুলে রেফারির দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।
(জ) এক সমকোণী একটি পুরো টাচ্ লাইন এবং পুরো একটি গোল লাইনের কাছাকাছি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা একদিকের লাইন্সম্যানের দায়িত্ব। তার দায়িত্ব হলো এলাকার কোণ থেকে পার্শ্ব রেখা ধরে সেন্টার লাইন পর্যন্ত এসে পুরো টাচ্ লাইন ও কোণ থেকে গোল লাইন-এর খেলার প্রতি খেয়াল রাখা। একইভাবে অন্য দিকের লাইন্সম্যানের দায়িত্ব হবে অপর অর্ধাংশে অবস্থান করে তার টাচ্ লাইন ধরে সেন্টার লাইন পর্যন্ত এবং প্রথমোক্তর বিপরীত দিকের টাচ্ ও গোল লাইন ধরে পুরোপুরি দেখা।
(ঝ) খেলার প্রারম্ভে রেফারির ঘড়ির সাথে লাইন্সম্যানের ঘড়ি মিলিয়ে নেয়া।
(ঞ) লাইন্সম্যানের সংকেত পাওয়া সত্ত্বেও রেফারি খেলা চালিয়ে গেলে বুঝতে হবে রেফারি সংকেত প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেক্ষেত্রে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংকেত প্রত্যাহার করে নেবেন।
(ট) অফসাইড নির্ণয়ের জন্য গোলরক্ষক ব্যতিরেকে রক্ষণের শেষ খেলোয়াড়ের সমান্তরাল দৌড়ানো।
(ঠ) লাইন্সম্যানের দায়িত্ব পালনে ও মতামত প্রকাশে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা।
(ড) কোন বিতর্কমূলক ঘটনার উপর রেফারি তার সাথে পরামর্শ করলে মতামত দেয়া এবং রেফারির সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া।
(ঢ) খেলা পরিচালনায় বাঁধার সৃষ্টি করলে, বার বার পক্ষপাতমূলক সংকেত দিলে অথবা অন্যায় আচরণ করলে রেফারি তাকে বাদ দিয়ে অন্য লোক নিয়োগ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে লাইন্সম্যানের বিরুদ্ধে রেফারি নিজ মন্তব্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পেশ করবেন।
৬.২ লাইন্সম্যানের সংকেত দেবার নিয়ম–
(ক) রেফারির দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য লাইন্সম্যান পতাকা মাথার উপর তুলে আনুমানিক তিন সেকেন্ড দাঁড়াবেন বা তিন পদক্ষেপ (স্টেপ) দৌড়াবেন।
(খ) গোল কিকের সংকেত পতাকা দিয়ে গোল কিকের স্থান দেখাবেন।
(গ) কর্ণার কিকের সংকেত পতাকা দিয়ে কর্ণার কিকের স্থান দেখাবেন।
(ঘ) অফসাইড মাঠের অপর পাশে হলে পতাকা উচু করে অফসাইডের স্থান দেখাবেন।
(ঙ) মধ্য মাঠে হলে কাঁধের সমান্তরালে এবং সামনে হলে পতাকা নিচু করে অফসাইডের স্থান দেখাবেন।
(চ) যে পক্ষ থ্রো ইন করার সুযোগ পায়, তাদের বিরুদ্ধ দলের দিকে পতাকা দিয়ে দেখাবেন। বিরুদ্ধ দল লাইন্সম্যানের ডান পাশে থাকলে পতাকা ডান হাতে নিয়ে ডান দিকে এবং বাম পাশে থাকলে পতাকা বাম হাতে নিয়ে বাম দিকে সংকেত দেবেন।
(ছ) অফসাইড, ফাউল, হ্যান্ডবল, থ্রো ইন, গোল কিক, কর্ণার কিক হলে পতাকা সোজাসুজি মাথার উপর তুলে সংকেত দেখিয়ে তড়িৎগতিতে দিক নির্দেশ করবেন।
(জ) খেলা সাময়িকভাবে বন্ধ হবার সঙ্গে সঙ্গে খেলোয়াড় পরিবর্তনের প্রয়োজনে স্ট্যান্ডবাই রেফারি খেলোয়াড় বদলির সংকেত দেবার সাথে সাথে লাইন্সম্যানদ্বয় তাদের পাতাকা মাথার উপর দু'হাত দিয়ে তুলে ধরবেন রেফারির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।
(ঝ) খেলা চলাকালীন সময় কোন খেলোয়াড় আহত হলে উক্ত খেলেয়াড়ের প্রশিক্ষক/ডাক্তার অথবা বেয়ারার মাঠে থাকা অবস্থায় রেফারি যাতে খেলা আরম্ভ না করতে পারেন সে জন্য লাইন্সম্যানদ্বয় তাদের পতাকা মাথার উপর তুলে রাখবেন যে পর্যন্ত মাঠ পরিষ্কার না হয়।
৬.৩ চতুর্থ বা স্ট্যান্ডবাই রেফারির দায়িত্ব ও করণীয়
ফুটবল খেলা সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রন করার জন্য চতুর্থ বা স্ট্যান্ডবাই রেফারির প্রবর্তন করা হয়েছে।
(ক) খেলার অতিরিক্ত ফুটবল, বদলি খেলোয়াড়ের নম্বর প্লেট ও দু'দলের খেলোয়াড়ের তালিকা তার নিকট থাকবে।
(খ) খেলা আরম্ভের সাথে সাথে রেফারির ঘড়ির সাথে নিজের ঘড়ি মিলিয়ে নেবেন।
(গ) খেলা চলাকালে গোলদাতার নাম, বদলি খেলেয়াড়ের নাম ও হলুদ বা লাল কার্ড প্রাপ্ত খেলোয়াড়ের নাম ও সময় লিখে রাখবেন।
(ঘ) বদলি খেলোয়াড়কে মাঠ হতে উঠানো ও নামানোর ব্যবস্থা করা।
(ঙ) খেলোয়াড় আঘাতপ্রাপ্ত হলে রেফারির অনুমতি ছাড়া কেউ যেন মাঠে প্রবেশ করতে না পারে সে দিকে দৃষ্টি রাখা।
(চ) টাইব্রেকার হলে প্রতিদ্বন্দ্বি দলের প্রশিক্ষকের নিকট হতে পেনাল্টি মারার জন্য খেলোয়াড়ের তালিকা নিয়ে রেফারিকে পৌঁছানো।
(ছ) টাইব্রেকারের সময় রেফারি চতুর্থ রেফারিকে যে দায়িত্ব দেবেন তা সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন।
(জ) খেলা চলাকালীন সময়ে তিনি সদাসর্বদা সম্পূর্ণ মাঠের খেয়াল রাখবেন এবং রেফারির নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবেন।
(ঝ) খেলোয়াড় বদলির সময় বদলি খেলোয়াড় মাঠের বাইরে না আসা পর্যন্ত অপর বদলি খেলোয়াড় যেন মাঠে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
(ঞ) চতুর্থ রেফারি খেলা চলাকালে রেফারির সংকেতের দিকে দৃষ্টি রাখবেন।
(ট) প্রতিযোগী দলের প্রশিক্ষক বা কর্মকর্তা টাচ্ বা গোল লাইনের নিকট হতে যাতে নিজ নিজ দলকে প্রশিক্ষন কিংবা উপদেশ না দিতে পারেন সে দিকে দৃষ্টি রাখবেন।
(ঠ) খেলা চলাকালীন সময়ে লাল কার্ড প্রাপ্ত খেলোয়াড়কে ড্রেসিং রুমে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।
সপ্তম আইন: খেলার স্থিতিকাল
৭.১ আন্তর্জাতিক ফুটবল আইনে ৫ মিনিট মধ্য বিরতিসহ ৯৫ মিনিট অর্থাৎ ৪৫+৫+৪৫ মিনিট খেলা হয়ে থাকে।
৭.২ অনুর্ধ ১৬ বছর বয়সের ফুটবল প্রতিযোগিতায় ৫ মিনিট মধ্য বিরতিসহ ৮৫ মিনিট অর্থাৎ ৪০+৫+৪০ মিনিট খেলা হয়ে থাকে।
৭.৩ দুর্ঘটনা বা অন্য কোন অস্বাভাবিক কারণে খেলার নির্ধারিত স্থিতিকালের কিছু সময় নষ্ট হলে নষ্ট সময়টুকু খেলার নির্ধারিত সময়ের সাথে যোগ করতে হবে।
৭.৪ নষ্ট সময় বিরতির আগে হলে আগে এবং পরে হলে পরে খেলিয়ে পূরণ করতে হবে।
৭.৫ রেফারি প্রতিযোগী দলের অধিনায়কের অনুরোধে নির্ধারিত ৫ মিনিটের বিরতি বৃদ্ধি করতে পারেন। তবে সেটা উভয় দলের অধিনায়কদের সম্মতিতে হতে হবে। (সময় বাড়ানোর যুক্তিসংগত কারণ থাকতে হবে।)
৭.৬ খেলার নির্ধারিত সময় বাড়ানো যায়। শুধুমাত্র পেনাল্টি-কিক সম্পন্ন করার জন্য।
१.१ মৌসুমী লীগ খেলা বাদে প্রতিযোগিতামূলক খেলা অমীমাংসিতভাবে শেষ হলে সংগঠনের পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খেলার ভাগ্য নির্ধারণের জন্য মধ্য বিরতিসহ ১৫ মিনিট অর্থাৎ ৭+১+৭অথবা ৩১ মিনিট অর্থাৎ ১৫+১+১৫ মিনিট বর্ধিত সময় খেলা হতে পারে। মাঃ নর্তীতে কোন
৭.৮ অমীমাংসিত প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অতিরিক্ত সময় না দিয়ে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করার জন্য সরাসরি টাইব্রেকার পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন, যদি সংগঠকদের বিধিমালায় তা থাকে।
অষ্টম আইন: খেলা আরম্ভ
৮.১ নির্ধারিত সময়ে রেফারির সংকেতে খেলা আরম্ভ করতে হবে।
৮.২ খেলার শুরুতে রেফারি মাঠের সেন্টার সার্কেলে দাঁড়িয়ে দু'দলের অধিনায়কদের সামনে মুদ্রা (টস) উপরের দিকে নিক্ষেপ করবেন। মুদ্রা উৎক্ষেপে জয়ী দল পছন্দ মতো মাঠের একদিক অথবা প্রারম্ভিক কিক বেছে নেবে।
৮.৩ কেন্দ্র বিন্দুতে বল রেখে প্রথম খেলা আরম্ভকারী দলের সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড় রেফারির সংকেতের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকবে। অন্য খেলোয়াড়েরা নিজেদের অবস্থান থেকে প্রারম্ভিক কিকের অপেক্ষায় থাকবে।
৮.৪ রেফারি খেলা আরম্ভের সংকেত দিলে প্রারম্ভিক কিক মারার খেলোয়াড় সামনের দিকের অপর পক্ষের সীমানায় বল মারলে বলটির সম্পূর্ণ এক পরিধি ঘুরলে খেলা আরম্ভ হয়েছে বলে পরিগণিত হবে।
৮.৫ খেলা আরম্ভের আগে উভয় পক্ষের খেলোয়াড় মাঠের অর্ধেকের নিজ সীমানায় যার যার জায়গায় অবস্থান করবে।
৮.৬ প্রারম্ভিক কিকের সময় এক পক্ষ প্রথম বলে কিক মারার সময় বিপক্ষ দল বল থেকে ৯ মিটার বা ১০ গজ দূরে নিজেদের সীমানায় অবস্থান করবে।
৮.৭ প্রারম্ভিক কিকে বিপক্ষীয় সীমানার দিকে বল এক পরিধি স্থান সম্পূর্ণ একবার না ঘোরা পর্যন্ত বল খেলার মধ্যে গণ্য করা হবে না।
৮.৮ প্রারম্ভিক কিক করা বল অন্য কোন খেলোয়াড় স্পর্শ না করলে প্রারম্ভিক কিক করা খেলোয়াড় ঐ বল দ্বিতীয়বার খেলতে পারবে না। খেললে বিপক্ষ দল আইন অমান্যকারী দলের বিরুদ্ধে আইন অমান্যের জায়গা থেকে ইনডাইরেক্ট ফ্রি-কিক মারার সুযোগ পাবে।
৮.৯ প্রতিটি গোলের পর বিজিত দল কেন্দ্র বিন্দুতে বল রেখে পূর্ব বর্ণিত প্রারম্ভিক কিক মারার নিয়মে কেন্দ্র বিন্দু হতে কিক দিয়ে খেলা আরম্ভ করবে।
৮.১০ প্রারম্ভিক কিকে বল পেছনে পাস করা চলবে না।
৮.১১ প্রারম্ভিক কিক সরাসরি গোলে মারলে গোল হয় না।
নবম আইন: বল খেলার মধ্যে ও বাইরে
৯.১ বল খেলার মধ্যে গণ্য করা হয়—
(ক) গোলবার বা আঁড়খুঁটি এবং কর্ণার পতাকা দন্ডে বল লেগে মাঠে ফিরে এলে।
(খ) রেফারি বা লাইন্সম্যনের গায়ে যদি বল লাগে এবং তারা যদি গোল বা টাচ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে এবং বল মাঠের মধ্যে থাকে তাহলে বল খেলার মধ্যে বলে গণ্য হবে।
গ) খেলার কোন আইন ভংগের জন্য রেফারি কর্তৃক সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা পর্যন্ত।
৯.২ বল খেলার বাইরে—-
(ক) বল মাটিতে গড়িয়ে বা শূন্য দিয়ে গোল বা টাচ্ লাইন সম্পূর্ণ অতিক্রম করলে।
(খ) রেফারির যে কোন সিদ্ধান্তের পর পরবর্তি নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত।
দশম আইন: গোল করার নিয়ম
১০.১ খেলা চলাকালে গোলপোস্টের ভেতর ও আঁড়খুঁটির নিচের যে কোন জায়গা দিয়ে বল আইনসম্মতভাবে শূন্য দিয়ে বা মাটি ঘেষে সম্পূর্ণ গোল লাইন অতিক্রম করলে গোল হয়।
১০.২ গোল-কিপার ছাড়া (নিজ দলের পেনাল্টি এরিয়ায়) কোন খেলোয়াড় হাত দিয়ে বল ছুঁড়ে, হাত দিয়ে বহন বা হাত দিয়ে ঠেলে বল গোলে ঢুকালে গোল হয় না।
১০.৩ সংখ্যায় বেশি গোলদাতা দলকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। কোন পক্ষই গোল করতে না পারলে বা দু'পক্ষ সমান সংখ্যক গোল করলে খেলা অমীমাংসিত বলে বিবেচিত হয়।
১০.৪ গোল হওয়ার মুহূর্তে যদি বাইরের কারো দ্বারা ভুলটি থামানো হয় (পেনাল্টি কিক ব্যতিত) তবে রেফারি খেলা থামাবেন এবং ড্রপের মাধ্যমে পুনঃ আরম্ভ করবেন।
একাদশ আইন: অফসাইড
খেলা চলাকালে কোন খেলোয়াড় সেন্টার লাইন থেকে এগিয়ে এবং বিপক্ষের রক্ষণ ভাগের শেষ দু'জন খেলোয়াড়ের আগে, বিপক্ষের গোল লাইনের দিকে এগিয়ে থাকলে খেলোয়াড়ের ঐ অবস্থাকে অফসাইড বলে।
১১.২ বলে কিক মারার সময় অফসাইড নির্ণয় করা হয়।
১১.৩ বিপক্ষের শেষ খেলোয়াড়ের সমান্তরাল থাকাকালীনও অফসাইড ধরা হয়।
১১.৪ অফসাইডের শাস্তি ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক দেয়া হয়।
১১.৫ অফসাইডে দাঁড়িয়ে নেই, এমন বিপক্ষ খেলোয়াড়কে বিপাকে ফেলার মনোভাব নিয়ে রক্ষণের শেষ দুজন খেলোয়াড় বল মারার সাথে সাথে সামনে এগিয়ে গেলে ঐ বিপক্ষীয় খেলোয়াড়ের অফসাইড ধরা হয় না।
১১.৬ নিম্নোক্ত অবস্থায় খেলোয়াড়ের অফসাইড ধরা যায় না—
(ক) বিপক্ষের গোল-কিপার ও অন্ততঃ ১ জন খেলোয়াড় অথবা বিপক্ষের যে কোন দু'জন খেলোয়াড় সামনে থাকলে।
(খ) খেলোয়াড় মাঠের নিজ সীমানায় থাকলে।
(গ) সরাসরি গোল কিকের সময়।
(ঘ) রেফারির বল ড্রপ দেয়ার সময়।
(ঙ) সরাসরি থ্রো ইনের সময়।
(চ) সরাসরি কর্ণার কিকের সময়। চত
(ছ) বিপক্ষের কোন খেলোয়াড়ের দেয়া বল পেলে।
(জ়) নিজের খেলা বল ছেড়ে এগিয়ে অন্য কোন খেলোয়াড় বল না ধরার আগে ফিরে এসে আবার বল ধরলে।
(ঝ) মাঠের একপাশে খেলা চলাকালে অপর পাশের খেলোয়াড় নিষ্কৃয়ভাবে অবস্থান করলে।
(ঞ) অফসাইডে দাঁড়িয়ে থাকা খেলোয়াড় সরাসরি গোলে মারা বল ধরতে, খেলায় অথবা বিপক্ষ খেলোয়াড়কে বাধা দিতে অথবা নিজের অবস্থার সুবিধে নিতে চেষ্টা না করে নিষ্কৃয় থাকলে।
(ট) প্যারালাল লাইনে অফসাইড হয় না।
দ্বাদশ আইন : অসদাচরণ ও দুর্ব্যবহার
খেলার সময় ফুটবলের আইন লংঘনকারী ও খেলার সৌন্দর্য এবং মান নষ্টকারী খেলোয়াড়ের যে কোন আচরণ ও ব্যবহারকে অসদাচরণ ও দুর্ব্যবহার বলে।
১২.১ বিপক্ষীয় খেলোয়াড়ের প্রতি নিম্নবর্ণিত ৯টি ইচ্ছাকৃত আচরণ ও দুর্ব্যবহারকে খেলোয়াড়ের অসদাচরণ ও দুর্ব্যবহার ধরা হয়। অসদাচরণ ও দুর্ব্যবহারের শাস্তি হিসেবে অকুস্থল থেকে ডিরেক্ট ফ্রি- কিক হয়। পেনাল্টি এলাকায় ঘটলে পেনাল্টি কিক হয়—
(ক) বিপক্ষীয় খেলোয়াড়কে ইচ্ছাকৃত লাথি মারা বা লাথি মারার চেষ্টা করা।
(খ) বিপক্ষীয় খেলোয়াড়ের গায়ের উপর লাফিয়ে পড়া।
(গ) বিপক্ষীয় খেলোয়াড়কে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়া বা দেয়ার চেষ্টা করা।
(ঘ) বিপক্ষীয় খেলোয়াড় বাধার সৃষ্টি না করা সত্ত্বেও তাকে পেছন থেকে আক্রমণ
(3) বিপক্ষীয় খেলোয়াড়কে কোনরকম আঘাত করা বা করার চেষ্টা করা ও থুথু দেয়া।
(চ) বিপক্ষীয় খেলোয়াড়কে হাত বা হাতের যে কোন অংশ দিয়ে ধরে রাখা বা আঁটকানো।
(ছ) বিপক্ষীয় খেলোয়াড়কে মারাত্মকভাবে আক্রমণ করে আহত করার চেষ্টা করা। আর জায়
(জ) বিপক্ষীয় খেলোয়াড়কে হাত বা হাতের যে কোন অংশ দিয়ে ধাক্কা দেয়া বা দেয়ার চেষ্টা করা।
(ঝ) হাত দিয়ে বল ধরা, বহন করা, মারা বা বল ঘুরিয়ে দেয়া, (নিজ এলাকায় অবস্থানরত গোলকিপারের বেলায় প্রযোজ্য নয় তবে পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে গোলকিপারের জন্যও প্রযোজ্য)।
১২.২ নিম্নে বর্ণিত ৫টি কার্যাদি অপরাধ হিসেবে ধরা হয়। অপরাধের শান্তি অকুস্থল থেকে ইনডিরেক্ট ফ্রি কিক হয়—
(ক) বিপক্ষীয় গোলকিপারের ধরে থাকা বলে কিক মারা বা মারার চেষ্টা করা।
(খ) বল খেলার দূরত্বের বাইরে থাকা সত্ত্বেও বিপক্ষীয় খেলোয়াড়কে অনর্থক চার্জ করা।
(গ) বল না খেলে বিপক্ষীয় খেলোয়াড়কে অনর্থক ধাক্কা দেয়া, চার্জ করা বা করার চেষ্টা করা।
(ঘ) বিপক্ষীয় গোলকিপার বল ধরে থাকলে, বিপক্ষীয় গোলকিপারকে বল ধরতে বাধা দিলে এবং অন্যান্য সময় গোলকিপারকে আক্রমণ করা।
(ঙ) গোলকিপার বল হাত দিয়ে ধরা অবস্থায় চার পদক্ষেপের মধ্যে বল মোর দিতে হবে।
১২.৩ খেলা চলাকালীন অবস্থায় গোলকিপার বল মাটিতে ছেড়ে আবার হাতে ধরতে পারবে না। হাতে ধরলে ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক হবে।
১২.৪ খেলা চলাকালে খেলোয়াড়ের অসদাচরণ বা অখেলোয়াড়োচিত ব্যবহারের জন্য অপরাধী খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী রেফারি যে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
১২.৫ রেফারির বিবেচনায় কোন খেলোয়াড়ের অসদাচরণ বা অখেলোয়াড়োচিত আচরণের গুরুত্বের উপর ভিত্তি করে, অপরাধী খেলোয়াড়কে মৌখিক বা হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করে দিতে পারেন।
১২.৬ একই খেলায় হলুদ কার্ডপ্রাপ্ত খেলোয়াড় যদি দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড পায় তবে এশিয় তা লাল কার্ড হবে।
১২.৭ অবধারিত গোলের সময় যদি কোন খেলোয়াড় নিজ দলের গোল রক্ষার্থে ইচ্ছেকৃত ফাউল করেন বা হাত দিয়ে ধরে অবধারিত গোলটি বাঁচাতে চেষ্টা করেন তাহলে রেফারি উক্ত দলের বিরুদ্ধে পেনাল্টি এরিয়ার মধ্যে হলে পেনাল্টি দেবেন। বাইরে হলে ফ্রি-কিক দেবেন, এবং উক্ত অপরাধী খেলোয়াড়কে সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বহিষ্কার করবেন।
১২.৮ গোলকিপার অবধারিত গোল বাঁচানোর জন্যে যদি পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে গিয়ে ইচ্ছেকৃত বল হাত দিয়ে ধরে বা পাঞ্চ করে অথবা ফাউল করে তাহলে রেফারি উক্ত দলের বিরুদ্ধে ঐ স্থান ফ্রি-কিক দেবেন এবং গোলকিপারকে লাল কার্ড দেখাবেন।
১২.৯ গোলকিপার তার স্বদলের খেলোয়াড় এর ইচ্ছাকৃতভাবে পা দিয়ে পাস করা বল অর্থাৎ ব্যাকপাশ হাত দিয়ে ধরতে পারবে না, যদি ধরে তবে তার দলের বিরুদ্ধে ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক হবে। মাথা, বুক, হাঁটু দিয়ে বা থ্রো করা বল ধরতে পারে।
১২.১০ বিপক্ষ দলের আক্রমণের সময় নিজ পক্ষের খেলোয়াড়ের গায়ে, পায়ে বা মাথায় লেগে বল গোলপোস্টে যায় বা গোল হবার উপক্রম হয়, তখন গোলকিপার সে বল পাঞ্চ করতে পারেন বা বলটি ধরে কোন স্টেপ বা ড্রপ না দিয়ে তৎক্ষণাৎ তড়িৎগতিতে বল মেরে দিতে পারেন।
১২.১১ গোল লাইনের কাছে বা উপর এবং গোল এরিয়ার মধ্যে রেফারি কোন অপরাধের জন্য বল ড্রপ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, গোল লাইনের সমান্তরাল এবং সামনে গোল এরিয়া লাইনের উপর রেফারি বলকে ড্রপ দেবেন।
১২.১২ খেলা চলাকালীন সময়ে যে কোন খেলোয়াড়ের অসদাচরণ-এর গুরুত্বানুযায়ী রেফারি সতর্কীকরণ, হলুদ কার্ড এবং লাল কার্ড দেখাতে পারেন।
ত্রয়োদশ আইনঃ ফ্রি-কিক
খেলোয়াড়ের অসদাচরণ এবং দুর্ব্যবহারের শাস্তি স্বরূপ রেফারি অপরাধীর বিপক্ষে অকুস্থলে বল রেখে কিক মারতে দেবেন। এ কিককে ফ্রি-কিক বলে।
১৩.১ ফ্রি-কিক
ফ্রি-কিক দু'রকমের, ডিরেক্ট এবং ইনডিরেক্ট।
১৩.২ ডিরেক্ট ফ্রি-কিক'---যে কিক থেকে বল বিপক্ষ দলের গোলে সরাসরি ঢুকলে গোল হয়।
১৩.৩ ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক—-
(ক) বল গোলের ভেতরে ঢুকে গোল লাইন অতিক্রম করার আগে পক্ষ ও বিপক্ষ দলের কোন খেলোয়াড় স্পর্শ না করলে ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিকে সরাসরি গোল হয় না এবং গোল কিক দিয়ে পুনরায় খেলা শুরু হয়।
(খ) ডিরেক্ট এবং ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক মারার সময় বিপক্ষীয় খেলোয়াড় কিক মারার জায়গা থেকে কমপক্ষে ৯ মিটার বা ১০ গজ দূরে থাকবে।
(গ) ইনডিরেক্ট ফ্রি কিক গোলপোস্ট থেকে ৯ মিটার বা ১০ গজ কম দুরত্বে হলে খেলোয়াড়রা গোলপোস্টের গোল লাইনের উপর দাঁড়াতে পারে।
(ঘ) ফ্রি-কিক মারা বল কেউ না খেলা পর্যন্ত কিক মারা খেলোয়াড় দ্বিতীয়বার ঐ বল খেলতে পারবে না। খেললে তার বিরুদ্ধে ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক হবে।
চর্তুদশ আইন: পেনাল্টি-কিক
আত্মরক্ষাকারী দলের পেনাল্টি এলাকার ভেতরে যে কোন জায়গায় খেলোয়াড়ের হ্যান্ডবল (গোল-কিপার ছাড়া) মারাত্মক সংঘর্ষ ও দ্বাদশ আইনে বর্ণিত ৯টি অসদাচরণ ও দুর্ব্যবহারের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে খেলা থামিয়ে রেফারি অপরাধীর গোল পোস্টে বিপক্ষকে কিক মারতে দেন। একিককে পেনাল্টি-কিক বলে।
১৪.১ অপরাধ সংঘটনের এলাকার পেনাল্টি স্পটে বল বসিয়ে বিপক্ষীয় খেলোয়াড় পেনাল্টি-কিক মারবে। অপরাধী দলের গোল-কিপার বল আঁটকাতে বা ফেরাতে না পারলে পেনাল্টি কিকে সরাসরি গোল হয়।
১৪.২ পেনাল্টি কিক মারার জন্য খেলোয়াড় এবং পেনাল্টি কিকের বল ফেরানোর গোলকিপার ছাড়া অন্যান্য খেলোয়াড় পেনাল্টি এলাকার বাইরে এবং পেনাল্টি কিকের স্পট থেকে ৯মিটার বা ১০ গজ দূরে অবস্থান করবে।
নির্দেশাবলী
পেনাল্টি কিক আঁটকাতে গোল-কিপার গোলপোস্টের মাঝখানে গোললাইনের উপর দাঁড়াবে।
পেনাল্টি কিক না মারা পর্যন্ত গোলকিপার মাটি থেকে পা না তুলে শরীর নাড়াচাড়া করতে পারবে।
পেনাল্টি কিক পেছনে মারা যাবে না।
পেনাল্টি কিক মারার সময় খেলোয়াড় একদিকে বল মারার কায়দায় পা তুলে ধোঁকা দিয়ে অন্য দিকে মারতে পারবে না।
পেনাল্টি কিক মেরে, এমনকি বল আঁড়খুঁটিদ্বয়ে লেগে ফিরে এলেও অন্য কেউ না খেলা পর্যন্ত শুধু পেনল্টি কিক মারা খেলোয়াড় দ্বিতীয়বার বল খেলতে পারবে না। পেনাল্টি কিক মারা বল গোলকিপারের পায়ে বা গায়ে লেগে আসলে খেলতে পারবে।
পেনাল্টি-কিক মারার পর বলের পরিধি একবার সম্পূর্ণ ঘুরলে বল খেলার মধ্যে বলে গণ্য হবে।
পেনাল্টি কিকের ছাড়া তার দলের অন্য কোন খেলোয়াড় পেনাল্টি মারার পূর্বে পেনাল্টি এলাকায় প্রবেশ করলে অথবা অন্য কোন আইন ভঙ্গ করে থাকলে সেই পেনাল্টি কিকে গোল হলে আবার মারতে হবে। আর গোল না হলে গোল কিক হবে।
পেনাল্টি কিক করা বল আঁড়খুঁটিতে ও খুঁটিদ্বয়ে লেগে মাঠের ভেতর ফিরে এলে, আগেই নিষিদ্ধ এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা নিজস্ব খেলোয়াড়ের দখলে গেলে আইন বিরুদ্ধ অপরাধে ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক হবে।
পেনাল্টি কিক মারার সময় আত্মরক্ষাকারী দলের কোন খেলোয়াড় নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করলে অথবা আইন ভঙ্গ করলে ঐ পেনাল্টি কিকে গোল হলে গোল ধরা হবে এবং না হলে আবার পেনাল্টি কিক মারবে।
পেনাল্টি কিক সরাসরি গোলে না মেরে সামনের দিকে কিছু দূর ঠেলে দিয়ে বল পাস করলে পেছন থেকে স্বপক্ষীয় খেলোয়াড়ের দৌড়ে এসে গোল করার সুযোগ নিতে বাধা নেই।
প্রতিযোগিতার আইন অনুসারে অমীমাংসিত খেলায় বাড়তি সময় না দিয়ে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করার জন্য সরাসরি পেনাল্টি কিক অর্থাৎ টাইব্রেকার মারার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।
টাইব্রেকার-কিক
টাইব্রেকারের নিয়ম
রেফারি টস্ করবেন এবং বিজয়ী দলের অধিনায়ককে প্রথম কিক নিতে বলবেন।
রেফারিই পছন্দ করে নেবেন কোন গোলপোস্টে টাইব্রেকারের সব কিকগুলো হবে।
প্রতিটি দল ৫টি করে পর্যায়ক্রমে কিক পাবে এবং গোল সংখ্যা সমান হলে পরবর্তি পর্যায়ে প্রতি দল ১টি করে কিক করবে এবং যারা গোল পারবে না তারাই হেরে যাবে। (একটি করে কিককে সাডেন ডেথ বলে)।
খেলার শেষ সময়ে যে সমস্ত খেলোয়াড় মাঠে উপস্থিত থাকবে কেবলমাত্র তারাই টাইব্রেকারে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
প্রতিটি কিক করবে প্রতি দলের পৃথক পৃথক খেলোয়াড় এবং ১টি দলের সব খেলোয়াড়ের কিক না হওয়া পর্যন্ত ঐ দলের কোন খেলোয়াড় দু'বার কিক করতে পারবে না।
খেলার শেষ সময় পর্যন্ত যে সমস্ত খেলোয়াড় মাঠে থাকবে তাদের মধ্য থেকে যে কেউ কিক চলাকালীন সময়ে গোল কিপারের সাথে জায়গা পরিবর্তন করে নিতে পারবে।
যে খেলোয়াড় পেনাল্টি কিক নেবে সে এবং প্রতিরক্ষাকারী দলের গোলকিপার ছাড়া উভয় দলের অন্যান্য খেলোয়াড় কিক মরার সময় মাঠের মধ্যবৃত্তে বা সেন্টার সার্কেলের মধ্যে লাইন করে বসবে।
যে গোল-পোস্টে কিক করা হবে সে পোস্টের দিকে সেন্টার লাইনের ভেতরে সিরিয়াল নাম্বার অনুযায়ী খেলোয়াড় বসবে। আর বাকি খেলোয়াড় সেন্টার লাইনের পেছনে বসবে।
বিপক্ষ গোলকিপার পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে যে কোন একদিকে মাঠের ভেতর বসবে।
কিক করা খেলোয়াড় দু'দল দু'দিকে সেন্টার লাইন ও টাচ্ লাইনের কাছাকাছি বসে থাকবে।
কিক শেষ করার আগে যদি পর্যাপ্ত আলো না থাকে তবে টসের বা লটারির মাধ্যমে খেলার ফলাফল নির্ধারণ করতে হবে।
টাইব্রেকার আরম্ভ না করে আলোর অভাবে লটারি বা টসের মাধ্যমে খেলার ফলাফল নির্ধারণ করা যাবে না।
পঞ্চদশ আইন: থ্রো-ইন
বলের সম্পূর্ণ অংশ যখন শূন্য অথবা গড়ানো অবস্থায় টাচ্ লাইন অতিক্রম করে, তখনই প্রো-ইন হয়। বলটি সর্বশেষ যে দলের খেলোয়াড়ের স্পর্শে টাচ্ লাইনের যেস্থান অতিক্রম করেছে, বিপক্ষ দল সেই স্থান থেকে গ্রো-ইন করবে।
১৫.১ নিক্ষেপকারী মুখ মাঠের দিকে রেখে, সোজা হয়ে দু'হাতে বল মাথার উপর থেকে মাঠের ভেতর থ্রো-ইন করতে হয়—
(ক) বল যে দিকে থ্রো ইন করবে বুক সেদিকে সোজা রাখতে হয়।
(খ) টাচ্ লইনের উপর দাঁড়িয়ে থ্রো ইনের সময় খেলোয়াড়ের দু'পা অথবা দু'পায়ের অংশ বিশেষ মাঠের টাচ্ লাইন ছুঁয়ে থাকবে।
(গ) টাচ লাইনের বাইরে দাঁড়িয়ে থ্রো ইনের সময় গোড়ালী ওঠাতে মানা নেই তবে পায়ের পাতা মাটিতে থাকতে হবে।
(ঘ) থ্রো ইনের বল সরাসরি বিপক্ষীয় গোলে প্রবেশ করলে গোল হবে না।
(৫) থ্রো ইনের বল হাত থেকে না ছুঁড়ে দেয়া পর্যন্ত থ্রো করা খেলোয়াড় মাঠে প্রবেশ করতে পারবে না।
(চ) থ্রো ইন করার সময় হাত থেকে বল মুক্ত হয়ে মাঠের মধ্যে না যাওয়া পর্যন্ত গ্রো ইন গণ্য হবে না।
(ছ) নিয়ম ভঙ্গ করে থ্রো ইন করলে অপর পক্ষ পাল্টা থ্রো ইন পাবে।
(জ) টাচ্ লাইন থেকে ১ মিটারের বাইরে থেকে থ্রো করা যাবে না।
(ঝ) থ্রো-ইনের বল আইনসম্মতভাবে মাঠে প্রবেশ করলেই বল খেলার মধ্যে গণ্য হবে। কিন্তু অন্য খেলোয়াড় বল না খেলা পর্যন্ত থ্রো ইনকারী খেলোয়াড় বল খেলতে পারবে না। খেললে বিপক্ষ দল ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক পাবে।
(ঞ) থ্রো-ইনের সময় হাত ফসকে বল মাঠের বাইরে পড়লে পুনরায় প্রো-ইন হবে। কিন্তু পুনরাবৃত্তি ঘটলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অপর পক্ষ অকুস্থল থেকে পাল্টা থ্রো ইনের সুযোগ পাবে।
(ট) থ্রো-ইন করা বল সরাসরি নিজ গোলে প্রবেশ করলে অপর পক্ষ কর্ণার কিক প্রকার পাবে।
(ঠ) থ্রো ইন থেকে অফসাইড হয় না।
(ড) টাচ্ লাইনের যে জায়গা দিয়ে বল ক্রশ করে ঠিক সেই জায়গা হতে থ্রো করতে হবে অন্যথায় বিপক্ষ দল থ্রো পাবে।
(ঢ) থ্রো-ইনের সময় বিপক্ষ খেলোয়াড় কোন অঙ্গভঙ্গি করতে এবং থ্রোয়ারকে বাধা দিতে পারবে না।
ষষ্ঠদশ আইন: গোল-কিক
বিপক্ষ খেলোয়াড়ের কিক, হেডিং বা হাত ছাড়া শরীরের যে কোন অংশে লেগে বা ইচ্ছাকৃত মারের ফলে বলের সম্পূর্ণ অংশ গোলপোস্টের ভেতরের অংশ বাদ দিয়ে শূন্যে বা গড়িয়ে গেলে লাইনের যে কোন জায়গা দিয়ে মাঠ অতিক্রম করলে, গোল এলাকার ভেতরে যে কোন স্থানে বল রেখে মাঠের ভেতরের দিকে বল কিক মারাকে গোল কিক বলে।
১৬.১ গোল কিকের বল পেছন দিক ছাড়া পেনাল্টি এলাকা অতিক্রম করে মাঠের ভেতর এলে বল খেলার মধ্যে গণ্য করা হবে, না এলে পুনরায় গোল কিক মারা হবে।
১৬.২ গোল-কিক মারা বল অন্য খেলোয়াড় না খেলা পর্যন্ত গোল কিক মারা খেলোয়াড় খেলতে পারবে না। খেললে, বিপক্ষ দল ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক পাবে।
১৬.৩ গোল-কিক মারা বল পেনাল্টি এরিয়ার ভেতরে নিজেদের বা অপর পক্ষের খেলোয়াড় খেললে পুনরায় কিক হবে।
১৬.৪ গোল-কিকের বল বিপক্ষীয় গোলে সরাসরি প্রবেশ করলে গোল হয় না।
১৬.৫ সরাসরি গোল কিকে অফসাইড হয় না।
১৬.৬ গোল কিক নিজ দলের যে কোন খেলোয়াড় মারতে পারে।
১৬.৭ গোল কিক গোল এরিয়ার যে কোন জায়গায় বসিয়ে মারা যায়।
সপ্তদশ আইন: কর্ণার-কিক
রক্ষণ ভাগের যে কোন খেলোয়াড়ের কিকে, হেডিং বা হাত ছাড়া শরীরের যে কোন অংশে লেগে অথবা ইচ্ছাকৃত মারের ফলে এবং গোলকিপারের হাত ছুঁয়ে বলের সম্পূর্ণ অংশ গোলের ভেতরের অংশ বাদ দিয়ে আত্মরক্ষাকারীর গোল লাইনের যে কোন জায়গা দিয়ে শূন্যে অথবা গড়িয়ে মাঠ অতিক্রম করলে কর্ণার এলাকার পতাকার নিচের বৃত্তাংশে বল রেখে গোলের দিকে বিপক্ষের খেলোয়াড় বলে কিক মারাকে কর্ণার-কিফ বলে।
১৭.১ কর্ণার-কিকের সময় কর্ণার পতাকা সরানো যাবে না।
১৭.২ কর্ণার-কিকে সরাসরি গোল হয়।
১৭.৩ কর্ণার-কিকের সময় অফসাইড হয় না।
১৭.৪ কর্ণার-কিক মারা বল অন্য খেলোয়াড় না খেলা পর্যন্ত কর্ণার কিক মারা খেলোয়াড় খেললে বিপক্ষ দল ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক পাবে।
১৭.৫ কর্ণার-কিক মারার সময় বিপক্ষীয় খেলোয়াড় বল থেকে ৯ মিটার বা ১০ গজ দূরে থাকবে।
১৭.৬ বিপক্ষীয় খেলোয়াড়ের কিক মারা বল হাত ছাড়া শরীরের যে কোন অংশে লেগে অথবা ইচ্ছাকৃত মারের ফলে এবং গোল কিপারের হাত ছুঁয়ে গোলের ভেতরের অংশ বাদ দিয়ে পুনরায় গোল লাইন অতিক্রম করলে আবার কর্ণার-কিক হবে।
১৭.৭ যে দিক দিয়ে বল বাইরে যাবে সেই দিকের কর্ণার কোন থেকেই কর্ণার-কিক করতে হবে।
লিখেছেন–শেখ মো: সাহেব আলী
(প্রাক্তন আন্তর্জাতিক ফুটবল রেফারি)
Source:
[খেলাধুলার আইন কানুন
সম্পাদনায় : আবদুল হামিদ]
0 Comments