সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

আইনি পরামর্শ

Legal advice


প্রশ্ন: সাত বছর আগে এক প্রবাসীর সঙ্গে আমার এক বোনের বিয়ে হয়। তাদের পাঁচ বছরের একটি মেয়ে আছে। বোনকে যেদিন দেখতে আসে, সেদিনই বিয়ে হয়ে যায়। সেদিন বাইরে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি ছিল। তাই মসজিদের ইমামকে দিয়ে বিয়ে পড়ানো হয়। পরে কেউ তেমন গুরুত্ব না দেওয়ায় বিয়ের কাবিন আর করা হয়নি। স্বামীও দুই মাস পর বিদেশে চলে যায়। ফেরে দুই বছর পর। কিন্তু কাবিন নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা আর ওঠেনি। আবার দুই মাসের মাথায় স্বামী বিদেশে চলে যায়। পরে শোনা গেল, আগেই সেখানে এক নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু পরিবারের চাপে দেশে এসে বিয়ে করেছিল। এরপর অনেকবার কাবিন করার কথা বলা হলেও সে কাবিন করতে অনীহা প্রকাশ করে। পাঁচ বছর ধরে স্বামী আর দেশে আসছে না। বিদেশে সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস করছে। এ ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না?

–নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। 


উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনি জানিয়েছেন, আপনার বোনের বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা হয়য়নি। মুসলিম বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪- এর বিধানমতে, প্রতিটি বিয়ে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত নিকাহ রেজিস্ট্রার সরকারের নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রতিটি বিয়ে ও তালাকের পৃথক নিবন্ধন করেন। আইনে বলা আছে, মাওলানা বা হুজুরের মাধ্যমে ধর্মীয় বিধান মেনে বিয়ে হলেও পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়ে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করবেন। কাবিননামা বা নিকাহনামা বিয়ের একমাত্র লিখিত প্রামাণ্য দলিল। বিয়েসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় এর প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমরা অনেক ঘটনা দেখতে পাই, যেখানে পরে বিয়েটি আর নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করা হয় না। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার দায়িত্ব স্বামীর ওপর থাকে। কাজেই স্বামী বিয়ে রেজিস্ট্রি না করলে বা তাঁর দায়িত্ব পালন না করলে দুই বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় শান্তি হতে পারে।

তবে রেজিস্ট্রি না করলে বিয়েটি অবৈধ হয়ে যাবে না। ধর্মীয় মতে, সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে থাকলে এটি একটি বৈধ বিয়ে হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে আপনার বোন বৈধ স্ত্রী হিসেবে ভরণপোষণ পাবেন। সেই সঙ্গে তাঁর সন্তান সাবালক না হওয়া পর্যন্ত তার বাবার কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবে। আপনি আরও জানিয়েছেন যে আপনার বোনের স্বামী বিদেশে আরেকটি বিয়ে করেছে এবং সেই ঘরে সন্তানও আছে। আইন অনুযায়ী, এক স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় আরেকটি বা একাধিক বিয়ে করাকে বহুবিবাহ বলে। কোনো ব্যক্তির স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় যদি আরেকটি বিয়ে করার প্রয়োজন হয়, তবে তিনি বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের মধ্যে সর্বশেষ স্ত্রীর এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে পারবেন।


মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৬ ধারা মতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিসি পরিষদের কাছে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। অনুমতির জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের অনুমতি দিতে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে–

১ বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যত্ব, 

২. মারাত্মক শারীরিক দুর্বলতা, 

৩. দাম্পত্যজীবন-সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা, ৪. দাম্পত্য অধিকার পুনর্বহালের জন্য আদালত থেকে প্রদত্ত কোনো আদেশ বা ডিক্রি বর্জন, 

৫. মানসিকভাবে অসুস্থতা ইত্যাদি।


কোনো পুরুষ যদি সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তবে অবিলম্বে তাঁকে বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের আশু বা বিলম্বিত দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হবে। যেহেতু কোনো কাবিননামা নেই, তাই দেনমোহরের অধিকার আদায় করাও বেশ ঝামেলাপূর্ণ হতে পারে। আপনার বোন আদালতে মামলা করে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করার অধিকার রাখেন। আপনার বোন আলাদা বসবাস করলেও ভরণপোষণ পাবেন। নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণও বাবাকে দিতে হবে। ভরণপোষণের পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানদের উত্তরাধিকারীর অধিকার কোনো অবস্থাতেই খর্ব হবে না। এ ছাড়া স্বামী অনুমতি না নেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে এক বছর পর্যন্ত জেল ও ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।


আশা করি, আপনারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আইনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।


পরামর্শ দিয়েছেন–

বিজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট


উৎস: প্রথম আলো।




Post a Comment

0 Comments