যুদ্ধের আইন(The laws of
war)
যুদ্ধের আইন বলতে এমন কিছু আন্তর্জাতিক নিয়ম ও বিধিনিষেধকে বোঝানো হয়, যা যুদ্ধকালীন মানবিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের জীবন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, এবং সশস্ত্র সংঘাতের সময় মানবিক মূল্যবোধ বজায় রাখা। যুদ্ধের আইনের মাধ্যমে যুদ্ধে লিপ্ত রাষ্ট্রগুলো ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে রাখা হয়।
“যুদ্ধের আইন হলো সেইসব আন্তর্জাতিক নিয়ম ও নীতিমালা, যা সশস্ত্র সংঘাতের সময় যুদ্ধে লিপ্ত রাষ্ট্র ও যোদ্ধাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে, অসামরিক জনগণ এবং যুদ্ধবন্দীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে, এবং মানবিক কারণে যুদ্ধে ব্যবহৃত পদ্ধতি ও অস্ত্রকে সীমাবদ্ধ করে।”
যুদ্ধের আইনের মূল উদ্দেশ্য(The main
purpose of the law of war)
যুদ্ধের আইনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সশস্ত্র সংঘাতের সময় মানবিক মূল্যবোধের সংরক্ষণ, অসামরিক জনগণ এবং যুদ্ধের অন্যান্য ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। যুদ্ধকালীন সময়ে সংঘাতের মাত্রা ও পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করে যুদ্ধে লিপ্ত পক্ষগুলোকে নির্দিষ্ট নৈতিক ও মানবিক মানদণ্ড মেনে চলতে বাধ্য করা হয়।
যুদ্ধের আইন, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন (IHL) হিসেবেও পরিচিত, কয়েকটি বিশেষ উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে গঠিত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অসামরিক জনগণকে সুরক্ষা প্রদান, অপ্রয়োজনীয় ক্ষতি ও যন্ত্রণা সীমিত করা, এবং যুদ্ধবন্দীদের প্রতি মানবিক আচরণ নিশ্চিত করা। নিচে যুদ্ধের আইনের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:
১. অসামরিক জনগণ ও বেসামরিক অবকাঠামোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা
যুদ্ধের আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো অসামরিক জনগণ এবং তাদের বসতবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল, এবং ধর্মীয় স্থানগুলোর মতো বেসামরিক অবকাঠামোকে সুরক্ষিত রাখা। যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয় যাতে তাদের আক্রমণের লক্ষ্য শুধুমাত্র সামরিক উদ্দেশ্যপূর্ণ হয় এবং কোনোভাবেই নিরীহ জনগণ এর শিকার না হন। যেমন-জেনেভা কনভেনশনের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী, অসামরিক জনগণকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
২. অপ্রয়োজনীয় ক্ষতি ও অতিরিক্ত যন্ত্রণা সীমিত করা
যুদ্ধের আইন অনুযায়ী, এমন কোনো অস্ত্র বা পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না, যা অপ্রয়োজনীয় ক্ষতি বা অতিরিক্ত কষ্ট সৃষ্টি করে। যেমন জীবাণু অস্ত্র, রাসায়নিক অস্ত্র বা বিষাক্ত গ্যাস ইত্যাদি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই ধরনের বিধি যুদ্ধের সময় মানুষকে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।যেমন- হেগ কনভেনশন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বিষাক্ত ও ক্ষতিকর অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
৩. যুদ্ধবন্দী এবং আহত সৈনিকদের প্রতি মানবিক আচরণ নিশ্চিত করা
যুদ্ধের আইন যুদ্ধবন্দী এবং আহত সৈনিকদের প্রতি মানবিক আচরণ নিশ্চিত করে। তাদের মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য, চিকিৎসা এবং আশ্রয় নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের প্রতি কোনো নির্যাতন বা অমানবিক আচরণ করা যাবে না। এক্ষত্রে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জেনেভা কনভেনশনের তৃতীয় ধারা অনুযায়ী যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা আবশ্যক, তাদের ওপর নির্যাতন, অবমাননাকর আচরণ বা মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ নিষিদ্ধ।
৪. গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও মানবিক সহায়তার সুরক্ষা
যুদ্ধের সময় হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় স্থান এবং মানবিক সহায়তার জন্য নির্ধারিত স্থাপনাগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা যুদ্ধের আইনের অন্যতম লক্ষ্য। এগুলোতে আক্রমণ বা ক্ষতি করা যুদ্ধের আইনে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এই নীতি বিভিন্ন ধরনের মানবিক সংস্থাকে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় কাজ করার এবং জরুরি সাহায্য প্রদানের সুযোগ দেয়। উদাহরণ: যুদ্ধের সময় চিকিৎসাকেন্দ্র এবং ত্রাণ সহায়তার স্থাপনাগুলো আক্রমণমুক্ত রাখতে জেনেভা কনভেনশনে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
৫. সংঘাতকে মানবিক ও সীমাবদ্ধ রাখা
যুদ্ধের আইন যুদ্ধকালীন সংঘাতকে একটি মানবিক কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করে, যাতে সংঘাতের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব সীমিত করা হয় এবং ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। যেমন, যুদ্ধের আইন সামরিক প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে আক্রমণ পরিচালনার অনুমতি দেয়, তবে এটি মানবিক সীমাবদ্ধতার সাথে প্রয়োগ করা হয়।
৬. মানবিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ ও আন্তর্জাতিক শান্তি স্থাপন
যুদ্ধের আইনের আরেকটি লক্ষ্য হলো মানবিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ করা এবং একটি নির্দিষ্ট মানবিক মানদণ্ড বজায় রাখা। সংঘাতে যুক্ত পক্ষগুলো যাতে সীমা মেনে চলে এবং সংঘাত শেষ হলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়, সেই লক্ষ্যেও যুদ্ধের আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন এই আইনগুলো যুদ্ধ শেষে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় শান্তি পুনরুদ্ধারে এবং সংঘাত পরবর্তী পুনর্গঠনে সহায়ক হয়।
মোটকথা, যুদ্ধের আইনের মূল উদ্দেশ্য যুদ্ধকালীন সময়ে মানবতার সুরক্ষা নিশ্চিত করা। যুদ্ধকালীন মানবিক আচরণ নিয়ন্ত্রণে রেখে এবং নির্দিষ্ট নীতি ও নৈতিকতা মেনে চলতে বাধ্য করে যুদ্ধকে কম ধ্বংসাত্মক এবং মানবিকভাবে সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়।
যুদ্ধের আইনের প্রধান নীতি(Main
Principles of the Law of War)
১. বিভেদ নীতি (Principle
of Distinction)
এই নীতির মাধ্যমে সামরিক লক্ষ্যবস্তু ও অসামরিক নাগরিকদের মধ্যে পার্থক্য করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আক্রমণ শুধুমাত্র সামরিক লক্ষ্যের প্রতি করা যেতে পারে এবং অসামরিক জনগণ ও বস্তু লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা যাবে না।
২. সামরিক প্রয়োজনীয়তা (Military
Necessity)
এই নীতি অনুযায়ী কেবল সামরিকভাবে প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুকেই আক্রমণ করা উচিত। আক্রমণের মাধ্যমে যা অর্জন করা হবে তা সামরিক কৌশলের অংশ হিসেবে যৌক্তিক ও গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে।
৩. অনুপাত নীতি (Principle
of Proportionality)
আক্রমণের ফলে যেকোনো ক্ষয়ক্ষতির ক্ষেত্রে সামরিক অর্জনের তুলনায় যেন অসামরিক ক্ষতি বা প্রাণহানি অতিরিক্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এই নীতি অসামরিক ক্ষতি সীমিত করতে এবং অপ্রয়োজনীয় প্রাণহানি রোধ করতে সাহায্য করে।
৪. মানবিক নীতি (Principle
of Humanity)
এই নীতি অনুসারে যুদ্ধে এমন কোনো অস্ত্র বা পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না, যা অপ্রয়োজনীয় কষ্ট বা যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। অত্যন্ত নিষ্ঠুর এবং অমানবিক অস্ত্র, যেমন বিষাক্ত গ্যাস, জীবাণু অস্ত্র ইত্যাদির ব্যবহার নিষিদ্ধ।
৫. অপ্রয়োজনীয় ক্ষতি এবং কষ্টের সীমাবদ্ধতা(Limitation
on Unnecessary Suffering)
এই নীতি অনুসারে যুদ্ধের সময় এমন কোনো অস্ত্র বা পদ্ধতির ব্যবহার নিষিদ্ধ, যা অধিকতর কষ্ট বা আঘাত সৃষ্টি করে। সৈন্য এবং সাধারণ মানুষের ওপর অতিরিক্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এমন অস্ত্র বা পদ্ধতির ব্যবহার সীমাবদ্ধ।
৬. গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সুরক্ষা (Protection
of Important Sites)
হাসপাতাল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তার জন্য ব্যবহারিত স্থাপনাগুলো আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত। যুদ্ধের সময় চিকিৎসাকেন্দ্র এবং মানবিক কার্যক্রমে নিযুক্ত লোকজনকে আক্রমণ করা যাবে না।
৭. যুদ্ধবন্দী ও আহতদের সুরক্ষা (Protection
of Prisoners of War and Wounded)
যুদ্ধের সময় যুদ্ধবন্দী ও আহত সৈনিকদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে এবং তাদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে। যুদ্ধবন্দীদের ওপর নির্যাতন, অবমাননাকর আচরণ এবং অমানবিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ।
যুদ্ধের আইনের এই নীতিগুলো সশস্ত্র সংঘাতের সময় মানুষকে অমানবিক আচরণ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিষ্ঠিত। এসব নীতি যুদ্ধকে মানবিকভাবে সীমিত করে এবং আন্তর্জাতিক আইন ও মূল্যবোধ রক্ষা করে, যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন কমানো যায়।
যুদ্ধের আইনের প্রধান ভিত্তি(The main basis of the law of war)
যুদ্ধের আইন বা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের (International
Humanitarian Law - IHL) ভিত্তিগুলো হলো আন্তর্জাতিক চুক্তি, প্রথা এবং নীতিমালা যা যুদ্ধের সময় মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা ও সংঘাতকে নিয়ন্ত্রিত করার উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে। এসব ভিত্তি সশস্ত্র সংঘাতে যুদ্ধে লিপ্ত পক্ষগুলোকে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করে, যাতে অসামরিক জনগণ ও যুদ্ধের অন্যান্য ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
যুদ্ধের আইনের প্রধান ভিত্তিগুলো নিম্নরূপ:
১. জেনেভা কনভেনশন (Geneva Conventions)
জেনেভা কনভেনশন হলো আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের মূল ভিত্তি, যা যুদ্ধকালীন অসামরিক জনগণ, আহত সৈনিক, যুদ্ধবন্দী এবং চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এটি চারটি প্রধান কনভেনশন নিয়ে গঠিত এবং অতিরিক্ত প্রোটোকল রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় ধরনের সশস্ত্র সংঘাতে প্রযোজ্য।
প্রধান
অংশগুলো:
ক) প্রথম কনভেনশন: যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিক ও চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা;
খ) দ্বিতীয় কনভেনশন: সাগরে সংঘাতের সময় আহত নাবিকদের সুরক্ষা;
গ) তৃতীয় কনভেনশন: যুদ্ধবন্দীদের মানবিক আচরণ নিশ্চিত করা; এবং
ঘ) চতুর্থ কনভেনশন: অসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা।
অতিরিক্ত
প্রোটোকল:
এই প্রোটোকলগুলো অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং জাতিগত সংঘাতে মানবিক আচরণের নির্দেশনা প্রদান করে যার উদ্দেশ্য মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে যুদ্ধ পরিচালনার সময় মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করা।
২. হেগ কনভেনশন (Hague Conventions)
হেগ কনভেনশন ১৮৯৯ এবং ১৯০৭ সালে অনুষ্ঠিত দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে প্রণীত হয়। এটি মূলত যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র ও যুদ্ধের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়েছিল।
প্রধান
দিকগুলো:
ক) অস্ত্রের সীমাবদ্ধতা: বিষাক্ত গ্যাস, জীবাণু অস্ত্র, এবং ক্ষতিকর বোমার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
খ) যুদ্ধের পদ্ধতি: সাধারণ জনগণকে লক্ষ্যবস্তু বানানো নিষিদ্ধ এবং সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর আক্রমণ নির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
আর এসবের উদ্দেশ্য
অস্ত্র ও পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ সীমিত রাখা।
৩. আন্তর্জাতিক প্রথাগত মানবিক আইন(Customary International Humanitarian Law)
আন্তর্জাতিক প্রথাগত মানবিক আইন হলো বিভিন্ন দেশের প্রচলিত প্রথা ও চর্চা থেকে উদ্ভূত নীতিমালা, যা সময়ের সাথে সাথে স্বীকৃত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের একটি ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
প্রধান
দিক:
ক) মানবতার নীতি: যুদ্ধের সময় সাধারণ জনগণ ও অসহায়দের প্রতি মানবিক আচরণ বজায় রাখা।
খ) নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা: কিছু অস্ত্রের ব্যবহার এবং নির্দিষ্ট ধ্বংসাত্মক আক্রমণ পদ্ধতির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ।
আর
এসবের উদ্দেশ্য প্রচলিত নীতি ও প্রথার ভিত্তিতে মানবিক আচরণ নিশ্চিত করা।
৪. জাতিসংঘ সনদ (UN Charter)
জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী, কোনও দেশ অন্য দেশকে আক্রমণ করতে পারবে না, যদি না তা আত্মরক্ষার জন্য হয় বা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতি পায়। এটি আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম ভিত্তি যা যুদ্ধ ও সংঘাতের নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রধান দিকগুলো:
ক) আগ্রাসী যুদ্ধ নিষিদ্ধ: আক্রমণাত্মক যুদ্ধ বা বলপ্রয়োগ নিষিদ্ধ, তবে আত্মরক্ষার অধিকার স্বীকৃত।
খ) শান্তি প্রতিষ্ঠা: শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রদান এবং সংঘাত প্রতিরোধ।
উদ্দেশ্য: আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং আক্রমণাত্মক যুদ্ধ প্রতিরোধ।
৫. আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (International Criminal
Court - ICC)
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) যুদ্ধের আইন লঙ্ঘনকারীদের বিচার ও শাস্তি প্রদানের জন্য গঠিত। এটি যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার জন্য দায়ীদের আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়ায় আনে।
প্রধান
দিকগুলো:
ক) যুদ্ধাপরাধের বিচার: যেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে লিপ্ত, তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় এনে বিচার করা।
খ) দায়বদ্ধতা নিশ্চিত: যারা যুদ্ধের আইন লঙ্ঘন করে, তাদের শাস্তি দিয়ে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আইনের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা।
উদ্দেশ্য: যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে যুদ্ধের আইন প্রয়োগ এবং মানবিক মূল্যবোধ বজায় রাখা।
৬. রেড ক্রস এবং অন্যান্য মানবিক সংগঠন
রেড ক্রস এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থা সংঘাতময় অঞ্চলে মানবিক সহায়তা প্রদান করে। এদের ভূমিকা যুদ্ধের আইনের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে এবং যুদ্ধকালে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধান
দিক:
ক) মানবিক সহায়তা প্রদান: যুদ্ধকালীন সময়ে আহত, অসুস্থ এবং ভুক্তভোগীদের সেবা প্রদান।
খ) মানবিক মূল্যবোধ প্রচার: যুদ্ধের আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এর বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা।
এসবের উদ্দেশ্য হলো মানবিক সহায়তা ও মূল্যবোধ রক্ষার প্রচেষ্টা নিশ্চিত করা।
যুদ্ধের আইনের ভিত্তিগুলো আন্তর্জাতিক চুক্তি, প্রথা এবং সংস্থার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। এসব ভিত্তির উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধের সময়ে মানবিক আচরণের নিয়ন্ত্রণ, অসামরিক জনগণের সুরক্ষা, অস্ত্র ও পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা আরোপ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা।
0 Comments