সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

উত্তরাধিকার (ফারায়েজ) আইন (SUCCESSION ACT)






উত্তরাধিকার আইন ২০২৪; মুসলিম উত্তরাধিকার আইন ক্যালকুলেটর; উত্তরাধিকার আইন ২০২৩; উত্তরাধিকার আইন ১৯২৫; বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ ২০২৪; মুসলিম ফারায়েজ আইন pdf; মুসলিম উত্তরাধিকার আইন ২০২০ pdf; মুসলিম উত্তরাধিকার আইন ১৯৬১ এর ৪ ধারা; মুসলিম ফারায়েজ কি?; ১.৮ অংশ মানে কি?; ছেলে মারা গেলে মা কত অংশ পাবে?; উত্তরাধিকার কি?; মুসলিম উত্তরাধিকার আইন ক্যালকুলেটর; ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স ও মুসলিম আইন PDF; মুসলিম উত্তরাধিকার আইন ১৯৬১ এর ৪ ধারা; ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন ৪ ধারা pdf; মুসলিম উত্তরাধিকার আইন চার্ট; মুসলিম ফারায়েজ হিসাব; ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন pdf; মুসলিম ফারায়েজ বন্টন;







উত্তরাধিকার (ফারায়েজ) আইন

(SUCCESSION ACT)



উত্তরাধিকার সংক্রান্ত ধারণাটি প্রাথমিক পর্যায়ে খুবই ক্ষীণ থাকলেও পরবর্তীতে সভ্যতা বিকাশের পর্যায়ে এর গুরুত্ব খুবই বিস্তৃতিলাভ করতে সমর্থ হয়েছে। জাগতিক জীবনে মানুষের বিষয় ও সম্পদকে সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের লক্ষে উত্তরাধিকারের ক্রমতালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকের নির্দিষ্ট হিস্যা (অংশ) ভাগ নিতে এবং পেতে সকলেই অত্যাগ্রহী। আর এ কাজে হাত দিতে গেলেই ভূমি জরিপকালীন উত্তবাধিকারীত্বের প্রশ্নসহ অংশ বণ্টন প্রক্রিয়াতে বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কেননা কোন ভূমির মালি (রেকর্ডীয় প্রজার) মৃত্যুর পর তার ত্যাজবিত্ত জরিপ করার সময় তারই ওয়ারিশদের নামে রেকর্ড করে নেয়ার বিধান প্রচলিত রয়েছে। মৃত ব্যক্তিটি জীবিতকালে যে ধর্মীয় আইনের অধীন ছিল, ঐ আইনের বিধান মোতাবেক তার ওয়ারিশদের মধ্যে ত্যাজ্য সম্পত্তি বণ্টন করতে হয়। কাজেই বিভিন্ন ধর্মীয় বিধানের আলোকে উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা একান্ত প্রয়োজন।


উত্তরাধিকারের ধারণা (Conception of succession)


উত্তরাধিকার শব্দের আভিধানিক অর্থ হল, মৃতব্যক্তির সাথে সম্বন্ধতার ভিত্তিতে তার বিষয় সম্পত্তিতে স্বত্বার্জন করা। এমতাবস্থায় যিনি মৃতব্যক্তির সম্পর্কসূত্রে তার ধনসম্পত্তি প্রাপ্ত হন, তিনি ঐ ব্যক্তির উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশ বিবেচিত হয়ে থাকেন। অবশ্য এটা ঠিক যে, আলোচ্য উত্তরাধিকার শব্দটি যদিও সম্পত্তির বিষয়াশয় ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে; যথা- রক্তের উত্তরাধিকার (বংশধারা), রাজনৈতিক উত্তরাধিকার (পরবর্তী নেতৃত্ব) এবং ক্ষমতার উত্তরাধিকার (পরবর্তীতে ক্ষমতা প্রাপ্তি) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য, তথাপি এখানে উত্তরাধিকারের যে বিষয়টি মুখ্যত প্রণিধানযোগ্য হয়েছে তাহল আইনগত উত্তরাধিকার প্রসঙ্গটি। কেননা প্রচলিত আইন ব্যবস্থায় প্রতিটি সমাজ কাঠামোর নিরিখে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিল বিষয়ের মীমাংসা করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়ে। উত্তরাধিকার শব্দটিকে ইসলামী আইনের পরিভাষায় 'ফারায়েজ' বলা হয়ে থাকে।


আমরা জানি, উত্তরাধিকার হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যদ্বারা মানবসভ্যতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে। যেহেতু সমাজ নির্জীব বা স্থবির বা অচল কোন বস্তু নয়, সেহেতু মানুষও মৃত্যুহীন কোন প্রাণী নহে। যুগের স্রোতধারায় যেমনি সমাজের পরিবর্তন চলছে, তেমনি মূল্যবোধের মাপকাঠিতে সামাজিক বিবর্তন প্রক্রিয়া অব্যাহত জিইয়ে রয়েছে। পৃথিবীর এ রঙ্গমঞ্চে মানুষের জন্ম- মৃত্যুর খেলা চলছে অবিরত। তাই বলে, কেউ কখনো মারা গেলে তার ধারা কি তখন থেমে যাবে? প্রত্যুত্তোরে বলতে হয় কখনো না। প্রসঙ্গটি একটি উপমাযোগে আলোচনা করতে পারি যে, একজন বিজ্ঞানী যখন কোনো বিষয়ে গবেষণাকার্য চালায়, তখন তিনি তার জীবদ্দশায় এর চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছতে পারবেন এমনটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। যদি তিনি তার গবেষণার একটা পর্যায়ে এসে মারা যান, তাহলে সেক্ষেত্রে ঐ অবস্থা থেকে তার গবেষণাকর্মকে এগিয়ে নিয়ে যাবে কে? কারো না কাউকে তখন অবশ্যই হাল ধরতে হয়। নচেৎ তিনি যতটুকু অগ্রসর হয়েছেন, ততটুকু মূল্যহীন হয়ে পড়বে। এমতাবস্থায় উক্ত বিজ্ঞানীর আরাধ্য কাজকে যিনি এগিয়ে সামনে নিয়ে যাবেন, তিনি হবেন ঐ বিজ্ঞানীর সাধনাকর্মের উত্তরাধিকারী। এভাবে উত্তরাধিকার বিষয়টি হচ্ছে এমন একটি প্রবাহ, যা সমাজকে গতিশীল করে রাখে।


স্মর্তব্য যে, উত্তরাধিকার শব্দটির সাথে সম্পত্তি ও মালিকানা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশেষত উত্তরাধিকার ব্যবস্থা না থাকলে সমাজ কাঠামো অনেকটা নিষ্প্রাণ রবারের মত হয়ে যেত। যেমন রবারকে জোরে টেনে পরক্ষণে ছেড়ে দিলে সেটা পুণরায় পূর্বোক্ত জায়গায় চলে আসে, ঠিক তেমনি কায়দায় উত্তরাধিকারবিহীন সমাজের অগ্রগতির ধারা হয়ত একই জায়গায় থেমে থাকত। এমনতর পরিস্থিতিতে প্রত্যেককেই যাত্রা শুরু করতে হত শূন্যহস্ত থেকে; কারো কর্মের সুফল আর কেউই পেতে পারত না। এতে আমরা যথার্থই উপলব্ধি করতে পারি যে, উত্তরাধিকার ধারা মানুষকে সচল ও সক্রিয় থাকতে অনুপ্রাণিত করে তুলে। যুক্তিচ্ছলে উল্লেখ করতে পারি, কোন ব্যক্তি যদি দেখেন যে, তার মৃত্যুর পর তার সম্পদ ও কর্ম ইত্যাদির ভবিষ্যৎ সবই অনিশ্চিত এগুলোর প্রতি যে কেউ খুশীমত ব্যবহার করবে, তাহলে কোনরূপ কাজকর্ম করার প্রতি বা চেষ্টা সাধনাতে তার উৎসাহ উদ্দীপনা না থাকাটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। শুধু কি তাই, উত্তরাধিকার বিষয়টি সর্বতোভাবে পারস্পরিক নির্ভরশীল হয়ে থাকে। পিতা-মাতা যখন তাদের সন্তানকে শিক্ষাদীক্ষায় মানুষ করে গড়ে তুলেন এবং সন্তানের জন্য সম্পদ সঞ্চয় করেন, তখন তারা প্রচ্ছন্নভাবে হলেও সন্তানের মাঝেই মনেপ্রাণে নিজেদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে থাকেন। বস্তুত এমনতর নির্ভরতার একমাত্র কারণ হল যে, সংশ্লিষ্ট সন্তান তাদেরই উত্তরাধিকারী বটে। অর্থাৎ সন্তান শুধু তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারীই নয়; বরং তাদের রক্ত, বংশমর্যাদা ও চেতনার উত্তরাধিকারীত্ব বহন করে চলে।


সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারতত্ত্বে বলা চলে, সমাজসিক্ত মানুষকে সচল রাখার লক্ষে উত্তরাধিকারের বিষয়বস্তু নিশ্চিত করা খুবই অপরিহার্য। কারণ যে সমাজ ব্যবস্থায় সম্পত্তিতে ব্যক্তিগত মালিকানা পদ্ধতি স্বীকৃত নয়, সেখানে আপাত দৃষ্টিতে উত্তরাধিকার বিষয়টি মূল্যহীন বলে মনে করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা নহে। কারণ সমাজতান্ত্রিক পারিবারিক জীবনে যেমন বংশধারা, ঐতিহ্য ও রক্তগত উত্তরাধিকারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়, ঠিক তেমনি আবার রাষ্ট্রে প্রযোজ্য আইন প্রক্রিয়াতেও উত্তরাধিকারের বিষয়টিকে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বিষয় হিসেবে গ্রাহ্য করা হয়ে থাকে। কারণ ভূমি জরিপের সময় রেকর্ড প্রস্তুতকরণ ও উত্তরাধিকারসূত্রে মিউটেশন (নামজারী) করার সময় ফারায়েজ সম্পর্কিত বিশেষ জ্ঞান না থাকলে নানারূপ জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।


উত্তরাধিকারের ভিত্তি (Base of succession)


মানুষের রক্তগত সম্পর্কই হচ্ছে উত্তরাধিকারের মূল ভিত্তি। কেননা মানুষের ক্রম পর্যায়গত রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতেই প্রধানত উত্তরাধিকার নির্ণীত হয়ে থাকে। বিশেষত মানুষের সামাজিক পটপরিবর্তনের স্রোতে বিভিন্ন পর্যায়ে এসে কেউ বা কখনো পিতার উত্তরাধিকারী গণ্য হয়েছে তারই পুত্র; আবার কতকাংশে মাতার উত্তরাধিকারী সাব্যস্ত হয়েছে কন্যা। প্রতিটি সমাজগোষ্ঠীর রক্তের ধারা যেভাবে গড়িয়েছে, তদীয় উত্তরাধিকারও তদ্ভাবে গড়ে ওঠেছে। প্রসঙ্গক্রমে উত্তরাধিকার বিষয়টিকে অনেকটা নদী বা বৃক্ষের ন্যায় তুলনা করা যেতে পারে। কেননা নদী ও বৃক্ষ যেমন ক্রমাগত শাখা প্রশাখায় বিস্তৃতিলাভ করে প্লাবিত হয়, তেমনি মানুষের রক্তের উত্তরাধিকার বিষয়টিও পূর্ব পুরুষাক্রমে ক্রমাগত কায়দায় পরবর্তী জেনারেশনের মাঝে শাখা প্রশাখায় বিস্তৃত লাভ করে চলেছে। সমষ্টিগতভাবে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান সকলের ব্যক্তিগত আইনে এরূপ


উত্তরাধিকারের বিধি প্রযোজ্য রয়েছে। উপরন্ত উত্তরাধিকারের অন্যতম একটি উল্লেখযোগ্য ভিত্তি হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক। অর্থাৎ একজন পুরুষ ও একজন নারীর মাঝে গড়ে ওঠা বৈবাহিক সম্পর্কের দরুণ উভয়ের মধ্যকার দাম্পত্যসূত্রে জন্মপ্রাপ্ত সন্তানেরাই ভবিষ্যতে তাদের উত্তরাধিকারী বিবেচিত হয়ে থাকে। এভাবে আমরা স্পষ্টত অবগত হতে পারি যে, বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ দুজন মানুষ সর্বাপর পরস্পরের উত্তরাধিকারী গণ্যে জীবনযাপন করে থাকে। কাজেই দেখা যায়, কাউকে রাস্তা থেকে ধরে এনে অন্য একজনের উত্তরাধিকারী করা যায় না; বরঞ্চ বৈবাহিক বা রক্তগত সম্পর্কের ভিত্তি না থাকলে কেহ কখনো অন্যের উত্তরাধিকার দাবী করতে পারে না। এভাবে বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন বিষয়টি উত্তরাধিকার নির্ণয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে প্রণিধানযোগ্য হয়ে থাকে।


জ্ঞাতব্য যে, সম্পত্তি ও মালিকানা শব্দটির সাথে উত্তরাধিকার বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। কেননা সম্পত্তি লাভের ও মালিকানা অর্জনের অন্যতম উপায় হচ্ছে উত্তরাধিকার প্রক্রিয়া। কাজেই যে সমাজে কথা অবান্তর ঠিক, কিন্তু যেখানে ব্যক্তিগত মালিকানার অস্তিত্ব স্বীকৃত রয়েছে সেখানে মালিকানা অর্জনসহ সম্পত্তি লাভের যেসকল পদ্ধতি রয়েছে, তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল উত্তরাধিকারের উপায়। এভাবে উত্তরাধিকারের মাধ্যমেই সর্বাধিক পরিমাণ সম্পত্তি ব্যক্তি থেকে বংশানুক্রমিক ব্যক্তিতে প্রবাহিত হয়, আবর্তিত হচ্ছে কালের গতিস্রোতে।


সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারতত্ত্বে বলা চলে, উত্তরাধিকারের ভিত্তি মূলত রক্তগত সম্পর্ক, বৈবাহিক অবস্থা, সম্পত্তি ও মালিকানা ইত্যাদি বিষয়ের সহিত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশেষ করে আইনবিজ্ঞানে উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে সম্পত্তি ও মালিকানা ব্যবস্থার বিষয়টিকে অতীব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। সহজ কথায়, উত্তরাধিকার শব্দটির সাথে বংশধারা, রক্তের আত্মীয়তা, সম্পত্তি অর্জন ও মালিকানা লাভ এসব বিষয়াদি ওতপ্রোতভাবে বিজড়িত।


উত্তরাধিকার নীতির বিকাশ বা বিবর্তন (Evolution of Succession)


সম্পত্তির প্রবাহ স্রোতে মালিকানার ধারাবাহিকতা অব্যাহত বজায় রাখার লক্ষে উত্তরাধিকার নীতির প্রয়োজনীয়তা একান্ত অপরিহার্য। যেহেতু সম্পত্তি সংক্রান্ত ধারণা বিকশিত হবার তালে তালে উত্তরাধিকার নীতির বিকাশ ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেছে, সেহেতু কালান্তরে বিভিন্ন সমাজে উত্তরাধিকার ব্যবস্থার পর্যায়ক্রমিক বহুমুখী বিবর্তন প্রক্রিয়াকে অস্বীকার করার কোন কায়দা নেই। বিধায় বর্বর যুগের শেষান্তে জমির বণ্টন এবং মালিকানা নীতিতেও উল্লেখযোগ্য পদ্ধতিতে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। অবশ্য পরিশেষে 'রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি' ও 'ব্যক্তিগত সম্পত্তির ব্যবস্থাটি পরিপূর্ণতা লাভ করতে সমর্থ হয়।


জ্ঞাতব্য যে, মালিকানা পদ্ধতির সর্বাপেক্ষা পুরোনো ধারা হল গোষ্ঠীগত যৌগ উত্তরাধিকার নীতি। এর পরবর্তীতে গোষ্ঠীর কাছ থেকে জমি ভাগ করে নেয়া শুরু করে তদীয় অংশীদারগণ (ওয়ারিসরা); কিন্তু তাও যৌথ ভিত্তিতে। এভাবে করে পালাক্রমে সম্পত্তি এসেছে ব্যক্তির কাছে,- যেটা আগেকার দিনে প্রচলিত ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক আঙ্গিকে। আমরা জানি, প্রাথমিক অবস্থায় জমির মালিকানা ব্যবস্থা ক্রমশ শিকড় গড়তে শুরু করে যুগোপযোগী নিত্য নতুন কায়দায়। আর সর্বশেষে এসেছে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ব্যক্তিগত মালিকানার ধারণা প্রসঙ্গটি। বলতে গেলে বর্বর যুগের উচ্চ পর্যায়ে যখন এক বিবাহ পদ্ধতির পরিবার ব্যবস্থা বিকশিত হয়, তখনই উত্তরাধিকার নির্ণয়ের পথ খুবই সহজতর হয়ে ওঠে। অবশ্য বর্তমান যুগে উত্তরাধিকার নীতিটি বংশানুক্রমিক পুরুষ ধারায় পরিবর্তিত হয়ে চরম স্থায়িত্ব লাভ করেছে।


শুধু কি তাই? সম্পত্তির ধারণাটি উন্নতির সাথে সাথে উত্তরাধিকার ব্যবস্থার জন্য একটা সুদৃঢ় ভিত্তির প্রয়োজন দেখা দেয়। তদমোতাবেক এক সময় সম্পত্তির বিষয়বস্তুর মধ্যে গৃহপালিত পশুর প্রতিই সর্বাধিক নজর দেয়া হত। কারণ ইহার দ্বারা ভরণপোষণ, জিনিস বদল ও আনুষ্ঠানিকতা পালনসহ জীবন যাপনের সহায়ক অন্যান্য উপকরণাদি সংগ্রহ করা খুবই সহজতর ছিল। বিশেষ করে এগুলো বংশবৃদ্ধি থেকে লোভের মোহবৃত্তির দরুণ সম্পত্তি ক্রমবৃদ্ধির ধারণা জন্ম নেয়। এহেন পথযাত্রা অনুযায়ী মানুষ ক্রমশ জমি চাষ করে ফসল উৎপাদন করতে শিখে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করতে পারি যে, গ্রীক, হিব্রু ও রোমানদের মাঝে পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী সাব্যস্ত হত পুত্র-কন্যারা; কিন্তু তাদের মধ্যে জ্ঞাতিদেরকে উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করার রেওয়াজের কোন চিহ্ন কোথাও পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে হিব্রুদের সম্পত্তির মালিকানা পদ্ধতি ও উত্তরাধিকার নীতি উভয়টি অনেকটা রোমান দ্বাদশ ফলকের (বারবিধির) সমতুল্য প্রায়। এমনকি গ্রীকদের সঙ্গেও তাদের প্রচুর মিল পরিলক্ষিত হত।


স্মর্তব্য যে, মুসা (আ)-র সময়কালে বনি ইসরাইলদের মধ্যে মূলত ৩টি ধারার উত্তরাধিকার নীতি প্রচলিত ছিল; যথা- (ক) ছেলেমেয়ে, (খ) নিকট জ্ঞাতি ও (গ) গণবাসী ইত্যাদি। তন্মধ্যে প্রথম ধাপে আসে ছেলেমেয়েরা; অর্থাৎ ছেলে সম্পত্তি পেলে বোনদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত হত। অনেক সময়ও দেখা গেছে যে, বড় ছেলে দ্বিগুণ অংশ লাভ করেছে; আর ছেলে না থাকলে তখন মেয়েরাই পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হত। দ্বিতীয় ধাপে আসে নিকট জ্ঞাতি বা আত্মীয়স্বজন; যেখানে ছেলেমেয়ে না থাকলে সেখানে তার ভাই, আবার যদি ভাইও না থাকে তাহলে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন তারই চাচা-এটা হল জ্ঞাতি সূত্রের উত্তরাধিকার নীতি। একবারে তৃতীয় ধাপটি হচ্ছে গণবাসী (গণজ্ঞাতি); এ পদ্ধতি অনুযায়ী ছেলেমেয়ে বা ভাই বা চাচা এমনতর আত্মীয় কেউ না থাকলে তার পরিবারের সবচেয়ে কাছের যারা, তারাই সম্পত্তি পেত। প্রকৃতপক্ষে মুসা নবীর আমলে পুরুষ ধারায় যে উত্তরাধিকার নীতি প্রবাহিত হত এটাও রোমান দ্বাদশ নীতির তুল্য ছিল। এমনিভাবে রোমান, হিব্রু ও গ্রীকদের মধ্যে প্রায়শ একই কায়দার ধারা পরিলক্ষিত হত। যেমন- সম্পত্তি প্রথম পর্যায়ে পেত ছেলেমেয়েরা; তারপর নিকট জ্ঞাতিরা; অতপর গণজ্ঞাতিরা। অবশ্য এটা ঠিক যে, তদকালে উত্তরাধিকার নীতিতে একটা মস্তবড় প্রবণতা লক্ষ করা যেত তাহল পারতপক্ষে সম্পত্তি গণের (গণবাসী/গণজ্ঞাতি) মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা।


পরিশেষে ইসলামের বলয় স্রোতে উত্তরাধিকার নীতি প্রবর্তিত হয় আরব সমাজে যা এখনো অনেক মুসলিম দেশে হুবহু অনুসরণ করা হয়। তদ্ব্যতীত ভারতবর্ষের হিন্দুদের মধ্যে স্বীয় ধর্মনীতির আওতায় উত্তরাধিকার ব্যবস্থা যেমন চালু রয়েছে, তেমন আবার প্রচলিত আছে বৌদ্ধ খৃষ্টানদের জন্যও তথ্যবহুল নানাবিধ উত্তরাধিকারের নিয়মকানুন। উপরন্ত বর্তমান বিশ্বে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলোতে পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক এ দুধরনের প্রক্রিয়ায় সম্পত্তির মালিকানা লাভের ব্যবস্থা বহাল রয়েছে- গোড়ায় ঐসব আদর্শের ভিত্তিতে তথাকথিত উত্তরাধিকার নীতিও ধাবমান থেকেছে।


সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারতত্ত্বে বলা চলে, উত্তরাধিকার নীতি বিবর্তনের ইতিহাস আইনবিজ্ঞানে এক উল্লেখযোগ্য আলোচ্য বিষয় হিসেবে স্থান লাভ করেছে। কারণ যেহেতু আইনবিজ্ঞান মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে চিহ্নিত, সেহেতু সম্পত্তি ও মালিকানা সংক্রান্ত ব্যবস্থাটি সুচারু কায়দায় পরিচালনা করার লক্ষে উত্তরাধিকার নীতিকে অতীব অত্যাবশ্যকীয় বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেছে। কাজেই বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে উত্তরাধিকার নীতির বিবর্তন সংক্রান্ত ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা প্রতিটি সমাজগোষ্ঠীর জন্য একান্ত অপরিহার্য। এক্ষেত্রে বলতে হয়, ভূমি জরীপ ও ভূমি ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত কর্মচারী ও অফিসারদের জন্য উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান থাকতে হয়।


উত্তরাধিকার ও মালিকানার সম্বন্ধ (Relation between succession & ownership)


সম্পত্তি লাভের ইচ্ছা সর্বজনীন ও মানব প্রবৃত্তির সহজাত অংশ। সম্পত্তি বলতে কোন দ্রব্য, বস্তু বা বিষয়ের ওপর মানুষের অধিকারকে বুঝায়। তবে সম্পত্তির ধারণা সম্পর্কে আদিম সমাজে যেরকম ছিল, পরবর্তীতে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভবের দরুণ ঐধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। এহেন পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে ব্যক্তিগত মালিকানা বোধ; আর এর পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক জীবনে শ্রেণীবিভক্তির সূচনা ঘটে। যেহেতু আদিম সমাজব্যবস্থায় কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বা গোষ্ঠীর মালিকানা পদ্ধতি স্বীকৃত ছিল, সেহেতু তদকালে সমাজে প্রচলিত শিকারী ব্যবস্থার স্থল ছিল, যৌথ মালিকানাতে এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির মধ্যে ছিল তাদের ব্যবহৃত তীর, ধনুক ও বর্শা ইত্যাদি। আবার সবকিছুর মূলমন্ত্র হিসেবে ছিল পারিবারিক মালিকানা। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, আদিম সমাজে বিভিন্ন ধরনের মালিকানা পদ্ধতি ছিল; যেমন গোষ্ঠী বা যৌথমালিকানা, পারিবারিক মালিকানা, উচ্চবংশের পারিবারিক মালিকানা, দলপতির মালিকানা, সামন্ড প্রভুর মালিকানা ও ব্যক্তিগত মালিকানা ইত্যাদি। তন্মধ্যে গোষ্ঠী বা যৌথমালিকানা আবার দুভাগে বিভক্ত; যথা- (ক) উত্তরাধিকারসূত্রে মালিকানা ও স্থানীয় এলাকার ভিত্তিতে মালিকানা। প্রসঙ্গ অনুযায়ী নিম্নে মালিকানা ও উত্তরাধিকারের মধ্যকার সম্পর্ক দেয়া হল-


১) পরিচয়গত: সমাজের ক্রমবিকাশের তালে মানুষ তার পিতা-মাতার পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই মাতা-পিতার সম্পত্তি ধারাবাহিকভাবে তাদের ওপর বর্তায়। আর ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানা বিভিন্ন সমাজে নানারূপ পর্যায়ে উত্তরাধিকার সূত্রে ন্যস্ত হয়েছে; তা কোথাও পিতৃতান্ত্রিক সূত্রে, আবার কতকাংশে মাতৃতান্ত্রিকভাবে। এভাবে সম্পত্তির সাথে মালিকানা ও উত্তরাধিকার প্রশ্নটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে।


২) গবেষণাগত: আদিম সমাজ ব্যবস্থায় সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা ও যৌথ মালিকানা উভয়টির ব্যাপারে কিছু কিছু স্পষ্টত ধারণা খুঁজে পাওয়া যায়। কেননা এ প্রসঙ্গে সামাজিক নৃবিজ্ঞানীরাও আদিম সমাজে প্রচলিত থাকা ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানার ধারণা ও সাম্যবাদের ধারণা সম্পর্কে যথেষ্ট আলোচনা করেছেন। এক গবেষণায় সমাজ নৃবিজ্ঞানীগণ যে ধারণার সূত্রপাত করেছেন, তা কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত গ্রহণীয় নয়। কারণ আমরা জানি, আদিম সমাজে কতিপয় ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বা গোষ্ঠীর মালিকানা পদ্ধতি স্বীকৃত ছিল। এর ফলে পরিবারের ব্যবহৃত অস্ত্র, হাড়ি-কুড়ি ও শিকার ইত্যাদি মেয়েদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হত। তাছাড়া আদিম অধিবাসীদের আচার অনুষ্ঠানের ব্যাপারে লোঈ বলেন যে, উৎপাদন ব্যবস্থার সর্ব আদি স্তরে; অর্থাৎ পশু ও মৎস শিকার করা কিম্বা ফলমূল সংগ্রহের স্তরে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল না-একথা জোর দিয়ে বলা বড়ই কঠিন। বলতে গেলে প্রতিটি শিলা এমনকি খাদখন্দকও ব্যক্তিগত মালিকানার আওতাভুক্ত বটে। এ প্রসঙ্গে লোঈ বলেন, যারা বিশ্বাস করে যে, মানব সমাজের আদি স্তরে সর্বদাই সাম্যবাদী মালিকানা চালু ছিল তারা প্রমাণ করুক যে, স্টেইটস-এ এক সময় জমির মালিকানা সাম্যবাদী ছিল।


৩) জন্মগত: মানুষ সমাজ থেকেই শিখেছে যে, দুর্দিনের জন্য তাদের খাদ্য, বস্ত্র ও নানা প্রযোজনীয় জিনিস সংগ্রহ করতে হবে। তদ্ব্যতীত তারা বংশানুক্রমে যারা সমাজে নতুন মুখ হিসেবে শিশু জন্মগ্রহণ করবে, তাদের জন্য কিছু রেখে যাবার চিন্তাভাবনাও আদিম সমাজে প্রচলিত ছিল। বিধায় ঐসময় থেকেই উত্তরাধিকার প্রথাটা সমাজে স্থান পেয়েছিল এবং মালিকানা শব্দটি ওতে সম্পৃক্ত ছিল।


৪) বয়সগত: ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানার মধ্যে নানা বিচিত্র আকারে উত্তরাধিকার বিষয়টি নিহিত রয়েছে। যেমন- কোন কোন সমাজে জ্যেষ্ঠত্ব উত্তরাধিকারের ভিত্তি, আবার কোন কোন সমাজে কনিষ্ঠত্ব উত্তরাধিকারের ভিত্তি জিইয়ে রয়েছে। তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠত্ব উত্তরাধিকারের ভিত্তিস্বরূপ জ্যেষ্ঠ পুত্রকে পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের দায়িত্ব এবং মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে কন্যাকে পরিবারের (সংসারের) দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়।


৫) অনুষ্ঠানগত: আধুনিককালে সম্পত্তির উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা বিষয়টি বিবিধ সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চলে আসছে। যেমন- হিন্দু সমাজের মেয়েদের বিয়েতে যে যৌতুক দেয়া হয়, তাতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জেরের অধিকার জন্মে থাকে। তাই হিন্দু মেয়েরা বিবাহের পর পিতা-মাতার সম্পত্তির ওপর কোনরূপ দাবী উত্থাপন করতে পারে না। এভাবে ধীরে ধীরে ক্রমহারে উত্তরাধিকার বিধিসূত্রের বিচিত্ররূপ লাভ করছে। শুধু কি তাই? বলতে গেলে ধর্ম, বংশ, প্রতিষ্ঠান, বিয়ে ও রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি সবকিছুতেই উত্তরাধিকার বিধিসূত্রের ওপর যথেষ্ট প্রভাব পড়ছে।


সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারতত্ত্বে বলা চলে, সম্পত্তির মালিকানা বিষয়টি উত্তরাধিকার সূত্রে সামাজিক বিধি হিসেবে চলে আসছে। কারণ সমাজে বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষকে প্রচুর কাজ করতে হয়। কাজের বিনিময়ে যা অর্জন করে, তা দিয়ে ভরণপোষণ এবং নিজের জীবনের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যয় নির্বাহ করে। তাছাড়া মানুষ সর্বদাই বিবেকবান জীব হিসেবে আগামী দিনের জন্য সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। মানুষের এসব ধারণা সমাজের ক্রমবিকাশের সাথে সাথে আরো ব্যাপক আকার ধারণ করে; বিধায় ওটা থেকে সম্পত্তি কথাটা মানুষের মনকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। সহজ কথায়, আদিম যুগে সম্পত্তির ব্যাপারে মালিকানাগত কোন পদ্ধতি না থাকলেও বর্তমান সভ্যজগতে আমাদের সমাজব্যবস্থায় বিভিন্ন প্রকার সম্পত্তির মালিকানা ও উত্তরাধিকারের সম্পর্ককে অস্বীকার করার কোন হেতু নেই।


ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের ধারণা (Conception of Islamic succession law)


ইসলাম ধর্মানুযায়ী কোন মৃত মুসলমান ব্যক্তির ত্যক্ত সম্পত্তির ওপর তার ওয়ারিশগণের হক (দাবি) প্রবর্তিত হয় এবং তদমোতাবেক তা প্রদান করা সম্বন্ধীয় বিধানকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় 'ফারায়েজ'। ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের মধ্যে দুটো নীতি প্রচলিত রয়েছে; যথা- আউল নীতি ও রাদ নীতি।


মুসলিম আইন উত্তরাধিকারের বিষয়টি কোরানে বর্ণিত অংশ ধারা বহুলাংশে নির্দিষ্টকৃত রয়েছে। উহাতে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী উত্তরাধিকারগণকে মূলত ৩টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে; যেমন- ক) নির্দিষ্ট অংশের অধিকারী, খ) আসাবা বা অবশিষ্টভোগী ও গ) পরবর্তী আত্মীয় বা যাবিল আহরাম। এদের মধ্যে সাধারণত ১ম শ্রেণীর যাবিল পুরুষ বা অংশীদারগণ এবং ২য় শ্রেণীর অবশিষ্টভোগীরা বিদ্যমান থাকে। কৃচিৎ ভবিষ্যৎ হিসেবে যদি কেউ এদের মধ্যে বিদ্যমান না থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে দূরবর্তী আত্মীয়দের ওপর উত্তরাধিকার বর্তায়। বস্তুত কোন অবস্থাতেই মৃত মুসলমানের ত্যাজ্যবিত্ত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে ন্যস্ত হবে না বা বাজেয়াপ্ত হয় না এজন্য যে, মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশের কোন অভাব নেই।


প্রকাশ আবশ্যক যে, কতিপয় ক্ষেত্রে পিতা-মাতা তাদের কোনও সন্তানকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করণের লক্ষে ত্যাজ্য পুত্র হিসেবে পরিণত করার দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। তা হয়ত কোন প্রকার শপথনামার মাধ্যমে এরূপ ত্যাজ্য বলে ঘোষণা দেয়া হলেও উক্ত পিতা-মাতার মৃত্যুর পরবর্তীতে তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে ঐ সন্তান উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী উপযুক্ত হিস্যা (অংশ) পায়। অর্থাৎ মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত আইনে এ ধরনের বিধান প্রযোজ্য হয়ে থাকে। মোদ্দাকথা যাকে ত্যাজ্য করা হল সে যথাসময়ে উত্তরাধিকারী সাব্যস্ত হয়। তবে ধর্মান্ত রিত হলে ভিন্ন কথা; কারণ সেক্ষেত্রে খৃষ্টানদের বেলায় ধর্মান্তরিত সন্তান উত্তরাধিকার হতে পারে। এছাড়া অন্যকোন আইনে এমনতর কোন সুযোগ দেয়া হয়নি। এখানে বলা হয়ে থাকে যে, কোন ব্যক্তি তার সন্তানকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করণ বা সম্পর্ক ছিন্নকরণের লক্ষে কোনরূপ ঘোষণা দিলেও ঘোষণাকারীর মৃত্যুর পর উক্ত সন্তান ওয়ারিশ হতে পারবে।


উল্লেখ থাকে যে, নতুন কোন ব্যক্তি মুসলমান হলে তার ওপর মুসলিম আইন প্রযোজ্য হয়। কেননা মুসলিম আইন শুধুমাত্র জন্মসূত্রে মুসলমানদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নহে, বরঞ্চ ধর্মসূত্রে যারা মুসলমান হয়েছে তাদের বেলায়ও প্রযোজ্য হয়ে থাকে। তদমোতাবেক বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে কোন লোক মুসলমান হলে তার সমস্ত সম্পত্তি মুসলিম আইন দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। বিধায় ধর্ম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পূর্বেকার আইনকানুনও পরিবর্তিত হয়ে যায়। এমনতর পরিস্থিতিতে তার উত্তরাধিকারীরা মুসলিম আইনের দ্বারা পরিচালিত হতে থাকে (মিতার সেন সিং বনাম মকবুল হোসেন খান; (1930) 57 IA 313]।


উপরন্ত উত্তরাধিকার আইনে মুসলিম নারীর অধিকার ও মর্যাদা লক্ষণীয়। যেমন- একজন মুসলিম নারীর জন্য সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের বেলায় পুরুষদের চেয়ে খুব একটা কম নয়, বরং অনেকাংশে অধিক বলতে হয়। কারণ একজন মুসলিম নারী জীবনের প্রতিটি স্তরে সম্পূর্ণরূপে সম্মানিতা হিসেবে গণ্য হচ্ছে এজন্য যে, ইসলাম নারী জাতিকে অবহেলিত কিংবা অধিকারহীন করে রাখেনি।


সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারতত্ত্বে বলা চলে, ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের উদ্দেশ্য হল কোন মুসলমান ইন্তেকাল করলে তার ত্যাজ্য সম্পত্তিতে ওয়ারিশানগণ (উত্তরাধিকারীগণ) কতটুকু অংশ পাবে, তা সঠিকভাবে নির্ধারণ পূর্বক বণ্টন করে দেয়া, এ বণ্টত পদ্ধতিকে ইসলামী আইনে 'ফারায়েজ' নামে আখ্যায়িত করা হয়। বস্তুত যেকোন মৃত মুসলমানের রেখে যাওয়া সম্পত্তি যদি উইল করা না হয়, তাহলে তার মৃত্যুর পর ওটা তার ওয়ারিশদের ওপর বর্তাবে। আর উইল করা থাকলে উক্ত উইলের এক-তৃতীয়াংশ সংশ্লিষ্ট উইল মোতাবেক প্রাপকগণ গ্রহণ করবেন; অবশিষ্টাংশ ইসলামী আইন অনুযায়ী তার ওয়ারিশগণের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হয়।


ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের প্রবাহ (স্রোত/গতি/বিশ্বাস):


ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের প্রবাহমূলে রয়েছে 'ইসলামধর্ম' ইসলামকে শান্তি, সাম্য ও মানবতার ধর্ম তথা সম্পূর্ণ জীবনবিধান মনে করা হয় যা একেশ্বরবাদী ধর্ম হিসেবে স্থিরীকৃত। ইহা পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ ধর্ম; খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে মক্কাবাসী হযরত মুহম্মদ (দঃ) এর পূর্ববর্তী সকল নবীগণের কর্মের গুরুত্বকে স্বীকার করত তাকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গম্বররূপে গ্রহণ করা হয়। ইসলামধর্মের মূখ্যত পাঁচটি করণীয় দায়িত্ব হল ঈমান, নামাজ, রোজা, যাকাত ও হজ্ব। তন্মধ্যে ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস সংক্রান্ত মূলনীতি কালেমার (ঈমানের) মধ্যেই নিহিত। একটি কালেমার মূল বক্তব্য হচ্ছে, "আল্লাহ ছাড়া মাবুদ নেই; মুহম্মদ (দঃ) হলেন আল্লার রাসূল বা প্রেরিত পুরুষ"। ইসলাম ধর্মে মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের ওপর গুরুত্বারোপ করে হযরত মুহম্মদ (দঃ) বলেছেন যে, "উত্তারধিকার আইন শিক্ষা কর এবং লোকদিগকে শিক্ষা দাও, যেহেতু উহা প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অর্ধেক"।


আল্লাহর বাণী আল-কুরআন, হযরত মুহম্মদ (দঃ) এর জীবন পদ্ধতি এবং হাদিসের মাধ্যমে ইসলামের পরিচয় পাওয়া যায়। অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের মূলনীতিগুলোর উৎস হল, আল-কুরআন ও হাদিস। এ দুটো মহান গ্রন্থের মধ্যে আল-কুরআন হল আল্লাহর মুখনিঃসৃত বাণী, যা তিনি শেষ নবী হযরত মুহম্মদ (দঃ) এর কাছে ফেরেশতা জিব্রাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। আর হাদিস হল হযরত মুহম্মদ (দঃ)-এর বক্তব্য, কাজ ও আদেশ-উপদেশ। বস্তুত মুহম্মদের (দঃ) কাছে প্রেরিত সকল ম্রিয়মান দৈববাণী মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন শরীফে স্বর্ণাক্ষরে সংকলিত রয়েছে; প্রকৃতপক্ষে এ গ্রন্থটি কেবলমাত্র ধর্মীয় অনুশাসনের নীতিমালা নয়, বরং মুসলমান সমাজের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা সম্বন্ধে বিস্তারিত নির্দেশাবলীর পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা এখানে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাক-ইসলামী যুগের প্রথাসমূহকেও মুসলিম আইন হতে বিচ্ছিন্ন করে দেখার কোন অবকাশ নেই। কারণ ঐতিহাসিক কুলসনের ভাষায় বলা সাজে, "ইসলামী আইনের দেহটা প্রাক-ইসলাম প্রথা এবং আত্মা হল ইসলাম" [A History of Islamic law; P. 251]


'ইসলাম' শব্দের অর্থ শান্তি এবং আত্মসমর্পন; ধর্মীয় অর্থে আল্লাহর ইচ্ছায় আত্মসমর্পন এবং নিরপেক্ষ অর্থে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। একজন মুসলমানের দৃষ্টিতে আল্লাহ হলেন সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই পালনকর্তা। তার কোন আকার নেই; নিদ্রা ও তন্দ্রা কিছুই তাকে স্পর্শ করতে পারে না। তিনি এক এবং অদ্বিতীয় অনাদি অনন্ত। তার কোন মাতা-পিতা নেই; এমনকি তিনি কারো পিতা-মাতা নন। তিনি পরম দয়ালু, পুণ্যের পুরস্কারদাতা এবং পাপের শাস্তিদাতা। তিনি সর্বশক্তিমান; বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে তার অবস্থান। রাসূল অর্থ আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। মানবকুল থেকে আল্লাহ কাউকে কাউকে না রাসূল হিসেবে মনোনীত করেছেন। রাসূলগণের নিকট আল্লাহ তার বিশেষ দূত ফেরেশতা জিব্রাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে তার বাণী পাঠিয়েছেন মানুষের মঙ্গলের জন্য। এসব বাণী ঐশীবাণী হিসেবে বিবেচিত, যার সাহায্যে রাসূলগণ মানুষকে সৎপথে পরিচালিত করার প্রয়াস চালিয়েছেন। গোড়ায় ইসলাম ধর্মের ঐশীগ্রন্থ বলতে 'পবিত্র আল-কুরআনকে' বুঝানো হয় -এতে রয়েছে ৬,৬৬৬টি আয়াত; ১১৪টি সুরা ও ৩০টি পারা। ইহার মোট আয়াতগুলোর মধ্যে ২০০টিরও অধিক আয়াতে বৈধনীতি এবং ৮০টির বেশি আয়াতে তত্ত্বগত আইন নিয়ে ছন্দোবদ্ধভাবে বিশ্লেষণিক আলোচনা করা হয়েছে। মানব জীবনের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য আল-কুরআন নাযিল করা হয়েছে।


বিশেষ স্মর্তব্যে উল্লেখ করতে পারি যে, প্রাথমিক পর্যায়ে হযরত মুহম্মদ (দঃ) স্থানীয় জনসাধারণের নিকট হতে বহুবিধ বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। যদরুণ তাকে ৬২২ খৃষ্টাব্দে মক্কা থেকে মদিনা চলে আসতে হয় যা সাধারণত মুসলমানদের নিকট 'হিজরত' নামে অভিহিত হয়েছে। অথচ ৬৩২ খৃষ্টাব্দে (৮ই জুন) মুহম্মদের (দঃ) মৃত্যুর সময় গোটা আরব দেশে ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল। এভাবে তার মৃত্যুর এক শতাব্দীর মধ্যে এক বিস্ময়কর হারে ইসলাম ধর্ম ব্যাপক প্রসার লাভ করে এবং তদমোতাবেক স্পেন ও উত্তর পশ্চিম আফ্রিকা থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত সমগ্র ভূভাগে দ্রুত গতিতে ইসলাম ধর্ম প্রবর্তিত হয়। তাই ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী আমরা অবগত হতে পারি যে, হযরত আদম (আঃ) হলেন সর্বপ্রথম মানুষ এবং আল্লাহর প্রথম পয়গম্বর। এরপর যুগে যুগে অনেক নবী ও রাসূলগণের মধ্যে আল্লাহর বাণী প্রাপ্ত হয়েছেন। তবে ইসলামের নবী ও রাসূল হযরত মুহম্মদ (দঃ) হলেন সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ তার ওপরই আল্লাহর বাণী আল- কুরআন নাযিল হয়েছিল।


বর্তমানে মুসলমানগণ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলাম ধর্মীয় সমাজগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত। উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া এসব দেশের প্রধান ধর্ম হল ইসলাম। তাছাড়া ভারত, ফিলিপাইন, পূর্ব-পশ্চিম আফ্রিকা, চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রভৃতি দেশেও অসংখ্য মুসলমান বসবাস করছে। এক্ষেত্রে ধর্মীয় দর্শন ও জীবনযাত্রার মান পর্যালোচনা করলে মুসলমানগণকে ২ শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়; যথা- ১) জন্মসূত্রে মুসলিম এবং ২) ধর্মান্তরিত বা দীক্ষিত মুসলিম। জ্ঞাতব্য যে, মুসলমানগণের অনুসৃত ইসলামী আইনের মূল উৎস হিসেবে (ক) কোরান, (খ) হাদিস/সুন্না, (গ) ইজমা ও (ঘ) কিয়াস-এ ৪টিই হল প্রধান।


বিশ্বের মুসলমানগণ প্রধানত দুটো সম্প্রদায়ে (শাখা বা প্রকারে) বিভক্ত; যথা- শিয়া ও সুন্নী। বস্তুত এ দু'সম্প্রদায়ের মধ্যেও আবার কয়েকটি উপশাখা (প্রকার) রয়েছে; যেমন শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে এজনে আশারী, ইছমাইলীয়া ও জায়েদিয়া নামের ৩টি শাখা রয়েছে। অন্যদিকে সুন্নী সম্প্রদায়ের মধ্যে হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী নামের ৪টি শাখা রয়েছে। তাসত্বেও পৃথিবীতে সুন্নী মুসলমানদের জনসংখ্যা শিয়াদের তুলনায় প্রায় আটগুণ বেশী। দেখা যায়, ইরান, সংলগ্ন ইরাকীয় অঞ্চল, সিরিয়া, লেবানন, ভারত ও পাকিস্তানে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানগণ বাস করে। তদ্ব্যতীত অন্যান্য সকল অঞ্চলে সুন্নী সম্প্রদায়ের মুসলমানগণের সংখ্যা সর্বান্তকরণে অধিক মাত্রাই বাস করে। তবে এসব মুসলমানগণের মধ্যে সকলেই (যে প্রকারেরই হোক না কেন) মুসলিমত্ব রীতিনীতি এবং ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের নিয়মকানুনকে স্বস্ব প্রথাগত বিধানের আলোকে অনুসরণ করে চলছে।


সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারতত্ত্বে বলা চলে, একজন মুসলমানের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং আইনগত দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সবধরনের আদেশ-নির্দেশ ও উপদেশাবলী কুরআন বা হাদিসে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। বিধায় ইসলামকে মুসলমানেরা একান্তই আন্তরিকতার সহিত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান বলে বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে। মহান ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআনের আলোকেই ইসলামিক আইন, অর্থাৎ ইসলাম ও উত্তরাধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।


ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের সাধারণ নিয়ম (ফারায়েজ নীতি)


কোন মুসলমান মারা গেলে তার ত্যাজ্যবিত্তে মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের আলোকে যাদের ওপর স্বত্ব বর্তাবে, তাদেরকেই 'উত্তরাধিকার' (ওয়ারিশ) বলা হয়। ইসলামী আইনে উত্তরাধিকার বিষয়ে ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশটি বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত আইনের অন্যতম একটি উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যাহোক ইসলামী আইনে অনুসৃত ফারায়েজের নীতিটি নিম্নোক্তভাবে হয়ে থাকে—-


১) যার সম্পত্তি বণ্টত করা হবে, তার মৃত্যুর পরই তার উত্তরাধিকারী (ওয়ারিশগণের) ওপর স্বত্ব বর্তাবে।


২) যার সম্পত্তি বণ্টত করা হবে, তার সমুদয় সম্পত্তিকে যোল আনা, এক বা ভাগ্নাংশের আকারে ১ ধরে বা সম্পূর্ণ ধরে বণ্টত করতে হয়।


৩) যার সম্পত্তি বণ্টত করা হবে, প্রথমে তার দাফনকাফনের খরচ, এরপর মৃতের ঋণ পরিশোধ করতে হয়। আর কোনরূপ অছিয়ত (উইল) করে থাকলে মোট সম্পত্তির (ত্যাজ্যবিত্তের) এক-তৃতীয়াংশ থেকে তা পরিশোধ করা। অতপর অবশিষ্ট সম্পত্তির ওপর ওয়ারিশগণের স্বত্ব বর্তাবে। তবে প্রাপ্তবয়স্ক ওয়ারিশের অনুমতি থাকলে এক-তৃতীয়াংশের অধিকও অছিয়ত করা যায়।


৪) যার সম্পত্তি বণ্টত করা হবে, তিনি জীবিত থাকাকালীন সময়ে তার কোন ওয়ারিশ সম্পত্তি বণ্টনের জন্য কোনরূপ দাবী উত্থাপন করতে পারবে না।


৫) যার সম্পত্তি বণ্টত করা হবে, তিনি যদি ১৮৮২ সনের ভূমি হস্তান্তর আইন মোতাবেক বৈধভাবে কোন সম্পত্তি হস্তান্তর পূর্বক মৃত্যুবরণ করে, তাহলে ঐরূপ হস্তান্তরিত সম্পত্তি বণ্টনের আওতায় বা ফারায়েজের আমলে আসবে না।


৬) যার সম্পত্তি বণ্টত করা হবে, তিনি যদি খুন হয়ে মারা যান এবং অনুরূপ খুনের দরুন যদি তার কোন ওয়ারিশ দায়ী হন, তাহলে উক্তরূপ ওয়ারিশ বণ্টনের সময় তার প্রাপ্য অংশ (ফারায়েজের অংশীতা) হতে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হবে।


৭) যার সম্পত্তি বণ্টত করা হবে, তার কোন ওয়ারিশ যদি ইসলামধর্ম ত্যাগ করে অন্যধর্ম গ্রহণ করে, তাহলে বণ্টনের সময় ধর্মান্তরিত ব্যক্তি কোনরূপ অংশ পাবেনা।


৮) যার সম্পত্তি বণ্টত করা হবে, তিনি যদি তার স্ত্রীর গর্ভে তার স্বীয় ঔরসজাত কোন সন্তান রেখে মারা যান, তাহলে বণ্টনের সময় ঐরূপ সন্তানের ভূমিষ্ঠ হওয়া অবধি অপেক্ষা করা উত্তম। অন্যথায় নিতান্ত প্রয়োজনের তাগিদে ঐ গর্ভজাত সন্তানটিকে পুত্র সন্তান হিসেবে ধরে নিয়ে মৃতব্যক্তির সম্পত্তির বণ্টত করা যেতে পারে।


৯) যার সম্পত্তি বণ্টত করা হবে, তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টিত হবার পূর্বে মৃতব্যক্তির কোন পুত্র বা কন্যার মৃত্যুতে উত্তরাধিকারীগণের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টত করার সময় উক্ত পুত্র বা কন্যার সন্তানাদি যদি জীবিত থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত পুত্র বা কন্যা বণ্টনের সময় জীবিত থাকলে যে পরিমাণ অংশ পেত, তদক্ষেত্রেও সমষ্টিগতভাবে ঠিক ঐ অংশ পাবে। অর্থাৎ মৃতব্যক্তির পূর্বমৃত পুত্র বা কন্যার ওয়ারিশগণ উত্তরাধিকার সূত্রে অংশ পেতে হকদার (অধিকারী)।


১০) স্বামী কর্তৃক পরিত্যক্ত স্ত্রী (তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী) ঐ সাবেক স্বামীর মৃত্যুর দরুন তার সম্পত্তি কটনের সময় ঐ স্ত্রীটি কোনরূপ অংশ প্রাপ্তির অধিকার পায়না।


১১) স্বাভাবিকভাবে মৃতব্যক্তির স্থাবর ও অস্থাবর সমুদয় সম্পত্তিই ফারায়েজের আমলে আসবে না; অর্থাৎ অন্তর্ভুক্ত হবে না।


১২) কোন সুন্নি মুসলমান ইন্তেকাল করলে ইসলামী সুন্নি উত্তরাধিকার আইনের আলোকে তার উত্তরাধিকারীগণের মধ্যে ত্যাজ্য সম্পদ বন্টিত হবে। অন্যদিকে কোন শিয়া মুসলমানের ইন্তেকালের পর তার উত্তরাধিকারীদের মাঝে শিয়া উত্তরাধিকার আইন অনুসারে সম্পত্তি ভাগ করা হবে।


জ্ঞাতব্য যে, মুসলিম ওয়ারিশগণকে মূলত কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে; যথা- (ক) অংশীদার, (খ) অবশিষ্টাংশভোগী ও (গ) দূরবর্তী আত্মীয় বা শরীকগণ। বস্তুত এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হল যে, মৃতব্যক্তির সম্পত্তি থেকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বাদ দিয়ে বাকী সম্পদ বণ্টত করতে হয়; যথা-


১) মৃতব্যক্তির ত্যক্ত সম্পত্তি হতে তার দাফনকাফন ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সংক্রান্ত ব্যয়।


২) মৃতব্যক্তির মৃত্যুর দিন থেকে ৩ মাস পূর্ব পর্যন্ত তার সেবা শুশ্রুষা ও পরিচর্যার লোক বা ভূত্যের পারিশ্রমিক বাবদ ব্যয়।


৩) আদালত থেকে লেটার অব এডমিনিস্ট্রেশন বা প্রবেট বা সাকসেশন সার্টিফিকেট আনার ব্যয়। ৪) মৃতব্যক্তি ঋণ করে থাকলে ঐ ঋণ পরিশোধ করতে হয়। এতে মৃতব্যক্তির ত্যক্ত সম্পত্তি যদি ঋণের সমান হয় বা উহা অপেক্ষা বেশী থাকে, তাহলে সমুদয় ঋণই পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু যদি ত্যক্ত সম্পত্তি ঋণ থেকে কম হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সম্পত্তিকে ঋণের সমষ্টি দ্বারা ভাগ করে প্রতি অংশে যা পড়ে সেই অনুপাতে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। যেমন- সম্পত্তির মূল্য ৫০০/- টাকা, আর ঋণের পরিমাণ ১,০০০/- টাকা হলে তজ্জন্য ঋণের প্রতি টাকায় আট আনা প্রদান করতে হবে।


৫) ঋণ পরিশোধ ও আনুষঙ্গিক উপরোক্ত ব্যয় নির্বাহ করার পর অবশিষ্টাংশে সম্পত্তির অংশমাত্র মৃতব্যক্তির উইল থাকলে তা সম্পন্ন করতে হবে।


সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারতত্ত্বে বলা চলে, ইসলামী আইনের বিধান মোতাবেক মৃতব্যক্তির পরিত্যক্ত বিষয় সম্পত্তিতে তার ওয়ারিশ যে যে পরিমাণ অংশ পাবে; ঠিক তদ্রূপ মৃতব্যক্তির দেনার জন্যও সে সেই পরিমাণ বা সে উহার আনুপাতিক হারে দায়ী থাকবে (হবে)। জ্ঞাতব্য যে, ইসলামী আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিষয়াদি আদৌ যুক্তিসঙ্গত বা ন্যায়ানুগ কিনা তা বিচার করে দেখার অধিকার আদালতের নেই [4 Beng, LR 13 or 1 All 143]


উৎসঃ আইন বিজ্ঞান -রামকান্ত সিংহ


What is the succession Act in Bangladesh? What is the law of succession? What is Section 376 of the succession Act? উত্তরাধিকার আইন কি? What are the rules for Muslim succession? Who are the 12 Quranic heirs? What is the inheritance law in Bangladesh for Muslims? What are the rules for heirs in Islam? Muslim succession act pdf Muslim inheritance law in Bangladesh PDF Property distribution law in Bangladesh in bangla PDF Muslim succession law in Bangladesh succession act, 1925 in bangla muslim family laws ordinance, 1961 pdf download Muslim law in Bangladesh Muslim law in Bangladesh PDF What are the rules of inheritance under Muslim law? What is the new inheritance law in Bangladesh? How to divide Islamic inheritance? ইসলামে উত্তরাধিকার বন্টন কিভাবে করতে হয়? Muslim inheritance law in Bangladesh PDF Property distribution law in Bangladesh in bangla PDF Mother's property distribution in Islam in bangla Islamic inheritance calculator Family land distribution law in Bangladesh in Bangla Property distribution calculator in Bangladesh Muslim inheritance calculator bangladesh Mother property distribution law in Bangladesh

Post a Comment

0 Comments