আইনে ধর্ষণ(Rape) কাকে বলে? ধর্ষণের ফলশ্রুতিতে জন্মলাভকারী শিশু সংক্রান্ত বিধান আলোচনা করুন।
ধর্ষণ(Rape)
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯(১)ধারার ব্যাখ্যা অংশে বলা হয়েছে যে, “যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বৎসরের অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা ষোল বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।”
দণ্ডবিধি, ১৮৬০ আইনের ধারা-৩৭৫ তে ধর্ষণ(Rape) কে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, “যে ব্যক্তি, অতঃপর ব্যতিক্রান্ত ক্ষেত্র ব্যতিরেকে নিম্নোক্ত ০৫ প্রকার বর্ণনাধীন যেকোন অবস্থায় কোন নারীর সাথে যৌন সহবাস করে, সেই ব্যক্তি "ধর্ষণ” করে বলে গণ্য হবে—
প্রথমত, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে;
দ্বিতীয়ত, তার সম্মতি ব্যতিরেকে;
তৃতীয়ত, তার সম্মতিক্রমে, যেক্ষেত্রে তাকে মৃত্যু বা আঘাতের ভয় প্রদর্শন করে তার সম্মতি আদায় করা হয়;
চতুর্থত, তার সম্মতিক্রমে, যেক্ষেত্রে লোকটি জানে যে সে তার স্বামী নয় এবং সে (নারীটি) এই বিশ্বাসে সম্মতি দান করে যে, সে (পুরুষটি) এমন কোন লোক যার সাথে সে আইনানুগভাবে বিবাহিত অথবা সে নিজেকে তার সাথে আইনানুগভাবে বিবাহিত বলে বিশ্বাস করে।
পঞ্চমত, তার সম্মতিসহকারে বা ব্যতিরেকে, যেক্ষেত্রে সে চৌদ্দ বৎসরের কম বয়স্কা হয়।’’
ব্যাখ্যা: অনুপ্রবেশই নারী ধর্ষণের অপরাধরূপে গণ্য হওয়ার যোগ্য যৌন সহবাস অনুষ্ঠানের নিমিত্ত যথেষ্ট বিবেচিত হবে।
ধর্ষণের ফলশ্রুতিতে জন্মলাভকারী শিশু সংক্রান্ত বিধান
(Regarding the birth of children as a result of rape)
ধর্ষণের ফলশ্রুতিতে জন্মলাভকারী শিশুর তত্ত্বাবধান, পরিচয় এবং ভরণপোষণ সম্পর্কিত বিধান এ ধারায় বর্ণিত হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০০৩-এর ৭ ধারার মাধ্যমে বর্তমানে প্রযোজ্য বিধান পূর্বের বিধানের স্থলে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। উক্ত শিশুকে তার মা বা মাতৃকূলের আত্মীয়-স্বজনের কাছে রাখা যাবে। শিশুটি তার মায়ের পরিচয়ে বা বাবার পরিচয়ে কিংবা উভয়ের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার অধিকারী হবে। এ শিশুর ভরণপোষণ রাষ্ট্র বহন করবে তার বয়স একুশ বছর না হওয়া পর্যন্ত, একুশ বছরের অধিক বয়স্ক কন্যা সন্তান তার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত এবং পঙ্গু সন্তান নিজে ভরণপোষণের যোগ্যতা অর্জন না করা পর্যন্ত। ভরণপোষণের হার সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারণ করবে। সরকার ইচ্ছে করলে ধর্ষণের ফলশ্রুতিতে জনন্মলাভকারী শিশুর ভরণপোষণ ধর্ষকের কাছ থেকে আদায় করতে পারবে।( নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ভাষ্য-গাজী শামছুর রহমান)
চলুন দেখি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন/২০০০ (সংশোধন) ২০০৩ এর ১৩ ধারাতে ধর্ষণের ফলশ্রুতিতে জন্মলাভকারী শিশু সংক্রান্ত কি কি বিধান বর্ণিত হয়েছে—-
ধারা [১৩(১) অন্য কোন আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ধর্ষণের কারণে কোন সন্তান জন্মলাভ করিলে—
(ক) উক্ত সন্তানকে তাহার মাতা কিংবা তাহার মাতৃকুলীয় আত্মীয় স্বজনের তত্ত্বাবধানে রাখা যাইবে;
(খ) উক্ত সন্তান তাহার পিতা বা মাতা, কিংবা উভয়ের পরিচয়ে পরিচিত হইবার অধিকারী হইবে;
(গ) উক্ত সন্তানের ভরণপোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহণ করিবে;
(ঘ) উক্ত সন্তানের ভরণপোষণের ব্যয় তাহার বয়স একুশ বৎসর পূর্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রদেয় হইবে, তবে একুশ বত্সরের অধিক বয়স্ক কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে তাহার বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত এবং পঙ্গু সন্তানের ক্ষেত্রে তিনি স্বীয় ভরণপোষণের যোগ্যতা অর্জন না করা পর্যন্ত প্রদেয় হইবে।
(২) সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত সন্তানের ভরণপোষণ বাবদ প্রদেয় অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করিবে।
(৩) এই ধারার অধীন কোন সন্তানকে ভরণপোষণের জন্য প্রদেয় অর্থ সরকার ধর্ষকের নিকট হইতে আদায় করিতে পারিবে এবং ধর্ষকের বিদ্যমান সম্পদ হইতে উক্ত অর্থ আদায় করা সম্ভব না হইলে, ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের মালিক বা অধিকারী হইবেন সেই সম্পদ হইতে উহা আদায়যোগ্য হইবে।] [ধারা ১৩ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০০৩ (২০০৩ সনের ৩০ নং আইন) এর ৭ ধারাবলে প্রতিস্থাপিত]
0 Comments