সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর উত্তরাধিকার আইন

What is the family inheritance law in Bangladesh, Who are the tribals of Tripura?, What is the Reang community of Tripura, What is the Chaimal tribe of Tripura,


ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর উত্তরাধিকার আইন

ত্রিপুরা, ত্রিপুরী বা তিপ্রা হচ্ছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের একটি নৃগোষ্ঠী। বাংলাদেশে এদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস করে। তিন পার্বত্য জেলা ছাড়াও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী সমতল এলাকার কুমিল্লা, সিলেট, বৃহত্তর চট্টগামের বিভিন্ন উপজেলা, রাজবাড়ী, চাঁদপুর, ফরিদপুর প্রভৃতি অঞ্চলেও বর্তমানে বসবাস করে। ১৮৮১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর মোট সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৫০৯ জন।

বর্তমানে বাংলাদেশে ত্রিপুরাদের জনসংখ্যা অনেকেই মনে করেন দুই লাখের কাছাকাছি। তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রিপুরাদের জনসংখ্যা দেড় লক্ষাধিক। ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর ইতিহাস থেকে জানা যায়, আনুমানিক ৬৫ খ্রিস্টাব্দে সুই বংশের সময়কালে পশ্চিম চীনের ইয়াংসি ও হোয়াংহো নদীর উপত্যকা হচ্ছে এদের প্রাচীন আবাসস্থল। পরবর্তী সময়ে এই জনগোষ্ঠী ভারতের আসাম হয়ে অত্র অঞ্চলে বসতি গড়ে তোলে।


ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর ভাষার নাম ককবরক। এরা দলবদ্ধভাবে বাস করেন। দলকে এরা দফা বলে। বাংলাদেশে বসবাসকারী ত্রিপুরাদের সমাজব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক

ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর উত্তরাধিকার আইন ও বিচার ব্যবস্থা 

ত্রিপুরাদের সামাজিক সমস্যাদি নিষ্পত্তির জন্য যেমনি নিজেদের ঐতিহ্যগত সামাজিক প্রতিষ্ঠান হেডম্যান-কার্বারী(পাড়ার প্রধানকে  "কার্বারী" বলা হয়। কয়েকটি পাড়া নিয়ে গঠিত হয় মৌজা। মৌজার প্রধানকে বলা হয় হেডম্যান) আদালত রয়েছে, তেমনি রয়েছে নিজস্ব প্রথাগত আইন। এই প্রথাগত আইনের ভিত্তিতে ঐতিহ্যগত সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে হেডম্যান-কার্বারীরা ত্রিপুরাদের সামাজিক সমস্যাদি নিষ্পত্তি করে থাকেন। কার্বারী  গ্রামের ফৌজদারি, দেওয়ানি সব ধরনের বিবাদের বিচার করে থাকেন।

যদিও বা ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বা পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্য কোনাে আইন কার্বারীদের এ ধরনের ক্ষমতার স্বীকার করে না। তবে প্রথাগত ব্যবস্থার সামাজিক অধিকার নিয়ে যুগ যুগ ধরে কার্বারীরা গ্রামের সব ধরনের বিবাদ ও মামলা নিষ্পত্তির দায়িত্ব পালন করে আসছে।

হেডম্যান’ হলেন মৌজার প্রধান। বেশ কয়েকটি গ্রাম নিয়ে মৌজা গঠন হয়ে থাকে। মৌজার আয়তন হলাে ২ বর্গমাইলের বেশি এবং ১০ বর্গমাইলের কম। কোনাে কার্বারীর আদালতে কোনাে মামলার নিষ্পত্তি না হলে উচ্চ আদালত হিসেবে সে মামলা মৌজা প্রধানের আদালতে চলে যায়।

সামাজিক সমস্যাদি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করার আইনি ক্ষমতা মৌজা প্রধানের আছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি মৌজা প্রধানকে এ ক্ষমতা দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি অনুসারে ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা মৌজা প্রধানের না থাকলেও বাস্তবে মৌজা প্রধানরাও ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করে থাকেন।

মৌজা প্রধানরা এ কাজটি যুগ যুগ ধরে করে আসছে। কোনাে মামলা মৌজা প্রধানের আদালতে নিষ্পত্তি না হলে সে মামলা সার্কেল চিফ তথা রাজার আদালতে চলে যায়।

ত্রিপুরা সমাজে প্রথাগতভাবে নারীরা আইনের দিক থেকে স্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না। পুত্র সন্তানরাই একমাত্র পরিবারের স্থাবর সম্পত্তির আইনি অধিকারী। তবে ত্রিপুরা জাতির কোনাে কোনাে গােত্রে কন্যা সন্তানরা অস্থাবর সম্পত্তির পাশাপাশি স্থাবর সম্পত্তির অধিকার ভােগ করে থাকে। যেমন ফাদু, দেনদাউ, গাবিং ইত্যাদি গােত্রে মেয়ে সন্তানরা মায়ের বংশ পরিচয়ে পরিচিত হন।এসব গােত্রে মেয়ে সন্তানরাই উত্তরাধিকারী হিসেবে মায়ের সম্পত্তি ভােগ করে থাকে। 

ত্রিপুরা সমাজে সাধারণভাবে পুত্র সন্তানরাই পরিবারের যাবতীয় সম্পত্তির আইনগত উত্তরাধিকারী। তবে কোনাে কোনাে পরিবারের মাতা-পিতা কন্যা সন্তানদেরও সম্পত্তির ভাগ দিয়ে থাকে। বর্তমানে অধিকাংশ পরিবারে এই রীতি অনুসৃত হচ্ছে। তবে কন্যা সন্তানদের এ অধিকার পুত্র সন্তানদের সমান নয়।

মা-বাবার দয়ার উপরই এটি নির্ভর করে কন্যা সন্তানরা স্থাবর সম্পত্তির ভাগ কত অংশ পাচ্ছে। এ পর্যন্ত দেখা গেছে যে, কন্যা সন্তানরা পুত্র সন্তানের সম পরিমাণ স্থাবর সম্পত্তির ভাগ পায় না।

মোটকথা, টিপরা বা ত্রিপুরা সমাজ পিতৃতান্ত্রিক। পরিবারে পিতার স্থান উর্ধে হওয়ায় সাবির্ক বিষয়াদিতে তিনি খুব ক্ষমতাবান হয়ে থাকে। পিতা থেকে তাদের গোষ্ঠী বা গোত্রের উত্‍পত্তি এদের সমাজ ব্যবস্থায় মেয়ে ও স্ত্রীদের তেমন কোন আধিপত্য নেই। পরিবার পরিচালনা পদ্ধতিতে কতৃর্ত্বের ব্যাপারে পিতার পরবতীর্তে মাতার স্থান। অতপর জেষ্ঠ্যপুত্রের স্থান হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে একজন পুত্র তার পিতার দফা ও গোষ্ঠীর অধিকারী হয়। আর কন্যা তার মাতার দফা ও গোষ্ঠীর অধিকারী সাব্যস্ত হয়ে থাকে। তাদের উত্তরাধিকারিত্ব প্রসঙ্গে মহেন্দ্র লাল ত্রিপুরা লিখেছেন যে,"যে গোত্র ছেলেরা পিতার বংশ এবং মেয়েরা মাতার বংশ অনুসরণ করে; তাতে ছেলেরা পায় পিতার সম্পত্তি, মেয়েরা পায় মাতার সম্পত্তি"।
sources:
             ১. জুম জার্নাল(www.jumjournal.com)
             ২. www.kalerkantho.com/print-edition/education/2023/03/06/1258359
             ৩. www.facebook.com/BangladeshiLaw

Post a Comment

0 Comments