ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর উত্তরাধিকার আইন ও বিচার ব্যবস্থা
ত্রিপুরাদের সামাজিক সমস্যাদি নিষ্পত্তির জন্য যেমনি নিজেদের ঐতিহ্যগত সামাজিক প্রতিষ্ঠান হেডম্যান-কার্বারী(পাড়ার প্রধানকে "কার্বারী" বলা হয়। কয়েকটি পাড়া নিয়ে গঠিত হয় মৌজা। মৌজার প্রধানকে বলা হয় হেডম্যান) আদালত রয়েছে, তেমনি রয়েছে নিজস্ব প্রথাগত আইন। এই প্রথাগত আইনের ভিত্তিতে ঐতিহ্যগত সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে হেডম্যান-কার্বারীরা ত্রিপুরাদের সামাজিক সমস্যাদি নিষ্পত্তি করে থাকেন। কার্বারী গ্রামের ফৌজদারি, দেওয়ানি সব ধরনের বিবাদের বিচার করে থাকেন।
যদিও বা ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বা পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্য কোনাে আইন কার্বারীদের এ ধরনের ক্ষমতার স্বীকার করে না। তবে প্রথাগত ব্যবস্থার সামাজিক অধিকার নিয়ে যুগ যুগ ধরে কার্বারীরা গ্রামের সব ধরনের বিবাদ ও মামলা নিষ্পত্তির দায়িত্ব পালন করে আসছে।
হেডম্যান’ হলেন মৌজার প্রধান। বেশ কয়েকটি গ্রাম নিয়ে মৌজা গঠন হয়ে থাকে। মৌজার আয়তন হলাে ২ বর্গমাইলের বেশি এবং ১০ বর্গমাইলের কম। কোনাে কার্বারীর আদালতে কোনাে মামলার নিষ্পত্তি না হলে উচ্চ আদালত হিসেবে সে মামলা মৌজা প্রধানের আদালতে চলে যায়।
সামাজিক সমস্যাদি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করার আইনি ক্ষমতা মৌজা প্রধানের আছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি মৌজা প্রধানকে এ ক্ষমতা দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি অনুসারে ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা মৌজা প্রধানের না থাকলেও বাস্তবে মৌজা প্রধানরাও ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করে থাকেন।
মৌজা প্রধানরা এ কাজটি যুগ যুগ ধরে করে আসছে। কোনাে মামলা মৌজা প্রধানের আদালতে নিষ্পত্তি না হলে সে মামলা সার্কেল চিফ তথা রাজার আদালতে চলে যায়।
ত্রিপুরা সমাজে প্রথাগতভাবে নারীরা আইনের দিক থেকে স্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না। পুত্র সন্তানরাই একমাত্র পরিবারের স্থাবর সম্পত্তির আইনি অধিকারী। তবে ত্রিপুরা জাতির কোনাে কোনাে গােত্রে কন্যা সন্তানরা অস্থাবর সম্পত্তির পাশাপাশি স্থাবর সম্পত্তির অধিকার ভােগ করে থাকে। যেমন ফাদু, দেনদাউ, গাবিং ইত্যাদি গােত্রে মেয়ে সন্তানরা মায়ের বংশ পরিচয়ে পরিচিত হন।এসব গােত্রে মেয়ে সন্তানরাই উত্তরাধিকারী হিসেবে মায়ের সম্পত্তি ভােগ করে থাকে।
ত্রিপুরা সমাজে সাধারণভাবে পুত্র সন্তানরাই পরিবারের যাবতীয় সম্পত্তির আইনগত উত্তরাধিকারী। তবে কোনাে কোনাে পরিবারের মাতা-পিতা কন্যা সন্তানদেরও সম্পত্তির ভাগ দিয়ে থাকে। বর্তমানে অধিকাংশ পরিবারে এই রীতি অনুসৃত হচ্ছে। তবে কন্যা সন্তানদের এ অধিকার পুত্র সন্তানদের সমান নয়।
মা-বাবার দয়ার উপরই এটি নির্ভর করে কন্যা সন্তানরা স্থাবর সম্পত্তির ভাগ কত অংশ পাচ্ছে। এ পর্যন্ত দেখা গেছে যে, কন্যা সন্তানরা পুত্র সন্তানের সম পরিমাণ স্থাবর সম্পত্তির ভাগ পায় না।
0 Comments