পুলিশ আইনের বিভিন্ন পরিভাষা
(Different terminologies of police laws)
১। অতিরিক্ত পুলিশ (Additional police)
থানা এলাকার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হলে বা অপরাধ প্রবণতা বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে অপরাধ নিবারণের জন্য পুলিশ আইনের ১৩, ১৪, ১৫ ধারা মোতাবেক পুলিশের অন্য ইউনিট থেকে যে পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হয় সেই পুলিশকে অতিরিক্ত পুলিশ বলে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে থানা এলাকার অপরাধ নিবারণ করা যায়। তবে উক্ত অতিরিক্ত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারের কর্তৃত্বাধীনে থাকবে।(পুলিশ আইন ১৩, ১৪, ১৫ ধারা, পিআরবি ৬৬৭, ৬৭৯, ৬৭০ বিধি, ডিএমপি ৩৬ ধারা)
২। বিশেষ পুলিশ (Special Police)
পুলিশ আইন ১৭,১৮,১৯ ধারা এবং পিআরবি ৬৭৪, ৬৭৫, ৬৭৬ বিধি মোতাবেক থানা এলাকার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হলে বা অপরাধ প্রবণতা বেড়ে গেলে অপরাধ নিবারণের জন্য ইন্সপেক্টর বা উর্ধ্বতন পদমর্যাদার কোন পুলিশ অফিসারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত এলাকার জনস- াধারণের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তিকে পুলিশ হিসেবে নিয়োগ করেন, ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নিয়োগকৃত উক্ত পুলিশকেই বিশেষ পুলিশ (Special Police) বলে। বিশেষ পুলিশ নিয়োগের উদ্দেশ্য হলো থানা এলাকার অপরাধ নিবারণ করা। বিশেষ পুলিশ অপরাধ নিবারণে থানা পুলিশকে সাহায্য সহযোগিতা করবে।(পুলিশ আইন ১৭, ১৮, ১৯ ধারা, পিআরবি ৬৭৪, ৬৭৫, ৬৭৬ বিধি, ডিএমপি অধ্যাদেশ ১০ ধারা)
৩। কমিউনিটি পুলিশিং(Community Policing)
অপরাধ দমনে পুলিশ ও জনতার যৌথ প্রচেষ্টার নামই হলো কমিউনিটি পুলিশিং(Community Policing)। লন্ডন মেট্রোপলটিন পুলিশের প্রতিষ্ঠাতা রর্বাট পিলের(Sir Robert Peel) গণমুখী পুলিশিং এর মূলনীতি হতেই মূলত কমিউনিটি পুলিশিং এর ধারণা আসে। কমিউনিটি পুলিশিং পদ্ধতি সাফল্যজনক পদ্ধতি। যা সারা বিশ্বে স্বীকৃত। এ সম্পর্কে বহুল প্রচলিত বাক্য জনতাই পুলিশ, পুলিশই জনতা(The Public Are Police And The Police Are Public)। ফৌজদারী কার্যবিধি ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫ ধারা মোতাবেক থানা এলাকার অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলারক্ষা, সামাজিক সমস্যা সমাধান, নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে জনগণকে পুলিশি কাজে সম্পৃক্ত করে গৃহীত কার্যক্রমকেই কমিউনিটি পুলিশিং বলে।(ফৌজদারী কার্যবিধি ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫ ধারা, পিআরবি ৬৭৪, ৬৭৫, ৬৭৬ বিধি, পুলিশ আইন ১৭ ধারা)
৪। বিট পুলিশিং (Bit policing)
পুলিশের সেবাকে জনগণের নিকট পৌঁছে দেওয়া, সেবার কার্যক্রমকে গতিশীল ও কার্যকর করা এবং পুলিশের সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে প্রতিটি থানাকে ইউনিয়ন ভিত্তিক বা মেট্রোপলিটন এলাকায় ওয়ার্ড ভিত্তিক এক বা একাধিক ইউনিটে ভাগ করে পরিচালিত পুলিশিং ব্যবস্থাকেই বলা হয় বিট পুলিশিং (Bit policing)। এই ব্যবস্থায় প্রতিটি বিটের দায়িত্ব প্রদান করে এক বা একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োজিত করা হয়। পিআরবি ৩৫৬ বিধি মোতাবেক শহর এলাকার অপরাধ দমন ও অপরাধ নিবারণের জন্য শহর এলাকাকে কয়েকটি বিটে বিভক্ত করে যে পুলিশি কার্যক্রম বজায় রেখে অপরাধ দমন, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধীকে গ্রেফতার করার জন্য বিট পুলিশিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। বিট পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার করা হলে শহর এলাকার অপরাধ অনেকাংশে হ্রাস পাবে।(পিআরবি ৩৫৬ বিধি, পুলিশ আইন ২৩ ধারা, পিআরবি ৩২,৩৩,৩৪ বিধি)
৫। অগ্নি সংকেত(fire alarm)
পিআরবি ১৬৫ বিধিতে অগ্নি সংকেত(fire alarm) সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আগুন লাগার সংকেত বেজে উঠার সঙ্গে সঙ্গে সকল শ্রেণীর পুলিশ সদস্য দ্রুত সারিবদ্ধ হবেন, হেড কনস্টেবল ও কনস্টেবলগণ ইউনিফর্ম পরিধানের জন্য বিলম্ব করবেন না, তবে বেল্ট পরিধান করবেন। সিনিয়র অফিসারগণ প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশকে হাতের নিকট অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম যা কিছু পাবেন তৎসহ অতিদ্রুত অগ্নিকাণ্ডের স্থানে পাঠাবেন। অগ্নিকাণ্ডের স্থলে উপস্থিত সিনিয়র অফিসার পুলিশ সদস্যদের ভিন্ন স্কোয়াডে বিভক্ত করে আগুনের চারদিক কর্ডন করে দাঁড় করাবেন এবং অগ্নি নির্বাপন ও সম্পত্তি রক্ষার্থে সহায়তা করবেন। (পিআরবি ১৬৫ বিধি)
৬। আগ্নেয়াস্ত্র চেকিং(examine arms)
পিআরবি ৪৬(চ), ৬৯৫, ১০০২ বিধিতে অস্ত্র চেকিং সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। বর্ণিত বিধি মোতাবেক অস্ত্র চেকিং করার সময় সর্বদা লোডেড বিবেচনা করে ব্যবহার ও বহন করতে হবে। অস্ত্রের মাজল কোন অবস্থাতেই লক্ষ্যবস্তু ব্যতীত (৪ অন্যকোন বস্তু, প্রাণী বা ব্যক্তির দিকে তাক করা যাবে না। লক্ষ্য স্থির না হওয়া পর্যন্ত ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল ট্রেগারে লাগানো যাবে না। অস্ত্র চেকিং বা পরীক্ষা করার পূর্বে লক্ষ্য বস্তুর সামনে বা পিছনে কোন ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তু থাকলে অস্ত্র চেকিং বা পরীক্ষা করা যাবে না। (পিআরবি ৪৬(চ),৬৯৫, ১০০২ বিধি)
৭। কালো চিহ্ন (Black Mark)
পিআরবি’র ৮৭৪ প্রবিধান মোতাবেক কালো চিহ্ন একটি স্থায়ী গুরুদণ্ড। পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত অধঃস্তন কর্মচারীগণ অসদাচরণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলেকালো চিহ্ন (Black Mark) হিসেবে শাস্তি দেওয়া হয়। পিআরবি’র ৮৫৭ প্রবিধান অনুযায়ী অন্যান্য শাস্তির পরিবর্তে সাব-ইন্সপেক্টর, সার্জেন্ট, সহকারী সাব ইন্সপেক্টর, নায়েক ও কনস্টেবলদের ক্ষেত্রে বিভাগীয় শাস্তি হিসেবে কালো চিহ্ন প্রদান করা হয়। কালো চিহ্ন পদোন্নতি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় বাধা। কালো চিহ্নপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যগণ সাজা প্রাপ্তির তারিখ হতে ০৩ (তিন) বৎসর পর্যন্ত পদোন্নতিসহ চাকরির অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।(পিআরবি’র-৮৫৭ ও ৮৭৪প্রবিধান)
৮। বিশেষ রিপোর্ট মামলা (special report case)
পিআরবি ৫৩ বিধি মোতাবেক থানা এলাকায় কোন চাঞ্চল্যকর অপরাধ সংঘটিত হলে যেমন– ডাকাতি, সিঁদেল চুরি, দস্যুতা, জোড়া খুন, রাজনৈতিক হত্যাকান্ড বা নারী/শিশু ধর্ষণ সংক্রান্ত কোন অপরাধ সংঘটিত হলে এ বিষয়ে থানায় মামলা রুজু করার পর পিআরবি ২৪৬ বিধি মোতাবেক বিষয়টি পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারকে জানাতে হয়। পুলিশ সুপার এধরনের মামলাকে বিশেষ রিপোর্ট মামলা হিসেবে ঘোষণা করেন। পুলিশ সুপার কর্তৃক ঘোষিত মামলা গুলোকে Special Report Case বা বিশেষ রিপোর্ট মামলা বলে। সার্কেল এএসপি থেকে তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার পুলিশ অফিসারগণ এসআর মামলা তদারকি করে থাকেন। (পিআরবি ৫৩, ৫৪, ২৪৬, ১১১৬ বিধি)
৯। অসৎ চরিত্রের লোকদের তালিকা-এ (Bad Character Roll-A)
পিআরবি ৩৪২, ও ৩৪৪ নম্বর প্রবিধানে Bad Character Roll সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বর্ণিত বিধি মোতাবেক নিজ থানা এলাকায় বসবাসকারী পুরাতন চোর-ডাকাত, অভ্যাসগত অপরাধী বা পুলিশের তালিকাভূক্ত অপরাধী যখন বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্য থানা এলাকায় গিয়ে বসবাস করেন তখন থানার অফিসার ইনচার্জ উক্ত অপরাধীর বর্তমান অবস্থা জানার জন্য তার নাম-ঠিকানা, স্বভাব-চরিত্রের বিবরণ উল্লেখপূর্বক সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর যে পত্র প্রেরণ করেন তাকে এ (এ-রোল) বলে। এধরণের অপরাধীকে কার্যবিধি ৫৫ ধারায় গ্রেফতার করে ১১০ ধারা মোতাবেক আদালতে প্রসিকিউশন/প্রতিবেদন দাখিল করা যায়।(পিআরবি ৩৪২, ও ৩৪৪ নম্বর প্রবিধান)
১০। অসৎ চরিত্রের লোকদের তালিকা-বি (বি-রোল) (Bad Character Roll-B)
0 Comments