সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

গর্ভপাত (Abortion) নিয়ে আইনগত আলোচনা

abortion laws; us abortion law; us abortion laws; abortion ban; abortion rights; india abortion law; abortion rights in india; us abortion; right to abortion; us abortion rights; abortion law us; abortion law in usa in bangla; abortion access;texas abortion law; What is the penal code for abortion in Bangladesh?; What is menstrual regulation in Bangladesh?; How many abortions per year in Bangladesh?; What is the MR law in Bangladesh?;


 গর্ভপাত (Abortion) নিয়ে  আইনগত আলোচনা


গর্ভপাত (Abortion)


গর্ভপাত হলো গর্ভে ধারণকৃত বিষয় নির্গত করানোকে গর্ভপাত বলে। গর্ভ সঞ্চারের পর গর্ভফুল (Placenta) গঠনের পূর্বে অর্থাৎ প্রথম ৩ মাসের মধ্যে ভ্রূণ কোষের বহিষ্কার করাকে গর্ভপাত বলে। 


অপরাধমূলক গর্ভপাত (Criminal Abortion) 


গর্ভবতী কোন মহিলার যে কোন পর্যায়ে গর্ভস্থ-ভ্রূণ বেআইনীভাবে বের করে ফেলাকে অপরাধমূলক অকাল গর্ভপাত বলে। যদি গর্ভবতীর জীবন রক্ষা বা আইনানুগ কোন কারণ ছাড়া কোন গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত করানো বা করানোর চেষ্টা করা হয়, তবে তা বে-আইনী এবং দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। অনুরূপ গর্ভপাতের প্রচেষ্টাও দণ্ডনীয়। এমনকি যদি মহিলা গর্ভবর্তী না থাকে তবে কোন কারণে গর্ভপাতের চেষ্টা চালালে তাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।


গর্ভসঞ্চারের পর যে কোন সময় গর্ভধারিণী মায়ের গর্ভস্থ ভ্রূণ বা শিশুকে অবৈধরূপে বহিষ্কার করা হলে তাকে অপরাধমূলক গর্ভপাত বা অকাল প্রসব বলে। গর্ভপাত করানো বা অকাল প্রসব করানো বা তা করার জন্য প্রচেষ্টা করাও আইনত দণ্ডনীয় যদি তা মায়ের জীবন রক্ষার্থে বা আইনানুগ অন্যান্য কারণে সরল বিশ্বাসে করা না হয়। মহিলা সত্যি গর্ভবতী কি-না, তাতে কিছু যায় আসে না বে-আইনী প্রচেষ্টাও দণ্ডনীয়।


অপরাধমূলক গর্ভপাতের উদ্দেশ্য (Motive of criminal abortion)


১. সামাজিক লজ্জার হাত হতে রক্ষা পাবার জন্য সাধারণত নিষিদ্ধ যৌন মিলনের ফলে নিম্নোক্ত নারীদের গর্ভসঞ্চার হলে তা অন্যায়ভাবে গর্ভপাত করে থাকেন—

(i) অবিবাহিত যুবতী নারী; অথবা

(ii) বিধবা; অথবা

(iii) স্বামী থেকে বিচ্ছন্ন কোন বিবাহিত নারী।


২. ভরণ-পোষণে অক্ষম পরিবারের গর্ভবতী মহিলার এভাবে গর্ভপাত ঘটায়ে থাকে।


৩. সম্পত্তির উত্তরাধিকারের অধিক সুবিধা পাবার জন্য গর্ভবতী মহিলাকে নিঃসন্তান করার জন্য এটি করা হয়।


বাংলাদেশে অপরাধমূলক গর্ভপাতের  কারণ

(Causes of criminal abortion in Bangladesh০


১. হিন্দু বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা কিংবা অবিবাহিতা বা কুমারী মেয়ে গর্ভধারণ করলে সামাজিক লজ্জার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্য অপরাধমূলক গর্ভপাত করে থাকে।


২. সম্পত্তির উত্তরাধিকারিত্ব বাগাবার জন্য, বহু স্ত্রী থাকলে কিংবা যৌথ পরিবারে স্বার্থবাদী ব্যক্তি কোন গর্ভবতী মহিলাকে নিঃসন্তান করার জন্য তার গর্ভপাত ঘটাতে পারে।


৩. সবচেয়ে অধিক পরিমাণ যে কারণে গর্ভপাত করা হয় তা সম্ভবত দরিদ্র, অশিক্ষিত বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তি জন্ম নিয়ন্ত্রণের সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ করে না অথচ মনে প্রাণে তারা জন্ম-শাসন কামনা করে। ফলে লোকের অজান্তে বিভিন্ন উপায়ে অপরাধমূলক গর্ভপাত ঘটায়। যদিও পরিবার পরিকল্পনা ও জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান জ্ঞান এবং মানুষের উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে এ ধরনের গর্ভপাতের উপর প্রভাব ফেলবে তবুও দারিদ্র্য ও জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য এ ধরনের গর্ভপাত বেড়ে যাবার আশংকাও যথেষ্ট।


অপরাধমূলক গর্ভপাত সাধারণত গর্ভধারণের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মাসের মধ্যে করা হয়। কিন্তু কোন কোন সময় চতুর্থ বা পঞ্চম মাসে যখন গর্ভধারিণী তার গর্ভাবস্থা সম্বন্ধে নিশ্চিত হয় তখনও সম্পন্ন করা হয়। কদাচিৎ মহিলারা গর্ভবতী না হয়েও বিশ্বাস করেন যে তারা গর্ভধারণ করেছেন এবং গর্ভপাতের চেষ্টা করে তার কুফল ভোগ করেন। অপরাধমূলক গর্ভপাতের পর যেসব মহিলারা সুস্থ হয়ে উঠেন তাদের কদাচিৎ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। কোন গর্ভপাতের ঘটনা তখনই আদালতে তদন্তের জন্য আনা হয়, যখন গর্ভপাতের ফলে মহিলার মৃত্যু হয় অথবা কোন শত্রু গোপনে পুলিশে খবর দেয়। তাই কি পরিমাণ অপরাধমূলক গর্ভপাত হয় তার নির্ভরযোগ্য কোন পরিসংখ্যান পাওয়া স্বভাবতই সম্ভব নয়, যেহেতু মহিলারা গোপনে তাদের মধ্যে কাজটি করে এবং এক ধরনের মহিলা এ অপরাধমূলক কাজকে পেশা হিসাবেই গ্রহণ করে। যাহোক বাংলাদেশে গর্ভপাতকে শর্ত সাপেক্ষে (যেমন-গর্ভবতী নারীর জীবন রক্ষার উদ্দেশ্যে) বৈধতা দেয়া হয়েছে। 


বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী কালীন সময়ে গর্ভপাতের আইনের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা আনা হয়। যেমন, ১৯৭২ সালের আইন অনুসারে যেসব নারী মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তাদের জন্য গর্ভপাত বৈধ করা হয়েছিল। এছাড়া, ১৯৭৯ সালে মাসিক নিয়মিতকরণ বা মেনস্ট্রুয়াল রেগুলেশনের (Menstrual Regulation, এমআর) অধীনে, অর্থাৎ, নারীদের ঋতুস্রাব নিয়মিত করার জন্য গর্ভপাত বৈধ করা হয়।



এই শর্ত ব্যতীত দন্ডবিধি অনুযায়ী নারীর সম্মতি সহকারে কিংবা সম্মতি নিয়ে যে কোন প্রকারেই হোক না কেন সকল প্রকার গর্ভপাত অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।


গর্ভপাতের চিকিৎসা-আইন সংক্রন্ত গুরুত্ব 

(Medico-Legal Importance of abortion)


গর্ভপাত, অকাল-প্রসব এবং অপরিণত প্রসবের আইনগত দিক বিভিন্ন দেশে কিছুটা বিভিন্ন রকম। তবে অপরাধীদের দণ্ডদানের পূর্বে আদালত নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় আনেন—


১. প্রকৃত গর্ভপাতের ঘটনায় মহিলাটি গর্ভবর্তী ছিল কি না তা প্রমাণ করা দরকার। কিন্তু গর্ভপাতের চেষ্টার ঘটনায় উহা প্রমাণের প্রয়োজন নেই;


২. মহিলার গর্ভে শিশুটি নড়াচড়া(Quick with the child) ছিল কি-না। গর্ভ যত পরিণতাবস্থা প্রাপ্ত হবে গর্ভপাত ততই বেশি অপরাধমূলক হবে;


৩.গর্ভপাত করা বা গর্ভপাতের চেষ্টা মহিলাটির সম্মতিক্রমে বা অসম্মতিতে হয়েছে কি-না। অসম্মতিতে হলে দণ্ডের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে;


৪.গর্ভপাত বা গর্ভপাতের চেষ্টার দরুন মহিলা মারা গেছে কি-না;


৫.গর্ভজাত শিশুর মৃত্যু হলে-জন্মের পূর্বে কোন কিছু করার ফলে মারা গিয়েছে কি-না। ইত্যাদি


ইংল্যাণ্ডের আইন অনুযায়ী গর্ভধারণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কোন রকম বিঘ্ন সৃষ্টি করা তা যদি সরল বিশ্বাসে, মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য করা না হয় তাহলেই তা অপরাধ। গর্ভপাত হল কি হল না অথবা মহিলা সত্যি গর্ভবর্তী ছিল কি-না তাতে কিছু যায় আসে না। গর্ভপাত করার যে ইচ্ছা বা চেষ্টা তাই অপরাধ গঠনে যথেষ্ট। বাংলাদেশ-ভারতের দণ্ডবিধির ৩১২, ৩১৩, ৩১৪, ৩১৫ এবং ৩১৬ নম্বর ধারা অপরাধমূলক গর্ভপাত এবং তার সাজা সম্পর্কিত বিষয়াদির নির্দেশনা দিয়েছে।


বাংলাদেশে স্বেচ্ছাকৃত গর্ভপাতের (অকাল প্রসব বা অপরিণত প্রসব সহ) ঘটনা যদি সরল বিশ্বাসে মায়ের জীবন রক্ষার্থে বা স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য করা না হয়, তাহলে দণ্ডবিধির ৩১২ নম্বর ধারা অনুযায়ী গর্ভবর্তী মহিলা এবং গর্ভপাত ঘটায় যে ব্যক্তি উভয়েই দণ্ড পাবার মত অপরাধী হবেন।


যদি গর্ভপাত সংশ্লিষ্ট মহিলার সম্মতিক্রমে হয়ে থাকে এ ক্ষেত্রে সাজা অনধিক তিন বছর কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয়ই। এখানে দণ্ডবিধির ৩১২ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য হতে হলে মহিলাকে গর্ভবর্তী হতে হবে এবং গর্ভপাত তার সম্মতিক্রমে হতে হবে এবং গর্ভপাতের চেষ্টা নয়-প্রকৃতই গর্ভপাত হতে হবে এবং বে-আইনী হতে হবে। যদি মহিলার পেটের বাচ্চা নড়াচড়া করার মত পরিণতাবস্থার হয় (Quick with child) তাহলে দণ্ডের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে সাজা অনধিক সাত বছর কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে।


যদি গর্ভপাতের জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তাতে বা কোন কারণে গর্ভপাত না হয় তাহলে ব্যাপারটি গর্ভপাতের চেষ্টা হিসাবে দণ্ডবিধির ৫১১ নম্বর ধারা অনুযায়ী বিচার্য হবে। দণ্ডবিধির ৩১৩ ধারা অনুযায়ী অপরাধী আরও গুরুদণ্ড পাবে যদি গর্ভপাত বা অকাল প্রসব সংশ্লিষ্ট মহিলার সম্মতি ছাড়া করা হয়। কিন্তু মহিলার দণ্ড হবে না।


যদি কোন গর্ভবতী মহিলা গর্ভপাত বা অকাল প্রসবের কারণে মারা যায় তাহলে অপরাধীকে দণ্ডবিধির ৩১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী সাজা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সাজা দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে যদি মহিলার সম্মতিক্রমে কাজটি করা হয়। আর সম্মতি ব্যতিরেকে করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে যদিও উভয় ক্ষেত্রেই অপরাধী জানত না অথবা তার সেরকম কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না যে তার কৃতকার্যের ফলে মহিলার মৃত্যু হতে পারে।


বাংলাদেশে গর্ভপাত বা অকাল প্রসব করানোর চেষ্টাও অপরাধ (৫১১ নং ধারা) কিন্তু গর্ভপাতের জন্য দণ্ড দিতে হলে যেমন মহিলার গর্ভবতী অবস্থা প্রমাণ করার প্রয়োজন, গর্ভপাতের চেষ্টার অপরাধে তা প্রমাণের প্রয়োজন নেই।


কোন ব্যক্তি বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী অপরাধী ও শাস্তিযোগ্য হবেন যদি তিনি কোন শিশু যাতে জীবিত জন্মগ্রহণ না করে সে উদ্দেশ্যে অথবা শিশুটির জন্মের পর যাতে মৃত্যু হয় সে উদ্দেশ্যে এমন কাজ করেন, যার ফলে শিশুটি জন্মের পূর্বে বা পরে মারা যায়। এহেন কাজ সরল বিশ্বাসে মায়ের জীবন রক্ষার্থে করা না হলে অপরাধী অনধিক দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা জরিমানা কিংবা উভয়বিধ দণ্ড পেতে পারেন।


দণ্ডবিধির ৩১৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি যদি মাতৃগর্ভের শিশু নড়াচড়া করার মত পরিণতাবস্থার পর কিন্তু স্বাভাবিক জন্মগ্রহণের পূর্বে তার কোন কাজের দ্বারা গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু ঘটান তাহলে তিনি অপরাধমূলক নরহত্যার (Culpable Homicide) অপরাধে অপরাধী হবেন এবং অনধিক দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা ভোগ করবেন।


তবে কোন গর্ভস্থ শিশু মৃত-এ ধারণার বশবর্তী হয়ে কোন অপারেশন করলে চিকিৎসক অন্যায় করবেন না। তবে কোন চিকিৎসক বা ধাত্রী কোন অবৈধ গর্ভপাত অর্থের লোভে কিংবা সহানুভূতিশীল হয়ে করবেন না।


বাংলাদেশের আইনে গর্ভপাত ঘটানোর শাস্তি (Punishments for abortion by law in Bangladesh )


বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে যৌক্তিক কারণ ব্যতীত গর্ভপাত ঘটালে সেসকল শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তা নিচে আলোচনা করা হলো—


১. ভ্রূণ অবস্থায় গর্ভপাত(Causing miscarriage)

যদি কোনো নারীর জীবন রক্ষার উদ্দেশ্য ছাড়া, অন্য কোন খারাপ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় উক্ত নারীর গর্ভপাত ঘটায় তবে তিনি অপরাধী সাব্যস্ত হবেন এবং এই অপরাধের জন্য শাস্তি সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।[দণ্ডবিধির ধারা–৩১২]


ব্যাখ্যাঃ ভ্রূণ হত্যা খুনের শামিল ৷ গর্ভধারিণীর সম্মতি নিয়ে অথবা তার বিনা সম্মতিতে যে ভাবেই করা হোক না কেন, জীবন রক্ষার উদ্দেশ্য ছাড়া যে নারী নিজের থেকে অকাল গর্ভপাত করে সে অপরাধী বলে বিবেচিত হবে।


গর্ভস্থ শিশু সচল হয়ে ওঠার পর গর্ভপাত 

গর্ভস্থ শিশু সচল হয়ে ওঠার পর গর্ভপাত ঘটালে দণ্ডবিধির ৩১২ ধারা অনুযায়ী উক্ত গর্ভপাতকারীর শাস্তি সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।[দণ্ডবিধির ধারা–৩১২]


ব্যাখ্যাঃ গর্ভস্থ শিশু সচল হয়ে ওঠার পর গর্ভপাত ঘটালে যে ব্যক্তি উহা করবেন তিনি অপরাধী বলে বিবেচিত হবেন ৷ নিজেই নিজের গর্ভপাত ঘটালে গর্ভধারিণী নারীও এই ধারার আওতায় আসবেন।


আলোচনা 

গর্ভপাত সংঘটনের দণ্ডবিধিতে দণ্ডনীয় অপরাধ, এমনকি সংশ্লিষ্ট লোকটির সম্মতি নিয়ে করলে তবে স্ত্রীলোকের সম্মতিতে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত লঘুদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে।


এ ধারায় বলা হয়েছে-"যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে গর্ভবতী স্ত্রীলোকের গর্ভপাত ঘটায় এবং যদি সে গর্ভপাত সরলবিশ্বাসে ঐ স্ত্রীলোকের জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে না করা হয়ে থাকে, তাহলে সে ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে কিংবা জরিমানায় কিংবা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং যদি স্ত্রীলোকের আসন্ন প্রসব হয় তবে সে ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তাকে জরিমানা দণ্ডে ও দণ্ডিত করা যাবে।


ব্যাখ্যা: যে স্ত্রীলোক নিজেই নিজের অকাল গর্ভপাত ঘটায়, সে স্ত্রীলোকের এ ধারায় অর্থের আওতাভুক্ত হবে।


গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে কেউ যদি সংশ্লিষ্ট মহিলাটির মৃত্যু ঘটায়, তবে ৩১৪ ধারা অনুসারে তার শান্তি-দশ বছর পর্যন্ত যে-কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে এবং তাকে জরিমানাও করা যাবে।



আলোচ্য ধারাটি দণ্ডবিধির ৫২ এবং ৩৯ ধারার সাথে পঠিতব্য। গর্ভ সঞ্চার না হতে পারে এইরূপ কোন প্রতিষেধক বা প্রতিরোধক ব্যবহার করা অপরাধ নয়।


যা প্রমাণ করতে হবে:


(১) কোন নারী গর্ভবতী ছিল;


(২) আসামী তার কোন কাজের দ্বারা গর্ভপাত করেছিল;


(৩) আসামী স্বেচ্ছাকৃতভাবে তা করেছিল;


(৪) গর্ভবতী নারীর জীবন রক্ষার্থে সরল বিশ্বাসে গর্ভপাত করা হয়নি;


(৫) উক্ত নারীর গর্ভপাতের সময় গর্ভস্থ ভ্রূণে বিচরণ অনুভব করতে পারত। 




দণ্ডবিধির ৩১২ ধারার অপরাধ আমলযোগ্য নয়। ওয়ারেন্টযোগ্য ও জামিনযোগ্য কিন্তু আপোষযোগ্য নয়। এই ধারাটির ১ম দফায় বর্ণিত অপরাধ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য। ধারাটির ২য় দফায় বর্ণিত অপরাধ দায়রা আদালত, বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা ১ম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য।



২. নারীর সম্মতি ব্যতিরেকে গর্ভপাত(Causing miscarriage without women's consent) 


যে ব্যক্তি নারীর সম্মতি ব্যতিরেকে, উক্ত নারী শিশুর বিচলন অনুভব করুক বা না করুক, পূর্ববর্তী শেষ ধারায় বর্ণিত অপরাধ অনুষ্ঠান করে, সে ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা যে কোন বর্ণনার কারাদণ্ডে, যার মেয়াদ দশ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে, দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি জরিমানা দণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে।[দণ্ডবিধির ধারা–৩১৩]


আলোচনা 

এ ধারা অনুসারে, "যদি কোন ব্যক্তি পূর্ববর্তী ধারায় বর্ণিত অপরাধটি সংশ্লিষ্ট স্ত্রীলোকের সম্মতি ছাড়া সংঘটন করে স্ত্রীলোকের আসন্ন প্রসব হোক বা না হোক তবে সে ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে যার মেয়াদ ত্রিশ বছর কিংবা দশ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তাকে জরিমানাও করা যাবে।


স্ত্রীলোকের সম্মতি ছাড়া গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে যদি তার মৃত্যু ঘটে তবে সেক্ষেত্রে ৩১৪ ধারা অনুসারে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর (বর্তমানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড) বা দশ বছর পর্যন্ত যে-কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং জরিমানা দণ্ডে দণ্ডিত হবে।


ব্যাখ্যা: এ অপরাধের জন্য, কাজটি মৃত্যু ঘটাতে পারে, জ্ঞান থাকা আবশ্যিক নয়।


দণ্ডবিধির ৩১৩ ধারাটি দণ্ডবিধির ৯০ এবং ৩১২ ধারার সাথে পঠিতব্য।



যা প্রমাণ করতে হবে:


(১) কোন নারী গর্ভবতী ছিল;

(২) আসামী তার কাজের মাধ্যমে উক্ত গর্ভবতীর গর্ভপাত করেছিল;

(৩) আসামী উক্ত কাজ স্বেচ্ছা্য করেছিল;

(৪) আসামী গর্ভবতী নারীর বিনা অনুমতিতে গর্ভপাত করেছিল;

(৫) গর্ভবতী নারীর জীবন রক্ষার্থে সরল বিশ্বাসে ঐরূপ গর্ভপাত করা হয়নি।


এই ধারার অপরাধ আমলযোগ্য নয়। ওয়ারেন্টযোগ্য। জামিনযোগ্য ও আপোষযোগ্য নয়। এধরনের অপরাধ দায়রা আদালতে বিচার্য। 


৩. গর্ভপাত করার উদ্দেশ্যে সম্পাদিত কার্যের ফলে নারীর মৃত্যু ঘটলে(Death caused by act done with intent to cause miscarriage)


দন্ডবিধির ৩১৪ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, যে ব্যক্তি কোনো গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত ঘটানোর উদ্দেশ্যে এমন কোনো কাজ করে, যাতে সে নারীর মৃত্যু ঘটে তবে উক্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদন্ড এবং একই সঙ্গে অর্থদেন্ড দন্ডিত হবেন। নারীর সম্মতি ছাড়াই উপরোক্ত গর্ভপাতের চেষ্টার ফলে যদি নারীর মৃত্যু ঘটে তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে অথবা উপরোক্ত দন্ডে দন্ডিত হবেন।[দণ্ডবিধির ধারা–৩১৪]


আলোচনা 

গর্ভপাত করাতে গিয়ে গর্ভধারিণীর মৃত্যু ঘটলে এই ধারার অপরাধ অনুষ্ঠিত হয়ে যায়। যে কাজ তিনি করেছেন তার দ্বারা যে মৃত্যু ঘটতে পারে, এই সম্বন্ধে জ্ঞান না থাকলেও চলে। গর্ভপাত করার উদ্দেশ্য নিয়ে যে কাজ করা হয়, সেই কাজের ফলে যদি গর্ভধারিণী মারা যায় তবে যিনি গর্ভপাত করার উদ্দেশ্যে কোন কাজ করেছিলেন তিনি শাস্তি পাবেন। তিনি এই বলে রেহাই পাবেন না যে—

১) তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত্যু ঘটান নাই বা

২) তিনি যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেন। তবুও গর্ভধারিণীকে রক্ষা করতে পারেন নাই বা

৩) তিনি তার কার্যের পরিমান সম্পর্কে পূর্ণ অবগত ছিলেন না।



যা প্রমাণ করতে হবে:


(১) কোন নারী গর্ভবতী ছিল;

(২) আসামী তার গর্ভপাত করানোর জন্য কোন কাজ করেছিল;

(৩) আসামী উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঐরূপ কাজ করেছিল;

(৪) উক্ত কাজের ফলে গর্ভবতীর মৃত্যু হয়েছিল;


৩১৪ ধারার শেষাংশের জন্য:


(৫) গর্ভবতী নারীর  বিনা অনুমতিতে উক্ত কাজ করেছিল।


এই ধারার অপরাধ আমলযোগ্য নয়। ওয়ারেন্টযোগ্য। জামিনযোগ্য  ও আপোষযোগ্য নয়। ধারাটির ১ম দফায় বর্ণিত অপরাধ দায়রা আদালত, বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত মুখ্য মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য এবং ধারাটির ২য় অংশে বর্ণিত অপরাধ দায়রা আদালতে বিচার্য।



৪.শিশুর জীবন্ত ভূমিষ্ঠ হওয়ায় বাধাদান করবার বা জন্মের পর তার মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যে কৃত কার্য (Act done with intent to prevent child being born alive or to cause it to die after birth)


যে ব্যক্তি কোন শিশুর জন্মের পূর্বে উক্ত শিশুর জীবন্ত ভূমিষ্ঠ হবার বাধাদান করার বা জন্মের পর তার মৃত্যু ঘটাবার অভিপ্রায়ে কোন কাজ করে এবং অনুরূপ কাজের সাহায্যে উক্ত শিশুর জীবন্ত ভূমিষ্ঠ হবার বাধাদান করে বা তার জন্মের পর তার মৃত্যু ঘটায়, সে ব্যক্তি, অনুরূপ কাজ সদ্বিশ্বাসে মায়ের জীবন রক্ষার উদ্দেশ্যে করা না হলে যে কোন বর্ণনার কারাদণ্ডে, যার মেয়াদ দশ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে, বা জরিমানা দণ্ডে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।[দণ্ডবিধির ধারা–৩১৫]


আলোচনা

এমন কোন কাজ করা যার ফলে একটি শিশু জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হতে না পারে বা জন্মের সাথে সাথে তার মৃত্যু ঘটে এবং ঐ কাজ যদি মায়ের জীবন রক্ষার্থে সরলবিশ্বাসে করা না হয়ে থাকে, তাহলে শান্তি যেকোন মেয়াদের ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে বা জরিমানা বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।


যা প্রমাণ করতে হবে:


(১) কোন নারী গর্ভবতী ছিল;


(২) আসামী গর্ভস্থ শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বে কোন কাজ করেছিল;


(৩) গর্ভস্থ শিশুকে জীবন্ত ভূমিষ্ট হতে বাধা দেওয়ার  অভিপ্রায়ে বা ভূমিষ্ট হওয়ার পরে যাতে মারা যায় এই অভিপ্রায়ে উক্ত কাজ করেছিল;


(৪) আসামীর কাজের ফলে শিশুটি মৃত জন্মেছিল বা জন্মের পরেই মার গিয়াছিল;


(৫)গর্ভবতী নারীর জীবন রক্ষার্থে সরল বিশ্বাসে এইরূপ কাজ করা হয়নি।


এই ধারার অপরাধ আমলযোগ্য নয়। ওয়ারেন্টযোগ্য ও জামিনযোগ্য কিন্তু আপোষযোগ্য নয়। দায়রা আদালত কর্তৃক এবং বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত মুখ্য মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য।



৫. অপরাধজনক নরহত্যা বলে গণ্য কার্যের সাহায্যে জীবন্ত অজাত শিশুর মৃত্যু সংঘটন 

(Causing death of quick unborn child by act amounting to culpable homicide)


যে ব্যক্তি এরূপ অবস্থায় এমন কোন কাজ করে যে, যদি তদ্দ্বারা সে মৃত্যু ঘটাতে তা হলে অপরাধজনক নরহত্যার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হতো এবং অনুরূপ কাজের সাহায্যে একটি জীবন্ত অজাত শিশুর মৃত্যু ঘটায় সে ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার কারাদণ্ডে, যার মেয়াদ ১০ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে, দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি জরিমানা দণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।[দণ্ডবিধির ধারা–৩১৬]


উদাহরণ


A একটি গর্ভবতী নারীর মৃত্যু ঘটাতে পারে এই সম্ভাবনা রয়েছে জেনেও এমন একটি কাজ করে, যা উক্ত নারীর মৃত্যু ঘটলে অপরাধজনক নরহত্যা বলে গণ্য হত। নারীটি জখম হয় কিন্তু মরে না, কিন্তু তদ্দ্বারা উক্ত নারীর গর্ভস্থ একটি জীবন্ত অজাত শিশুর মৃত্যু ঘটে। এ অত্র ধারায় বর্ণিত অপরাধে দোষী সাবস্ত হবেন।


আলোচনা 

অপরাধজনক নরহত্যা সমতুল্য কাজ দ্বারা অজাত শিশুকে জন্মের প্রাক্কালে হত্যা করা। শাস্তি- যেকোন মেয়াদের ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা জরিমানা।


যা প্রমাণ করতে হবে:


(১) কোন নারী গর্ভবতী ছিল;


(২) আসামী গর্ভস্থ জীবন্ত শিশুর মৃত্যু ঘটানোর জন্য কোন কাজ করেছিল;


(৩) যে অবস্থায় আসামী কাজ করেছিল তা দণ্ডনীয় নরহত্যা বলে গণ্য হতো , যদি মৃত্যু সংঘটিত হতো।


(৪) আসামীর কাজের দ্বারা অজাত শিশু মারা গিয়েছিল।


এই ধারার অপরাধ আমলযোগ্য নয়। ওয়ারেন্টযোগ্য। জামিনযোগ্য  ও আপোষযোগ্য নয়। দায়রা আদালত এবং বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত মুখ্য মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা ১ম শ্রেণীর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য।


৬. পিতা বা মাতা অথবা তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃক ১২ বৎসরের নিম্ন বয়স্ক শিশু পরিত্যাগ ও বর্জন (Exposure and abandonment of child under twelve years by parent or person having care of it)


যে ব্যক্তি বার বৎসরের নিম্ন বয়স্ক কোন শিশুর পিতা বা মাতা হয়ে অথবা অনুরূপ শিশুর তত্ত্বাবধায়ক হয়ে অনুরূপ শিশুকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করার উদ্দেশ্যে তাকে কোন স্থান পরিত্যাগ করে বা ফেলে যায়, সে যেকোন বর্ণনার কারাদণ্ডে, যার মেয়াদ সাত বৎসর পর্যন্ত হতে পারে বা জরিমানা দণ্ডে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।[দণ্ডবিধির ধারা–৩১৭]


ব্যাখ্যা: অত্র ধারা, উক্ত পরিত্যাগের ফলে শিশুটির মৃত্যু ঘটলে খুন বা অপরাধজনক নরহত্যার জন্য অপরাধকারীর বিচারের ব্যপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য অভিপ্রেত বলে গণ্য হবে না।


আলোচনা 


দণ্ডবিধির ৩১৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, ১২ বছরের কমবয়সী কোন শিশুকে বাবা, মা বা দায়িত্বে নিযুক্ত অভিভাবক কর্তৃক কোন জায়গায় অনাবৃত রাখা বা ফেলে গেলে। শান্তি ০৭ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আবার, অনাবৃত ও পরিত্যক্ত অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু ঘটলে, অপরাধী অপরাধজনক নরহত্যা বা খুনের দায়ে দায়ী হতে পারেন। 



যা প্রমাণ করতে হবে:


(১) আসামী কোন শিশুর পিতা, মাতা বা তত্ত্বাবধায়ক ছিল।


(২) ঐ শিশুটির বয়স ১২ বৎসরের কম ছিল।


(৩) আসামী শিশুটিকে কোন স্থানে ফেলে গিয়াছে বা পরিত্যাগ করেছে। 


(৪) এইরূপ পরিত্যাগের দ্বারা শিশুটিকে সম্পূর্ণভাবে বর্জন করেছে।


(৫) শিশুটির পক্ষে কোন অবস্থায় বর্জনকারীর কাছে ফিরে আসা সম্ভব ছিল না।


এই ধারার অপরাধ আমলযোগ্য। ওয়ারেন্টযোগ্য ও জামিনযোগ্য কিন্তু আপোষযোগ্য নয়। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য।



৭. মৃত্যুদেহের গোপন ব্যবস্থার সাহায্যে জন্ম গোপনকরণ (Concealment of birth by secret disposal of dead body)


যে ব্যক্তি কোন শিশুর মৃতদেহ, যে শিশুটি জন্মের পূর্বে বা পরে বা জন্মকালে যখনই মারা যাক না কেন, গোপনভাবে কবর দিয়ে বা প্রকারান্তরে তার ব্যবস্থাপনা করে ইচছাকৃতভাবে উক্ত শিশুর জন্ম গোপন করে বা গোপন করার চেষ্টা করে, সে ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার কারাদণ্ডে, যার মেয়াদ ০২ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে, বা জরিমানা দণ্ডে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।[দণ্ডবিধির ধারা–৩১৮]



আলোচনা

দণ্ডবিধির ৩১৮ ধারায় নবজাতকের জন্ম তথ্য গোপন করে  নবজাতককে লোকচক্ষুর আড়ালে গোপন করে দেওয়া অর্থাৎ কবরস্থ করা বা অন্য কোনভাবে লুকিয়ে ফেলার অপরাধে ০২ বৎসরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।


অবিবাহিত যুবক-যুবতীদের অবৈধ দৈহিক মিলনের ফলে জন্মপ্রাপ্ত শিশুকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর জীবন্ত বা মৃতাবস্থায় কবরস্থ করে কুৎসা এবং অপমানের হাত হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য জন্ম তথ্য গোপন করে দিতে দেখা যায়। এইরূপ কার্যকে ৩১৮ ধারায় দণ্ডনীয় বলে গণ্য করা হয়েছে। জনসাধারণের অগোচরে জাতকের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার উদ্দেশ্যে লুকিয়ে রাখা অপরাধ বটে। উল্লেখ্য, নবজাতককে ইহধাম হতে গোপন না করে থাকলে ৩১৮ ধারানুযায়ী অপরাধ হবেনা [AIR 1935 (cal)489]


দণ্ডবিধির ৩১৮ ধারার উপাদানসমূহ


(ক) ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্বেও শিশুর মৃত্যু হতে পারে আবার ভূমিষ্ট হওয়ার পরেও তার মৃত্যু হতে পারে। মাতৃগর্ভে পূর্ণ আকৃতি গ্রহণ করার পূর্বে তাকে শিশু বলা যায় না। সে অবস্থায় তাকে ভ্রূণ বলাই সঙ্গত;


(খ) মৃত শিশুকে গোপনভাবে কবর দিতে হবে বা সৎকার করতে হবে;


(গ) শিশুর জন্ম লুকানোর অভিপ্রায়ে কবর দেওয়া হবে বা সৎকার করা হবে। যে বিধবা নারীর পাপজ শিশু ভূমিষ্ট হয়েছে এবং জন্মের কথা সারা এলাকায় সকলে জেনেছে, সেই শিশুর মৃত্যু হলে তাকে সৎকার করা অপরাধ নয়। কারণ এই ক্ষেত্রে গোপন করার আর কিছু অবশিষ্ট নেই (AIR 1952 (SC) 124]


যা প্রমাণ করতে হবে:


১। একটি শিশুর জন্ম হয়েছিল;


২। যা ভূমিষ্ট হয়েছিল তা একটি শিশু, ভ্রূণ নয়;


৩। ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্বে বা পরে শিশু মারা গিয়াছিল;


৪। আসামী ঐ শিশুকে কবর দিয়াছিল বা তার মৃতদেহের অন্য প্রকার সৎকার করেছিল;


৫। উক্তরূপ কবর দেওয়ার বা সৎকার করার কাজ গোপন করা হয়েছিল;


৬। শিশুর জন্ম লুকিয়ে  রাখার অভিপ্রায়ে আসামী ঐ কাজ করেছিল।


দণ্ডবিধির ৩১৮ ধারার অপরাধ আমলযোগ্য। ওয়ারেন্টযোগ্য ও জামিনযোগ্য কিন্তু আপোষযোগ্য নয়। যেকোন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য।



গর্ভপাত বা শিশু জন্ম সম্পর্কিত অপরাধসমূহ

(Miscarriage and offences relating to birth of children)


গর্ভপাত বা শিশু জন্ম সম্পর্কিত অপরাধসমূহ এবং শান্তি

অপরাধসমূহ

দন্ডবিধি অনুসারে শাস্তি

গর্ভপাত করা(দণ্ডবিধির ধারা-৩১২) 


৩ বৎসর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভয় প্রকার শাস্তি

যদি স্ত্রীলোকটির সন্তান প্রসব আসন্ন হয়(দণ্ডবিধির ধারা-৩১২)

৭ বৎসর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড ও জরিমানা

স্ত্রীলোকটির সম্মতি ছাড়া গর্ভপাত করা(দণ্ডবিধির ধারা-৩১৩)


যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা ১০ বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড ও জরিমানা

গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে মৃত্যু ঘটানো(দণ্ডবিধির ধারা-৩১৪)


১০ বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড ও জরিমানা

কার্যটি যদি স্ত্রীলোকটির সম্মতি ছাড়া করা হয়(দণ্ডবিধির ধারা-৩১৪)

যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা উপরোক্ত দন্ড

শিশু যাতে জীবন্ত জন্মিতে না পারে বা তা যাতে জন্মের পরপরই মারা যায় সেই উদ্দেশ্যে কোন কাজ করা (দণ্ডবিধির ধারা-৩১৫)


১০ বৎসর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড ও জরিমানা বা উভয় প্রকারের শাস্তি 

সদ্য ভূমিষ্ট নবজাতকের মৃত্যু ঘটানোর কাজ, যা অপরাধজনক নরহত্যা বলে গণ্য হয়(দণ্ডবিধির ধারা-৩১৬)


১০ বৎসর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড ও জরিমানা

সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করার উদ্দেশ্যে মাতা- পিতা বা অভিভাবক কর্তৃক ১২ বছরের কম বয়স্ক শিশুকে নিরাশ্রয়ে রাখা(দণ্ডবিধির ধারা-৩১৭)


১০ বৎসর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড ও জরিমানা বা উভয় প্রকারের শাস্তি


গোপনে লাশ সরিয়ে জন্ম গোপন করা(দণ্ডবিধির ধারা-৩১৮)

২ বৎসর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভয়দন্ড

উৎস
১. চিকিৎসা আইন বিজ্ঞান: ড. মোঃ আনসার আলী খান
২. মেডিক্যাল জুরিসপ্রুডেন্স:আশরাফুল আলম এবং ডাঃ মোঃ ওয়াসীম
৩.দন্ডবিধি:বাসুদেব গাঙ্গুলী 
৪.দন্ডবিধি-১৮৬০ঃ এন. এ. এম. জসীমউদ্দীন
৫. দন্ডবিধি ১৮৬০: আসিফ আহমেদ


Post a Comment

0 Comments