মুসলিম আইনের বৈধ দান বা হিবার শর্তাবলী কী কী? কখন দান বা হিবা প্রত্যাহার করা যায়? হেবা বিল এওয়াজ ও হিবা-বিল সারতিল এওয়াজ মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করুন।
মুসলিম আইনে হেবা বা হিবা কি?(What is Hiba under Muslim Law?)
মুসলিম আইনে হেবা(Hiba) হলো আইন স্বীকৃত দান যার মাধ্যমে সাধারণত সম্পত্তির মালিক কর্তৃক তাঁর ওয়ারিশ কিংবা অপর ব্যক্তিকে কোন বিনিময় মূল্য ছাড়াই অনতিবিলম্বে সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে, কোনো মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে কোনো বিনিময় ব্যতিরেকে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করলে তাকে হেবা বলে।
ভারতীয় মুসলিম আইনজ্ঞ সৈয়দ আমির আলী তাঁর Mohammedan Law এর ৪০ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন যে, “A hiba is a voluntary gift without consideration of property or the substance of things by one person to another so as to constitute the done the proprietor of the subject-matter of the gift.” Muslim law allows a Muslim to give away his entire property by a gift inter-vivos, even with the specific object of disinheriting his heirs. [Abdul vs. Ahmed, (1881) 8 IA 25]
তবে মনে রাখা উচিত যে,অজাত ব্যক্তিকে হেবা করা যায় না। এ প্রসংগে Abdul Cadur v Tumer (1884) 9 Bom. 158; (1909) 36 Cal 431; 2 I.C. 291, 68 Mad L.W. 219; (1955) 1 M.L. J. 449. ('55) A. Mad. 621 মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে, ‘ভূমিষ্ট হয় নাই এমন ব্যক্তিকে প্রদত্ত হেবা অবৈধ।’ হেবা সম্পন্ন করার জন্য হেবার প্রস্তাব, গ্রহীতার সম্মতি এবং দখল হস্তান্তর এ তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি হেবা করা যায়। একজন সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তাঁর সমুদয় সম্পত্তি বা সম্পত্তির যেকোনো অংশ যে কাউকে হেবা করতে পারেন।এ বিষয়ে PLD 1975 Kar. 979, PLD 1966 W.P. Pesh 121 মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে, ‘সুস্থ মস্তিষ্কের এবং নাবালক নয় এমন এক মুসলমানই হেবার মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন।’
মুসলিম আইনের বৈধ দান বা হিবার শর্তাবলী
(Essential conditions of Hiba)
হেবা বৈধ হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। নিচে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো—-
১. ঘোষণা(Declaration by the donor)
দাতা কর্তৃক অথবা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা করেও দানের কথা ঘোষণা করতে হয় [The donor must make a gift’s declaration/offer (izab)]। তবে স্থাবর অথবা অস্থাবর সম্পত্তির হেবার বৈধতার জন্য হেবাটি লিখিতভাবে হওয়ার প্রয়োজন নেই [Kamar-un-nissa Bibi v. Hussaini Bibi (1880)]।
হেবা ঘোষণায়(izab) দুটি উপাদান– স্বেচ্ছা সম্মতি(free consent) এবং ভালো উদ্দেশ্য (bonafide intention) থাকতে হবে। কারণ হেবা ঘোষণার উদ্দেশ্য ভালো হতে হবে, তা না হলে তা অকার্যকর হবে। Hussaina Bai v. Zohra Bai( AIR 1960 Mad 447) মামলার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল , যেখানে আদালত হেবা বাতিল বলে ঘোষণা করেছিল কারণ হেবা ঘোষণাটি জবরদস্তির মাধ্যমে করা হয়েছিল বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
২. গ্রহণ(Acceptance by the donee)
দাতা দখল হস্তান্তর করবেন এবং দানগ্রহীতা বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কর্তৃক সুস্পষ্টভাবে সেই দান গ্রহণ করবেন। [The donee must receive the gift’s acceptance(qabul)]। যার বরাবরে কোন সম্পত্তি দান করা হচ্ছে সে নিজে কিংবা তার পক্ষে অন্য কাউকে তা গ্রহণ করতে হবে। ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২২ ধারা অনুযায়ী, দান গ্রহীতাকে দাতার জীবদ্দশায় এবং দান করতে সক্ষম অবস্থায় দান গ্রহন করতে হবে। দান গ্রহণের আগেই দান গ্রহীতা মৃত্যুবরণ করলে উক্ত দান বাতিল হয়ে যায়।
৩.দখল প্রদান(Delivery of possession)
দাতা কর্তৃক দান গ্রহীতাকে দানের বিষয়বস্তুর(সম্পত্তি) দখল দিতে হয় [The donee must get possession of the gift from the donor]। দাতা কর্তৃক দানের বিষয়স্তুর দখল দানগ্রহীতাকে বুঝিয়ে না দিলে দান বৈধ হয়না। দানের দলিল কেবল নিবন্ধনকৃত হলেই তা দখল অপর্ণের সমকক্ষ হয় না। কাজেই দানের জন্য দাতার কাছ থেকে কেবল সম্পত্তির স্বত্ব দান গ্রহীতার বরাবরে অর্পিত হলেই যথেষ্ট হবেনা। দানের বিষয়বস্তু যদি ইতিমধ্যে দান গ্রহীতার দখলে থাকে, তাহলে দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণা এবং গ্রহীতা কর্তৃক তা গৃহীত হলেই দান সম্পন্ন হবে। যে ক্ষেত্রে দানের বিষয়বস্তুর দখল প্রদান করা সম্ভব নয়, সেক্ষত্রে গ্রহীতা যাতে গ্রহীতা যাতে দখল পাওয়ার অধিকারী হতে পারে সেজন্য দান সম্পন্ন করার অভিপ্রায়ে দাতার পক্ষে সম্ভবপর সব কাজ করাই দানের বৈধতার জন্য যথেষ্ট হবে।
তিনটি শর্ত পূরণ হলে দান বৈধ হবে। মুসলিম আইনে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির দান এখন ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের অধীনে নিয়ন্ত্রিত হয়। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর ধারা ১২৩ অনুযায়ী, কোন স্থাবর সম্পত্তি দানকল্পে অবশ্যই রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর কার্যকরী করতে হবে এবং উক্ত দলিলে দানকর্তা কর্তৃক বা তার পক্ষ হতে স্বাক্ষর করতে হবে এবং অন্ততঃপক্ষে দুজন সাক্ষী কর্তৃক তা সনাক্ত করাতে হবে। কোন অস্থাবর সম্পত্তি দান করতে হলে অনুরূপভাবে স্বাক্ষরিত কোন নিবন্ধিত দলিলের মাধ্যমে বা উক্ত সম্পত্তি অর্পণ করে হস্তান্তর কার্যকরী করতে হবে বিক্রিত জিনিস যেভাবে অর্পণ করা হয়, অনুরূপভাবে উক্ত জিনিস অর্পন করা যাবে। দান বা হেবার ক্ষেত্রে মূলত দুটি শর্ত খুবই জরুরি। তা হলো-দান গ্রহণ এবং দখল অর্পণ।
হেবার প্রকৃতি এবং পরিধি(Nature And Scope Of Hiba)
হেবা দাতার যোগ্যতা
মুসলিম আইন অনুসারে হেবা করার জন্য হেবার দাতার যেসব যোগ্যতা থাকতে হবে সেগুলো নিম্নরূপ—
১। মুসলিম(Mohammedan): যে ব্যক্তি তার সম্পত্তি হেবা করছে অর্থাৎ দাতাকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। (A donor should be a Muslim i.e. Mohammedan.);
২। প্রাপ্ত বয়স্ক(Age of Majority): হেবা দাতাকে অবশ্যই প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে, অর্থাৎ ১৮ বছর বয়স্ক হতে হবে(A donor must be of age of majority.)। তবে, লিগ্যাল বা আইনি অভিভাবকের অভিভাবকত্বের মধ্যে বড় হওয়া নাবালককে ২১ বছর বয়স্ক হতে হবে;
৩। পূর্ণ সম্মতি(Free Consent): হেবাকারীকে অবশ্যই জেনে শুনে পূর্ণ সম্মতিতে হেবা করতে হবে। হেবা দাতার সম্মতি জোর, জবরদস্তি, অযাচিত প্রভাব মুক্ত হতে হবে(A donor must perform Hiba voluntarily and with free content and not under fraud, misrepresentation, under influence, compulsion, force or coercion.);
৪। বিনিময়বিহীন: হেবার ক্ষেত্রে দাতা গ্রহীতার মাঝে কোন প্রকার বিনিময় থাকতে পারবে না।
৫। সুস্থ মস্তিস্ক(Sound mind): যে ব্যক্তি তার সম্পত্তি হেবা করছে অর্থাৎ দাতা, তাকে অবশ্যই সুস্থ মস্তিস্কের হতে হবে। দাতা সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে হেবা সম্পন্ন করে হবে(The donor must be of sound mind and clearly understand the gift transaction.)।
৬। দেউলিয়া হতে পারবে না(non bankruptcy: যে ব্যক্তি তার সম্পত্তি হেবা করছে অর্থাৎ দাতাকে দেউলিয়া হলে চলবে না।
৭। বৈধ মালিকানা(Ownership of Property): যে ব্যক্তি তার সম্পত্তি হেবা করছে অর্থাৎ দাতাকে অবশ্যই উক্ত সম্পত্তির বৈধ মালিকানা অর্জন করতে হবে। ‘গাছে কাঁঠাল গোঁপে তেল’- ভবিষ্যতে আপনি যে সম্পত্তির মালিক হবেন, সেই সম্পত্তি ভবিষ্যতেই আপনাকে হেবা করতে হবে। বর্তমানে যে সম্পত্তির বৈধ মালিকানা আপনার নেই সেটি আপনি হেবা করতে পারবেন না।
হিবা বা দান প্রত্যাহার(Revocation of gift)
দান রদ বা প্রত্যাহার করা যায় কিনা প্রশ্নের জবাব এক কথায় দেয়া দুস্কর। তবে বলা যায়, ক্ষেত্র বিশেষে তা রদযোগ্য। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো- দানের বস্তু দখলার্পণের আগে যে কোন সময় তা রদ করা হয়। কারণ দখল প্রদানের আগে দানটি পূর্ণভাবে কার্যকরী হয় না।
একবার দখল অর্পিত হলে, আদালতের ডিক্রি ছাড়া অন্য কিছুই দানটি রদের জন্য যথেষ্ট হবে না। দাতা কর্তৃক দান প্রত্যাহার বা রদের ঘোষণা কিংবা দান রদের জন্য মোকাদ্দমা করলেই দান রদের জন্য যথেষ্ঠ হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না আদালত ডিক্রি প্রদান করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত দান গ্রহীতা দানের বিষয়বস্তুটি ভোগ এবং হস্তান্তর করতে পারেন।
তবে, নিম্নলিখিত ক্ষেত্র ব্যতীত দানের বিষয়বস্তু দানগ্রহীতার বরাবরে হস্তান্তর করলে তা রদের জন্য আদালতের ডিক্রি প্রয়োজন।
১) স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে দান করলে;
২) যে ক্ষেত্রে যাকে দান করা হয়, সে ব্যক্তি দাতার সাথে নিষিদ্ধ স্তরের ভেতরে সম্পর্কিত হয়;
৩) যখন দাতা বা দান গ্রহীতা মারা যায়;
৪) যখন দানের বস্তুটি দান গ্রহীতা কর্তৃক দান, বিক্রয় বা অন্যভাবে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে;
৫) যখন দানের বস্তুটি দান হারিয়ে যাবে বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে;
৬) যে কোন কারণেই হোক, যখন দানের বিষয়বস্তুর মূল্য বৃদ্ধি পাবে;
৭) দান সম্পত্তির এমন পরিবর্তন হয়েছে, যাতে তা চিহ্নিত করা যায় না। যেমন- সরিষা ভাংগিয়ে তৈল তৈরী করা;
৮) যখন দাতা দানের বিনিময়ে কিছু গ্রহণ করবেন; এবং
৯) যখন দানের মূখ্য উদ্দেশ্য ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক, কারণ এ ক্ষেত্রে দানটি একটি সদকা ছাড়া আর কিছুই নয়।
মুসলিম আইনে দান প্রত্যাহার বা রদ করার অধিকারটি দাতার একটি ব্যক্তিগত অধিকার এবং তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা এই দান বাতিল করতে পারে না। দান রদে গ্রহীতার আইন নয়, দাতার আইন প্রযোজ্য। শুধু আদালতের ডিক্রি দ্বারাই রদ সম্পূর্ণ হয়, দান রদের জন্য কেবল দায়েরই যথেষ্ট নয়। সুতরাং, দান রদের ডিক্রির আগে দাতার মৃত্যু হলে দাতার মৃত্যুর সংঙ্গে দান রদের অধিকার শেষ হয়ে যায় এবং যদি আপিল চলাকালে ও দাতার মৃত্যু হয়, তবে যদি প্রথম বিচারকারী আদালতে দান রদের মোকাদ্দমা খারিজ হয়ে থাকলে, সে ক্ষেত্রেও দাতার মৃত্যুর ঐ অধিকারটি নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু যদি মোকদ্দমাটি দানের দলিল বাতিলের জন্য হয়ে থাকে, তবে বাদীর মৃত্যু হলে ও মোকাদ্দমা বা সেই অধিকার টিকে থাকবে এবং তার স্থলে তার বৈধ প্রতিনিধিদেরকে স্থলাভিষিক্ত করা যাবে।
যখন দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দখল অর্পণ করা হয়েছে, তখন শুধু আদালতের ডিক্রি দ্বারাই দান রদ করা যাবে। ডিক্রি না হওয়া পর্যন্ত গ্রহীতা দানের বিষয়বস্তু ভোগ ও হস্তান্তর করতে পারবে। অবশ্য হেবা যদি প্রতারণামূলে হয়ে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীগণের মামলা করার অধিকার থাকে।
গদা বখশ বনাম জগৎ বাহদুর মামলার (১৮৯৬) রায়ে বলা হয় যে, দান একবার সম্পন্ন হয়ে গেলে তা দাতার উপর বাধ্যকর হয় এবং সে উক্ত দানকে আর প্রত্যাহার করতে পারে না। তবে প্রতারণা, অনুচিত প্রভাব ইত্যাদি কারণে দান প্রত্যাহারযোগ্য হবে।
আইনের মাধ্যমে দান বাতিল বা প্রত্যাহৃত হতে পারে। সে আইন হচ্ছে চুক্তি আইনের ১৯ ধারা। চুক্তি আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে ক্ষেত্রে জোর করে অযথা প্রভাব খাটিয়ে বা প্রতারণা করে বা মিথ্যা বিবরণ দিয়ে যখন অঙ্গীকার আদায় করা হয় তখন সেই অঙ্গীকারভিত্তিক চুক্তি আহত ব্যক্তির ইচ্ছাধীনে বাতিলযোগ্য। দাতা যদি একারণে একজন বৃদ্ধা এবং দুর্বল মহিলা হন কিংবা তিনি যদি পদার্নশীল হন, তবে দান গ্রহীতাকে প্রমাণ করতে হবে যে, এই দান স্বেচ্ছামূলক। যে ক্ষেত্রে দাতার অবস্থা এমন যে তিনি দানগ্রহীতার প্রভাবাধীনে আছেন, সে ক্ষেত্রেও দান গ্রহীতাকে প্রমাণ করতে হয় যে তা স্বেচ্ছামূলক।
হেবা বিল এওয়াজ (Hiba-bil-iwaz)
হেবা বিল এওয়াজ দুটি শব্দ। হেবা এওয়াজ। হেবা অর্থ দান এবং এওয়াজ অর্থ বিনিময়। অতএব, হেবা বিল এওয়াজ অর্থ বিনিময় দান। হেবা বিল এওয়াজ অর্থ হলো কোন কিছু প্রতিদানের বিনিময়ে দান। সুতরাং দাতা যদি কোন সম্পত্তি দান করে দান গ্রহীতার কাছ হতে এর বিনিময়ে কিছু গ্রহণ করে, তখন এ ধরনের দানকে মুসলিম আইন মোতাবেক হেবা-বিল- এওয়াজ নামে অভিহিত করা হয়। আইন বিশেষজ্ঞ ডিএফ মুল্লার মতে, হেবা বিল এওয়াজ হলো প্রতিদানের জন্য প্রদত্ত একটি বিশেষ দান। যে ক্ষেত্রে দাতা বিনিময়ে কোন সম্পত্তি লাভ না করেন, সেক্ষেত্রে দানটি বিশুদ্ধ এবং সাধারণ; আর যে ক্ষেত্রে দান অনুষ্ঠিত হওয়ার পর, দান গ্রহীতা নিজেই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এবং নিজে কোনরকম বাধ্য না হয়ে দাতাকে কিছু সম্পত্তি প্রদানের মাধ্যমে মূল্য দেওয়ার মাধ্যমে দান সম্পন্ন করেন, সেক্ষেত্রে একে হেবা-বিল এওয়াজ বলা হয়। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যে প্রতিদানটি দাতাকে দেওয়া হয় তা অবশ্যই স্বেচ্ছায় হতে হবে। দাতা কোন ধরনের শর্ত হিসেবে প্রতিদান নিতে পারবেন না।
হেবা বিল-শর্ত-উল-এওয়াজ:
যখন বিনিময়ের (এওয়াজ) চুক্তিতে (শর্ত) হেবা করা হয় তখন সেই আদান-প্রদানকে হেবা-বিল-শর্ত-উল এওয়াজ বলে। যে এওয়াজ সম্পকে শর্ত করা হয় তা নির্ধারিত বা অনিধারিত উভয় হতে পারে। এ ধরনের দানের ক্ষেত্রে এওয়াজের সাথে সংশ্লিষ্ট দানের সব শর্তাদিসহ তা কার্যকরী হয়। এ ধরনের হেবায় দখল অর্পণ প্রয়োজন এবং উভয় পক্ষই দখল অর্পণের আগে তা প্রত্যাহার করতে পারে। কিন্তু উভয় দানের দখল অর্পণের পর বিক্রয়ের মত তা কার্যকরী হবে।
'হিবা-বিল-ইওয়াজ' এবং 'হিবা-বা-শর্ত-উল-ইওয়াজ'-এর মধ্যে পার্থক্য (Difference between ‘Hiba-bil-iwaz’ and ‘Hiba-ba-Shart-ul-Iwaz)
হেবা-বিল-এওয়াজ এবং হেবা-বিল-শর্ত-উল-এওয়াজের ক্ষেত্রে যখন প্রথম দানটি হয়, তখন দাতা এর জন্য প্রতিদান চিন্তা করেন না। পরবর্তীর্তে প্রথম দানের গ্রহীতা ঐ দানের জন্য একটি বিনিময় বা প্রতিদান প্রদান করেন। কিন্তু হেবা-বি-শর্ত- উল-এওয়াজের ক্ষেত্রে দাতা দানটি করার সময়ই এমন শর্ত আরোপ করেন যে, গ্রহীতাকে এর জন্য একটি প্রতিদান করতে হবে। এই ক্ষেত্রে দাতা অপর পক্ষ কর্তৃক প্রতিদান প্রদান না করা এবং এটি গ্রহণ করা ও দখল না নেওয়া পর্যন্ত তার দান বাতিল বা প্রত্যাহার করতে পারেন। এরপর ও কিছু গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে হেবা-বিল-এওয়াজ ও হেৰা-বিল-শর্ত-উল-এওয়াজের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে যা নিম্নরূপ—
0 Comments