সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

বার কাউন্সিলের পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী দন্ডবিধির ধারাভিত্তিক (ধারা ৫৩-৭৫) আলোচনা।



বার কাউন্সিলের পরীক্ষার সিলেবাস [Syllabus of Bar Council Enrolment Examination] অনুযায়ী দন্ডবিধির ধারাভিত্তিক (ধারা ৫৩-৭৫) আলোচনা।


৩য় অধ্যায়:দন্ড সম্পর্কিত

[CHAPTER III:OF PUNISHMENTS]

অপরাধীকে তার কৃত অপরাধের জন্য আইনে প্রদত্ত যে শারীরিক বা মানসিক পীড়ন দেওয়া হয়, তাকে শাস্তি বা দণ্ড বলে। দণ্ডবিধির ৩য় অধ্যায়ের ৫৩-৭৫ ধারায় দণ্ডবিধিতে বর্ণিত বিভিন্ন ধরনের সাজা সম্পর্কে এবং অর্থদণ্ড বিষয়ক আলোচনা করা হয়েছে।

ধারা: ৫৩ : শাস্তি/সাজা/দন্ড(Punishment)

এই বিধির বিধানানুসারে  অপরাধীরা  অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ৫ প্রকারের দণ্ডে দন্ডিত হবেন—

প্রথমত: মৃত্যুদণ্ড(Death) যা হাইকোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে পারেন।;


দ্বিতীয়ত: যাবজ্জীবন কারাদণ্ড(Imprisonment for life) যা ৩০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয় (দণ্ডবিধি'র ৫৭ ধারা)। তবে আদালত চাইলে আমৃত্য কারাবাস দিতে পারেন।[Ataur Mridha Vs. State;73 DLR (AD) 298] উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালের ৪১ অধ্যাদেশ অনুযায়ী যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর বলতে যাবজ্জীবন কারাবাসকে বুঝাবে।


তৃতীয়ত: (Criminal Law (Extinction of Discriminatory Privileges) Act 1949 এর মাধ্যমে বাতিল)


চতুর্থত: কারাদণ্ড যা দুই প্রকার–

(১) সশ্রম কারাদণ্ড(Rigorous  with hard labor) এবং

(২) বিনাশ্রম কারাদণ্ড


পঞ্চমত: সম্পত্তির বাজেয়াপ্ত;


ষষ্ঠত: অর্থদণ্ড – সাজা যদি ৩ বৎসর অথবা ৩ বৎসরের উর্দ্ধে হলে, সেক্ষেত্রে অর্থদণ্ড বাধ্যতামূলক (ও) হবে, তবে ব্যতিক্রম ব্যতীত।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

মৃত্যুদণ্ড

নিচের ১০টি অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের(ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দন্ড কার্যকর) বিধান রয়েছে—

  1.  বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করা বা প্রচেষ্টা করলে(দণ্ডবিধি'র ১২১ ধারা);

  2. দেশদ্রোহীতামূলক কার্য বা প্ররোচনা দিলে( ১৩২ ধারা);

  3. মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করবার জন্য মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে(১৯৪ ধারা);

  4. খুন বা হত্যা করলে( ৩০২ ধারা);

  5. যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত আসামি কর্তৃক খুন করলে(৩০৩ ধারা);

  6. নাবালক কিংবা উন্মাদ ব্যক্তির আত্মহত্যায় সহায়তা করলে(৩০৫ ধারা)

  7. যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তি নরহত্যার চেষ্টা করলে(৩০৭ ধারা);

  8. স্বেচ্ছাকৃতভাবে দু'চোখ উপড়ে ফেলা বা এসিড দিয়ে মুখ-মন্ডল বিকৃত করলে(৩২৬(ক) ধারা);

  9. ১০ বছরের কম বয়স্ক কোনো বালক বা বালিকাকে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণ করলে(৩৬৪-ক ধারা);

  10. ডাকাতি সংঘটনকালে খুন করলে(৩৯৬ ধারা)।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

 নিচের ৫৫টি অপরাধের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান দণ্ডবিধি'তে রয়েছে–

১। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-[১২১ ধারা]

২। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-১২১ (ক) ধারা) 

৩। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ-[[১২২ ধারা।

৪। বিদ্রোহ-[১২৪-ক ধারা]

৫। কোন এশীয় শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ- [১২৫ ধারা]

৬। রাজবন্দী বা যুদ্ধবন্দীকে পলায়নের জন্য সরকারী কর্মচারীর সহায়তা– [১২৮ ধারা]

৭। উক্ত প্রকার পলাতক বন্দীকে সহায়তা–[১৩০ ধারা)

৮। বিদ্রোহে সহায়তা–[১৩১ ধারা।

৯। বিদ্রোহে সহায়তায় সক্রিয়তা–[১৩২ ধারা]

১০। মৃত্যুদণ্ড দেওয়াইবার জন্য মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান বা সৃজন–[১৯৪ ধারা]

১১। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়াইবার জন্য মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান বা সৃজন-[১৯৫ ধারা)

১২।দণ্ডিত ব্যক্তিকে সরকার কর্তৃক গ্রেফতার না করা-(১২২ ধারা)

১৩। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পাকড়াও করিবার বিরুদ্ধে বাধা প্রদান–(২২৫ ধারা)

১৪।দ্বীপান্তরিত ব্যক্তির মেয়াদ শেষের পূর্বে প্রত্যাবর্তন-[২২৬ ধারা।

১৫।মুদ্রা নকল বা জাল করা–[২৩২ ধারা)

১৬। ঐরূপ মুদ্রার আমদানি ও রফতানি -(২৩৮ ধারা)

১৭।স্ট্যাম্প নকল বা জাল করা–[২৫৫ ধারা।

১৮।নরহত্যা–[৩০২ ধারা।

১৯।নিমখুন–[৩০৪ ধারা]

২০।নাবালগ ও উন্মাদের আত্মহত্যায় সহায়তা–[৩০৫ ধারা]

২১।আঘাতের সহিত হত্যার প্রয়াস–[৩০৭ ধারা)

২২।ঠগ হওয়া–[৩১১ ধারা]

২৩। বিনা অনুমতিতে গর্ভপাত–[৩১৩ ধারা]

২৪। ঐ কাজে গর্ডিনীর মৃত্যু হলে–[৩১৪ ধারা]

২৫। মারাত্মক অস্ত্রে গুরুতর আঘাত করা–[৩২৬ ধারা]

২৬। জোর করিয়া কিছু আদায় করিবার জন্য গুরুতর আঘাত–[৩২৯ ধারা]

২৭। হত্যার জন্য ছিনতাই—[৩৬৪ ধারা]

২৮। দশ বৎসরের কম বয়স্ক কোন ব্যক্তিকে অপহরণ বা হরণ করা–[৩৬৪-ক ধারা)

২৯। দাস ব্যবসা–[ধারা ৩৭১]

৩০। বলাৎকার–[ধারা ৩৭৬]

৩১। অস্বাভাবিক যৌন অপরাধ–[৩৭৭ ধারা।

৩২। অপরাধের নামে জবরদস্তিমূলক আদায়–[৩৮৮ ধারা]

৩৩। জরবদন্তিমূলক আদায় করিবার জন্য ভয় প্রদর্শন–[৩৮৯ ধারা]

৩৪। আঘাতের সহিত দস্যুতা–[৩৯৪ ধারা]

৩৫। ডাকাতির শাস্তি–[৩৯৫ ধারা]

৩৬। ডাকাতির সাথে হত্যা–[৩৯৬ ধারা]

৩৭। ডাকাতের দলে থাকা–[৪০০ ধারা)

৩৮। সরকারী কর্মচারী প্রভৃতি দ্বারা বিশ্বাস ভঙ্গ–[ ৪০৯ ধারা]

৩৯। চোরাইমাল রাখা–[৪১২ ধারা]

৪০। চোরাইমালের ব্যবসা–[৪১৩ ধারা।

৪১। গৃহে অগ্নিসংযোগ–(৪৩৬ ধারা)

৪২। জাহাজ প্রভৃতিতে অগ্নিসংযোগ–[৪৩৮ ধারা)

৪৩। মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ করার জন্য অনধিকার প্রবেশ–[৪৪৯ ধার]

৪৪। অনধিকার প্রবেশপূর্বক গুরুতর আঘাত–[৪৫৯ ধারা]

৪৫। উক্ত অপরাধের সঙ্গী—[৪৬০ ধার]

৪৬। মূল্যবান দলিল জাল–[৪৬৭ ধারা)

৪৭। কোন জাল দলিলকে খাটি হিসাবে ব্যবহারকরণ–[৪৭১ ধারা।

৪৮। জালের উদ্দেশ্যে সীল প্রস্তুত–[৪৭২ ধারা)

৪৯। দলিল জাল জেনে এবং তা খাঁটি বলে ব্যবহার করার ইচ্ছা করে দখল –[৪৭৪ ধারা]

৫০। জালিয়াতির জন্য চিহ্ন প্রভৃতি নকল—[ধারা ৪৭৫]

৫১। উইল জাল প্রভৃতি—[৪৭৭ ধারা)

৫২। পত্রমুদ্রাসমূহ বা ব্যাংক নোটসমূহ জালকরণ–[৪৮৯-ক ধারা]

৫৩। জাল বা মেকি পত্রমুদ্রা বা ব্যাংক নোট হিসাবে ব্যবহার করণ–[৪৮৯(খ) ধারা]

৫৪। পত্রমুদ্রা বা জাল বা মেকি ব্যাংক নোট অধিকারকরণ–[৪৮৯-গ ধারা।

৫৫। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডযোগ্য অপরাধের সহায়তা—[৫১১ ধারা)

বিনাশ্রম কারাদণ্ড

 দণ্ডবিধিতে ১৯টি অপরাধের ক্ষেত্রে বিনাশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে, যথা-

নিম্নবর্ণিত ১৯ ক্ষেত্রে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়:

১। সরকারী কর্মচারীর বেআইনীভাবে ব্যবসায় করা– [১৬৮ ধারা]

২। সরকারী কর্মচারীর বেআইনীভাবে সম্পত্তি বিক্রয় অথবা নিলামে ডাকা-[১৬৯ ধারা)

৩। সমন এড়ানো–[১৭২ ও ১৭৩ ধারা)

৪। সমন অথবা নির্দেশ পালনে ব্যর্থতা–[১৭৪ ধারা]

৫। দলিল উপস্থাপিত করতে ব্যর্থ হওয়া–[১৭৫ ধারা)

৬। তথ্য প্রদান করিতে ব্যর্থ হওয়া–[১৭৬ ধারা)

৭।  হলফ লইতে অস্বীকার [১৭৮ ধারা।

৮। প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার [১৭৯ ধারা)

৯। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করিতে অস্বীকার [১৮০ ধারা]

১০। সাহায্য দায়ের জন্য আইনতঃ বাধ্য হওয়ার ক্ষেত্রে সরকারী কর্মচারীকে সাহায্য না করা–[১৮৭ ধারা)

১১। আইনগত আদেশ অমান্য–[১৮৮ ধারা)

১২। সরকারী কর্মচারীর অবহেলায় অবরোধ হইতে পলায়ন–[২২৩ ধারা।

১৩। সরকারী কর্মচারী দ্বারা অবহেলাভরে গ্রেফতার না করা বা অবরোধ হতে পালাতে সহায়তা করা–[২২৫-ক ধারা।

১৪। বিচারে বাধা প্রদান–[২২৮ ধারা)

১৫। নিষেধাজ্ঞার পরেও উপদ্রব বজায় রাখা–[২৯১ ধারা]

১৬। অন্যায় অবরোধ–[৩৪১ ধারা]

১৭। বলপূর্বক গ্রহণের উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তিকে কোন ক্ষতির ভীতি প্রদর্শন–[৩৮৫ ধারা)

১৮। অশালীন আচরণ–[৫০৯ ধারা]

১৯। মদ্যপায়ীর অসদাচরণ–[৫১০ ধারা।


সম্পত্তির বাজেয়াপ্ত

✓ বর্তমানে বাজেয়াপ্তকরণের শাস্তি দণ্ডবিধি'র ১২৬, ১২৭ ও ১৬৯ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়ে থাকে।

অর্থদণ্ড বা জরিমানা

অর্থদণ্ডের অপর নাম জরিমানা। কারাদণ্ডের সাথে জরিমানা, অথবা জরিমানা একক দণ্ড হিসেবেও দেওয়া হয়। জরিমানা আরোপ করা অথবা না করা আদালতের স্বেচ্ছাধীনক্ষমতা। দণ্ডবিধি'তে ১১টি ক্ষেত্রে জরিমানার বিধান রয়েছে-

✓ সশস্ত্রবাহিনীর কোনো সদস্য বানিজ্যিক জাহাজের নাবিকের অবহেলার দরূন জাহাজের ভিতর আত্মগোপন করলে [ধারা ১৩৭]

✓ যে ভূমিতে বেআইনিভাবে সমাবেশ হয়েছে তার জমির মালিককে শুধুমাত্র জরিমানা করা যাবে (ধারা ১৫৪]

✓ যে ব্যক্তির স্বার্থে দাঙ্গা হয় তাকে শুধুমাত্র জরিমানা করা যাবে কিন্তু গ্রেপ্তার করা যাবে না [ধারা ১৫৫]

✓ আবহাওয়াকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর করে তুললে শুধুমাত্র জারিমানা করা যাবে ধারা ২৭৮)

✓ সড়কে বা জনপদে বিপদ বা বাধা সৃষ্টি করলে তার জন্য শুধুমাত্র জরিমানা করা যাবে।

✓ কোনো ঘটনার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জনসাধারণের উপদ্রবের কারণে সৃষ্ট উৎপাত হলে শুধুমাত্র জরিমানা করা যাবে।

✓ নির্বাচন সম্পর্কে অবৈধ অর্থ প্রদান করলে শুধুমাত্র জরিমানা (ধারা ১৭১-জ)

ধারা: ৫৩(ক) : কারাবাস উল্লেখের ব্যাখ্যা (Construction of reference to transportation)

যেখানে যাবজ্জীবন 'দ্বীপান্তর" এর উল্লেখ রয়েছে সেখানে তা 'যাবজ্জীবন কারাবাস" ধরতে হবে। অন্য কোনো মেয়াদের "দ্বীপান্তর" উল্লেখ থাকলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। দ্বীপান্তর, বেত্রাঘাত ইত্যাদি দণ্ডবিধির অনুমোদিত সাজা নয়।

ধারা: ৫৪ : মৃত্যুদণ্ড হ্রাসকরণ (Commutation of sentence of death) 

সরকার চাইলে আসামীর সম্মতি ছাড়া মৃত্যুদণ্ড হ্রাস করে অন্য যে কোন দণ্ডে রূপান্তর করতে পারে।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

✓ দন্ডবিধির ৫৪ ধারার সাথে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০২ ও ৪০২(ক) ধারা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদের মিল রয়েছে।

✓  সরকার কর্তৃক একবার মৃত্যুদণ্ডের সাজা হ্রাস হলে, পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করা যাবে না।

✓ গর্ভবতী স্ত্রী লোকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিধান নেই এবং সেক্ষেত্রে সরকার মৃত্যুদণ্ড হ্রাস করে অন্য যে কোনো কারাদণ্ড দিতে পারেন।

ধারা: ৫৫ :  যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হ্রাসকরণ (Commutation of sentence of imprisonment for life)

যে অপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে সরকার চাইলে উক্ত দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ডকে অনধিক ২০ বছরে হ্রাস করতে পারে।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

✓ যেক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা গৃহীত হয়েছে, সরকার প্রয়োজন মনে করলে অপরাধীর সম্মতি ছাড়াই উক্ত দন্ডকে যেকোন বর্ণনার অনধিক ২০ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড পরিবর্তিত করতে পারেন। [ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০২ ধারা]

✓ সরকার বিশেষ বিশেষ দিনে যেমন স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে, ঈদ-পূজা প্রভৃতি উৎসবের সময়  কারাদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ড মওকুফ করে থাকেন।

✓ কারাদণ্ড হ্রাস করা সরকারের অধিকার, আদালতের নয়।(এআইআর ১৯৫৫ এনইউসি ২৭৩)

✓ তবে সাজা একবার কমালে, পরবর্তীতে আর বর্ধিত করা যাবে না।

ধারা: ৫৫ক : রাষ্ট্রপতির বিশেষ অধিকার সংরক্ষণ (Saving for President's Prerogative)

৫৪ ধারা অথবা ৫৫ ধারায় কোনকিছু রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন, দত্ত লাঘব, দণ্ড বিলম্ব বা দণ্ড মওকুফের অধিকার খর্ব করবে না।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

✓ ১৯৩৭ সালে দন্ডবিধির ধারা-৫৫(ক) সন্নিবেশিত হয়েছে।

✓  বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ মোতাবেক, রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ বিচারালয়, কোর্ট মার্শাল সহ যে কোনো ট্রাইব্যুনাল বা আদালতের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে সম্পূর্ণ মাফ অথবা সাজা কমিয়ে অন্য কোনো লঘুদণ্ড দিতে পারেন।

✓ ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০১ ধারায় রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা প্রদর্শন করার ক্ষমতা সম্পর্কে বিধান রয়েছে। এই ক্ষমতা শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি প্রয়োগ করতে পারেন, অন্য কেউ নয়।

মনে রাখুন 

ধারা-৫৪ অনুযায়ীসরকার মৃত্যুদণ্ড হ্রাস করে, অন্য যে কোনো মেয়াদের লঘুতর দণ্ড দিতে পারেন।


ধারা-৫৫ অনুযায়ীসরকার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হ্রাস করে, সর্বোচ্চ ২০ বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড দিতে পারেন।


ধারা-৫৫(ক) অনুযায়ীমহামান্য রাষ্ট্রপতি মৃত্যুদণ্ডসহ যে কোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করতে পারেন।

ধারা: ৫৬ :  ১৯৫০ সনের ২ নং আইনের ক্ষমতা বলে বাতিল।

 ধারা: ৫৭ : দণ্ডের মেয়াদসমূহের ভগ্নাংশসমূহ (Fractions of terms of punishment)

সাজার মেয়াদের ভগ্নাংশ হিসাবের ক্ষেত্রে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ৩০ বছর মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডের সমান বলে গণ্য করা হবে।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

শুধুমাত্র ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০১ ধারার বিধানক্রমে সরকার ‘যাবজ্জীবন কারাবাসকে ৩০ বৎসর মেয়াদী কারাবাস ভোগের পর  দন্ডিতকে মুক্তিদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন (20 DLR (Wp) 25; মোঃ হোসেন বনাম রাষ্ট্র)।

ধারা: ৫৮ : বাতিল(১৯৮৫ সালের ৪১ নম্বর অধ্যাদেশ বলে বাতিল)।

ধারা: ৫৯  : বাতিল(১৯৮৫ সালের ৪১ নম্বর অধ্যাদেশ বলে বাতিল)

ধারা: ৬০  : কারাবাসের কতিপয় ক্ষেত্রে দণ্ড সম্পূর্ণরূপে বা অংশত সশ্রম বা বিনাশ্রম হতে পারবে (Sentence may be in certain cases of imprisonment, wholly or partly rigorous or simple)

যে মামলায় কোন অপরাধকারী যেকোন বর্ণনার কারাবাসের যোগ্য হয়, অনুরূপ প্রত্যেক মামলায় অনুরূপ অপরাধকারীকে দন্ডদানকারী আদালতের উক্ত দণ্ডাজ্ঞার এই নির্দেশ দান করার ক্ষমতা থাকবে যে, অনুরূপ কারাবাস সম্পূর্ণরূপে সশ্রম হবে বা বিনাশ্রম হবে,অথবা অনুরূপ কারাবাসের যেকোন  সশ্রম কারাদন্ড এবং বাকি অংশ বিনাশ্রম হবে।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

✓ কারাবাস হতে পারে সম্পূর্ণ সশ্রম বা বিনাশ্রম বা আংশিক সশ্রম বা বিনাশ্রম। আইনে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাবাস উল্লেখিত থাকলে আদালত সেটি দিতে বাধ্য।

✓ কোন কোন অপরাধে শুধুমাত্র সশ্রম কারাবাস থাকে, যেমন দণ্ডবিধির ধারা ৩৯২-৩৯৬ এসবের দণ্ড সশ্রম। আবার কোন কোন কারাবাস শুধু বিনাশ্রম থাকে যেমন ৩০৯ ধারা। আবার যে অপরাধের দণ্ড শুধুমাত্র অর্থদণ্ড তা দিতে ব্যর্থ হলে যে কারাদণ্ড হবে তা বিনাশ্রম হবে।

ধারা: ৬১ : বাতিল

ধারা: ৬২  : বাতিল

ধারা ৬৩ হতে ধারা ৭০

ধারা ৬৩ – ৭০ এই আটটি ধারায় নিম্নলিখিতরূপে জরিমানা সম্পর্কে বিধান বর্ণিত হয়েছে—

(ক) ৬৩ ধারায় জরিমানা সম্পর্কে সাধারণ নিয়ম বর্ণিত হয়েছে;

(খ) ৬৪ ধারা হইতে ৬৯ ধারায় জরিমানা অনাদায়ে কারাদন্ডের নিয়ম বর্ণিত হয়েছে; এবং

(গ) ৭০ ধারায় জরিমানা ধার্য করার পদ্ধতি সম্বন্ধে বর্ণিত হয়েছে।

ধারা: ৬৩  :অর্থদণ্ডের পরিমাণ (Amount of fine)

যেক্ষেত্রে কোন অর্থদণ্ডের পরিমাণ কী পর্যন্ত হতে পারে তা উল্লেখ করা হয় নেই, সেক্ষেত্রে অপরাধীকে যে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে, সে অর্থদণ্ডের পরিমাণের কোন সীমা থাকবে না,তবে তা অত্যাধিক হবে না।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

✓  জরিমানার পরিমাণ অতিরিক্ত মাত্রায় হওয়া অনুচিত (৫ সি আর এল জে ২১৭)।

✓  জরিমানা আদায়ের জন্য সাধারণ কারাবাস দেওয়া যেতে পারে। (26 DLR 350: নিজামুদ্দীন বনাম রাষ্ট্র)

✓  জরিমানা আদায়ের সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে ০৬ মাসের সাধারণ কারাবাস [37 DLR (AD) 91; রাষ্ট্র বনাম আবুল কাশেম]।

✓  জরিমানা অনাদায়ের ফলে যে কারাদন্ড দেওয়া হইবে উহার মেয়াদ উক্ত অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি বিধানের ১ চতুর্থাংশের অধিক হবে না। [16 DLR 488; আঃ হাকীম বনাম ক্রাউন]।

ধারা: ৬৪ : অর্থদণ্ড অনাদায়ের দরুন কারাদণ্ড দান (Sentence of imprisonment for non-payment of fine): 

আদালত জরিমানা অনাদায়ে কারাদণ্ডের আদেশ নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে দিতে পারেন–

১. যেক্ষেত্রে কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান থাকে;

২. যেক্ষেত্রে কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ডের বিধান থাকে; এবং

৩. শুধুমাত্র অর্থদন্ডের বিধান থাকে।

ধারা: ৬৫ : যেক্ষেত্রে কারাবাস ও অর্থদণ্ড বিধেয় সেক্ষেত্রে কারাদণ্ড ও জরিমানা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধে জরিমানা অনাদয়ে প্রদত্ত কারাদণ্ডের সীমা (Limit to imprisonment for non-payment of fine, when imprisonment and fine awardable)

আদালত অপরাধীকে অর্থদণ্ড অনাদায়ে যে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার আদেশ করবেন, তার মেয়াদ অপরাধটির জন্য নির্দিষ্ট সর্বোচ্চ মেয়াদের ১/৪ অংশের বেশি হবে না, যদি অপরাধটি কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড উভয় দণ্ডেই দণ্ডনীয় হয়। 

প্রাসঙ্গিক তথ্য

✓  ৬৫ ধারার অধীনে যে পরিমাণ কারাদণ্ড দেওয়া যায় তাহা ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৩ ধারার মাধ্যমে বৃদ্ধি করা যায় না। [এআইআর ১৯৪১ পাট, ৪৮]

✓  দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারার অধীনে সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের পরিমাণ ০১ বৎসর এবং বিজ্ঞ অতিরিক্ত সেশন বিচারক অর্থদণ্ড পরিশোধে ব্যর্থতায় ০৩ মাসের অধিক কারাদণ্ড দিতে পারেন না। [পিএলডি (১৯৬০) ১০ ডব্লিউপি ৯৭০।

✓  অর্থদণ্ডের অনাদায়ে কারাদণ্ড মূল কারাদণ্ডের অতিরিক্ত হিসেবে গণ্য হবে।

ধারা: ৬৬ :  অর্থদণ্ড অনাদায়ে কারাদন্ডের বর্ণনা (Description of imprisonment for non-payment of fine)

অর্থদণ্ড অনাদায়ে যে কারাবাস দেয়া হয় তা সশ্রম বা বিনাশ্রম হতে পারে। এটি মূলত নির্ভর করে যে অপরাধের জন্য অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে সেই অপরাধের উপর।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

✓  যেক্ষেত্রে জরিমানা অনাদায়ের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে কারাদণ্ড সশ্রম হতে পারে, বিনাশ্রমও হতে পারে। তবে যে অপরাধের জন্য দণ্ড প্রদান করা হয় সেই অপরাধের যদি কারাদণ্ডের প্রকৃতির বিধান থাকে তবে তা অবমাননা করা যায় না। অপরাধ যদি সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হয় তবে জরিমানা অনাদায়ে প্রদত্ত কারাদণ্ডও সশ্রম হবে। [৭ ডব্লিউআর ৩১]

ধারা: ৬৭ : কেবল অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধের ক্ষেত্রে অর্থদণ্ড অনাদায়ে কারাদণ্ড (Imprisonment for non- payment of fine, when offence punishable with fine only)

 এই ধারায় শুধু অর্থদণ্ডে দণ্ডিত অপরাধের ক্ষেত্রে অর্থদণ্ড অনাদায়ে নিম্নলিখিত কারাদণ্ডের বিধান আছে—

১। ৫০ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড (Fine) অনাদায়ে ২ মাস পর্যন্ত যে কোন সময় কারাদণ্ড (Imprisonment) প্রদানের বিধান রয়েছে।


২। ৫১—১০০ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড (Fine) অনাদায়ে ৪ মাস পর্যন্ত যে কোন সময় কারাদণ্ড (Imprisonment) প্রদানের বিধান রয়েছে।


৩। ১০০ টাকার বেশি বা অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থদণ্ড (Fine) অনাদায়ে ৬ মাস পর্যন্ত যে কোন সময় কারাদণ্ড (Imprisonment) প্রদানের বিধান রয়েছে।


প্রাসঙ্গিক তথ্য

✓  অর্থদণ্ডের কিছু অংশ পরিশোধ করা হলে আনুপাতিক হারে কারাদণ্ডের মেয়াদ হ্রাস পাবে। 

✓  শুধু অর্থদণ্ড অনাদায়ে কারাদণ্ড বিনাশ্রম হবে এবং তার মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬ মাস। 

✓ যে অপরাধের একমাত্র শাস্তি জরিমানা, সেক্ষেত্রে জরিমানা অনাদায়ে বিনাশ্রম কারাদণ্ড হবে।

✓ অর্থদণ্ডের কিছু অংশ পরিশোধ করা হলে আনুপাতিক হারে কারাদণ্ডের মেয়াদ হ্রাস পাবে।


ধারা: ৬৮ :  অর্থদণ্ড আদায়ে কারামুক্তি (imprisonment to terminate on payment of fine)

যে অর্থদণ্ড অনাদায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সে অর্থদণ্ড প্রদত্ত হলে অথবা আইনগত কার্যক্রমের মাধ্যমে আদায় করা হলে আসামীর কারামুক্তি হবে।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

✓ জরিমানা স্বেচ্ছায় বা আইনের মাধ্যমে আদায় হয়ে গেলে, স্বাভাবিকভাবে কারাদণ্ড ভোগ করার প্রয়োজন থাকে না।

✓ আইনের মাধ্যমে অর্থাৎ ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬ এবং ৩৮৯ ধারায় বর্ণিত বিধান অনুযায়ী জরিমানা আদায় করা যায়।

ধারা: ৬৯ : জরিমানার আনুপাতিক অংশ আদায়ে কারামুক্তি (Termination of imprisonment on payment of proportional part of fine)

অর্থদণ্ড যতটুকু পরিশোধ করা হবে কারাদণ্ড সেই অনুপাতে বাতিল হবে। আংশিক অর্থদণ্ড পরিশোধে আংশিক কারাদণ্ড বাতিল হবে। অর্থদণ্ড অনাদায়ের জন্য প্রদত্ত কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে যদি অর্থদণ্ডের একটি অংশ প্রদান করা হয় তবে বাকি কারাদণ্ডের মেয়াদ আদায়কৃত অর্থদণ্ডের অনুপাত কমে যাবে। আদায়কৃত অর্থদণ্ড বাকি থাকা কারাদণ্ডের আনুপাতিক হারে বেশী হলে আসামী সাথে সাথে মুক্তি পাবে।

ধারা: ৭০ : জরিমানা ছয় বছরের মধ্যে বা কারাবাসকালে আদায়যোগ্য অর্থদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তির মৃত্যুর ফলে সম্পত্তি দায়মুক্ত হবে না (Fine leviable within six years, or during imprisonment Death not to discharge property from liability)

অর্থদণ্ড প্রদান করা হলে তা ৬ বছরের মধ্যে আদায়যোগ্য। কারাদণ্ড যদি ৬ বছরের অধিক হয়, উক্ত কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে যেকোন সময় আদায়যোগ্য।

কোন আসামী কারাদণ্ড ভোগকালে মারা গেলে তাঁর মৃত্যুর পর কারাদণ্ড মওকুফ হলেও অর্থদণ্ড মওকুফ হবে না, তা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে আদায় করা হবে।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

ধারা: ৭০ অনুযায়ী নিম্নরূপ বিধানে  অর্থদণ্ড আদায় করা যায়—


(ক) অপরিশোধিত জরিমানা ০৬ বৎসরের মধ্যে যেকোন সময় আদায় করা যায়;


(খ) জরিমানার যেকোন অংশ অপরিশোধিত থাকলে তাও দণ্ডাজ্ঞার পরবর্তী ০৬ বৎসরের মধ্যে যেকোন সময় আদায় করা যায়; 


(গ) অপরাধী ০৬ বৎসরের বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে থাকলে উক্ত মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে যেকোন সময় অপরিশোধিত জরিমানা আদায় করা যায়; এবং


(ঘ) জরিমানা প্রদান না করে অপরাধীর মৃত্যু হলে তার সম্পত্তি হতে তা আদায় করা যায়।

উল্লেখ্য, এই ধারার সাথে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬(১) (খ) এবং (৩) ধারার প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে।

ধারা: ৭১ : কয়েকটি অপরাধের সমন্বয়ে সৃষ্ট অপরাধের জন্য প্রদত্ত শান্তির সীমা (Limit of punishment of offence made up of several offences) 


যখন কোন অপরাধ এমন কয়েকটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত, যে অংশগুলির প্রতিটিই স্বতন্ত্র (Separate) একটি অপরাধ, তখন অপরাধীকে তার দ্বারা অনুষ্ঠিত এরূপ অপরাধগুলির একটির বেশি অপরাধের জন্য বর্ণিত দণ্ডের অধিক দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে না। যখন কোন অপরাধ, কোন আইনের দুই বা ততোধিক সংজ্ঞায় পড়ে, অথবা যখন কয়েকটি কাজের মধ্যে কোন একটি বা একাধিক কাজ স্বতন্ত্রভাবে একটি অপরাধ হয়, কিন্তু সবগুলোর সম্মিলনে একটি ভিন্ন অপরাধ হয়, তখন অপরাধীর বিচারকারী আদালত অনুরূপ অপরাধগুলির যেকোন একটির জন্য যতটা কঠোর সাজা দিতে পারেন। 

প্রাসঙ্গিক তথ্য

✓ ধারা-৭১  এর মুখ্য উদ্দেশ্য হলো শাস্তিদান করাকে ন্যায়সঙ্গতভাবে সীমাবদ্ধ করা। তাই কয়েকটি অপরাধের সমষ্টিতে কোন একটি অপরাধ সৃষ্ট হয়ে থাকলে ঐ অপরাধের শাস্তির সীমা নির্ধারণ করা।

✓ কোন ব্যক্তিকে একই অপরাধের জন্য ০২ বার শাস্তি দেয়া যায় না— এই মতবাদের(Doctrine of double jeopardy) উপরেই এই ধারা গঠিত হয়েছে। বস্তুতপক্ষে এই ধারা ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৫ এবং ২৩৫ ধারার বিধানসমূহের অনুরূপ।


ধারা: ৭২ :  কতিপয় অপরাধের একটির জন্য দোষী ব্যক্তির শাস্তি এটি কী সম্পর্কে, রায়ে তার সন্দেহ প্রকাশ (Punishment of person guilty of one of several offences, the judgment stating that it is doubtful of which)

যখন কোন আসামী একাধিক অপরাধের মধ্যে কোন অপরাধে দণ্ডিত হবে তা নিয়ে সন্দেহ থাকলে এবং অপরাধগুলোর জন্য একই শাস্তির বিধান না থাকলে সেই ক্ষেত্রে উক্ত অপরাধগুলোর মধ্যে যে অপরাধের জন্য সর্বনিম্ন শাস্তির ব্যবস্থা আছে সে অপরাধের শান্তি প্রদান করতে হবে।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

✓  একাধিক অপরাধে অভিযুক্তের ক্ষেত্রে আদালত সন্দিহান হলে, সেক্ষেত্রে সর্বনিম্ন অপরাধের ধারায় শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে।

✓  গুরুতর দণ্ড অপেক্ষা লঘু দণ্ড দেওয়া হলে এর কারণ লিপিবদ্ধ করতে হয় এইরূপ কারণ প্রত্যেক মামলায় স্বতন্ত্র অবস্থায় বিবেচনাপূর্বক নির্ধারণ করতে হয় (25 DLR 444)

ধারা: ৭৩ : নির্জন কারাবাস (Solitary confinement)


এই বিধি অনুযায়ী যে অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে সশ্রম কারাদণ্ড দানের জন্য আদালতে ক্ষমতা থাকে, সেই অপরাধে ব্যক্তি বিশেষ দণ্ডিত হওয়ার ক্ষেত্রে আদালতে এর দণ্ডাজ্ঞাবলে নির্দেশ দান করতে পারবেন যে অপরাধীকে, সে যে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয় তার যেকোন অংশ বা অংশসমূহের জন্য নিম্নলিখিত হারে, সাকুল্যে অনধিক ০৩ মাসকাল নির্জন কারাবাসে রাখা যাবে।

প্রাসঙ্গিক তথ্য


দণ্ডবিধিতে নির্জন কারাবাস বলতে বোঝায় যেখানে আসামীকে সকল প্রকার জনসহচর ব্যতীত (জনশূন্য স্থানে) আটক রাখা হয়। অপরাধীকে তার মূল কারাদণ্ডের একটি নির্দিষ্ট অংশ নির্জনে রাখাকে বলা হয় নির্জন কারা। সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত অপরাধীকে আদালত সর্বোচ্চ ৩ মাস (৯০ দিন) কারাবাসের আদেশ দিতে পারেন। সাধারণভাবে গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্র ব্যতীত নির্জন কারাবাসের দণ্ডাদেশ হয় না। উল্লেখ্য, যে অপরাধের শান্তি সশ্রম কারাদণ্ড, শুধু সেক্ষেত্রে নির্জন কারাবাসের আদেশ দেয়া যাবে। যাহোক নির্জন কারাবাসের দণ্ডে নিম্নবর্ণিত বিধানাবলী অবশ্য পালনীয়—


১। যে মেয়াদের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়, সেই মেয়াদের সম্পূর্ণ সময় নির্জন কারাবাসের মেয়াদ হতে পারে না। সশ্রম কারাদণ্ডের পূর্ণ মেয়াদের একটি অংশ নির্জন কারাবাস হবে, এইরূপ আদেশ দেওয়া যায়।


২। নির্জন কারাবাসের মেয়াদ সর্বসাকূল্যে ০৩ মাসের অধিক হতে পারবে না। 


৩। সশ্রম কারাদণ্ডের মেয়াদ ০৬ মাস বা তার কম হলে নির্জন কারাবাস সর্বসাকূল্যে এক মাসের বেশী হতে পারবে না।


(৪) সশ্রম কারাদণ্ডের মেয়াদ ০৬ মাসের বেশী কিন্তু এক বৎসরের কম হলে নির্জন কারাবাস সর্বসাকূল্যে ০২মাসের বেশী হতে পারবে না।


(৫) সশ্রম কারাদণ্ডের মেয়াদ এক বৎসরের বেশী হলে নির্জন কারাবাস ০৩ মাসের বেশী হতে পারবে না।


(৬) যে অপরাধের দণ্ড সশ্রম কারাবাস নয়, সেই অপরাধের ক্ষেত্রে নির্জন কারাবাসের আদেশ দেওয়া যায় না।

✓  The Prisons Act, 1894 আইনের ২৯ ধারাতেও নির্জন কারাবাসের (Solitary confinement) বিধান বর্ণিত রয়েছে। 

✓  বিশ্বে আধুনিক কালের ইতিহাসে বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের নেতা দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা দেশটির একটি জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপ, রবেন আইল্যান্ডে ২৭ বছর নির্জন কারাবাস ভোগ করেছেন।

ধারা: ৭৪ :  নির্জন কারাবাসের সীমা (Limit of solitary confinement) 


নির্জন কারাবাস দণ্ডাজ্ঞা কার্যকর করার বিষয়ে অনুরূপ কারাবাস এককালে ১৪দিনের বেশি হতে পারবে না। নির্জন কারাবাসের মেয়াদসমূহের মধ্যে অনুরূপ মেয়াদসমূহ নির্জন কারাবাস অপেক্ষা অন্যূনকালের বিরামসমূহ(intervals) থাকবে এবং প্রদত্ত কারাদণ্ড ০৩ মাসের অধিক হলে নির্জন কারাবাস প্রদত্ত সর্বমোট কারাদণ্ডের যেকোন মাসে ০৭ দিনের বেশি হতে পারবে না, নির্জন কারাবাসের মেয়াদসমূহের মধ্যে অনুরূপ মেয়াদসমূহ নির্জন কারাবাস অপেক্ষা অন্যূনকালের বিরামসমূহ(intervals) থাকবে।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

নির্জন কারাবাসের দণ্ডাদেশ কার্যকরী করতে নিম্নবর্ণিত বিধানাবলী অবশ্য পালনীয়—

ক) একটানা নির্জন  কারাবাস ১৪ দিনের বেশি হবে না।

(খ) নির্জন কারাবাসের পূর্বে ও পরে বিরাম(intervals) থাকবে।

(গ) মূল কারাদণ্ডের মেয়াদ ০৩মাসের অধিক হলে নির্জন কারাবাস কোন মাসে ০৭দিনের বেশি হবে না।


ধারা: ৭৫ :পূর্ববর্তী দন্ডের পরে ১২শ পরিচ্ছেদের বা ১৭শ পরিচ্ছেদের অধীনে কতিপয় অপরাধের জন্য বর্ষিত দণ্ড (Enhanced punishment for certain offences under Chapter XII or Chapter XVII after previous conviction) 


পূর্ববর্তী দণ্ডের পরে ১২শ অধ্যায়(ধারা ৩৭৮-৪৩২ক) (Offences Relating to coin and government stamps) এবং ১৭শ অধ্যায় (ধারা ২৩০-২৬৩ক) (Offences against property) এর অধীনে দন্ডনীয় কোন অপরাধে দন্ডিত হয়ে, উক্ত অধ্যায়সমূহের যে কোনটির অধীনে সেই একই মেয়াদের জন্য অনুরূপ কারাদন্ডে দন্ডনীয় যে কোন অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হবে, সেই ব্যক্তি পরবর্তী প্রত্যেক অনুরূপ অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা যে কোন বর্ণনার কারাদন্ডের অধীন হবে যার মেয়াদ ১০ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

✓  কোন ব্যক্তি পেনাল কোডের ১২ তম এবং ১৭ তম অধ্যায়ের অপরাধগুলো বার বার করলে তাকে সংশোধনের জন্য আদালত নির্ধারিত দন্ডের অতিরিক্ত যে দন্ড প্রদান করে সেই দন্ডকে বর্ধিত দন্ড বলে।

✓  এই ধারার উদ্দেশ্য হলো কোন ব্যক্তিকে কোন অপরাধের জন্য পূর্বে কোন দন্ডদানের পর পুনরায়  দন্ডদান কালে ১২ তম এবং ১৭তম অধ্যায়ে বর্ণিত কিছু অপরাধের জন্য পূর্বেকার দন্ডের পরে বর্ধিত দন্ডদান করা।

Sources:

  1. দণ্ডবিধির ভাষ্য:গাজী শামছুর রহমান 

  2. দণ্ডবিধি:বাসুদেব গাঙ্গুলী

  3. ক্রিমিনাল রেফারেন্স ও পেনাল কোড(দণ্ডবিধি): বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া

  4. Laws On The Penal Code In Bangladesh:Barrister Md. Abdul Halim

  5. দণ্ডবিধি : অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সরকার

  6. Textbook on Indian Penal Code : K D Gaur

**********The End***********


Post a Comment

0 Comments