সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

মুসলিম আইনে বিবাহ(Marriage in Islam)

What is the Muslim rule for marriage?; What is marriage in Islamic law?; What is the Muslim marriage law in Bangladesh?; ইসলামিক আইনে বিয়ে কি?; Ahmed, Akbar S. Discovering Islam: Making Sense of Muslim History and Society.;  New York: Routledge & Kegan Paul Inc., 1988. Brass, Paul; R. Ethnicity and Nationalism: Theory and Comparison. New Delhi: Sage Publications, 1991; Language, Religion and Politics in India. London: Cambridge University Press, 1974.;  The Politics of India since Independence. Cambridge: Cambridge University Press, 1990;.  Brydon, Lynne and Sylvia Chant. Women in the Third World. London: Edward Elgar Publishing Ltd, 1989.;  Bumiller, Elisabeth. May You Be the Mother of a Hundred Sons: A Journey Among the Women of India. New Delhi: Penguin Books India, 1990. Carroll, Lucy.;  “Muslim Family Law in South Asia: Important Decisions Regarding Maintenance for Wives and Ex-Wives.; Women and Society in India. Delhi: Ajanta Publications, 1987. Everett, Jana M. Woman and Social Change in India. ; New York: St. Martin’s Press, 1979. Engineer, Asghar Ali. (ed.)The Shah Bano Controversy. Hyderabad, India: Orient Longman, 1987.; marriage under muslim law pdf; kinds of marriage under muslim law; valid marriage in muslim law; 4 conditions of marriage in islam; muta marriage in muslim law; capacity of marriage in muslim law; what is forbidden in islam marriage; 5 conditions of marriage in islam;


 মুসলিম আইনে বিবাহ(Marriage in Islam)


সাধারণত নিকাহ বা বিবাহ(Marriage) বলতে আলিংগন বা বন্ধনকে বুঝায়। আইনে পুরুষ এবং স্ত্রী এই উভয়ের মধ্যে সম্ভোগের এবং বৈধভাবে সন্তান লাভের জন্য অবাধ এবং চিরস্থায়ী যে বিধানিক চুক্তি করা হয় তাকে নিকাহ বা বিবাহ(Marriage) বলে।


ইসলামে বিয়ে একটি ধর্মীয় কর্তব্য(religious duty)। বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ক বৈধ বলে বিবেচিত হয়। সন্তান-সন্ততির বংশ পরিশুদ্ধ হয় এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আইনসম্মত দায়িত্ব ও কর্তব্যের সৃষ্টি হয়। আবু হুরাইয়া (রাঃ) নবী (সঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, 'একজন মহিলাকে বিয়ে করার সময় চারটি বিষয় লক্ষ্য করা হয়। তার ধন-সম্পদ, তার বংশ মর্যাদা, তার সৌন্দর্য এবং তার দ্বীন। সুতরাং তোমাদের দ্বীনদার মহিলাই বিবাহ করা উচিৎ অন্যথায় তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'


মুসলিম বিবাহ একটি দেওয়ানী চুক্তি। বিবাহ যদিও ধর্মীয় দায়িত্ব তথাপি ইসলামে বিবাহ কোন সংস্কার বা ধর্মানুষ্ঠান (sacrament) নয়।এটি ধর্মীয় আশীর্বাদ সম্বলিত একটি দেওয়ানী চুক্তি। দেওয়ানী চুক্তির মত বিবাহের পক্ষগণের আলাদা আইনগত যোগ্যতা থাকেন। 


ডি, এফ মোল্লার মতে, "বিবাহকে একটি চুক্তিরূপে সংজ্ঞায়িত করা যায়, যাহার উদ্দেশ্য হইল জন্মদান ও সন্তানসমূহ বৈধকরণ” (ডি এফ মোল্লা প্রিন্সিপালস্ অব মোহামেডান ল' ২৮২)। 


মুসলিম বিবাহের আওতা, প্রকৃতি ও ধরণ 

(Nature, scopes and types of Muslim marriage)


একটি বৈধ বিবাহের তিন ধরনের উপাদান রয়েছে যা নিচে আলোচনা করা হলো –


১। আইনগত দিক (Legal aspect)


বিবাহের উদ্দেশ্য হলো বৈধ সহবাসের অনুমতিদান এবং সন্তান জন্মদান ও তা বৈধকরণ। বিবাহ চুক্তির দ্বারা পুরুষ কর্তৃক নারীকে সম্ভোগের অধিকার জন্মায়। বিবাহের জন্য পক্ষদ্বয়ের সম্মতি প্রয়োজন এবং যে শর্তে বিবাহ হয়, সে শর্ত ভঙ্গ হলে পক্ষবৃন্দ নিজেরা বা আদালতের মাধ্যমে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন। বিবাহের শর্তাবলী পক্ষবৃন্দের ইচ্ছা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই সব কারণে আইনগত দিক হতে ইসলামী বিবাহকে চুক্তি বলা যায়। 


২। সামাজিক দিক (Social aspect)


রাসুলুল্লাহ (সঃ) বিবাহকে পূণ্যবান মনে করিয়াছেন। বিবাহের সামাজিক দিক ইসলামে বিবাহের পর স্ত্রীকে উচ্চতর মর্যাদা দেয়া হয়েছে এবং বহু বিবাহকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 


৩। ধর্মীয় দিক (Religious aspect)


ইসলামে বিবাহকে একটি এবাদত বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বিবাহকে ইসলামী সমাজের ভিত্তি বলা হয়েছে। মানবজাতির অব্যাহত অস্তিত্ব বিবাহের ওপর নির্ভরশীল। সমাজকে রক্ষা করার জন্য এবং ব্যতিচার হতে মুক্ত রাখার জন্য ইসলামে বিবাহ পদ্ধতির প্রচলন হয়েছে। বিবাহ পড়ানোর সময় যদিও সাধারণভাবে কোরআন শরীফ পড়ানো হয় তবুও ঐ সময়ে কুরআন শরীফ পড়তে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নাই। রাসুলুল্লাহ (সঃ) পাত্রীকে দেখবার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি সতীত্বকে মেয়েদের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ বলে উল্লেখ করেছেন।


বিচারপতি মাহমুদ Abdul Kadir vs. Salima;(1886) 8 All 149 মামলায় বলেন, মুসলিম আইনে বিবাহ কোন ধর্মীয় সংস্কার নয়, বরং সম্পূর্ণরূপে একটি দেওয়ানি চুক্তি।(Marriage among Muhammadans is not a sacrament, but purely a civil contract) ইসলামে বিবাহ একটি আইনগত, সামাজিক এবং ধর্মীয় বিধান। দেওয়ানি চুক্তির মতোই বিবাহের পক্ষগণেরও আলাদা আইনগত যোগ্যতা থাকে। বিবাহের চুক্তিতে কোরআনে বর্ণিত আচার অনুসারে স্ত্রীর স্বার্থ সম্পূর্ণরূপেই রক্ষিত থাকে। পবিত্র কোরআনের কতিপয় আয়াত তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে থাকে, তথাপি মুসলিম আইনে বিবাহ উপলক্ষে বিশেষ কোন কার্যানুষ্ঠান প্রত্যক্ষভাবে নির্ধারিত নেই।


যেক্ষেত্রে স্ত্রী বিবাহে সম্মতি দেয় কেবলমাত্র সেই মুসলিম বিবাহই বৈধ। অভিভাবক কর্তৃক তাকে বিবাহে বাধ্য করা যাবে না। তবে, সুন্নী শাফেয়ী মাযহাবের মধ্যেও কোন বয়ঃপ্রাপ্ত কুমারীর বিবাহ অবৈধ হবে, যদি তার সম্মতি ও ইচ্ছার বাহরে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু হেদায়া অনুসারে একজন শাফেয়ী মাযহাব অনুসারী পিতা তার কন্যার বিবাহের চুক্তি কন্যার সম্মতি ছাড়া করতে পারেন। মুসলিম আইনের অধীনে বালিকার সম্মতি লাভের নিয়মিত পদ্ধতি অবলম্বন অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে এবং এইরূপ পদ্ধতি অবলম্বনের অনুপস্থিতি প্রমাণিত হলে কোন বৈধ বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলা যাবে না।


যাহোক বিবাহ আইনত দেওয়ানী চুক্তির মত হলেও  এর ধর্মীয় ও সামাজিক তাৎপর্য থাকায় নিছক চুক্তি নয়। কারণ যে কোন চুক্তি সাময়িক কালের জন্য হতে পারে, কিন্তু বিবাহের চুক্তি আজীবনের জন্য হতে হবে। তাছাড়া প্রত্যেক চুক্তিতে পূর্বাহ্নেই কনসিডারেশন বা 'প্রতিদান' স্থির করতে হয়, কিন্তু বিবাহের দেনমোহর যাকে প্রতিদান হিসাবে গ্রহণ করা হয় তা বিবাহের সময় স্থিরিকৃত না হলেও বিবাহ শুদ্ধ হবে। কারণ পরবর্তীকালেও তা স্থির করা যেতে পারে। এমনকি বিবাহে দেনমোহর প্রদান করা হবে না এইরূপ চুক্তি করলেও বিবাহ শুদ্ধ হবে, কারণ পরবর্তীকালে দেনমোহর ধার্য করতে উক্ত চুক্তি বাধ্য হবে না। বিবাহের সম্পর্কটি দেওয়ানী চুক্তির দ্বারা সৃষ্ট বিধায় পক্ষগণ চুক্তি দ্বারা এর পরিবর্তন করতে পারে, তবে এইরূপ পরিবর্তন করা যাবে না যার ফলে এর অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্টগুলো পণ্ড হয় [(১৯৬০) ২ কে,এল, আর ৬৫]


যদিও সম্ভোগ এবং সন্তান উৎপাদনই বিবাহের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হিসেবে গণ্য,  এটি জীবনে শান্তি ও স্বস্তি বিধানে সহায়তা করে বলেও ধরা হয়। কারণ অতিবৃদ্ধ বয়সে কিংবা মৃত্যু শয্যায় যখন সম্ভোগ কিংবা সন্তান উৎপাদনের কোন প্রশ্নই উঠে না, তখনও বিবাহ করা ধর্মীয় মতে বৈধ (বেইলি ১,৪)


বিবাহ মানুষের জীবনের একটি অন্যতম প্রধান ও মৌলিক প্রয়োজন মিটানোর নিমিত্তে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে এবং  বিবাহ মানব জীবনের প্রবোধ বা সান্তানারও একটি উপায় (আই, এল, আর ৩৩ মাদ্রাজ ২২)



শর্ত সাপেক্ষে বিবাহ

বিবাহ কোন শর্ত সাপেক্ষে হতে পারে না। শর্ত পূরণের জন্য অপেক্ষা না করেই বিবাহ সম্পন্ন করতে হবে (বেইলি ১,৭)। এমনকি দেনমোহর যদি সংগে সংগে প্রদানের শর্তবলী থাকে এবং তা প্রদান না করা হয়,তাবে হইলেও বিবাহ সংগে সংগে কার্যকর হবে [(১৮৮৬) ৮ এলা ১৪৯]


বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা ও শর্তাবলী

মুসলমান বিবাহের কোন অনুষ্ঠান অপরিহার্য নয়। বিবাহের জন্য কোন আনুষ্ঠানিক ভাষা বা আচার আচরণ প্রথা নির্ধারিত নেই। তবে বৈধ বিবাহের জন্য নিম্নলিখিত শর্ত পূরণ করতে হবে—


১। বিবাহের রুকন (প্রস্তাব ও কবুল) পালন করতে হবে।  একপক্ষ বিবাহের ইজাব বা প্রস্তাব করবে এবং অপরপক্ষ কর্তৃক তা কবুল বা গ্রহণ বা সমর্থন  করতে হবে।


২। হানাফী মাযহাব অনুসারে প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন কমপক্ষে ০২ জন সাক্ষী থাকতে হবে। সাক্ষীদ্বয়ের দু'জনই পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দু'জন মহিলা হতে হবে। অর্থাৎ দুইজন মহিলার সমান একজন পুরুষ। শিয়া মাযহাব অনুসারে কোন সাক্ষীর প্রয়োজন নেই।(Ali Wilsons Anglo — Mohammedan Law, 5th edn)


৩। যে কোনো ভাষায় বিবাহ করা বা দেওয়া বুঝায় এমন সব শব্দে বিবাহ সংঘটিত হবে। তবে বিবাহের সময় উচ্চারিত শব্দাবলী(আমি বিবাহ করলাম বা বিয়ে দিলাম অথবা এ বিয়ে আমি রাজি আছি ইত্যাদি) অবশ্যই স্পষ্ট এবং স্বর্ণহীন হতে হবে। ‘যেসব নারী তিন ত্বালাক ব্যতীত বায়েন ত্বালাকের ইদ্দত পালনরত তাদেরকে স্পষ্ট বা ইশারায় বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া বৈধ। তবে রাজ‘ঈ তালাকের ইদ্দত পালনকারী নারীকে স্পষ্ট বা ইশারায় বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হারাম।’(www.hadithbd.com/books/link/?id=9642)


৪। প্রস্তাব এবং তা গ্রহণ একই বৈঠকে উচ্চারিত হতে হবে। যদি এক বৈঠকে প্রস্তাব করা হয় এবং অন্য একটি বৈঠকে তা গ্রহণ করা হয় তবে  এভাবে বৈধ বিবাহ কার্য সম্পন্ন হয় না।

 

৫। বিবাহের পক্ষদ্বয়কে অবশ্যই সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ও প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ অনুযায়ী, বিবাহের ক্ষেত্রে কনের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং বরের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে।এর নিচে হলে বিবাহ নিষিদ্ধ হবে।


৬। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান মোতাবেক বিবাহ রেজিস্ট্রি হতে হবে।


৭। বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে কোন আইনগত প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারবে না অর্থাৎ কোন পক্ষ অপর পক্ষের নিষিদ্ধ স্তরের কোন আত্মীয়কে বিবাহ করতে পারবে না। 


৮। বিবাহের জন্য পাত্র-পাত্রীর স্বতস্ফূর্ত সম্মতির প্রয়োজন। বল প্রয়োগে সম্মতি আদায় করা হলে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে।


৯। বিবাহের ক্ষেত্রে দেনমোহর ধার্য করতে হবে। 


১০। বিবাহে বরকে মুসলিম এবং কনেকে মুসলিম অথবা কিতাবিয়া হতে হবে কিন্তু কোন মুর্তি পুজারিনী বা অগ্নি উপাসিকা হতে পারবে না।


তাছাড়া জুম‘আর দিন (শুক্রবার) বিকেলে বিয়ে পড়ানো সুন্নাত। কেননা আসরের সালাতের পরের সময় দো‘আ কবুল হয় এবং সম্ভব হলে মসজিদে বিয়ে পড়ানো সুন্নাত।



ভিডিও কনফারেন্সে বা টেলিফোনে বা পত্রযোগে বিবাহ 

যদিও একই বৈঠক ইজাব ও কবুল কথার মাধ্যমে বিবাহ সাধারণত অনুষ্ঠিত হয়, ভিডিও কনফারেন্সে বা টেলিফোনে বা পত্রযোগেও বিবাহ অনুষ্ঠিত হওয়ার কোন বাধা নেই। অনুষ্ঠানে যিনি উপস্থিত রয়েছেন তিনি কোন প্রকার লিপি বা পত্র ব্যবহার করতে পারবেন না। যিনি অনুপস্থিত রয়েছেন তার লিপিই ইজাব হিসাবে গ্রহণ করে উপস্থিত পক্ষ তা কবুল করবেন এবং ঐ লিপির বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাক্ষীগণ অবহিত থাকবেন। প্রস্তাবটি অনুজ্ঞাসূচক ভাষায় হবে না। এমনটি হলেই বিবাহ সম্পন্ন হবে। ইংগিত ও ইশারা যোগেও বিবাহ অনুষ্ঠিত হতে পারে। মোটকথা,বিবাহের পক্ষদ্বয় ভিডিও কনফারেন্সে বা টেলিফোনে বা পত্রযোগে(লিখিত দলিল বা রেকর্ড ভাষ্য) মাধ্যম ব্যবহার করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। তবে বিবাহের যে প্রধান ৪টি শর্ত(ইজাব,কবুল,সাক্ষী এবং দেনমোহর) প্রতিপালনপূর্বক বিবাহ সম্পন্ন করা যেতে পারে।



এক বৈঠকে প্রস্তাব ও অপর বৈঠকে গ্রহণ কার্য সম্পন্ন হলে তার দ্বারা বৈধ বিবাহ সম্পন্ন হবে না (মোল্লা ২৮৩)।


কবুল বা সম্মতি

অবাধ সম্মতি ছাড়া কোন বিবাহ বৈধ হবে না। কনে সম্মতি দিলেই মুসলিম বিবাহ বৈধ হবে। সুস্থ মস্তিষ্ক ও প্রাপ্ত বয়স্ক কোন মুসলমানের বিবাহ তার বিনা সম্মতিতে সম্পন্ন হলে তা পণ্ড হিসেবে গণ্য হবে। তবে কোন বিবাহে বলপূর্বক বা প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি গ্রহণ করা হলে স্বীকার করে না নেওয়া পর্যন্ত বিবাহটি অবৈধ থাকবে (১ আই,সি ৫৩৮)। যেখানে বিবাহের কোন সম্মতি গ্রহণ করা হয় নাই, সেখানে স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে সহবাস করলেও বিবাহ বৈধ হবে না।


কোন কনেকে তার অভিভাবক দ্বারা বিবাহে বাধ্য করা যাবে না (বেইলী ১০)। অভিমত আছে  যে, সুন্নি শাফীই মাযহাবের মধ্যে কোন বয়ঃপ্রাপ্ত কুমারীর বিবাহ অবৈধ হবে, যদি তা উক্ত কুমারীর সম্মতি এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয় (এ,আই, আর ১৯৩৯ বোম্বে ৪৮)। কিন্তু হেদায়া অনুসারে একজন শাফীই মাযহাব অনুসারী পিতা তার কন্যার বিবাহের চুক্তি কন্যার সম্মতি ছাড়াই করতে পারে (হেদায়া ৩৪)। মুসলিম আইনে কনের সম্মতি লাভের প্রচলিত পদ্ধতি অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে এবং এইরূপ প্রমাণের অনুপস্থিতি বৈধ বিবাহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মর্মে ধরা যাবে না। কনে প্রকাশ্যভাবে বা পরোক্ষভাবে 'বিবাহে সম্মত  ছিল তা অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে (এ,আই, আর ১৯৪২ পেশ ১৯)


বিবাহের প্রমাণ ও অনুমান (Presumption of marriage)


সাধারণত প্রত্যক্ষ প্রমাণ দ্বারা বিবাহ প্রমানিত হয়। তবে কোন বিবাহ প্রমাণ করার ক্ষেত্রে কোন দলিলগত কাগজ বা সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকলে নিম্নবর্ণিত অবস্থাদি হতে বিবাহ সম্পর্কে অনুমান করতে হবে—


(১) যখন কোন পুরুষ কোন স্ত্রী লোককে সামাজিক প্রতিষ্ঠা প্রদান করার উদ্দেশ্যে জ্ঞাতসারে স্ত্রী হিসাবে স্বীকার করে এবং তাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর মতো অবাধ এবং সুদীর্ঘ ও একটানা সহবাসের প্রমাণ থাকে (পি,এল,ডি ১৯৬৮ লাহোর ৫৮৭)। 


(২) যদি কোন ব্যক্তি প্রমাণ করে যে, কোন পুরুষ তাকে বৈধ সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তবে উক্ত ব্যক্তির মাতার সংগে ঐ পুরুষের বিবাহ  হয়েছে এইরূপ অনুমিত হবে। কিন্তু এইরূপ স্বীকৃতি অবশ্যই কোন বৈধ স্বীকৃতির শর্তাবলীর বিপরীত হবে না (পি,এল,ডি (১৯৬৯) ৪৭)। বিবাহের অনুমান সকল ক্ষেত্রেই খণ্ডনযোগ্য কিন্তু যখন শিশুর জন্মের বৈধতা প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন যেই পক্ষ বিবাহটি প্রমাণ করতে চায়, প্রমাণের দায়িত্ব(burden of proof) ঐ পক্ষের উপর বর্তায় (১ আই,সি ৫৩৮)। পক্ষগণের মধ্যে সম্বন্ধ এইরূপ ছিল যে তাদের মধ্যে বিবাহ বৈধ হতে পারে না, যেমন  তাদের মধ্যে রক্তের অথবা অন্য সম্বন্ধ এমন ছিল যে তাদের মধ্যে বৈধ বিবাহ অনুষ্ঠিত হতে পারে না (৩২ পি,এল, আর ৬৪৭) এমন প্রমাণ করে অনুমান খণ্ডন করা যাবে। পক্ষগণের মধ্যকার সম্পর্কটি যখন স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের সংগে অসংগতিপূর্ণ তখন বিবাহের অনুমান সৃষ্টি হবে না (পি,এল,ডি ১৯৬৮ লাহোর ৫৮৭)


(৩) সুদীর্ঘ এবং একটানা সহবাসের মাধ্যমে বিবাহের অনুমান সৃষ্টি হলেও (পি,এল,ডি ১৯৬৯ ঢাকা ৭৪) একমাত্র তা জোরালো অনুমান নয় (৩৭ আইন ১০৫)। পুরুষ এবং স্ত্রীরূপে সহবাস করা দেখানোর মত কোন কিছুর অভাবে কেবলমাত্র সহবাস করা দ্বারা বিবাহের কোন অনুমান সৃষ্টি হয়না (এ,আই, আর ১৯৩১ লাহোর ২২৩)। যেক্ষেত্রে সহবাসটি এক বৎসরের কম সময় চালু ছিল সেক্ষেত্রে এইরূপ অনুমান করা যাবে না [পি,এল, ডি (১৯৬৯) ৪৭)। তাছাড়া যেক্ষেত্রে সহবাস আরম্ভ হওয়ার পূর্বে স্ত্রী দেহ পশারিনী ছিল সেক্ষেত্রে এইরূপ অনুমান জোরালো হইবে না (৩২ এলা ৩৪৫)। সহবাস এই প্রকৃতির হওয়া আবশ্যক যে তা  হইতে অনুমান করা যায় যে এই ব্যক্তিকে স্বামী বিবাহ হিসাবে গ্রহণ করছে এবং সন্তানাদি বৈধ হবে এইভাবেই সহবাসকে গ্রহণ করছে (১৮৬৬) ১১ এম, আই, এ৯৪)


পুরষ ও স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠানে কোন বাধা থাকলে যেমন স্ত্রীটি অন্যের কিংবা ইতিপূর্বে অন্য লোকের সংগে সহবাস করেছে এইরূপ ক্ষেত্রে অনুমান সৃষ্টি হবে না।


বিবাহের যোগ্যতা

১। সুস্থ মস্তিষ্কের প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান বৈবাহিক চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে। তবে পাগল এবং নাবালক ব্যক্তিগণ স্ব স্ব অভিভাবকের মাধ্যমে বৈবাহিক চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে। 


২। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য ছেলে বা মেয়ের The Majority Act, 1875 অনুসারে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার প্রয়োজন নেই। যদিও মেয়ের সাবালকত্বের বয়স ১৮ বৎসর কিন্তু উক্ত আইনের ২ ধারা অনুসারে বিবাহের ব্যপারে তা প্রযোজ্য হবে না। 


৩। বিবাহে মুসলিম আইন প্রযোজ্য হবে এবং তদানুসারে ১৫বৎসর বয়স্ক মেয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। মুসলিম আইনে বালেগ হওয়ার সর্ব নিম্ন বয়স ১২ বৎসর এবং বালেগা হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ০৯ বৎসর। নাবালেগ, বালেগ এবং বিকৃতি মস্তিষ্ক ব্যক্তি স্বয়ং বিবাহ আঞ্জাম করলে তা আইনতঃ অসিদ্ধ হবে।(পি,এল,ডি ১৯৯৩ করাচি ৪৪২ পৃষ্ঠা)


বিবাহের প্রকারভেদ (Types of Marriages)

বিবাহ তিন প্রকার যথা- 

(১) সহি বা বৈধ বিবাহ [Valid (sahih)Marriage]; 

(২) ফাসিদ বা অনিয়মিত বিবাহ [Irregular(Fasid)Marriage]; এবং 

(৩) বাতিল বিবাহ [Void (Batil)Marriage]।


(১) সহি বা বৈধ বিবাহ

সহি বিবাহ যথারীতি ইজাব কবুল দ্বারা সাক্ষীর সম্মুখে প্রাপ্ত বয়স্কদের দ্বারা কিংবা নাবালেগের অভিভাবক দ্বারা একই বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। যে বিবাহ কোন বাধা-বিপত্তি ব্যতিরেকে সম্পূর্ণরূপে শরিয়ত মোতাবেক সম্পন্ন হয়, তাকে বৈধ বিবাহ বলে। এসব বিবাহে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত আনুষ্ঠানিকতা(আইনি প্রয়োজনীয়তা) পালন করতে হয়। যেমন- এতে ইজাব এবং কবুল, সাক্ষীর উপস্থিতি, চুক্তি করার যোগ্যতা থাকতে হবে। বিচারপতি মাহমুদ Abdul Kadir vs. Salima;(1886) 8 All 149 মামলার রায়ে বলেন, 'বিবাহের বৈধ উপাদান হচ্ছে এই যে, বিবাহের ফলে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে উপভোগ করতে পারে, যেটা আইনে অনুমোদনযোগ্য।' 


বৈধ বিবাহের আইনগত ফলাফল 

(Legal effects of valid marriage)


বৈধ বিবাহের ফলে স্বামী-স্ত্রী নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর অধিকারী হবে- 


(১) স্বামী স্ত্রী উভয়কে পরস্পরের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের অধিকার প্রদান করে।


(২) স্ত্রীর দেনমোহর পাওয়ার অধিকার জন্মায়। হানাফী আইন অনুসারে স্বামী অবশ্যই দেনমোহর পরিশোধ করবে যদিও স্ত্রী মোহরানা ছাড়াই বিবাহে সম্মতি দিয়েছিল।


(৩) স্ত্রীর উপর স্বামীর বিশ্বস্থ ও অনুগত থাকার এবং স্বামীকে তার সাথে যৌন সহবাসের অধিকার দানের দায়িত্ব আরোপিত হয়।


(৪) স্বামীর মৃত্যুর পর কিংবা বিবাহ বিচ্ছেদের( dissolution of the marriage)পর,বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে নিয়মানুযায়ী ইদ্দত পালন করতে হবে।


(৫) আইনানুযায়ী স্বামীর নিকট হতে ভরণপোষণ প্রাপ্ত হওয়ার এবং তার সংগে একত্রে বসবাসের অধিকার জন্মায়।


(৬) স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যৌন সহবাস এবং সন্তান জন্মদানকর্ম আইনসংগত(lawful) হয়। অবশ্য স্ত্রী বয়োসন্ধিতে না পৌঁছান পর্যন্ত স্বামী মিলনের আইনসংগত অধিকার পাবে না।


(৭) যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া স্ত্রী স্বামীর সাথে বসবাস করতে এবং তার ইচ্ছানুযায়ী তার সংগে সর্বত্র যেতে বাধ্য থাকবে এবং স্বামী স্ত্রীর গতিবিধি ন্যায় 'সংগভাবে নিয়ন্ত্রিত করতে পারবে, তবে স্বামী স্ত্রীকে পিতা মাতাকে বা নিষিদ্ধ স্তরের অন্যান্য আত্মীয় স্বজনকে দেখতে যেতে বারণ করতে পারেন না।


(৮) স্বামী স্ত্রী উভয়ই একে অন্যের রক্ত সম্পর্কে নিষিদ্ধ স্তরের আত্মীয়গণকে বিবাহ করতে পারেন না।


(৯) বিবাহের পূর্বে, সময়ে বা পরে যে সব শর্ত স্থিরিকৃত হয় তা প্রচলিত আইনের সামাজিক প্রথা বা মুসলিম নীতির বিরোধী না হলে অবশ্য পালনীয় হবে।


(১০) স্বামী অন্য স্ত্রী গ্রহণ করলে তার নিকট হতে সমান ব্যবহারের এবং সমান সংগ লাভের অধিকার স্ত্রীর থাকবে।



(২) ফাসিদ বা অনিয়মিত বিবাহ(Irregular Marriage)


যে সকল বিবাহ সহি নয়, কিংবা বাতিল নয় ঐ সকল বিবাহ সুন্নী আইন অনুসারে ফাসিদ বা অনিয়মিত বিবাহ(Irregular Marriage)বলে। এইরূপ বিবাহ সম্পূর্ণভাবে সহি না হলেও সম্পূর্ণভাবে বাতিলও নয় এবং এইরূপ বিবাহের ত্রুটিগুলো সংশোধনযোগ্য যেগুলোর অবসান ঘটিয়ে তা সহীহ বা বৈধ বিবাহে রূপান্তরিত করা যায়।। নিম্নলিখিত বিবাহগুলো অনিয়মিত বিবাহের অন্তর্ভুক্ত—


(ক) বিবাহে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাক্ষী(required number of witnesses) না থাকলে (৫০ আই,সি ৬৭৭) 

(খ) স্বাধীন মতামত ছাড়া বিবাহ অনুষ্ঠিত হলে (ডুর ৪৫)। যেক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতির প্রয়োজন সেক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি(consent of her guardian) ব্যতীত বিবাহ। 

(গ) মাতাল অবস্থায় বিবাহ করলে 

(ঘ) প্রতিনিধি ক্ষমতা বহির্ভূতভাবে বিবাহ সম্পাদন করলে 

(ঙ) নিষিদ্ধ ধর্মের মহিলাকে বিবাহ করলে (৪৩ আই সি ৮৮৩)। অর্থাৎ অন্য ধর্মের লোকের সাথে বিবাহ, যেমন মূর্তি পূজারিনী বা অগ্নিপূজারীর সাথে বিবাহ। 

(চ) চার স্ত্রী বর্তমান থাকতে পঞ্চম স্ত্রী বিবাহ করলে 

(ছ) অবৈধ সংযোগের জন্য যাকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ তাকে বিবাহ করলে। অর্থাৎ এমন দুইজন মহিলা যাদের একজন পুরুষ হলে তাদের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ হতো।

(জ) মৃত্যু,ব্যধি আক্রান্ত অবস্থায় বিবাহ করলে 

(ঝ) ইদ্দত পালনরত অবস্থায় কোন নারীকে বিবাহ করলে।(৩২ পি,এল, আর ৬৪৭) 


এইরূপ বিবাহ- 

(ক) সম্ভোগ দ্বারা 

(খ) স্বাধীন মত প্রদান দ্বারা 

(গ) নেশা কাটার পর সুস্থ অবস্থায় মত প্রদান দারা 

(ঘ) পরবর্তী অনুমোদন দ্বারা 

(ঙ) ঐ স্ত্রীকে নিষিদ্ধ নয় এমন ধর্মে দীক্ষা দেওয়া দ্বারা 

(চ) কোন এক স্ত্রীকে তালাক দ্বারা 

(ছ) অবৈধ সংযোগের বিবাহের সমাপ্তি দ্বারা 

(জ) সম্ভোগ দ্বারা বা তার পূর্ব স্ত্রীর মৃত্যু ঘটলে এবং 

(ঝ) ইদ্দত অন্তে পুনরায় বিবাহ দ্বারা উক্ত বিবাহগুলি সংশোধিত হবে।


ফাসিদ বা অনিয়মিত বিবাহের আইনগত ফলাফল 

(Legal effects of irregular marriage)

 

(১) ফাসিদ বা অনিয়মিত বিবাহের ক্ষেত্রে যৌন সহবাস অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে কোন আইগত ফলাফল উদ্ভব হয় না (বেইলী ১৫৭)। এইরূপ বিবাহ সম্পর্কে গোচরীভূত হওয়ার সংগে সংগে পক্ষগণের পৃথক হওয়ার দায় সৃষ্টি হবে (পি,এল,ডি ১৯৬৮ লাহোর ৫৮৭)। সহবাসের পূর্বে এইরূপ বিবাহে আইনগত কোন ফলাফল উদ্ভুত হয় না। যৌন মিলনের পরে বা পূর্বে পৃথক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে একপক্ষ অন্যপক্ষকে "আমি তোমাকে পরিত্যাগ করলাম” এই শব্দগুলি উচ্চারণ করলে বিবাহের পরিসমাপ্তি ঘটে (এ,আই, আর ১৯৩৪ লাহোর ৯০৭)। পক্ষগণ স্বেচ্ছায় পৃথক না হলে তাদেরকে পৃথক করার দায়িত্ব বিচারকের (বেইলী ১৫৬)।



(২) সহবাস স্থাপিত (ক) হলে স্ত্রী মহরে মিসাল (ন্যায্য দেনমোহর) নির্ধারিত দেনমোহর এই দু'য়ের মধ্যে যার মূল্য কম তা প্রাপ্ত হবে (খ) স্ত্রীকে ইদ্দত পালন করতে হবে- স্বামীর মৃত্যু বা স্বামী কর্তৃক তালাকের ক্ষেত্রে তিনটি ঋতুকাল।


(৩) এইরূপ বিবাহের সন্তানগণ বৈধ হবে (১৫৪ আই, সি ৬৭৭) এবং পিতামাতা উভয়ের সম্পত্তিরই উত্তরাধিকারী হবে। তবে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে উত্তরাধিকারের পারস্পরিক অধিকার সৃষ্টি হবে না (বেইলী ৬৯৪)


৪। বৈবাহিক সম্পর্কের ফলে উভয়পক্ষ কতিপয় নারী ও পুরুষের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী হবে।


অবৈধ বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য পক্ষগণ হদ্দ বা জেনার শাস্তি পাওয়ার যোগ্য না হলেও ইসলামী আইন অনুসারে তাজির (বিবেচনামত শাস্তি) দ্বারা তাদেরকে সংশোধন করা হবে যা অবস্থা ভেদে কঠিনও হতে পারে (পি,এল,ডি ১৯৬৮ লাহোর ৫৮৭)


সুন্নী আইনে যে বিবাহ অবৈধ, শিয়া আইনে তা সম্পূর্ণ বাতিল। অবৈধ ও বাতিল বিবাহের মধ্যে কোনরূপ পার্থক্য শিয়া আইনে নাই (বেঙ্গলী ১৬)


(৩) বাতিল বিবাহ (Void marriage)

বাতিল বিবাহ বস্তুত কোন বিবাহই নয়। এর ফলে উভয় পক্ষের কারও ওপর কোন বৈবাহিক দায়িত্ব বা কর্তব্য প্রতিষ্ঠিত হয় না। বাতিল বিবাহের ফলে সন্তান জন্ম নিলে তা জারজ বা অবৈধ। রক্তসম্পর্কীয় ও দুগ্ধজাত সম্পর্কের কারণে মাতা, আপন বোন, শ্বাশুড়ী, দুধ মাতা এবং অনুরূপ কতিপয় মহিলার সাথে বিবাহ বাতিল বিবাহের অন্তর্ভুক্ত। এই ধরনের মিলনের ফলে জন্মগ্রহণকারী সন্তান অবৈধ হবে এবং কোন আইনের দ্বারাও তাদের বৈধ করা যাবে না। অন্যলোকের স্ত্রীকে বিবাহ করাও বাতিল বিবাহের অন্তর্ভুক্ত।


কোন মুসলিম স্ত্রীলোকের সংগে অমুসলিমের বিবাহ হলে তা কোরআন অনুসারে বাতিল, ফাসিদ নয় (১২২ ফাইজি ৯)


বাতিল বিবাহের আইনগত ফলাফল (Legal effects of void marriage)


১। আইনের চোখে বাতিল বিবাহ কোন বিবাহই নয়। সেই কারণে এইরূপ বিবাহ দ্বারা কোন অধিকার বা দায় দায়িত্ব সৃষ্টি হয় না। এইরূপ বিবাহের ফলে সন্তান জন্ম নিলে ঐরূপ সন্তান অবৈধ বা জারজ গণ্য (এ,আই, আর ১৯৩১ লাহোর ১৯৪)। 

তবে পক্ষগণ যদি সরল বিশ্বাসে মনে করেন যে তাদের বিবাহে আইনগত বাধা নাই, সে ক্ষেত্রে যতদিন পর্যন্ত তাদের এই বিশ্বাস বহাল থাকে ততদিন পর্যন্ত বিবাহটি বৈধ এবং সকল উদ্দেশ্যে আইন সংগত। অবশ্য পরবর্তী পর্যায়ে যদি দেখা যায় যে বিবাহটি অবৈধ তখন বিবাহটি বাতিল হবে, তবে এইরূপ অবস্থার বিবাহে জন্ম নেয়া সন্তান বৈধ হবে (পি,এল, ডি ১৯৬০ লাহোর)।


২। বাতিল বিবাহে যৌন মিলন অনুষ্ঠিত না হলে স্ত্রী কোন মোহরানা পাবেন না। স্বামী বা স্ত্রী কারো মৃত্যুতে একে অপরের প্রতি উত্তরাধিকার এবং ভরণ-পোষণের অধিকার জন্মায় না। 


৩। আইনের চোখে এই ধরনের মিলন তখন থেকে অবৈধ বলে গণ্য হবে যখন বিবাহ চুক্তি সম্পন্ন হয় এবং বিবাহটি বাস্তবে ও আইনত সম্পূর্ণ অকার্যকর বলে পরিগণিত হবে। 


৪। যখন কোন ব্যক্তি এমন কোন স্ত্রীলোকের সাথে যৌন মিলন ঘটায় যার সাথে ঐ ব্যক্তির মিলনের কোন অধিকার নাই তবে এ ধরনের মিলনকে জিনা বা ব্যভিচার বলে এবং এই জিনার জন্য সে শান্তি ভোগ করবে। 


৫। এই বিবাহ থেকে জন্ম নেওয়া সন্তানের উত্তরাধিকারের অধিকার থাকেনা।



বাংলাদেশী মুসলমানের বিদেশে বিবাহ

বাংলাদেশের মুসলমান বিদেশে বিবাহ করলে তা ধর্মীয় আইনে বৈধ হলেও স্থানিক কিংবা নিবেশী আইনে অবৈধ হতে পারে বা বৈধ বিবাহ স্বামী কিংবা স্ত্রীর ধর্মান্তর দ্বারা অবৈধ হতে পারে। তাই বিদেশী আইনে অবৈধ না হলে এবং স্থানিক চুক্তি আইনের বিরোধী না হলে কোন মুসলমানের বিদেশে বিবাহ সিদ্ধ গণ্য হবে। কোন মুসলমান এক স্ত্রী বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও ইংল্যাণ্ডে কোন খৃষ্টান মহিলাকে বিবাহ করলে তা মুসলিম আইন অনুসারে বৈধ, কারণ মুসলমান পুরুষ দ্বিতীয় বিবাহ ও খৃষ্টান পত্নি গ্রহণ করতে পারে। তবে বৃটিশ আইন অনুসারে এক স্ত্রী বর্তমান থাকতে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ অবৈধ। অবশ্য কোন অবিবাহিত মুসলমান ইংল্যাণ্ডে খৃষ্টান মহিলাকে বিবাহ করলে তা বৈধ।



References 1.Ahmed, Akbar S. Discovering Islam: Making Sense of Muslim History and Society. 2. New York: Routledge & Kegan Paul Inc., 1988. Brass, Paul. 3. R. Ethnicity and Nationalism: Theory and Comparison. New Delhi: Sage Publications, 1991. 4. Language, Religion and Politics in India. London: Cambridge University Press, 1974. 5. The Politics of India since Independence. Cambridge: Cambridge University Press, 1990. 6. Brydon, Lynne and Sylvia Chant. Women in the Third World. London: Edward Elgar Publishing Ltd, 1989. 7. Bumiller, Elisabeth. May You Be the Mother of a Hundred Sons: A Journey Among the Women of India. New Delhi: Penguin Books India, 1990. Carroll, Lucy. 8.“Muslim Family Law in South Asia: Important Decisions Regarding Maintenance for Wives and Ex-Wives. 9. Women and Society in India. Delhi: Ajanta Publications, 1987. Everett, Jana M. Woman and Social Change in India. 10. New York: St. Martin’s Press, 1979. Engineer, Asghar Ali. (ed.)The Shah Bano Controversy. Hyderabad, India: Orient Longman, 1987.

11.বিবাহ ও বিবাহ সম্পর্কিত আইন--মোঃ জহুরুল ইসলাম

12. বিবাহ ও তালাক সম্পর্কিত আইন: মোঃ মোবারক হোসেন ভূঁইয়া

Post a Comment

0 Comments