মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২
( ২০১২ সনের ৩ নং আইন )
মা
প্রথম অধ্যায়
প্রারম্ভিক
ধারা-১: সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন
(১) এই আইন মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ নামে অভিহিত হইবে।
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
ধারা-২:সংজ্ঞা
বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকিলে, এই আইনে—
(১) ‘‘আশ্রয় কেন্দ্র’’ অর্থ জেলখানা ব্যতীত এমন প্রতিষ্ঠান যাহা, যেই নামেই অভিহিত হউক না কেন, মানব পাচারের শিকার বা মানব পাচার হইতে উদ্ধারকৃত ব্যক্তিবর্গের গ্রহণ, আশ্রয় এবং পুনর্বাসনকল্পে প্রতিষ্ঠিত;
(২) ‘‘আশ্রয় দেওয়া’’ বা ‘‘লুকাইয়া রাখা’’ (harbouring)অর্থ কোন ব্যক্তিকে তাহার দেশের অভ্যন্তরে বা বাহিরে বিক্রয় বা পাচারের উদ্দেশ্যে লুকাইয়া রাখা, আশ্রয় দেওয়া বা অন্য কোনভাবে সহায়তা করা এবং দণ্ডবিধি, ১৮৬০ (১৮৬০ সনের ৪৫ নং আইন) এর ধারা ৫২ক এ যেই অর্থে ””Harbour” অভিধাটি ব্যবহৃত হইয়াছে, তাহাও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(৩) ‘‘ঋণ-দাসত্ব (debt-bondage)”” অর্থ কোন ব্যক্তির সেইরূপ অবস্থান যাহার কারণে উক্ত ব্যক্তি কোন ঋণের জন্য প্রকৃতপক্ষে দায়গ্রস্ত হইলে অথবা বেআইনিভাবে তাহাকে ঋণ-দায়গ্রস্ত বলিয়া দাবী করা হইলে উক্ত ব্যক্তিকে উক্ত ঋণের জামানতস্বরূপ নিজের ব্যক্তিগত সেবা বা শ্রম প্রদান করিতে হয়, কিন্তু উক্ত সেবা বা শ্রমের মূল্য ঋণ পরিশোধ হিসাবে গণ্য হয়না অথবা উক্ত সেবা বা শ্রম প্রদানের কাল অসীম হয়;
(৪) ‘‘জবরদস্তিমূলক শ্রম বা সেবা’’ অর্থ কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, অধিকার, সম্পত্তি বা সুনামের ক্ষয় বা ক্ষতি করিবার হুমকি প্রদর্শন করিয়া তাহার নিকট হইতে যে কাজ বা সেবা গ্রহণ করা হয়;
(৫) ‘‘ট্রাইব্যুনাল’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল অথবা মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল হিসাবে নিযুক্ত (assigned) বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোন ট্রাইব্যুনাল;
(৬) ‘‘দাসত্ব’’ অর্থ কোন ব্যক্তির অবস্থান বা মর্যাদার (status) এমন পর্যায়ে অবনমন যাহার ফলে উক্ত ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক সম্পত্তির মত নিয়ন্ত্রিত ও ব্যবহৃত হয় এবং উক্ত ব্যক্তি কর্তৃক গৃহীত কোন ঋণ বা সম্পাদিত কোন চুক্তির কারণে উদ্ভুত কোনো শর্ত বা অবস্থাও (condition) উহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(৭) ‘‘দূতাবাস’’ অর্থ বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কোন মিশন যা দূতাবাস, হাইকমিশন, উপ- হাইকমিশন, বা সহকারী হাইকমিশন এবং উক্ত দেশসমূহে অবস্থিত কনস্যুলেট- জেনারেল এবং কনস্যুলেট এবং ভিসা অফিসসমূহও উহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(৮) ‘‘পতিতাবৃত্তি’’ অর্থ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অথবা অর্থ বা সুবিধা (kind) লেনদেন করিয়া কোন ব্যক্তির যৌন শোষণ বা নিপীড়ন;
(৯) ‘‘পতিতালয়’’ অর্থ পতিতাবৃত্তি পরিচালনার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কোন বাড়ি, স্থান বা স্থাপনা;
(১০) ‘‘মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি’’ বা ‘‘ভিকটিম’’ অর্থ এই আইনের অধীন সংঘটিত মানব পাচার অপরাধের শিকার কোন ব্যক্তি এবং উক্ত ব্যক্তির আইনগত অভিভাবক বা উত্তরাধিকারীও (legal heirs) ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(১১) ‘‘প্রতারণা’’ (fraud) অর্থ ঘটনা বা আইন লইয়া ইচ্ছাকৃত বা দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে কথা বা আচরণ বা লিখিত কোন চুক্তি বা দলিল দ্বারা অন্যকে প্রতারিত (to defraud) বা প্রলুদ্ধ (to induce)বা ভুল পথে পরিচালিত করা এবং প্রতারণাকারী ব্যক্তি বা অন্য কোন ব্যক্তির অভিপ্রায়কে কেন্দ্র করিয়া সংঘটিত প্রবঞ্চনা (deception) এবং চুক্তি আইন, ১৮৭২ (১৮৭২ সনের ৯নং আইন) এর ধারা ১৭ এ যেই অর্থে ”Fraud ”অভিধাটি ব্যবহৃত হইয়াছে তাহাও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(১২) ‘‘বলপ্রয়োগ’’ অর্থ শক্তি প্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শন বা মনস্তাত্ত্বিকভাবে চাপ প্রয়োগ এবং ইহার সহিত কোন প্রকার ক্ষতিসাধন করিবার বা দৈহিকভাবে আটক রাখিবার হুমকি প্রদর্শন, নির্যাতন বা কোন ব্যক্তির প্রাতিষ্ঠানিক, দাপ্তরিক বা আইনগত অবস্থানকে অন্য কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কাজে লাগাইবার হুমকি প্রদান বা মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(১৩) ‘‘ব্যক্তি’’ অর্থ স্বাভাবিক ব্যক্তিসহ (natural person)যে কোন কোম্পানী, অংশীদারী কারবার বা ফার্ম বা একাধিক ব্যক্তির সমিতি বা সংঘ তাহা নিবন্ধিত হউক বা না হউক;
(১৪) ‘‘শিশু’’ অর্থ আঠার বৎসর বয়স পূর্ণ করে নাই এমন কোন ব্যক্তি;
(১৫) ‘‘শোষণ’’ বা ‘‘নিপীড়ন’’ (exploitation) অর্থ কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাহার সম্মতিক্রমে বা বিনা সম্মতিতে কৃত নিম্নলিখিত কার্যসমূহ, তবে কেবল এইসব বিষয়েই ইহার অর্থ সীমিত হইবেনাঃ—
(ক) পতিতাবৃত্তি বা যৌন শোষণ বা নিপীড়নের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে শোষণ বা নিপীড়ন;
(খ) কোন ব্যক্তিকে পতিতাবৃত্তি অথবা পর্ণোগ্রাফি উৎপাদন বা বিতরণে নিয়োজিত করিয়া মুনাফা ভোগ;
(গ) জবরদস্তিমূলক শ্রম বা সেবা আদায়;
(ঘ) ঋণ-দাসত্ব (debt-bondage), দাসত্ব বা সার্ভিচিউড্(servitude) , দাসত্বরূপ কর্মকাণ্ড, বা গৃহস্থালীতে সার্ভিচিউড্;
(ঙ) প্রতারণামূলক বিবাহের মাধ্যমে শোষণ বা নিপীড়ন;
(চ) কোন ব্যক্তিকে জোরপূর্বক বিনোদন ব্যবসায় ব্যবহার;
(ছ) কোন ব্যক্তিকে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা; এবং
(জ) ব্যবসা করিবার উদ্দেশ্যে অপরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গহানী বা কাউকে বিকলাঙ্গ করা;
(১৬) ‘‘সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র ’’ অর্থ জাতীয়তা এবং অবস্থান নির্বিশেষে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির কাঠামোবদ্ধ কোন সংগঠন যাহা নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত সক্রিয় এবং যাহার সদস্যরা এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে একত্রে কাজ করে;
(১৭) ‘‘সম্মতি’’ অর্থ কোন ব্যক্তির স্বাধীন এবং স্বজ্ঞানে প্রদত্ত মতামত যাহা তাহার বয়স, লিঙ্গ এবং আর্থ- সামাজিক পশ্চাদপদতার কারণে সৃষ্ট তাহার দুর্বল অবস্থান কর্তৃক প্রভাবিত হইবেনা;
(১৮) ‘‘সরকারি কর্মকর্তা’’ (public servant/official) অর্থ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ ( ১৮৬০ সনের ৪৫ নং আইন) এর ধারা ২১ এ বর্ণিত কোনো জনসেবক বা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫২ এর সংজ্ঞানুসারে রাষ্ট্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি যিনি এই আইনের অধীন কোন আইনি দায়িত্ব পালন বা বহন করেন;
(১৯) ‘‘সার্ভিচিউট’’ (servitude) অর্থ কাজ বা সেবা প্রদান করিবার বাধ্যবাধকতা অথবা কাজ বা সেবার জবরদস্তিমূলক শর্তাবলী যাহা হইতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিষ্কৃতি মেলেনা বা যাহা তিনি ঠেকাইতে বা পরিবর্তন করিতে পারেন না।
ধারা-৩:মানব পাচার
(১) ‘‘মানব পাচার’’ অর্থ কোন ব্যক্তিকে—
(ক) ভয়ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগ করিয়া; বা
(খ) প্রতারণা করিয়া বা উক্ত ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক বা পরিবেশগত বা অন্য কোন অসহায়ত্বকে (vulnerability) কাজে লাগাইয়া; বা
(গ) অর্থ বা অন্য কোন সুবিধা (kind) লেনদেন-পূর্বক উক্ত ব্যক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ রহিয়াছে এমন ব্যক্তির সম্মতি গ্রহণ করিয়া;
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাহিরে যৌন শোষণ বা নিপীড়ন বা শ্রম শোষণ বা অন্য কোনো শোষণ বা নিপীড়নের (exploitation) উদ্দেশ্যে বিক্রয় বা ক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকাইয়া রাখা বা আশ্রয় দেওয়া (harbour)।
(২) যেইক্ষেত্রে কোন শিশু পাচারের শিকার হয়, সেইক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এর দফা (ক) হইতে (গ) তে বর্ণিত মানব পাচার অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমসমূহ (means)অনুসৃত হইয়াছে কিনা তাহা বিবেচিত হইবেনা।
ব্যাখ্যা।— এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, যদি কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাহিরে প্রতারণার মাধ্যমে, অসৎ উদ্দেশ্যে এবং বাধ্যতামূলক শ্রম বা ‘সার্ভিচিউড’ (servitude) বা ধারা-২ এর উপ-ধারা (১৫) এ বর্ণিত কোনো শোষণ বা নিপীড়নমূলক পরিস্থিতির শিকার হইতে পারে মর্মে জানা থাকা সত্বেও অন্য কোন ব্যক্তিকে কাজ বা চাকুরীর উদ্দেশ্যে গমন, অভিবাসন বা বহির্গমন করিতে প্রলুব্ধ বা সহায়তা করে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির উক্ত কর্ম উপ-ধারা (১) এ সংজ্ঞায়িত ‘‘মানব পাচার’’ এর অন্তর্ভুক্ত হইবে।
ধারা-৪:আইনের প্রাধান্য এবং ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮, ইত্যাদির প্রযোজ্যতা
(১) আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলী কার্যকর হইবে–
তবে শর্ত থাকে যে, প্রচলিত অন্য কোন আইনে ভিকটিম এবং সাক্ষীর সুরক্ষা বিষয়ক শ্রেয় মানদণ্ডের বিধান থাকিলে সেই সকল বিধানসমূহ এই আইনের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়া সাপেক্ষে প্রযোজ্য হইবে।
(২) এই আইনের অধীন মামলা বা অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, অপরাধসমূহের বিচার এবং বিচার সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে এই আইনে কোন বিধান না থাকিলে, ক্ষেত্রমত, ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ (১৮৯৮ সনের ৫ নং আইন) এবং সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ (১৮৭২ সনের ১ নং আইন) এর বিধানাবলী প্রযোজ্য হইবে।
(৩) এই আইনের অধীন অপরাধ ও দণ্ডের দায়-দায়িত্বের বিষয়ে দণ্ডবিধি, ১৮৬০, (১৮৬০ সনের ৪৫ নং আইন) এর তৃতীয় অধ্যায়ের বিধানাবলী প্রযোজ্য হইবে।
(৪) এই আইনের সংঘটিত অপরাধসমূহ এক্সট্রাডিশন আইন, ১৯৭৪ (১৯৭৪ সনের ৫৮ নং আইন) এর ধারা ২(১)(ক) তে সংজ্ঞায়িত ”extradition” অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে।
(৫) এই আইন অভিবাসন (emigration) ও বহিরাগমন (immigration) বিষয়ক অন্যান্য প্রচলিত আইনের পরিপূরক হইবে এবং তাহাদের ব্যত্যয়ে ব্যবহৃত হইবেনা।
ধারা-৫:এই আইনের অতিরাষ্ট্রিক (extraterritorial) প্রয়োগ
(১) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার বাহিরে অথবা বাংলাদেশের কোন জাহাজ বা বিমানে কোন ব্যক্তি বাংলাদেশী কোন নাগরিকের বিরুদ্ধে এই আইনের আওতাধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করিলে এই আইনের বিধানাবলী কার্যকর হইবে।
(২) যদি কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের বাহির হইতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অথবা বাংলাদেশের অভ্যন্তর হইতে বাংলাদেশের বাহিরে এই আইনের আওতাধীন কোন অপরাধ সংঘটন করে তাহা হইলে উক্ত অপরাধ ও তাহা সংঘটনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বাংলাদেশে সংঘটিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত ব্যক্তি ও অপরাধের ক্ষেত্রে এই আইনের বিধানাবলী কার্যকর হইবে।
দ্বিতীয় অধ্যায়
মানব পাচার ও তদ্সংশ্লিষ্ট অপরাধসমূহ এবং দণ্ড
ধারা-৬:মানব পাচার নিষিদ্ধকরণ ও দণ্ড
(১) কোন ব্যক্তি ধারা ৩ এ উল্লিখিত কোন কার্য করিলে উহা মানব পচার অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে।
(২) মানব পাচার অপরাধ সংঘটনকারী কোন ব্যক্তি অনধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫(পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫০(পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা-৭:সংঘবদ্ধ মানব পাচার অপরাধের দণ্ড
কোন সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর একাধিক সদস্য গোষ্ঠীর সকল সদস্যের সাধারণ অভিপ্রায় সাধনের উদ্দেশ্যে কোন আর্থিক বা অন্য কোনো বস্ত্তগত বা অবস্ত্তগত মুনাফা অর্জনের নিমিত্ত এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটন করিলে উক্ত গোষ্ঠীর প্রত্যেক সদস্য উক্ত অপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত হইবে এবং অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অন্যূন ৭(সাত) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫(পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা-৮:অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা, ষড়যন্ত্র বা প্রচেষ্টা চালানোর দণ্ড
(১) কোন ব্যক্তি মানব পাচার অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা প্রদান করিয়া, ষড়যন্ত্র করিয়া এবং প্রচেষ্টা চালাইয়া অথবা সজ্ঞানে কোন মানব পাচার অপরাধ সংঘটন বা সংঘটিত করিবার সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তাহার সম্পত্তি ব্যবহার করিবার অনুমতি প্রদান করিয়া অথবা কোন দলিল-দস্তাবেজ গ্রহণ, বাতিল, গোপন, অপসারণ, ধ্বংস বা তাহার স্বত্ত্ব গ্রহণ করিয়া নিজেকে উক্ত অপরাধের সহিত জড়িত করিলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর এবং অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(২) কোন ব্যক্তি এই আইনের আওতাধীন কোন অপরাধ সংঘটনে সহযোগী (abettor) হইলে উক্ত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য ধার্যকৃত দণ্ডের সমপরিমাণ দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা-৯: জবরদস্তি বা দাসত্বমূলক শ্রম বা সেবা প্রদান করিতে বাধ্য করিবার দণ্ড
কোন ব্যক্তি বেআইনিভাবে অন্য কোন ব্যক্তিকে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করাইলে অথবা শ্রম বা সেবা প্রদান করিতে বাধ্য করিলে বা ঋণ-দাস করিয়া রাখিলে বা বলপ্রয়োগ বা যে কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করিলে অথবা করিবার হুমকি প্রদর্শন করিয়া শ্রম বা সেবা আদায় করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ১২ (বার) বৎসর এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা-১০: মানব পাচার অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে অপহরণ, চুরি এবং আটক করিবার দণ্ড
(১) কোন ব্যক্তি মানব পাচারের অপরাধ সংঘটনের অভিপ্রায়ে বা যৌন শোষণ বা নিপীড়নসহ এই আইনের ধারা ২(১৫) এ বর্ণিত অন্য কোন শোষণের উদ্দেশ্যে অন্য কোন ব্যক্তিকে অপহরণ, গোপন অথবা আটক করিয়া রাখিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(২) মানব পাচারের অপরাধ সংঘটনের অভিপ্রায়ে কোন ব্যক্তি কোন নবজাত শিশুকে কোন হাসপাতাল, সেবা-সদন, মাতৃ-সদন, শিশু-সদন, বা উক্ত নবজাত শিশুর পিতা-মাতার হেফাজত হইতে চুরি করিলে বা অপহরণ করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা-১১:পতিতাবৃত্তি বা অন্য কোনো প্রকারের যৌন শোষণ বা নিপীড়নের জন্য আমদানী বা স্থানান্তরের দণ্ড
কোন ব্যক্তি জবরদস্তি বা প্রতারণা করিয়া বা প্রলোভন দেখাইয়া কোন ব্যক্তিকে পতিতাবৃত্তি অথবা অন্য কোন প্রকারের যৌন শোষণ বা নিপীড়নমূলক কাজে নিয়োগ করিবার উদ্দেশ্যে বিদেশ হইতে বাংলাদেশে আনয়ন করিলে বা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্থানান্তরিত করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা-১২:পতিতালয় পরিচালনা বা কোন স্থানকে পতিতালয় হিসাবে ব্যবহারের অনুমতি প্রদানের দণ্ড
(১) কোন ব্যক্তি পতিতালয় স্থাপন বা পরিচালনা করিলে অথবা তাহা স্থাপন বা পরিচালনা করিতে সক্রিয়ভাবে সহায়তা বা অংশগ্রহণ করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর এবং অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং ইহার অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(২) কোন ব্যক্তি, যিনি—
(ক) ভাড়াটিয়া, ইজারাদার (lessee) , দখলদার বা কোন স্থান দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি, জানিয়া-শুনিয়া উক্ত স্থান বা এর কোনো অংশবিশেষ পতিতালয় হিসাবে ব্যবহার করিবার অনুমতি প্রদান করিলে; অথবা
(খ) কোন বাড়ির মালিক, ইজারা-দাতা (lessor) অথবা জমির মালিক অথবা উক্ত মালিক বা ইজারা-দাতার কোন প্রতিনিধি উক্ত বাড়ি অথবা উহার কোন অংশবিশেষ পতিতালয় হিসাবে ব্যবহৃত হইবে তাহা জানা সত্ত্বেও উক্ত বাড়ি বা জমি ভাড়া প্রদান করিলে;
তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর এবং অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা-১৩: পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে আহবান জানাইবার দণ্ড
কোন ব্যক্তি রাস্তায় বা জনসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে অথবা গৃহ অভ্যন্তরে বা গৃহের বাহিরে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে মুখের ভাষায় বা অংগভঙ্গি করিয়া বা অশালীন ভাব-ভঙ্গি দেখাইয়া অন্য কোন ব্যক্তিকে আহবান করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা-১৪:ভিকটিম বা মামলার সাক্ষীকে হুমকি প্রদানের দণ্ড
কোন ব্যক্তি মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি বা মামলার সাক্ষীকে বা তাহার পরিবারের কোনো সদস্যকে হুমকি প্রদান, ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগ করিয়া এই আইনের অধীন রুজুকৃত কোন মামলার তদন্ত বা বিচারকার্যে কোনরূপ গুরুতর বিঘ্ন সৃষ্টি করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর এবং অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারা-১৫:মিথ্যা মামলা বা মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের দণ্ড
(১) কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধন করিবার উদ্দেশ্যে এই আইনের অধীন মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা বা মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করিলে বা আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করিলে বা অন্য কোন ব্যক্তিকে তাহা করিতে বাধ্য করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর এবং অন্যূন ২ (দুই) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(২) এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত ট্রাইব্যুনাল কোন লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অথবা তাহার স্বীয় ক্ষমতায় উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত অপরাধ আমলে লইয়া তাহার বিচার শুরু করিতে পারিবে এবং প্রয়োজনে, কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া, মূল মামলার বিচার স্থগিত করিতে পারিবে।
ধারা-১৬:অপরাধের আমলযোগ্যতা, আপোষযোগ্যতা ও জামিনযোগ্যতা
এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ আমলযোগ্য (cognizable) , অ-জামিনযোগ্য(non-bailable) এবং অ-আপোসযোগ্য (non-compoundable) হইবে।
তৃতীয় অধ্যায়
অভিযোগ দায়ের এবং তদন্ত
ধারা-১৭:অভিযোগ দায়ের
(১) এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটিত হইলে কোন ব্যক্তি পুলিশ অথবা ট্রাইব্যুনালের নিকট উক্ত অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবে এবং পুলিশ এই ধরণের অভিযোগ আনয়নকারী ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান করিবে এবং আইনি কার্যধারার কারণে অন্যরূপ প্রয়োজন না হইলে, তাহার নাম পরিচয় গোপন রাখিবে।
(২) ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনা করিবার জন্য সরকার, প্রয়োজন মনে করিলে, এক বা একাধিক বিশেষ প্রসিকিউটর (রাষ্ট্রপক্ষীয় আইনজীবী) নিয়োগ করিতে পারিবে।
(৩) ট্রাইব্যুনাল উপ-ধারা (২) এর অধীন নিযুক্ত কোন বিশেষ প্রসিকিউটরের বিরুদ্ধে দায়িত্বে গুরুতর অবহেলার প্রতিবেদন সরকারের নিকট দাখিল করিলে সরকার উক্ত প্রসিকিউটরকে অপসারণ বা প্রতিস্থাপিত করিবে।
ধারা-১৮: অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে আইনগত অনুমান
কোন ব্যক্তির হেফাজত হইতে অথবা তাহার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে থাকা কোন স্থান হইতে মানব পাচার অপরাধের শিকার কোন ব্যক্তিকে অথবা মানব পাচার অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত কোন কিছু উদ্ধার করা হইলে এবং উক্ত ব্যক্তিকে যদি মানব পাচারকারী হিসাবে যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ হয় অথবা তিনি যদি উদ্ধারকৃত ভিকটিম কর্তৃক মানব পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত হন, তবে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে, উক্ত ব্যক্তি এই আইনের অধীন মানব পাচার অপরাধ সংঘটন করিয়াছেন বলিয়া অনুমান করা যাইবে।
ধারা-১৯:তদন্ত
(১) পুলিশের নিকট এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনের সংবাদ আসিলে বা ট্রাইব্যুনাল কোন অপরাধের তদন্তের নির্দেশ দিলে সংশ্লিষ্ট থানার উপ-পরিদর্শকের নিম্ন পদমর্যাদার নহেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা এই আইনের অধীন তদন্তকার্য সম্পাদন করিবেন।
(২) এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটিত হইতে পারে এমন ক্ষেত্রে পুলিশ অপরাধ সংঘটনের এজাহার (first information report) দাখিলের পূর্বে প্রতিরোধমূলক অনুসন্ধান (proactive inquiry) পরিচালনা করিতে পারিবেন।
(৩) ধারা ২০ এর বিধান সাপেক্ষে, উপ-ধারা (১) এর অধীন মামলা দায়েরের বা ট্রাইব্যুনাল হইতে তদন্তের নির্দেশ প্রাপ্তির অনধিক ৯০ (নববই) কার্যদিবসের মধ্যে এই ধারার অধীন তদন্ত সম্পন্ন করিতে হইবে।
(৪) উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন না হইলে, তদন্ত কর্মকর্তা উক্ত সময়সীমা শেষ হইবার অন্তত তিন কার্যদিবস পূর্বে তাহার নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা অথবা, ট্রাইব্যুনাল হইতে তদন্তের নির্দেশ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে, ট্রাইব্যুনালের নিকট সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য লিখিতভাবে আবেদন করিবেন অথবা উক্ত নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা অথবা, ক্ষেত্রমত, ট্রাইব্যুনাল উক্ত সময়সীমার মধ্যে তদন্ত সম্পাদনে ব্যর্থতার জন্য প্রদর্শিত কারণে সন্তুষ্ট হইলে তদন্তের সময়সীমা অতিরিক্ত ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবস বৃদ্ধি করিতে পারিবে—
তবে শর্ত থাকে যে, আন্তঃরাষ্ট্রীয় তদন্তের ক্ষেত্রে কেবল ট্রাইব্যুনাল এই ধরনের তদন্তের সময়সীমা বৃদ্ধি করিতে পারিবে এবং উক্ত ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল তাহার স্বীয় বিবেচনায় যৌক্তিক মেয়াদে তদন্তের সময়সীমা বৃদ্ধি করিবে।
(৫) এই আইনের অধীন কোন আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে বিদেশী সাক্ষ্য-প্রমাণ নিরীক্ষণ করিবার জন্য বিদেশ গমনের আবশ্যকতা দেখা দিলে, ট্রাইব্যুনালের অনুমতিক্রমে, তদকর্তৃক নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তদন্তকার্য সম্পন্ন করিবার উদ্দেশ্যে পুলিশ কর্তৃপক্ষ একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করিবে এবং উক্ত তদন্ত দলকে যথাসম্ভব প্রশাসনিক এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করিবে।
(৬) এই আইনের অধীন পুলিশের তদন্ত, নিরাপত্তা বিধান ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম ও দায়িত্বসমূহের সমন্বয় এবং তদারক করিবার উদ্দেশ্যে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, পুলিশ সদর দপ্তরে একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন করিবে।
ধারা-২০: প্রতিরোধমূলক তল্লাশী এবং আটক
(১) কোন মানব পাচার অপরাধ প্রতিরোধকল্পে, উপ-পরিদর্শকের নিম্ন পদমর্যাদার নহেন, এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তা তাহার ঊর্ধ্বতন নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তার অনুমোদন সাপেক্ষে বা নির্দেশে এই আইনের অধীন প্রতিরোধমূলক তল্লাশী করিবার, যে কোন আঙ্গিনায় প্রবেশ করিবার এবং এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে এমন সরঞ্জামাদি বা তথ্য-প্রমাণ বা দলিল আটক করিবার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হইবেন।
(২) কোন ব্যক্তির সহিত অথবা কোন স্থানে এই আইনের অধীন অপরাধ সংঘটনের উপযোগী সরঞ্জাম বা উপাদান উপস্থিত আছে এবং তল্লাশী পরোয়ানা সংগ্রহে বিলম্বের কারণে অপরাধটি প্রকৃতই সংঘটিত হইবার বা কোন সাক্ষ্য প্রমাণ নষ্ট হইবার যুক্তিসঙ্গত কারণ বিদ্যমান থাকিলে উপ-ধারা (১) এর অধীন বিনা পরোয়ানায় তল্লাশী করা যাইবে এবং তল্লাশী চালাইবার পূর্বে তল্লাশীর জন্য প্রস্ত্তত অফিসার যেই স্থানে তল্লাশী চালাইবেন উক্ত স্থানটি যেই এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার দুই বা ততোধিক সম্মানিত অধিবাসীকে তল্লাশীতে হাজির থাকিতে ও উহার সাক্ষী হইতে আহবান জানাইবেন এবং উক্ত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তল্লাশী চালাইতে হইবে এবং উক্ত অফিসার তল্লাশীর সময় জব্দকৃত সমস্ত সামগ্রী এবং যেই সকল স্থানে উক্ত সামগ্রীসমূহ পাওয়া গিয়াছে তাহাদের একটি তালিকা প্রস্ত্তত করিবেন এবং উহাতে সাক্ষীগণের স্বাক্ষর গ্রহণ করিবেন।
(৩) ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ১০৩ এর বিধানের আলোকে এবং যেই ব্যক্তির শরীর বা সম্পত্তিতে তল্লাশী চালানো হইবে তাহার মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদার প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক উপ-ধারা (১) এর অধীন তল্লাশী সম্পাদন করিতে হইবে এবং, বিশেষতঃ, কোন নারীর বিরুদ্ধে তল্লাশী পরিচালনা করা হইলে তল্লাশী দলের সহিত অবশ্যই একজন নারী কর্মকর্তা বা নারী প্রবেশন কর্মকর্তা থাকিবেন।
(৪) তল্লাশী সম্পাদনের ৭২ (বাহাত্তর) ঘন্টার মধ্যে তল্লাশী কার্যে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তা তল্লাশীর কারণ এবং ফলাফলের বিবরণ সম্বলিত প্রতিবেদন তৈরী করিবেন এবং তাহার অনুলিপি ইলেকট্রনিক বা অন্য কোনো উপায়ে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট এবং একই সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধের বিচারের এখতিয়ারসম্পন্ন ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করিবে, যাহা ট্রাইব্যুনালের হেফাজতে রক্ষিত থাকিবে এবং উক্ত কর্মকর্তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং যাহার বিরুদ্ধে তল্লাশী পরিচালিত হইয়াছে তাহাকে প্রতিবেদনের একটি করিয়া অনুলিপি প্রদান করিতে হইবে।
চতুর্থ অধ্যায়
মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল এবং অপরাধের বিচার
ধারা-২১: মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন
(১) এই আইনের অধীন অপরাধসমূহের দ্রুত বিচারের উদ্দেশ্যে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের সমন্বয়ে যেকোন জেলায় মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত, সরকার প্রত্যেক জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে উক্ত জেলার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল হিসাবে নিয়োগ (assign) বা ক্ষমতায়িত করিতে পারিবে।
(৩) এই আইনের অধীন অপরাধসমূহের বিচার কেবল এই আইনের অধীন গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচারযোগ্য হইবে।
(৪) যে আঞ্চলিক অধিক্ষেত্রে কোন অপরাধ বা উহার অংশবিশেষ সংঘটিত হইয়াছে অথবা মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিকে যে অঞ্চল হইতে উদ্ধার করা হইয়াছে বা তিনি যে অঞ্চলের অধিবাসী সেই আঞ্চলিক অধিক্ষেত্রের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ট্রাইব্যুনাল উক্ত অপরাধের বিচার করিতে পারিবে।
(৫) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার বাহিরে বাংলাদেশী কোন নাগরিক বা কোম্পানী অথবা স্বভাবতঃ বাংলাদেশে আবাসী (habitually resident in Bangladesh) এমন কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটন করিলে, তিনি যেই ট্রাইব্যুনালে আঞ্চলিক অধিক্ষেত্রের অধিবাসী ছিলেন অথবা কোম্পানীর ক্ষেত্রে উক্ত কোম্পানীর নিবন্ধিত অফিস (registered office) যে আঞ্চলিক অধিক্ষেত্রে ছিল, সেই ট্রাইব্যুনাল উক্ত অপরাধের বিচার করিতে পারিবে।
ধারা-২২: ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা
(১) এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, ট্রাইব্যুনালের দায়রা আদালতের সকল ক্ষমতা থাকিবে এবং ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচারের স্বার্থে কোন সুরক্ষামূলক (protective order) আদেশসহ কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তাহাদের অধীনে বা ব্যবস্থাপনায় থাকা কোন প্রতিবেদন, দলিল বা নিবন্ধন-বহি (register) ট্রাইব্যুনালের নিকট উত্থাপন করিবার নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।
(২) এই আইনের অধীন অপরাধসমূহের দ্রুত বিচার অথবা কোন ভিকটিম বা সাক্ষীর নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রাইব্যুনাল যে কোন স্থানে নিজে অথবা কমিশনের মাধ্যমে, সরাসরি বা ইলেকট্রনিক উপায়ে, কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ বা তাহাকে পরীক্ষা করিতে পারিবে এবং ট্রাইব্যুনাল এই আইনের অধীন কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য বা প্রতিবেদন, তাহাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হইবার দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি প্রদান করিয়া, সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করিতে পারিবে।
(৩) এই আইনের অধীন কোন অপরাধের বিচার চলাকালে অথবা কোন অপরাধের অভিযোগ উত্থাপনের পূর্বে ট্রাইব্যুনাল কোন ব্যক্তির আবেদনক্রমে বা স্বীয় ক্ষমতাবলে ট্রাইব্যুনাল নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত এবং শর্তাধীনে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিকে কোন সরকারি বা বেসরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে বা সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ কোন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হেফাজতে প্রদান করিতে পারিবে এবং মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি নারী বা শিশু হইলে ট্রাইব্যুনাল এই উপ-ধারার অধীনে আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে তাহার মতামত বিবেচনা করিতে পারিবে।
(৪) কোন মামলায় চার্জ গঠনের পূর্বকাল পর্যন্ত, প্রয়োজনীয় ক্ষমতাসম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট উপ-ধারা (৩) এ প্রদত্ত ক্ষমতা, প্রয়োজনীয় অভিযোজন-সাপেক্ষে (adaptation) , প্রয়োগ করিতে পারিবে।
(৫) এই আইনের অধীন অভিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশন পক্ষের (prosecution) বক্তব্য শুনিয়া এবং কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া জামিন প্রদান করিতে পারিবে এবং এই উপ-ধারার অধীন জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে স্ব-বিবেচনা (discretion) প্রয়োগের সময় ট্রাইব্যুনাল অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি সংঘটিত অপরাধের তীব্রতা, ভিকটিম এবং সাক্ষীর নিরাপত্তা ও ক্ষতি এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধের পূর্ব-ইতিহাস বিবেচনা করিবে।
(৬) কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন প্রদানের সময় জামিন-আদেশের সহিত ট্রাইব্যুনাল তদকর্তৃক নির্দিষ্টকৃত দিনে জামিনপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পুলিশের নিকট বা ট্রাইব্যুনালের কোন কর্মকর্তার নিকট হাজিরা প্রদান করিবার নির্দেশনাসহ নিয়ন্ত্রণ-আদেশ (control order) সংযুক্ত করিতে পারিবে।
ধারা-২৩: ট্রাইব্যুনালের অধিকতর তদন্ত সংক্রান্ত ক্ষমতা
ট্রাইব্যুনাল কোন ব্যক্তির আবেদনক্রমে অথবা স্বীয় ক্ষমতায় কোন মামলার অধিকতর তদন্তের এবং তদকতৃর্ক নির্দিষ্টকৃত সময়ের মধ্যে তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করিতে আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
ধারা-২৪: বিচারকার্য সম্পন্নের সময়সীমা
(১) এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের অভিযোগ গঠনের ১৮০ (একশত আশি) কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল বিচারকার্য সম্পন্ন করিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর বিধান সত্ত্বেও, উক্ত সময়সীমার মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করিতে ব্যর্থতা বিচারকার্যকে বাতিল করিবে না, কিন্তু, ট্রাইব্যুনাল উক্ত সময়ের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করিতে সমর্থ না হইবার কারণ ব্যাখ্যা করিয়া ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে প্রতিবেদন প্রেরণ করিবে।
ধারা-২৫:রুদ্ধ-কক্ষ বিচার (trial in-camera)
ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং নারী কিংবা শিশু ভিকটিমের সুরক্ষার প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল কারণ উল্লেখ করিয়া এই আইনের অধীন কোন অপরাধের বিচারকার্য কেবল মামলার পক্ষগণ এবং তাহাদের নিযুক্ত আইনজীবীগণ বা ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে অন্যান্য প্রতিনিধিগণের উপস্থিতিতে রুদ্ধ-কক্ষে অনুষ্ঠানের আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
ধারা-২৬:রুদ্ধ-কক্ষ বিচার (trial in-camera)দোভাষী নিয়োগ
এই আইনের অধীন কোন অপরাধের বিচারের যেকোন পর্যায়ে পাচারের শিকার ব্যক্তি বা অন্য কোন সাক্ষী অনুবাদক বা দোভাষী বা প্রয়োজনে ইশারা ভাষার দোভাষী নিয়োগের অনুরোধ করিতে পারিবে এবং ট্রাইব্যুনাল সেইমর্মে উপযুক্ত আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
ধারা-২৭: সম্পত্তি আটক (seizure) , অবরুদ্ধকরণ (freeze)ও বাজেয়াপ্তকরণ (confiscation) এবং অতিরাষ্ট্রিক নিষেধাজ্ঞা
(১) বিচারকার্যের যে কোন পর্যায়ে, স্বীয় উদ্যোগে বা কোন ব্যক্তির আবেদনক্রমে ট্রাইব্যুনাল এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক অর্জিত অস্থাবর বা স্থাবর সম্পত্তি আটক, অবরুদ্ধ বা বাজেয়াপ্ত করিবার নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।
(২) কোন বাড়ি, জমি বা যানবাহন এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনে বা সংঘটনের প্রচেষ্টায় ব্যবহৃত হইয়াছে বা হইতেছে বলিয়া যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস করিবার কারণ থাকিলে ট্রাইব্যুনাল উক্ত বাড়ি, জমি বা যানবাহন আটক রাখিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
(৩) এই আইনের অধীন কোন ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হইলে ট্রাইব্যুনাল উক্ত দোষী ব্যক্তি কর্তৃক উক্ত অপরাধ সংঘটনের ফলে অর্জিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করিতে পারিবে এবং উক্তরূপে বাজেয়াপ্তকৃত সম্পত্তি মানব পাচার প্রতিরোধ তহবিলে জমা হইবে।
(৪) এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের বিচারের স্বার্থে ট্রাইব্যুনাল বিদেশে অবস্থিত অপরাধলব্ধ অর্জিত সম্পত্তি এবং উক্ত সম্পত্তির মাধ্যমে পরবর্তীতে অভিযুক্ত ব্যক্তির অর্জিত অন্য কোন সম্পত্তি অবরুদ্ধ (freeze) এবং ক্রোক (attach) করিবার নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে এবং উক্ত নির্দেশ লংঘিত হইলে অভিযুক্ত ব্যক্তি অনধিক ৫(পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে এবং অন্যূন ২০(বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৫) এই ধারার অধীন অবরুদ্ধ বা ক্রোকযোগ্য সম্পত্তি নির্দিষ্টকরণে সরকার এবং বিদেশস্থ সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ দূতাবাস ট্রাইব্যুনালকে যথাযথ সহযোগিতা করিবে এবং উপ-ধারা (৪) এর অধীন কোন আদেশ জারি হইলে সরকার যেদেশে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি অবস্থিত সেই দেশের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে ট্রাইব্যুনালের উক্ত আদেশের ব্যাপারে অবগত করিবে।
ধারা-২৮: ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ
(১) এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের জন্য কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হইলে ট্রাইব্যুনাল তদকর্তৃক আদেশকৃত অর্থদণ্ডের অতিরিক্ত হিসাবে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিকে যৌক্তিক পরিমাণে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য তাহাকে আদেশ প্রদান করিতে পারিবে এবং এই ধরনের উক্তরূপ ক্ষতিপূরণ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সরাসরি অথবা প্রয়োজনে, the Public Demands Recovery Act, 1913 (Bengal Act No. III of 1913) এর বিধানানুযায়ী আদায়যোগ্য হইবে।
(২) ট্রাইব্যুনাল উপ-ধারা (১) এর অধীন ক্ষতিপূরণের আদেশ না দিয়া কেবল অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়া থাকিলে, ট্রাইব্যুনাল উক্ত আদেশকৃত অর্থদণ্ডের অর্থ বা উহার কোন অংশ পাচারের শিকার ব্যক্তি বা ভিকটিমকে প্রদানের আদেশদান করিতে পারিবে।
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন আদেশকৃত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণে ট্রাইব্যুনাল স্বীয় বিবেচনা প্রয়োগ করিবে এবং ক্ষতিপূরণের আদেশ প্রদানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার ব্যয়, অত্যাবশ্যক যাতায়াত এবং সাময়িক আবাসনের ব্যয়, হারানো আয়, যাতনা, প্রকৃত বা আবেগজনিত ক্ষতি এবং দুর্ভোগের তীব্রতা বিবেচনা করিবে।
ধারা-২৯: বিদেশী দলিল, লিখিত তথ্য প্রমাণাদি বা উপাদানের গ্রহণযোগ্যতা
(১) আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন বিদেশী লিখিত দলিল, আদালতের আদেশ বা রায়, তদন্ত প্রতিবেদন বা সরকারি ঘোষণা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ দ্বারা যথাযথভাবে সরবরাহকৃত এবং স্বাক্ষরিত ও প্রমাণীকৃত হইলে উহা সাক্ষ্য হিসাবে ট্রাইব্যুনালে গ্রহণযোগ্য হইবে, যদি তাহা বাংলাদেশে অবস্থিত সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস অথবা দূতাবাস না থাকিলে, দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ কতৃর্ক সত্যায়িত হইয়া থাকে।
(২) এই আইনের অধীন বিচার কার্যক্রমে সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসাবে গৃহীত হইতে হইলে কোন বাংলাদেশী কর্তৃক বিদেশে প্রস্তুতকৃত আমমোক্তারনামাসহ (power of attorney) যে কোন দলিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক এতদ্সংক্রান্ত প্রচলিত বিধি অনুসারে সত্যায়িত এবং প্রমাণীকৃত হইতে হইবে।
(৩) কোন দলিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা বাংলাদেশ দূতাবাস কতৃর্ক সত্যায়িত বা প্রমাণীকৃত হইলে সেই দলিলের বিষয়বস্ত্তর (content)সত্যাসত্যের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা উক্ত দূতাবাস দায়ী হইবেনা।
ধারা-৩০:ইলেকট্রনিক তথ্য প্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা
অডিও ভিস্যুয়াল যন্ত্র বা কোন ইলেকট্রনিক যোগাযোগের মাধ্যমে ধারণকৃত সাক্ষ্য প্রমাণ ট্রাইব্যুনালের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য (admissible) হইবে।
ধারা-৩১:আপিল
ট্রাইব্যুনালের কোন আদেশ, রায় বা দণ্ডের বিরুদ্ধে রায় প্রদান অথবা আদেশ বা দণ্ড ঘোষণার ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করা যাইবে।
পঞ্চম অধ্যায়
মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিবর্গ এবং সাক্ষীদিগকে সহায়তা এবং তাহাদের সুরক্ষা ও পুনর্বাসন
ধারা-৩২:মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিবর্গকে বা ভিকটিমদের চিহ্নিতকরণ এবং উদ্ধার
(১) সরকার মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, উদ্ধার, প্রত্যাবাসন এবং পুনর্বাসনকল্পে বিধি দ্বারা কর্মপ্রণালী তৈরী করিবে এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের সহিত অংশীদারিত্বে কাজ করিবে।
(২) মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, উদ্ধার, প্রত্যাবাসন এবং পুনর্বাসনের কর্মকাণ্ডসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের, বিশেষতঃ নারী ও শিশুদের কল্যাণ ও বিশেষ চাহিদার (special needs) দিকে লক্ষ্য রাখিয়া এবং তাহাদের উপযোগী (victims-friendly) প্রক্রিয়ায় পরিচালনা করিতে হইবে।
ধারা-৩৩:ভিকটিম বা মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিবর্গের প্রত্যাবাসন (repatriation) এবং প্রত্যাবর্তন (return)
(১) কোন বাংলাদেশী নাগরিক অন্য কোন দেশে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হইলে, সরকার সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের এবং প্রয়োজনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় উক্ত ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ফেরত আনিবার প্রক্রিয়ার সূচনা করিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন বিদেশী রাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস মানব পাচারের শিকার কোন বাংলাদেশী নাগরিক উক্ত দেশে আটক বা বন্দী অবস্থায় আছেন বলিয়া অবগত হইলে, উক্ত দূতাবাস ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করিবার, মুক্ত করাইবার এবং বাংলাদেশে পাঠাইবার প্রক্রিয়ার সূচনা করিবে।
(৩) মানব পাচারের শিকার কোন ব্যক্তি কোন মামলার কারণে কোন বিদেশী রাষ্ট্রে থাকিতে বাধ্য হইলে বাংলাদেশ দূতাবাস উক্ত ব্যক্তিকে আইনি পরামর্শ বা সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
(৪) যেই ক্ষেত্রে একজন বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি হিসাবে চিহ্নিত হইবেন সেইক্ষেত্রে যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করিয়া উক্ত ব্যক্তির জবানবন্দি গ্রহণ করতঃ সরকার সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের বাংলাদেশস্থ দূতাবাসের সহযোগিতায়, যথোপযুক্ত কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে, উক্ত ব্যক্তিকে তাহার স্বদেশে ফেরত পাঠাইবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
ধারা-৩৪:ভিকটিম বা মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিবর্গ এবং জনসাধারণকে সাধারণভাবে তথ্য সরবরাহ
(১) মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি সরকার বা পুলিশ বা ক্ষেত্রমত, বেসরকারি সংস্থাসমূহের নিকট হইতে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট ফৌজদারী মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্বন্ধে মাসে অন্তত একবার অবগত হইবার অধিকারী হইবে।
(২) তদন্তকারী কর্মকর্তা বা মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিকে চিহ্নিত ও উদ্ধারকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের অধিকার, আইনি সহায়তার সুযোগ এবং এই আইনের অধীন অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে অবগত করিবে।
(৩) মানব পাচার অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের গোপনীয়তার অধিকারের প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক উক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, উদ্ধার, স্থানান্তর, প্রত্যাবর্তন, প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত দায়িত্বসমূহ কার্যকরভাবে সম্পাদনে সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী, সাংবাদিক বা জনসাধারণকে সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসমেত একটি ব্যাপক ভিত্তিক তথ্যভাণ্ডার পরিচালনা করিবে।
ধারা-৩৫:আশ্রয় কেন্দ্র এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা
(১) মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা সেবা, পুনর্বাসন এবং পরিবারের সহিত পুনর্মিলনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার সমগ্র দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক আশ্রয় কেন্দ্র এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করিবে।
(২) এই আইন বলবৎ হইবার সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করিতে ইচ্ছুক অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে এবং শর্তাধীনে সরকার হইতে লাইসেন্স বা সাময়িক অনুমোদন লাভ না করিয়া কোন আশ্রয় কেন্দ্র বা পুনর্বাসন কেন্দ্র বা অন্য কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করিবেনাঃ
তবে শর্ত থাকে যে,ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত আশ্রয় বা পুনর্বাসন কেন্দ্রসমূহকে এই আইন বলবৎ হইবার ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে এই ধরনের লাইসেন্স বা অনুমোদন লইতে হইবে।
ধারা-৩৬:নিরাপত্তা বিধান (protection) , পুনর্বাসন এবং সামাজিক একাঙ্গীভূতকরণ (integration)
(১) উদ্ধার হইবার পর, মানব পাচার অপরাধের শিকার ব্যক্তিকে, স্বীয় পরিবারে ফেরত পাঠানো না হইলে, কোন সরকারি বা বেসরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে বা পুনর্বাসনকেন্দ্রে প্রেরণ করিতে হইবে এবং সেইক্ষেত্রে এতদবিষয়ক যাবতীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে সরকার বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাইতে হইবে।
(২) আশ্রয় বা পুনর্বাসনকেন্দ্রে অবস্থানরত মানব পাচারের শিকার যে কোন ব্যক্তি বা ভিকটিম সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতামত প্রদানের এবং টেকসই পুনর্বাসন ও সামাজিক একাঙ্গীভূতকরণ সুবিধাদিসহ শারীরিক চিকিৎসা এবং আইনি ও মানসিক পরামর্শ সেবা পাইবার অধিকারী হইবে।
ধারা-৩৭:ফৌজদারী বিচারের ক্ষেত্রে ভিকটিম বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং সাক্ষীর সুরক্ষা বিধান
(১) এই আইনের বিষয়বস্ত্ত লইয়া কর্মরত প্রত্যেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন ভিকটিম বা মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি এই আইন বা প্রচলিত অন্য কোন আইনের অধীনে যেন অভিযুক্ত না হন বা শাস্তি না পান তাহা নিশ্চিত করিতে সচেষ্ট থাকিবে।
(২) ট্রাইব্যুনালের অনুমতি ব্যতিরেকে মানব পাচারের শিকার কোন ব্যক্তি বা তাহার পরিবারের কোন সদস্যের নাম, ছবি বা তথ্য বা পরিচয় কেহ প্রচার বা সম্প্রচার করিতে পারিবে না এবং উক্ত বিধান লংঘনকারী ব্যক্তি অনধিক ০৬ (ছয়) মাসের কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৩) প্রত্যেক মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি বা সাক্ষী, তাহার প্রতি হুমকি প্রদর্শিত হইলে অথবা হুমকি বা যে কোন প্রকার ঝুঁকির আশঙ্কা সৃষ্টি হইলে পুলিশী নিরাপত্তা পাইবার এবং সরকার কর্তৃক প্রদেয় অন্যান্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার অধিকারী হইবে এবং আদালতে এবং অন্যান্য ফৌজদারী প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের সময় বা আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসের সময় মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি বা সাক্ষীর নিরাপত্তা বিধান করা সেই সব সরকারি সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হইবে।
ধারা-৩৮:শিশু ভিকটিম এবং শিশু সাক্ষীর অধিকার রক্ষা
(১) ভিকটিম এবং সাক্ষীর সুরক্ষা বিধান বিষয়ক এই আইনের বিধানসমূহের সামগ্রীকতাকে ক্ষুণ্ন না করিয়া, মানব পাচার অপরাধের শিকার শিশু এবং শিশু সাক্ষী লইয়া কাজ করিবার সময় ট্রাইব্যুনালসহ যে কোন ব্যক্তি শিশুর সর্বোত্তম কল্যাণ এবং অগ্রাধিকারের নীতি প্রয়োগ করিবে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দলিলে সন্নিবেশিত নীতিসহ আপাততঃ বলবৎ এতদবিষয়ক যে কোন আইনের বিধানসমূহ অনুসরণ করিবে এবং মানব পাচারের শিকার শিশুদের অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত হওয়া অথবা তাহাদের এবং শিশু সাক্ষীদের কলঙ্কিত হওয়া বা সামাজিকভাবে একঘরে হওয়া এড়াইবার জন্য এই আইনের অধীন কর্মরত সংশ্লিষ্ট সকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
(২) পুলিশ বা সরকার বা এই আইনের বিষয়বস্ত্ত লইয়া কর্মরত কোন ব্যক্তি শিশু-বান্ধব কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ বা শিশু-বান্ধব প্রক্রিয়া ব্যতীত অন্য কোনভাবে এই আইনের সহিত দ্বন্দ্বে (Conflict) বা ইহার সংস্পর্শে (Contact) আসা কোন শিশু লইয়া কাজ করিবে না এবং মানব পাচারের শিকার কোন শিশুকে বা ভিকটিম শিশুকে উন্নয়ন কেন্দ্রে (development centre/remand home) প্রেরণ করা বা আটক রাখা যাইবেনা।
ধারা-৩৯:ক্ষতিপূরণ আদায়ে দেওয়ানী মামলা রুজু করিবার অধিকার
ফৌজদারী মামলা রুজু করিবার অধিকার অক্ষুণ্ন রাখিয়া এবং দায়েরকৃত কোন ফৌজদারী মামলার পাশাপাশি, ভিকটিম বা পাচারের শিকার ব্যক্তি এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের ফলে সৃষ্ট তাহার প্রকৃত ক্লেশ (sufferance) বা আইনগত ক্ষতির (legal injury) জন্য বা উক্ত অপরাধের সহিত সম্পৃক্ত কোন চুক্তি লংঘনের জন্য দেওয়ানী আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করিতে পারিবে।
ধারা-৪০:মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান
মানব পাচারের শিকার কোন ব্যক্তি বা ভিকটিমকে সরকার এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত তহবিল হইতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করিতে পারিবে, তবে এই ধরনের সহায়তা কোন বেসরকারি সংস্থা হইতে অথবা আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ (২০০০ সনের ৬ নং আইন) অনুসারে আইনগত সহায়তা পাইবার ক্ষেত্রে তাহার কোন সুযোগ বা অধিকারকে খর্ব করিবে না।
ষষ্ঠ অধ্যায়
মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধে যৌথ বা পারস্পরিক আইনি সহযোগিতা
ধারা-৪১:মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধে যৌথ বা পারস্পরিক আইনি সহায়তা এবং সহযোগিতা
(১) এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধসমূহের তদন্ত, বিচার এবং বিচারিক কার্যক্রমে যৌথ বা পারস্পরিক আইনি সহায়তার ক্ষেত্র তৈরীর নিমিত্ত সরকার যে সকল দেশে এই আইনের অধীন মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিবর্গ, সাক্ষী, অপরাধলব্ধ অর্থ, অপরাধের উপকরণ, সাক্ষ্য-প্রমাণ বা বিবাদী বা অপরাধে সহায়তাকারী ব্যক্তি উপস্থিত থাকে বা থাকিবার সম্ভাবনা থাকে সেই সকল দেশের সহিত সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষর করিবে–
তবে শর্ত থাকে, এই উপ-ধারার অধীন সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষরিত না হওয়া পর্যন্ত এইরূপ যৌথ বা পারস্পরিক আইনি সহায়তা আদান-প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে এই আইনের কোন কিছুই সরকারকে নিবৃত্ত করিবে না।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন স্বাক্ষরিত কোন সমঝোতা স্মারক বা চুক্তির মাধ্যমে সরকার, নিম্নবর্ণিত বিষয়ে যৌথ বা পারস্পরিক আইনি সহায়তার বিধান করিতে পারিবে–
(ক) মানব পাচার অপরাধের তদন্ত, তল্লাশী বা আটক কার্যক্রম পরিচালনা এবং মানব পাচারের শিকার ব্যক্তির আইনগত সহযোগিতা সম্পর্কিত বিষয়;
(খ) শপথের মাধ্যমে সাক্ষীর পরীক্ষা এবং সাক্ষীর বক্তব্য, সরকারি প্রতিবেদন এবং আদালতে দাখিলকৃত সাক্ষ্য-প্রমাণাদি বিনিময়;
(গ) মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের এবং মানব পাচার অপরাধ সংঘটনকারী বা সংঘটনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পারস্পরিক বিনিময়;
(ঘ) অপরাধলব্ধ অর্থ বা সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ বা জরিমানা বা ক্রোক সংক্রান্ত আদালতের আদেশ কার্যকরকরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইনগত, কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক সহযোগিতা;
(ঙ) মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের টেকসই পুনর্বাসন এবং উক্ত ব্যক্তিদের স্বদেশে সামাজিকভাবে একাঙ্গীভূতকরণ।
সপ্তম অধ্যায়
বিবিধ
ধারা-৪২:মানব পাচার প্রতিরোধ তহবিল
(১) এই আইন বলবৎ হইবার পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ‘‘মানব-পাচার প্রতিরোধ তহবিল’’ নামে একটি তহবিল গঠন করিবে এবং উক্ত তহবিল বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিচালিত ও ব্যবহৃত হইবে।
(২) মানব পাচার প্রতিরোধ তহবিলে নিম্নবর্ণিত উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ জমা হইবে, যথাঃ—
(ক) সরকারের মঞ্জুরী বা অনুদান;
(খ) কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান; বা
(গ) কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান; এবং
(ঘ) মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনের উদ্দেশ্যে প্রাপ্ত অন্য যে কোন উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ।
ধারা-৪৩:জাতীয় মানব পাচার দমন সংস্থা
এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে জাতীয় মানব পাচার দমন সংস্থা নামে একটি সংস্থা গঠন করিতে পারিবে।
ধারা-৪৪:কোম্পানী বা ফার্ম কর্তৃক অপরাধ সংঘটন
এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তি কোন কোম্পানী বা ফার্ম হইলে, তাহা বাংলাদেশে নিবন্ধিত (incorporated) হউক বা না হউক, যে সকল ব্যক্তি উক্ত অপরাধ সংঘটিত হইবার সময় উক্ত কোম্পানী বা ফার্মের মালিক, পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব বা এজেন্টের দায়িত্বে ছিলেন তাহারা উক্ত অপরাধ সংঘটন করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন, যদি না অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রমাণ করিতে পারেন যে অপরাধটি তাহার অজ্ঞাতসারে সংঘটিত হইয়াছে এবং তাহা রোধ করিবার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন।
ধারা-৪৫: সমতার নীতির প্রয়োগ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে বিধান
(১) এই আইন অনুসারে কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি, মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি বা সাক্ষী লইয়া কাজ করিবার ক্ষেত্রে সমতার নীতি অনুসরণ করিতে হইবে এবং কাহারও সহিত কোন প্রকার বৈষম্য করা যাইবে না।
(২) কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে এই আইনের অধীন কোন সরকারি ক্ষমতা অপব্যবহারের অথবা তাহার আইনি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ প্রমাণিত হইলে ট্রাইব্যুনালের সুপারিশক্রমে তাহার নিয়োগকারী কতৃর্পক্ষ তাহার বিরুদ্ধে চাকুরী বিধি অনুসারে শৃঙ্খলাভঙ্গ-জনিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে এবং এই ধরনের কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানেরও আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীনে কোন শৃঙ্খলাভঙ্গ-জনিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত গৃহীত হইলে উক্তরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ১ (এক) মাসের মধ্যে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ উক্ত ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দাখিল করিবে।
ধারা-৪৬: বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা
(১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রদত্ত ক্ষমতার সামগ্রিকতাকে ক্ষুণ্ন না করিয়া, উক্ত বিধিতে নিম্নবর্ণিত সকল বা যে কোন বিষয়ে বিধান প্রণয়ন করা যাইবে, যথাঃ—
(১) মানব পাচার তহবিলের উৎস;
(২) তহবিল পরিচালনা;
(৩) তহবিল হইতে অনুদান গ্রহণের পদ্ধতি ও যোগ্যতা (method & criteria) ;
(৪) অনুদানের অর্থের পরিমাণ ও বিভাজন; এবং
(৫) বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোন কাজ।
ধারা-৪৭: রহিতকরণ ও হেফাজত
৪৭। (১) Suppression of lmmoral Traffic Act, 1933 (Act No. VI of 1933) এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (২০০০ সনের ৮নং আইন) এর ধারা ৫ ও ৬ এতদ্দ্বারা রহিত করা হইল।
(২) উক্তরূপ রহিতকরণ সত্ত্বেও রহিতকৃত আইনের অধীন বা আলোকে জারীকৃত আদেশ, প্রদানকৃত নির্দেশনা বা কৃত কোন কাজ কর্ম বা দায়েরকৃত মামলা এই আইন প্রবর্তনের তারিখ হইতে এই আইনের আওতায় প্রণীত, জারীকৃত, গৃহীত, কৃত বা দায়েরকৃত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং চলমান থাকিবে।
ধারা-৪৮: আইনের ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ
(১) এই আইন প্রবর্তনের পর সরকার, যথাশীঘ্রসম্ভব, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা এই আইনের বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিবে।
(২) বাংলা পাঠ এবং ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।
0 Comments