তামাদি আইন, ১৯০৮ (১৯০৮ সালের ৯নম্বর আইন)
The Limitation Act, 1908 (Act no. IX of 1908)
তামাদি আইন বিষয়ক সাধারণ আলোচনা
(General Discussion on the Limitation Act)
★★★“তামাদি” শব্দটি—- আরবি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ শেষ হওয়া, বাধাপ্রাপ্ত হওয়া, নতুন করে সৃষ্টি হওয়া।
★★★যে আইন কোন বিবাদ নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ চিরকাল বা অনির্দিষ্টকালের জন্য উন্মুক্ত না রেখে বরং একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা সংরক্ষনের ব্যবস্থা করে তাকে বলা হয়—তামাদি আইন
★★★একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে ও স্বত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে উক্ত দাবি বা স্বত্বাধিকার নষ্ট হয়েছে মর্মে যে আইনে বলা হয়েছে তাকে বলে— তামাদি আইন
★★★তামাদি আইন হলো শান্তির আইন” —Thomas Cromwell
★★★তামাদি আইন কোন স্বত্বের উদ্ভব করে না বরং কোন স্বত্ব প্রতিষ্ঠার সময়কে স্থির করে দেয়। তাই বলা হয়
তামাদি আইন প্রতিকারকে বারিত করে কোন অধিকারকে নয়।
★★★ভারতীয় উপমহাদেশে তামাদি আইন সর্বপ্রথম খন্ডাকারে ইংরেজি তামাদি আইন প্রবর্তিত —১৭৯৩ সালে
★★★সূর্যাস্ত আইন (লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ চালু করেন) আইনের মাধ্যমে জন্ম—-তামাদি আইন
★★★তামাদি আইন সর্বপ্রথম বিধিবদ্ধ হয়—১৮৫৯ সালে
★★★তামাদি আইন সর্বপ্রথম কার্যকর হয়—১৮৬২ সালে
★★★বর্তমান তামাদি আইনটি বিধিবদ্ধ বা প্রণীত (Enacted) হয়—২১শে মার্চ, ১৯০৮
★★★তামাদি আইন কার্যকর হয়—১লা জানুয়ারী, ১৯০৯
★★★তামাদি আইনের নং—- ১৯০৮ সালের ৯নং আইন
★★★এই আইনের প্রকৃতি—- পদ্ধতিগত আইন (Procedural/adjective law তবে ধারা ২৬ ও ২৮
তত্ত্বগত/substantive আইনের বিধান)
★★★মোট ধারা (Sections)—- বর্তমান ২৯টি (৩২টির মধ্যে বর্তমান বাতিল হয়েছে ৩টি)
★★★ ধারা ৩-২৫ এর আলোচ্য বিষয়—তামাদির সীমা।
★★★ ধারা ২৬-২৮ এর আলোচ্য বিষয়—প্রেসক্রিপশন/Prescription ও একুউজেশন/Acquisition(অর্জন)।
★★★তামাদি আইনের মোট তফসিল— তিনটি(২য় ও ৩য় তফসিল বাতিল)
★★★মোট অনুচ্ছেদ (Articles) —-১৮৩টি
★★★প্রথম তফসিলের আলোচ্য বিষয়— মামলা(Suits) দায়ের সংক্রান্ত তামাদির মেয়াদ(অনুচ্ছেদ ১-১৪৯)
★★★দ্বিতীয় তফসিলের আলোচ্য বিষয়— আপিল(Appeal) সংক্রান্ত তামাদির মেয়াদ(অনুচ্ছেদ ১৫০-১৫৭)
★★★ তৃতীয় তফসিলের আলোচ্য বিষয়—আবেদন(Applications) সংক্রান্ত তামাদির মেয়াদ(অনু ১৫৮-১৮৩)
★★★ এই আইনের কোন ধারা/তফসিল বাতিল করা হলেও গণনা করা হবে কিন্তু বিলুপ্ত হলে গণনা করা হবে না।
★★★সর্বশেষ সংশোধনী হয় — ২০০৪ সালে( ১১৩ ও ১১৪ ধারা সংশোধন করা হয়)
★★★এই আইন মোকদ্দমা, আপীল, রিভিশন, আবেদনপত্র প্রভৃতি দায়েরের সময় নির্ধারণ করে। দিয়েছে। এই সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তা তামাদিতে বারিত হবে।
★★★ তামাদি আইন দখলের মাধ্যমে ব্যবহার স্বত্ব ও অন্যান্য সম্পত্তির মালিকানা অর্জনের নিয়ম-নীতিও
সরবরাহ করে থাকে।
তামাদি আইনের মৌলিক দিক
যেসব ক্ষেত্রে তামাদি আইন প্রয়োগযোগ্য (In cases where the Limitation Act is applicable)
দেওয়ানী মোকদ্দমা(Civil suit)
তামাদি আইন শুধুমাত্র দেওয়ানী কার্যক্রমের (দেওয়ানী মূল মোকদ্দমা [Suit], আপীল [Appeal], রিভিউ [Review], আবেদন [Application] ইতাদি) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ফৌজদারি মামলা(Criminal case)
ফৌজদারি মূল মামলার ক্ষেত্রে তামাদি আইন প্রযোজ্য নয় কিন্তু বিশেষ ফৌজদারি কার্যক্রম যেমন আপীল দায়েরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে থাকে। এককথায়, দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় মামলার আপীলের ক্ষেত্রে তামাদি আইন প্রয়োগযোগ্য।
তামাদি আইন প্রতিকারকে বারিত করে, অধিকারকে না [Law of limitation bars a remedy not a right]:
১৯০৮ সালের তামাদি আইনের সংক্ষিপ্ত শিরোনাম,পরিসীমা ও প্রবর্তন ধারা ১
(Short title, extent and commencement of the Limitation Act, 1908)
(1) This Act may be called the Limitation Act, 1908.
(2) It extends to the whole of Bangladesh.
(3) This section and section 31 shall come into force at once. The rest of this Act shall come into force on the first day of January, 1909.
আলোচনা
তামাদি আইনের উদ্দেশ্য (Objects of the Limitation Act)
১. মামলা-মকদ্দমা, আপীল ও নির্দিষ্ট কিছু আবেদনপত্রের তামাদির মেয়াদ নির্ধারণ।
২. দখলের মাধ্যমে ব্যবহার স্বত্ব ও অন্যান্য সম্পত্তির মালিকানা অর্জনের নিয়ম-নীতি সরবরাহ করা।
৩. কত সময়ের মধ্যে বিদ্যমান কোন অধিকার আইনের মাধ্যমে কার্যকর করা যাবে তা নির্ধারণ করা।
৪. তামাদি আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য হল এই বিধান প্রণয়ন করা যে, নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে দাবী আদায়ের ব্যবস্থা না করলে তা নষ্ট বলে বিবেচিত হবে।
৫. বিবাদ বা স্বত্বের নির্দিষ্ট দ্বন্দ্বকে নির্দিষ্ট সময় পর রোধ বা শান্ত করা।
সংজ্ঞাসমূহ (Definitions) ধারা ২ (আলোচনাসহ)
উপধারা-
(১) আবেদনকারী/দরখাস্তকারী(applicant):যে ব্যক্তি আবেদন করে বা আবেদন করার অধিকার লাভ করেন (any person from or through whom an applicant derives his right to apply)। অর্থাৎ দরখাস্ত বা আবেদন করার অধিকারকারী।
(২) বিনিময়পত্র (Bill of exchange) — হুন্ডি বা চেক (hundi/cheque) যা চাহিবামাত্র ব্যক্তিকে নিদিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের আদেশ।
(৩) মুচলেকা/বন্ড(bond) একধরনের চুক্তি বা ঋণপত্র/দলিল যেখানে বাধ্যবাধকতা থাকবে। মোটকথা, যেখানে অর্থ প্রদানের শর্তে নিজেকে বাধ্য করা (includes any instrument whereby a person obliges himself to pay money to another, on condition that the obligation shall be void if a specified act is performed, or is not performed, as the case may be)
(৪) বিবাদী (defendant) যে ব্যক্তির নিকট হতে বা যার মাধ্যমে বিবাদী তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার দায়-দায়িত্ব লাভ করে সেই ব্যক্তিকে বুঝায়। খাসকথা,যার বিরুদ্ধে মামলা করা হয় (includes any person from or through whom a defendant derives his liability to be sued:)
(৫) ব্যবহার স্বত্ব/ বর্তস্বত্ব/ সুখাধিকার (easement) এমন কোন অধিকার বুঝায় যা কোন চুক্তির ফলে উদ্ভুত হয়নি এবং যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির স্বত্বাধীন জমির কোন অংশ বা তার কোন ফসল বা তাতে সংযুক্ত বা অবাঞ্চিত কোন কিছু নিজের লাভের জন্য অপসারণ ও ব্যবহার করার অধিকার লাভ করে। সংক্ষেপে বলা যায়, ব্যবহার স্বত্ব/ বর্তস্বত্ব/ সুখাধিকার (easement) কোন চুক্তি নয়।(includes a right not arising from contract, by which one person is entitled to remove and appropriate for his own profit any part of the soil belonging to another or anything growing in, or attached to or subsisting upon, the land of another)
(৬) বিদেশ (foreign country)- বাংলাদেশ ব্যতীত অন্য যে কোন দেশ (means any country other than Bangladesh)
এখানে একটু জানা উচিত যে, বাংলাদেশের সংবিধানের ২ অনুচ্ছেদে ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় সীমানা’ বা বাংলাদেশ বলতে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় সীমানার অন্তর্ভুক্ত হবে—
(ক) ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা-ঘোষণার অব্যবহিত পূর্বে যে সকল এলাকা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান গঠিত ছিল[এবং সংবিধান (তৃতীয় সংশোধন) আইন, ১৯৭৪-এ অন্তর্ভুক্ত এলাকা বলে উল্লিখিত এলাকা, কিন্তু উক্ত আইনে বহির্ভূত এলাকা বলে উল্লিখিত এলাকা তদ্বহির্ভূত; এবং]
(খ) যে সকল এলাকা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সীমানাভুক্ত হতে পারে৷
(৭) সরল বিশ্বাস (good faith) যদি যথাবিহিত যত্ন ও মনোযোগের সাথে কোন কাজ না করা হয় তবে তা সরল বিশ্বাসে করা হয়েছে বলে বুঝাবে না। (nothing shall be deemed to be done in good faith which is not done with due care and attention) অর্থাৎ যত্ন ও মনোযোগ সহকারে কোন কাজ করাকে সরল বিশ্বাস (good faith) বলে।
জেনারেল ক্লজেজ এ্যাক্টের ধারা-৩ (২০), দণ্ডবিধির ধারা-৫২ ও ধারা-৭৬ এ সরল বিশ্বাসের (good faith) বিষয়ে বলা হয়েছে।
(৮) বাদী বা ফরিয়াদি (plaintiff)- যে ব্যক্তির নিকট হতে বা যার মাধ্যমে বাদী মামলা করার অধিকার লাভ করে সেই ব্যক্তিকে বুঝায় অর্থাৎ যে মোকদ্দমা করে তাকে বাদী বলে। ( includes any person from or through whom a plaintiff derives his right to sue)
(৯) অঙ্গীকার পত্র (promissory note) নির্ধারিত সময়ে কিংবা চাহিবামাত্র অথবা দর্শনমাত্র নির্দিষ্ট অংকের অন্যকে অর্থ প্রদানে নিজেকে বাধ্য রাখার দলিলকে বুঝায়। (means any instrument whereby the maker engages absolutely to pay a specified sum of money to another at a time therein limited, or on demand, or at sight)
(১০) “suit” মামলা বলতে আপীল বা দরখাস্তকে বুঝায় না।(does not include an appeal or application) মামলা বলতে সাধারণত দেওয়ানী মামলা বুঝায়।[AIR 1992(SC) 2009] যে মামলা আরজি পেশের মাধ্যমে শুরু হয় তাকেই দেওয়ানী মামলা বলা হয়। কিন্তু যখন শুধু দরখাস্তের মাধ্যমে অভিযোগ উত্থাপন বা প্রতিকার প্রার্থনা করা হয়, দেওয়ানী আদালত তখন সেগুলোকে 'মুতক্ষারাক্কা' (miscellaneous) বলে গ্রহণ করেন।
(১১) ট্রাস্টী বা অছি (Trustee) বেনামদার, বন্ধকী ঋণ পরিশোধিত হওয়ার পর দখলে থাকা বন্ধকগ্রহীতা বা স্বত্বহীন অন্যায় দখলদারকে বুঝায় না।(does not include a benamidar, a mortgagee remaining in possession after the mortgage has been satisfied, or a wrong-doer in possession without title)
মামলা, আপীল ও আবেদনপত্রের তামাদি মেয়াদ (ধারা ৩–১১)
(Limitation of suits, appeals and applications)
ধারা-৩: তামাদি মেয়াদ শেষে দায়েরকৃত মোকদ্দমা, আপীল, দরখাস্ত ইত্যাদি খারিজ
(Dismissal of suits, etc., instituted, etc., after period of limitation)
এই আইনের ৪—২৫ ধারা (উভয় ধারাসহ) সাপেক্ষে ১ম তফসিলে বর্ণিত নির্ধারিত তামাদি মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মামলা, আপিল বা দরখাস্ত রুজু বা দাখিল করা হলে, বিবাদীপক্ষ যদি তামাদির প্রশ্ন উত্থাপন নাও করে, তবুও উক্ত মামলা, আপিল বা দরখাস্ত খারিজ বলে বিবেচিত হবে।(Subject to the provisions contained in sections 4 to 25 (inclusive), every suit instituted, appeal preferred, and application made, after the period of limitation prescribed therefor by the first schedule shall be dismissed, although limitation has not been set up as a defence.)
ব্যাখ্যা: সাধারণত উপযুক্ত কর্মচারির নিকট আরজি উপস্থিত করলে, নিঃস্ব হলে নিঃস্বভাবে মামলা করার অনুমতির জন্য দরখাস্ত করলে এবং আদালত যেখানে কোম্পানি বন্ধ করে ফেলছে; সেখানে কোম্পানির বিরুদ্ধে দাবির ক্ষেত্রে দাবিদার সরকারী কর্মকর্তার নিকট দাবি প্রেরণ করলে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়। যেমন–ফৌজদারী দন্ডবিধির ৪২০ ধারা অনুসারে কোন আপিলকারি যদি কয়েদী হিসেবে থাকেন তবে উক্ত কয়েদী কর্তৃক কারাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আপীলের আবেদন পেশ আদালতের কাছে পেশের সমতুল্য হবে।(Explanation.-A suit is instituted, in ordinary cases, when the plaint is presented to the proper officer; in the case of a pauper, when his application for leave to sue as a pauper is made; and, in the case of a claim against a company which is being wound up by the Court, when the claimant first sends in his claim to the official liquidator.)
ধারা ৩ এর আলোচনা
নির্দিষ্ট সময়ের পর মোকদ্দমা, আপীল এবং আবেদনপত্র দায়েরের ফলাফল
তামাদির মেয়াদ শেষে দায়েরকৃত দেওয়ানী মোকদ্দমা খারিজ হবে। ১ম তফসিলে নির্ধারিত তামাদির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর মামলা, আপীল বা দরখাস্ত দায়ের বা দাখিল করা হলে বিবাদী পক্ষ যদি তামাদির প্রশ্ন উত্থাপন না করলেও উক্ত মামলা, আপীল বা দরখাস্ত খারিজ বলে বিবেচিত হবে। উল্লেখ্য, তামাদি আইনের ৩ ধারার এই বিধান এই আইনের ৪—২৫ ধারার নিয়মাবলী সাপেক্ষে প্রয়োগযোগ্য।
১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ৩ ধারার বিষয়বস্তু তিনটি—
১. মামলা [suit]
২. আপীল [appeal]
৩. আবেদনপত্র [application)[রিভিশন,রিভিউ]
মনে রাখুন
★★★ দেওয়ানী কার্যবিধি আদেশ-৭এর বিধি ৬ অনুসারে তামাদির বিষয়ে বাদীর কোনো আপত্তি থাকলে তা
মোকদ্দমা দায়ের করার সময় উল্লেখ করতে হবে, অন্যথায় মোকদ্দমা খারিজ হবে।
★★★ তামাদি সব সময় গণনা হয় বাদীর উপর, সেক্ষেত্রে অপরপক্ষ তামাদির প্রশ্ন উত্থাপন না করলেও আদালত তা খারিজ করে দিবে।
★★★ তামাদিকাল শুরু হয় 'মোকদ্দমার কারণ' থেকে এবং তামাদি গণনা শুরু হয় 'প্রথম দিনটি বাদ' দিয়ে।
★★★ তামাদি আইনের ধারা-৩ এর বিধান আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক। ফলে পক্ষগণ একমত হওয়া সত্ত্বেও তামাদির মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায় না।
★★★ তামাদির মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার ফলে আদালত কোন মামলা খারিজ করলে পরবর্তী ঐ মামলার একই পক্ষ একই বিষয়বস্তু নিয়ে কোন মামলা করলে উক্ত মামলা Res-Judicata(আদালত কর্তৃক ও সিদ্ধান্তকৃত বিষয়) দ্বারা বারিত হবে(দেওয়ানী কার্যবিধির ১১ ধারায় Res-Judicata নীতিটি গৃহীত)।
★★★ তামাদি মেয়াদের পরে দেওয়ানি মামলা দায়ের করার ফল হচ্ছে—- মামলা খারিজ
★★★ তামাদি আইনের কত তফসিলে নির্ধারিত তামাদি মেয়াদের পর দায়েরকৃত মামলা খারিজ হবে—১ম তফসিলে
★★★ তামাদি আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী কখন একটি মামলা দায়ের বা দাখিল করা হয়েছে বলে গণ্য হবে—-আরজিটি উপযুক্ত কর্মকর্তার নিকট দাখিল করা হলে
ধারা-৪: আদালত বন্ধ থাকাবস্থায় তামাদির মেয়াদ শেষ হলে ফলাফল
(Where Court is closed when period expires)
আদালত বন্ধ থাকার দিন যদি কোন মামলা, আপিল বা দরখাস্ত রুজু বা দাখিল করার শেষ দিন হয়, সেক্ষেত্রে যেদিন আদালত পুনরায় খুলবে সেদিন উক্ত মামলা, আপিল বা দরখাস্ত রুজু বা দায়ের করা যাবে(Where the period of limitation prescribed for any suit, appeal or application expires on a day when the Court is closed, the suit, appeal or application may be instituted, preferred or made on the day that the Court re-opens.)
ধারা ৪ এর আলোচনা
কোনো মোকদ্দমা, আপিল ও দরখাস্তের তামাদির মেয়াদকাল আদালত বন্ধ থাকাবস্থায় উত্তীর্ণ হলে, পরবর্তী খোলার প্রথম দিন (১ম কার্য দিবস) তামাদি মেয়াদের সর্বশেষ দিন বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ আদালত প্রথম যেদিন খুলবে সেদিনই মোকদ্দমা, আপিল ও দরখাস্ত দায়ের করা যাবে।
সংক্ষেপে বলা যায় যে, আদালত বন্ধ থাকাবস্থায় যখন তামাদির মেয়াদ (শেষ দিন) শেষ হয় সেক্ষেত্রে পরবর্তী কার্যদিবসে (আদালত খোলার দিন) উক্ত মামলা, আপীল বা দরখাস্ত দাখিল করা যাবে।
মনে রাখুন
★★★ তামাদি আইনের ৪ ধারা অনুসারে মোকদ্দমা, আপীল বা আবেদনপত্র বন্ধের পর যেদিন আদালত খুলবে সেই দিন দায়ের করা যাবে। এক্ষেত্রে সুযোগ মাত্র ০১ দিন।
★★★ বিচারক ছুটিতে থাকলে যে দিন কাজে যোগদান করবেন সেই দিন দাখিল করা যাবে।
★★★ আদালত খোলা কিন্তু বিচারক ছুটিতে থাকলে তামাদি আইনের ৪ ধারার সুবিধা পাওয়া যাবে না।
★★★ আদালত খোলা থাকার পর যদি কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব না হয় তাহলেও পরবর্তী দিন দাখিল করা যাবে।
★★★ আদালত বন্ধ বলতে সরকার কর্তৃক ঘোষিত ছুটির দিন সমূহকেই বুঝাবে।
★★★ কোনো বিচারক বিশেষ কোনো সফর বা ছুটিতে থাকলে তা আদালত বন্ধ বলে গণ্য হবে না। এক্ষেত্রে মোকদ্দমা, আপিল ও দরখাস্ত উক্ত আদালতের কর্মকর্তা (সেরেস্তাদার) নিকট দাখিল করতে হবে।
ধারা-৫: কতিপয় বিশেষ ক্ষেত্রে মেয়াদ বৃদ্ধিকরণ
(Extension of period in certain cases)
কোনো আপিল বা রায় পুনর্বিচার বা পুনরীক্ষণের দরখাস্ত বা আপিল করার অনুমতি প্রার্থনার দরখাস্ত বা অন্য কোনো দরখাস্ত, যার উপর এই ধারা বর্তমানে বলবৎ কোনো আইনের দ্বারা বা অধীনে প্রযোজ্য করা হয়, তার নির্দিষ্ট তামাদির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর গৃহীত হতে পারে, যদি আপিলকারী বা দরখাস্তকারী এই মর্মে আদালতের সন্তুষ্টি সাধন করেন যে, নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে আপিল বা দরখাস্তটি দাখিল না করার যথেষ্ট কারণ ছিল।(Any appeal or application for a revision or a review of judgment or for leave to appeal or any other application to which this section may be made applicable by or under any enactment for the time being in force may be admitted after the period of limitation prescribed therefor, when the appellant or applicant satisfies the Court that he had sufficient cause for not preferring the appeal or making the application within such period.)
ব্যাখ্যা: আপিলকারী বা দরখাস্তকারী যদি হাইকোর্টের কোনো আদেশ, প্রথা বা রায় দ্বারা তামাদির মেয়াদ গণনা বা নির্ধারণ করতে বিভ্রান্ত হয়ে থাকে, তবে তা বর্তমান ধারা অনুযায়ী যথেষ্ট কারণ বলে বিবেচিত হবে।(Explanation - The fact that the appellant or applicant was misled by any order, practice or judgment of the High Court Division in ascertaining or computing the prescribed period of limitation may be sufficient cause within the meaning of this section.)
ধারা ৫ এর আলোচনা
তামাদির মেয়াদ বৃদ্ধি ও মৌকুফের কারণসমূহ
(Grounds for extension and exemption of period of limitation)
বিলম্ব মৌকুফ (Condonation of delay)
১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ধারা-৫ অনুযায়ী ৫টি ক্ষেত্রে তামাদির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর আদালতকে যেসকল যথেষ্ট কারণ (sufficient cause) দেখিয়ে সন্তুষ্ট করা যায় তাকে বিলম্ব মওকুফ(Condonation of delay) করা বলে। কিন্তু যথেষ্ট কারণ থাকা সত্ত্বেও আদালত বিলম্ব মওকুফের আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। তাই কোন পক্ষ অধিকার হিসেবে ৫ ধারার অধীন বিলম্ব মওকুফ করে সময় বৃদ্ধির আবেদন করতে পারবে না।
তামাদি আইন অনুসারে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোন আপীল, রিভিউ অথবা আপীল করার অনুমতির আবেদন বা অন্য কোন দরখাস্ত আদালতে দায়ের করতে হয়। এই নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে তা তামাদিতে বারিত হয়। এই সাধারণ নীতির কিছু ব্যতিক্রম তামাদি আইনের ৫ ও ১৪ ধারায় তুলে ধরা হয়েছে, যা অনুসারে কোন আপীল, রিভিউ অথবা আপীল করার অনুমতির আবেদন বা অন্য কোন দরখাস্ত নির্দিষ্ট সময়ের পরও তামাদি মৌকুফ করে দায়ের করা যায়।
কিছু ক্ষেত্রে তামাদি মেয়াদ বৃদ্ধিকরণ (Extension of the period of limitation in certain cases)
১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ৫ ধারা অনুসারে, কোন আপীল রিভিউ, আপীল করার অনুমতির দরখাস্ত বা অন্য কোন দরখাস্ত নিদিষ্ট তামাদি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও গৃহীত হতে পারে। যদি আপীল বা দরখাস্তকারী এই মর্মে আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারে যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপীল বা দরখাস্তটি দায়ের না করার যথেষ্ট কারণ ছিল তবে তা গৃহীত হবে।
মনে রাখা উচিত যে, যথেষ্ট কারণ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো আইনগত ব্যাখ্যা নেই এবং যে কারণে আদালত সন্তুষ্ট হবে, সেই কারণ সমূহকেই যথেষ্ট কারণ বলে গণ্য করবেন। তবে, এ সম্পর্কে উচ্চ আদালতের নজির পরিলক্ষিত হয়। তামাদি আইনের ৫ ধারায় বিলম্বের যথেষ্ট কারণের (Sufficient Cause for Delay) সুবিধা পাওয়া যাবে যদি নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর এক বা একাধিক বিষয় উপস্থিত থাকে —-
✓ পক্ষগণের গুরুতর বা মারাত্মক অসুস্থতা।[উল্লেখ্য, বার্ধক্যজনিত কারণে বিলম্ব মওকুফ মার্জনা হবে না।
✓ পক্ষগণের কারাবাস;
✓মামলা দায়েরের পর আইনে পরিবর্তন,
✓ সরল বিশ্বাসে ভুল;
✓ অশিক্ষিত বা অজ্ঞতা, সাধারণ অবহেলা, আইনজীবির প্রকৃত ভুল ইত্যাদি
✓ কৌসুলির ভুল; [উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে প্রমাণ করতে হবে কৌসুলী যথেষ্ট সতর্কতার সাথে পরামর্শাটি দিয়েছিলেন।
✓ আদালতের সঙ্ঘাতপূর্ণ সিদ্ধান্ত;
✓ রায়, ডিক্রির কপি (নকল) সংগ্রহ করতে আদালতের কর্মচারীর বিলম্ব;
✓ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা;
✓ দারিদ্রতা বা অর্থের অভাব,
✓পর্দানশীল মহিলা;
✓যেক্ষেত্রে পক্ষ সরকারী কর্মকর্তা।
তবে বিলম্ব মওকুফের ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে বিলম্বের যথেষ্ট কারণ (Sufficient Cause for delay) প্রমাণ করতে হবে। আর তামাদি মওকুফের জন্য আবেদন মঞ্জুর বা না-মঞ্জুর করা আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা (Discretionary Power)। যাহোক, ৫ ধারা মতে, বিলম্ব মওকুফের কোনো বিধান মূল মোকদ্দমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
যে সকল ক্ষেত্রে তামাদি আইনের ৫ ধারার বিধান প্রযোজ্য—
১. আপীল (Appeal)
২. আপীলের অনুমতির দরখাস্ত (An application for leave to appeal)
৩. রায় রিভিউয়ের আবেদন [An application for review of judgment)
৪. রিভিশনের দরখাস্ত: [An application for revision)
৫. অন্যকোন দরখাস্ত/আবেদনের ক্ষেত্রে যেখানে ৫ ধারা প্রযোজ্য করা যায় (Any other application to which this section may be made applicable)
মনে রাখুন
★★★ মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর দায়ের করা মোকদ্দমা খারিজ হয়।
★★★ তামাদি আইনের ৫ ধারা অনুসারে বিলম্ব মৌকুফের আবেদনে প্রত্যেক দিনের বিলম্বের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে হবে।
★★★ তামাদি আইনের ৫ ধারা অনুসারে মূল মকদ্দমায় বিলম্ব মৌকুফের জন্য আবেদন করা যায় না। মোটকথা,মূল মোকদ্দমার ক্ষেত্রে ৫ ধারা প্রযোজ্য নয়।
★★★ লিমিটেশন এ্যাক্ট, ১৯০৮ এর ৫ ধারা প্রযোজ্য হবে না—স্যুটের ক্ষেত্রে
★★★কোন মামলার ক্ষেত্রে তামাদি মওকুফ হবে না—- স্বত্ব ঘোষণা
বিশ্লেষণ-তামাদি আইনের আওতায় তামাদি মওকুফ এর বিধান মূল মকদ্দমার ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য নয়। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৪২ ধারার অধীন স্বত্ব ঘোষণার মকদ্দমা একটি মূল মকদ্দমায়। এজন্য মামলার ক্ষেত্রে তামাদি মওকুফ হবে না
★★★ তামাদি আইনের কোন ধারায় আদালত বিলম্ব মওকুফ করতে পারে—৫ ও ১৪ ধারা( স্যুটের ক্ষেত্রে)
★★★বিলম্ব মৌকুফ গ্রহণযোগ্য — আপীল ও রিভিশনে
★★★ বিশেষ আইনে(বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪,অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ ইত্যাদি) উল্লেখিত তামাদির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ৫ ধারার বিধান প্রযোজ্য হবে না। (৫ ধারা)
★★★ ৫ ধারায় বিলম্ব মৌকুফ কোন ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়—দেওয়ানী মূল মোকদ্দমায়
★★★ দেওয়ানী মামলায় আপীলের মেয়াদ চলে গেলে/ একতরফা ডিক্রি হয়ে তামাদি হলে কি —আপীলে তামাদি আইনের ৫ ধারায় বিলম্ব মৌকুফের আবেদন করতে হবে ।
0 Comments