সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

জরুরী অবস্থা সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর

What are the 2 types of emergencies?; What is the dual state theory of local government?; What is the difference between state of emergency and state of calamity?; What does BC state of emergency mean?; What does it mean to be in state of emergency?; How many times Bangladesh declared emergency?; what happens in a state of emergency; benefits of state of emergency; what are the effects of state of emergency; reasons for state of emergency; state of emergency examples; disadvantages of state of emergency; what does state of emergency mean for travel; what does state of emergency mean for workers; বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কত দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন?; জরুরী অবস্থা জারি হলে কি হয়; জরুরি অবস্থা কত প্রকার ও কি কি?; ভারতে কতবার জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে; বাংলাদেশে জরুরী অবস্থা কতবার; জরুরি অবস্থা কত প্রকার; বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা ১৯৭৪; জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন; জরুরি অবস্থা ঘোষণা কোন বিভাগের কাজ; বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অনধিক কতদিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন; জরুরী অবস্থা জারি; জরুরি অবস্থা জারির বিধান সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়-; সংবিধান সাংবিধানিক আইন ও রাজনীতি pdf download; সাংবিধানিক আইন কাকে বলে; সংবিধান সাংবিধানিক আইন ও রাজনীতি বাংলাদেশ প্রসঙ্গ বই; বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা আব্দুল হালিম pdf download; বাংলাদেশের সংবিধান বই pdf; বাংলাদেশের সংবিধান সর্বশেষ সংশোধনীসহ; বাংলাদেশের সংবিধান আরিফ খান; সহজ ভাষায় বাংলাদেশের সংবিধান; সাংবিধানিক আইন বই pdf; সাংবিধানিক আইন বলতে কি বুঝায়; সংবিধান ও সাংবিধানিক আইনের পার্থক্য; সাংবিধানিক আইনের প্রকৃতি; সাংবিধানিক আইনের উৎস; সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলতে কি বুঝায়; বাংলাদেশের সংবিধান সম্পূর্ণ pdf; বাংলাদেশের সংবিধান pdf ২০২২;


 জরুরী অবস্থা সংক্রান্ত প্রশ্নমালা

  • জরুরী অবস্থা(state of emergency) বলিতে কি বুঝায়?
  • কোন সংশোধনী দ্বারা জরুরী অবস্থা সংক্রান্ত বিধানবলী বাংলাদেশ সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়েছে-আলোচনা করুন।
  • জরুরী অবস্থা সম্পর্কিত বিধানবলীর প্রয়োজনীয়তা কি–আলোচনা করুন।
  • কখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করিতে পারেন আলোচনা করুন।
  • বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী কোন কোন পরিস্থিতিতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা যায়? কখন এ ধরনের ঘোষণা কার্যকর থাকে না?
  • জরুরী অবস্থা ঘোষণার পর বাংলাদেশের নাগরীকদের মৌলিক অধিকারের অবস্থা আলোচনা করুন।
  • যুদ্ধকালীন জরুরী অবস্থা ও আভ্যন্তরীণ গোলযোগজনিত জরুরী অবস্থার মধ্যে পার্থক্য কি?
  • কেন বলা হয়ে থাকে যে, “বাংলাদেশের জরুরী অবস্থার বিধান ক্ষমতা অপব্যবহারের ঝুকি বহন করে”- আলোচনা করুন।
  • জরুরী অবস্থায় রাষ্ট্রপতির পরিতুষ্টির বলে প্রদত্ত আদেশ কি গ্রহণযোগ্য?- উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দেখাও ।
  • দ্বৈত জরুরী অবস্থা কাকে বলে?
  • জরুরী অবস্থা জারীর পর তার ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করুন।
  • বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কখন জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন? জরুরী অবস্থাচলাকালীন সময়ে মৌলিক অধিকারগুলো কি বলবৎ করা যায়?
  • জরুরী অবস্থা বলতে কি বুঝেন? ইহার ফলাফল বর্ণনা করুন। বর্তমানে বাংলাদেশে কি ধরনের জরুরী অবস্থা চলছে? সাংবিধানিকভাবে জরুরী অবস্থা একনাগাড়ে কতদিন চলতে পারে?



জরুরী অবস্থা

স্বাভাবিকভাবে বলা যেতে পারে যে, জরুরী অবস্থা বলতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থে কোনো আকস্মিক সংকটকালীন অবস্থা উত্তরণের জন্য বেশ কিছু মৌলিক অধিকারে বাধা-নিষেধ আরোপ করা বোঝায়। জরুরী অবস্থার কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা সংবিধানে নেই, তবে বিখ্যাত মামলা ভগাত সিং বনাম দা কিং এমপেরিয়ার [(আইএলআর) লাহোর, ভলিউম-১২ পৃষ্ঠা-২৮৪)]-এ পরিষ্কার ভাষায় উল্লেখ রয়েছে, জরুরী অবস্থা বলতে এমন সংকটজনক ও আকস্মিক অবস্থাকে বোঝায় যখন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সাধারণভাবে বলা যায়, জরুরী অবস্থা বলতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থে কোন আকস্মিক সংকটকালীন অবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্য কতিপয় মৌলিক অধিকারের উপর অধিকতর বাধা নিষেধ আরোপ করা বোঝায় ।


A state of emergency is a situation in which a government is empowered to put through policies that it would normally not be permitted to do, for the safety and protection of its citizens. A government can declare such a state during a natural disaster, civil unrest, armed conflict, medical pandemic or epidemic or other biosecurity risk.

[https://en.wikipedia.org/wiki/State_of_emergency]


জরুরী অবস্থা বলতে এমন সংকটজনক ও আকস্মিক অবস্থাকে বোঝায় যখন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সাধারণভাবে বলা যায়, জরুরী অবস্থা বলতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থে কোন আকস্মিক সংকটকালীন অবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্য কতিপয় মৌলিক অধিকারের উপর অধিকতর বাধানিষেধ আরোপ করা বোঝায়।

(The emergency provision is not well defined in the constitutions that adopted it. Generally emergency provision is a governmental declaration that may suspend some normal functions of the executive, legislative and judicial powers, alert citizens to change their normal behaviors, or order government agencies to implement emergency preparedness plans. It can also be used as a rationale for suspending rights and freedoms, even if guaranteed under the constitution. Such declarations usually come during a time of natural or man made disaster, during periods of civil unrest, or following a declaration of war or situation of international or internal armed conflict. Justitium is its equivalent in Roman law.


In some countries, the state of emergency and its effects on human rights and freedoms and governmental procedure are regulated by the constitution and/or a law that limits the powers that may be invoked. Rights and freedoms may be suspended during an emergency, for instance, freedom of movement, but not non- derogable rights. In many countries it is illegal to modify the emergency law or the constitution during the emergency.


In Bhagat Singh vs. King Emperor, Lord Dunedin said, "A state of emergency is something that does not permit of any exact definition. It connotes a state of matters calling for drastic action". Stiphen P. Marks has said, "Emergency is a situation which results from a temporary condition, which place institution of the state in a precarious position, which leads the authorities to feel justified in suspending the application of certain principles".

According to the view of our constitution it means the existence of a condition whereby the security or economic life of Bangladesh or any part thereof is threatened by war, external aggression or internal disturbance)



বাংলাদেশের মূল ’৭২-এর সংবিধানে জরুরি অবস্থা ঘোষণাসংক্রান্ত বিধান ছিল না। স্বাধীনতা-পরবর্তী হত্যা, গুম, লুটপাট, চোরাচালান, ব্যাংক ডাকাতি, চুরি, নাশকতা প্রভৃতি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেলে প্রচলিত শাসনব্যবস্থা ও আইন তা নিবারণে অপ্রতুল বিবেচিত হওয়ায় জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধানাবলি সংবিধানে সংযোজনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এর ফলে সংবিধান (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন, ১৯৭৩ এর মাধ্যমে সংবিধানে ৯ম-ক ভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৯ম-ক ভাগ ১৪১ক, ১৪১খ ও ১৪১গ এ তিনটি অনুচ্ছেদ সমন্বয়ে গঠিত। এ তিনটি অনুচ্ছেদে জরুরি অবস্থার প্রেক্ষাপট ও কার্যকরতা, কতিপয় ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নে রাষ্ট্রের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার অকার্যকরতা এবং জরুরি অবস্থা বহাল থাকাকালীন সংবিধানের তৃতীয় ভাগের অন্তর্ভুক্ত মৌলিক অধিকারগুলো স্থগিত সংক্রান্তে বিধানাবলি প্রণয়ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর (উত্থাপনকারী: আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর । উত্থাপন করা হয় ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩। গৃহীত হয় ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩) মাধ্যমে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা বাড়ানো হয়, (১) নিবর্তনমূলক আটক (২) রাষ্ট্রপতিকে যুদ্ধ, বহিরাক্রমন বা দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর নিয়ে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার ক্ষমতা প্রদান করা হয় । (৩) মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মামলা করার অধিকার রহিত করা হয়। প্রধানত এই সংশোধনী দেশের নাগরিকদের বিনাবিচারে আটকের বিধান মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার বিধান করা হয়। এবং (৪) সংসদ অধিবেশন ৬০ দিনের বদলে ১২০ দিনের মধ্যে আহ্বান করার সুযোগ তৈরি করে দেয় ।


সুতরাং উপরোক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে জরুরী অবস্থার বিধান বাংলাদেশ সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়েছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত এ পর্যন্ত পাঁচবার জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে-

  • ১৯৭৪ সালের ২৮শে ডিসেম্বর।
  • ১৯৮১ সালের ৩০শে মে।
  • ১৯৮৭ সালের ২৭শে নভেম্বর।
  • ১৯৯০ সালের ২৭শে নভেম্বর।
  • ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি।


জরুরী অবস্থা সম্পর্কিত বিধানবলীর প্রয়োজনীয়তা 


১৯৫০ সালে The European Convention on Human rights, ১৯৬৬ সালের International Convention on Civil and Political Rights এবং ১৯৬৯ সালের American Convention on Humen rights এই কনভেনশনগুলোর প্রত্যেকটিতেই বিধানরাখা হয়েছে যে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা জাতীয় স্বার্থকে বিঘ্নিত করে এমন যুদ্ধকালীন বা জাতীয় জরুরী অবস্থাকালীন সময়ে মৌলিক অধিকারসমূহ স্থগিত বা উহাদের উপর বাধা নিষেধ আরোপ করা যাবে।


জরুরী অবস্থার বিধান অগণতান্ত্রিক কিছু নয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থে সংকটকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য যে কোন দেশের সংবিধান বা আইনে জরুরী অবস্থার বিধান রাখা যায়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে এমন সংকটকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে মৌলিক অধিকারগুলো যাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় তার জন্য জরুরী অবস্থার বিধান রাখা হয়।


লর্ড এটকিনসন R. v Halliday মামলায় বলেছিলেন "নাগরিকদের ব্যক্তি স্বাধীনতা যতই মূল্যবান হোক না কেন যুদ্ধ বা রাষ্ট্রের নিরাপত্তাজনিত জরুরী অবস্থায় উহা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কিছু অংশ খর্ব করা যায়। যদি রাষ্ট্র টিকে থাকে তাহলে মৌলিক অধিকারগুলো টিকে থাকবে কিন্তু রাষ্ট্র যদি টিকে না থাকে তাহলে মৌলিক অধিকারও বিলুপ্ত হবে। সুতরাং যে কোন দেশের সংবিধানে বিধান রাখা যায়। কিন্তু তাই বলে এমন কোন বিধান করা উচিৎ নয় যাতে নির্বাহী বিভাগ ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে।


যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন


বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির জরুরী অবস্থা জারী করার পরিস্থিতি [অনুচ্ছেদ, ১৪১ ক (৩)] রাষ্ট্রপতির নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এমন জরুরী-অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে, যাতে যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দ্বারা বাংলাদেশ এর যে কোন অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন, তবে তিনি অনধিক ১২০ দিনের জন্য জরুরী অবস্থা  ঘোষণা করতে পারবেন [অনুচ্ছেদ ১৪১ক (১)] যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের বিপদ আসন্ন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে প্রকৃত যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে তিনি অনুরূপ যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের জন্য বাংলাদেশ বা এর যে কোন অংশের নিরাপত্তা বিপন্ন বলে  জরুরী-অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন।


মূলকথা হল রাষ্ট্রপতির কাছে যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এমন জরুরী অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে যাতে যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ বা এর যে কোনো অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপর্যয়ের সম্মুখীন তা হলে তিনি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন । রাষ্ট্রপতি ৩টি কারণে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন । যথা-

১. যুদ্ধ

২. বহিরাক্রমণ ও

৩. অভ্যন্তরীণ গোলযোগ।


এ তিনটি কারণ দেখিয়ে তিনি দুই ধরনের জরুরী অবস্থা জারী করতে পারবেন। যেমন-

(১) যুদ্ধজনিত জরুরী অবস্থা ও

(২) আভ্যন্তরীণ গোলযোগজনিত জরুরী অবস্থা।


জরুরী অবস্থা জারির ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত বিদ্যমান অনুরূপ ঘোষণার বৈধতার জন্য ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষর দরকার হবে।




জরুরী অবস্থা জারী করার পরিস্থিতি 

রাষ্ট্রপতি ৩টি কারণে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন । যথা-

১. যুদ্ধ

২. বহিরাক্রমণ ও

৩. অভ্যন্তরীণ গোলযোগ ।


জরুরী অবস্থা জারির ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত বিদ্যমান অনুরূপ ঘোষণার বৈধতার জন্য ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষর দরকার হবে। [বাংলাদেশ সংবিধানের উপ অনুচ্ছে ১৪১ (১) | রাষ্ট্রপতির নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এমন জরুরী অবস্থা বিদ্যমান রহিয়াছে, যাহাতে যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দ্বারা বাংলাদেশ বা উহার যে কোন অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন, তাহা হইলে তিনি অনধিক একশত কুড়ি দিনের জন্য জরুরী অবস্থা ঘোষণা করিতে পারিবেন, তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ ঘোষণার বৈধতার জন্য ঘোষণার পূর্বেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষর প্রয়োজন হইবে। [উপ অনুচ্ছেদ ১৪১ক (৩)। যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের বিপদ আসন্ন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে প্রকৃত যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগ সংঘটিত হইবার পূর্বে তিনি অনুরূপ যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের জন্য বাংলাদেশ বা উহার যে কোন অংশের নিরাপত্তা বিপন্ন বলিয়া জরুরী অবস্থা ঘোষণা করিতে পারিবেন মূলকথা হল রাষ্ট্রপতির কাছে যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এমন জরুরী অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে যাতে যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ বা এর যে কোনো অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপর্যয়ের সম্মুখীন তা হলে তিনি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন।


কখন এ ধরনের ঘোষণা কার্যকর থাকে না

[বাংলাদেশ সংবিধানের উপ অনুচ্ছেদ ১৪১ক (১)) রাষ্ট্রপতির নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এমন জরুরী অবস্থা বিদ্যমান রহিয়াছে, যাহাতে যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দ্বারা বাংলাদেশ বা উহার যে কোন অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন, তাহা হইলে তিনি অনধিক একশত কুড়ি দিনের জন্য জরুরী অবস্থা ঘোষণা করিতে পারিবে: তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ ঘোষণার বৈধতার জন্য ঘোষণার পূর্বেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি-স্বাক্ষর প্রয়োজন হইবে। [উপ অনুচ্ছেদ ১৪১ক (২)] জরুরী অবস্থার ঘোষণা করা হইলে-

(ক) পরবর্তী কোন ঘোষণার দ্বারা প্রত্যাহার করা যাইবে;

(খ) সংসদে উপস্থাপিত হইবে;

(গ) একশত কুড়ি দিন সময়ের অবসানে কার্যকর থাকিবে না: তবে শর্ত থাকে যে,

যদি সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় অনুরূপ কোন ঘো জারী করা হয় কিংবা এই দফার (গ) উপ-দফায় বর্ণিত এক শত কুড়ি দিনের মধ্যে সংসদ ভাঙ্গিয়া যায়, তাহা হইলে তাহা পুনর্গঠিত হইবার পর সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে ত্রিশ দিন অতিবাহিত হইবার পূর্বে ঘোষণাটি অনুমোদন করয়া সংসদে প্রস্তাব গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত ত্রিশ দিনের অবসানে অথবা একশত কুড়ি দিন সময়ের অবসানে, যাহা আগে ঘটে, অনুরূপ ঘোষণা কার্যকর থাকিবে না।



জরুরী অবস্থায় মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং মৌলিক অধিকার স্থগিতকরণ

১৯৫০ সালে দ্য ইউরোপিয়ান কনভেনশন অব হিউম্যান রাইটস, ১৯৬৬ সালের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির ও এর ঐচ্ছিক প্রটোকল, ১৯৬৬ সালের জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন, ১৯৯৬ সালে আমেরিকান কননেশন অব হিউম্যান রাইটস উল্লেখিত সনদ ও কনভেনশনগুলোর সবগুলোতেই মানবাধিকার সংরক্ষণের পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক বিধান সংযোজিত করা হয়েছে যে, জাতীয় স্বার্থকে হুমকির মুখে নিয়ে যায় এমন জরুরী পরিস্থিতিতে মৌলিক মানবাধিকারগুলো স্থগিত বা এ সংক্রান্ত বাধানিষেধ আরোপ করা যাবে একটা বিষয় স্মরণ রাখা উচিত যে, রাষ্ট্র টিকে থাকলে মৌলিক অধিকারগুলো টিকে থাকবে, কিন্তু যদি রাষ্ট্র ধ্বংস হয় তবে সে ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার পরিপূর্ণভাবে অর্থহীন। কাজেই স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে এমন সংকটকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে মৌলিক অধিকারগুলো যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সে কারণে জরুরী অবস্থায় বিধান রাখা হয়েছে।


• অনুচ্ছেদ: ১৪১ খ-এর বিধান মতে, জরুরী অবস্থার সময় সংবিধানের বেশ কিছুঅনুচ্ছেদের বিধান স্থগিতকরণ করতে পারে রাষ্ট্র। বিধান মতে, বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগের অন্তর্গত বিধানাবলির কারণে রাষ্ট্র যে আইন প্রণয়ন করতে ও নির্বাহী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম নয়, জরুরী অবস্থা ঘোষণায় কার্যকারিতাকালেই সংবিধানের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ এবং ৪২ অনুচ্ছেদগুলো কোনো কিছুই সে রকম আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কিত রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করবে না।


তবে অনুরূপভাবে প্রণীত কোনো আইনের কর্তৃত্ব যা করা হয়েছে বা করা হয়নি। তাছাড়া অনুরূপ আইন যে পরিমাণে কর্তৃত্বহীন, জরুরী অবস্থার ঘোষণা অকার্যকর

হওয়ার অব্যহতি পরে তা সেই পরিমাণে অকার্যকর হবে । উল্লিখিত বিধান মতে, যেসব মৌলিক অধিকার স্থগিত থাকবে সেগুলো হল চলাফেরার স্বাধীনতা (অনু ৩৬), সমাবেশ স্বাধীনতা (অন ৩৭), সংগঠনের স্বাধীনতা (অনু ৩৮), চিন্তা বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা, পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা (অনু ৪০) ও সম্পত্তি অধিকার (অনু ৪২) ইত্যাদি ।অনুচ্ছেদ: ১৪১গ-এর বিধান মতে, জরুরী অবস্থা ঘোষণা কার্যকারিতাকালে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত পরামর্শ মতে রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা ঘোষণা করতে পারেন যে, আদেশে উত্থিত বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগের অন্তর্গত মৌলিক অধিকারগুলো বলবৎকরণের জন্য কোনো আদালতে মামলা রুজু করার অধিকার এবং আদেশ অনুরূপভাবে লিখিত কোনো অধিকার বলবৎকরণের জন্য কোনো আদালত বিবেচনাধীন সব মামলা জরুরী অবস্থা ঘোষণার কার্যকারিতা কালে কিংবা ওই আদেশের দ্বারা নির্ধারিত স্বল্পতর কালের জন্য স্থগিত থাকবে।


.জরুরী অবস্থায় মৌলিক অধিকার

১৪১ (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জরুরি অবস্থা ঘোষণার সাথে সাথে ৬টি মৌলিক অধিকার স্থগিত হয়ে যায়।
  • অনুচ্ছেদ ৩৬: চলাফেরার স্বাধীনতা
  • অনুচ্ছেদ ৩৭: সমাবেশের স্বাধীনতা
  • অনুচ্ছেদ ৩৮: সংগঠনের স্বাধীনতা
  • অনুচ্ছেদ ৩৯: চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা
  • অনুচ্ছেদ ৪০: পেশা বা বৃত্তির-স্বাধীনতা
  • অনুচ্ছেদ ৪২: সম্পত্তির অধিকার
.জরুরি অবস্থায় এই ৬টি মৌলিক অধিকার স্থগিত থাকে। কিন্তু অবশিষ্ট ১২ টি মৌলিক অধিকার জরুরি অবস্থা চলাকালে বহাল থাকে। তবে ১৪১ (গ) অনুযায়ী উক্ত ১২টি অধিকারের যেকোনটির বা সবগুলো বলবৎকরনের অধিকারকে রাষ্ট্রপতি আদেশের মাধ্যমে স্থগিত করে দিতে পারেন। দেশে এ পর্যন্ত যতোবার জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে, প্র্রত্যেকবারই ১২টি অধিকারও স্থগিত করা হয়েছে। কাজেই জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে এমন বিধান করা হয়েছে যাতে সবগুলো মৌলিক অধিকারই স্থগিত করা যায়।

"বাংলাদেশের জরুরী অবস্থার বিধান ক্ষমতা অপব্যবহারের ঝুঁকি বহন করে”


বাংলাদেশ সংবিধানের উপ অনুচ্ছেদ ১৪১ক (৩) তে বলা আছে যে, যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের বিপদ আসন্ন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে প্রকৃত যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগ সংঘটিত হইবার পূর্বে তিনি অনুরূপ যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের জন্য বাংলাদেশ বা উহার যে কোন অংশের নিরাপত্তা বিপন্ন বলিয়া জরুরী-অবস্থা ঘোষণা করিতে পারিবেন—

প্রথমত, জরুনী অবস্থা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জরুরী অবস্থার উদ্ভব হয়েছে কিনা কিংবা জরুরী অবস্থা ঘোষণা জন্য বাংলাদেশ বা উহার কোন নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপন্নের সম্মুখীন কিনা এ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার পর প্রেসিডেন্ট আদেশ দ্বারা যে কোন মৌলিক অধিকারকে স্থগিত করতে পারবে। কোন আদালতে তার ঘোষণার যথার্থতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যাবে না। আদালত শুধু এটুকু দেখতে পারবে যে, জরুরী অবস্থা ঘোষণার পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিল কিনা। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৫ বার জরুরী অবস্থা জারী করা হয়েছে এবং ৫ বারই আভ্যন্তরীণ গোলযোগের কারনে দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে তিনবারই শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এবং বিরোধী দলের দমন করার জন্য জারী করা হয়েছে।


দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী সংসদের অনুমোদন ব্যতীত ১২০ দিন পর্যন্ত উহাকে বলবৎ রাখা যায়। এরূপ বিধান অগণতান্ত্রিক। জরুরী অস্থা ঘোষণা করার পরপর ইহাকে সংসদের মাধ্যমে অনুমোদন করানো উচিৎ এবং অনুমোধনের জন্য সংসদের দুই তৃতীয়াংশ ভোটের বিধান রাখা উচিৎ যাতে করে নির্বাহী বিভাগ ক্ষমতার অপব্যবহার করে মৌলিক অধিকারসমূহের পরিপন্থি যে কোন কাজ করিতে না পারে । জাতীয় সংসদও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি যে কোন আইন প্রণয়ন করিতে না পারে।


তৃতীয়ত, জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার সাথে সাথে সংবিধানের ৩৬,৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলো স্থগিত হয়ে যাবে। এবং যতদিন জরুরী অবস্থা বলবৎ থাকবে ততদিন পর্যন্ত উক্ত অধিকারগুলো স্থগিত থাকবে। ফলে নির্বাহী বিভাগ উল্লেখিত মৌলিক অধিকারসমূহের পরিপন্থি যে কোন কাজ করিতে পারিবে। জাতীয় সংসদও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি যে কোন আইন প্রণয়ন করিতে পারিবে। মৌলিক অধিকার স্থগিত না করে উহাদের উপর অধিক বাধানিষেধ আরোপ করে আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। এরকম বিধানই অন্যান্য দেশে রাখা হয়। জার্মানী ও সিংঙ্গাপুরেও জরুরী অবস্থা জারীর বিধান আছে কিন্তু মৌলিক অধিকার স্থগিত রাখার বিধান নাই। এ সকল দেশে জরুরী অস্থা জারী করার পর মৌলিক অধিকারের উপর অধিকতর বাধা নিয়েধ আরোপ করা হয়। ভারতে আভ্যন্তরীণ গোলযোগজরিত কারনে জরুরী অবস্থা জারীর সময় কোন মৌলিক অধিকার স্থগিত থাকে না শুধুমাত্র যুদ্ধজনিত কারনে জরুরী অবস্থা জারীর সময় ৬টি মৌলিক অধিকার স্থগিত থাকরে।



চতুর্থত, সংসদের অনুমোদন লাভের পর জরুরী অবস্থা কতদিন বলবৎ থাকরে তা স্পষ্টকরে সংবিধানে বলা নেই। সংসদে অনুমোদিত হওয়ার পর নির্বাহী বিভাগ ইচ্ছামত সময় বা অনির্দিষ্টকাল বলবৎ রাখতে পারবে । এ বিধান সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। ভারতের সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, অনুমোদনের পর জরুরী অবস্থা ৬ মাসের বেশী কার্যকর থাকবে না।


পঞ্চমত, জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার পর প্রেসিডেন্ট আদেশ দ্বারা যে কোন মৌলিক অধিকারকে স্থগিত করতে পারবেন এবং প্রেসিডেন্ট আদেশ দ্বারা বাকী ১২ টি মৌলিক অধিকারকে বা যে কোনটিকে স্থগিত করতে পারবে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৪ বার জরুরী অবস্থা জারী করা হয়েছে এবং ৪ বারই ১২টি অধিকার বলবৎকরণ স্থগিত করা হয়েছে। সুতরাং বলা যায় যে, বাংলাদেশ সংবিধানে এমন বিধান করা হয়েছে যাতে জরুরী অবস্থার সময় সবগুলো মৌলিক অধিকারকেই অর্থহীন করে দেয়া যায় ।


জরুরী অবস্থা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জরুরী অবস্থার উদ্ভব হয়েছে কিনা কিংবা জরুরী অবস্থা ঘোষণা জন্য বাংলাদেশ বা উহার কোন নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপন্নের সম্মুখীন কিনা এ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত । জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার পর পেসিডেন্ট আদেশ দ্বারা যে কোন মৌলিক অধিকারকে স্থগিত করতে পারবে। কোন আদালতে তার ঘোষণার যথার্থতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যাবে না। আদালত শুধু এটুকু দেখতে পারবে যে, জরুরী অবস্থা ঘোষণার পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিল কিনা । বাংলাদেশে জরুরী অবস্থার যে বিধান রাখা হয়েছে তা গণতান্ত্রিক মানষিকতা নিয়ে করা হয়নি। এরূপ অগণতান্ত্রিক বিধান পরিবর্তন না করা হলে প্রতিটি সরকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নষ্ট করবে। বিরোধী দলের মুখ বন্ধ করা ও ক্ষমতায় থাকার জন্য এ বিধান ব্যবহার করবে। জনগণের মৌলিক অধিকার হরে। সরকারের হাতে টানা হেছড়ার বিষয়। সুতরাং বলা যায় যে, বাংলাদেশের জরুরী অবস্থার বিধান ক্ষমতা অপব্যবহারের ঝুকি বহন করে। 



জরুরী অবস্থায় রাষ্ট্রপতির পরিতুষ্টির বলে প্রদত্ত আদেশ কি গ্রহণযোগ্য? 

জরুরী অবস্থা বলতে রাষ্ট্রের নিরাপত্ত ও জাতীয় স্বার্থে কোন আকস্মিক সংকটকালীন অবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্য কতিপয় মৌলিক অধিকারের উপর অধিকতর বাধা নিষেধ আরোপ করা বোঝায়। রাষ্ট্রপতি ৩টি কারণে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন । যথা-

১. যুদ্ধ

২. বহিরাক্রমণ ও

৩. অভ্যন্তরীণ গোলযোগ।


এ তিনটি কারণ দেখিয়ে তিনি দুই ধরনের জরুরী অবস্থা জারী করতে পারবেন।


(১) যুদ্ধজনিত জরুরী অবস্থা ও

(২) আভ্যন্তরীণ গোলযোগজনিত জরুরী অবস্থা।[বাংলাদেশ সংবিধানের উপ অনুচ্ছেদ ১৪১ক (১)] 


রাষ্ট্রপতির নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এমন জরুরী অবস্থা বিদ্যমান রহিয়াছে, যাহাতে যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দ্বারা বাংলাদেশ বা উহার যে কোন অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন, তাহা হইলে তিনি অনধিক একশত কুড়ি দিনের জন্য জরুরী অবস্থা ঘোষণা করিতে পারিবে: তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ ঘোষণার বৈধতার জন্য ঘোষণার পূর্বেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি-স্বাক্ষর প্রয়োজন জরুরী অবস্থা জারীর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের বিধান করা হয়েছে। সংবিধানের উপ অনুচ্ছেদ ১৪১ক (৩), যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের বিপদ আসন্ন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে প্রকৃত যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগ সংঘটিত হইবার পূর্বে তিনি অনুরূপ যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের জন্য বাংলাদেশ বা উহার যে কোন অংশের নিরাপত্তা বিপন্ন বলিয়া জরুরী অবস্থা ঘোষণা করিতে পারিবেন।


উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জরুরী অবস্থা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জরুরী অবস্থার উদ্ভব হয়েছে কিনা কিংবা জরুরী অবস্থা ঘোষণা জন্য বাংলাদেশ বা উহার কোন নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপন্নের সম্মুখীন কিনা এ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার পর প্রেসিডেন্ট আদেশ দ্বারা যে কোন মৌলিক অধিকারকে স্থগিত করতে পারবে। কোন আদালতে তার ঘোষণার যথার্থতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যাবে না। আদালত শুধু এটুকু দেখতে পারবে যে, জরুরী অবস্থা ঘোষণার পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিল কিনা।


সুতরাং বলা যায় যে, বাংলাদেশে জরুরী অবস্থা চলাকালে রাষ্ট্রপতির পরিভুষ্টি বলে আদেশ গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে।


দ্বৈত জরুরী অবস্থা


কোন কোন দেশের সংবিধানে দ্বৈত জরুরী অবস্থার বিধান সংযোজন করা হয়। এক ধরনের জরুরী অবস্থা কার্যকর থাকাকালে অন্য এক ধরনের জরুরী অবস্থা ঘোষণা করলে এরূপ পরিস্থিতিকে দ্বৈত জরুরী অবস্থা বলে। যেমন- ভারতের সংবিধানে ৪৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে ৩৫২ (৯) উপ অনুচ্ছেদে এ ধরনের বিধান রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য ১৯৭১ সালে ভারত যখন পাকিস্তান কর্তৃক আক্রান্ত হয় তখন সমগ্র ভারতে যুদ্ধকালীন জরুরী অবস্থা জারী করা হয় এবং এ জরুরী অবস্থা ১৯৭৭ সালের ২৭ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ ছিল। যুদ্ধকালীন এ জরুরী অবস্থা চলাকালীন সময়ে ১৯৭৫ সালে আভ্যন্তরীণ গোলযোগজনিত কারনে পুনরায় জরুরী অবস্থা জারী করা হয়। এক সাথে দু'ধরনের জরুরী অবস্থা চলতে থাকে। ১৯৭৫ সালের ঘোষিত জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করা হয় ১৯৭৭ সালের ২১ মার্চ। বাংলাদেশে এ ধরনের বিধান নাই।



জরুরী অবস্থা জারীর পর তার ফলাফল 


রাষ্ট্রপতির কাছে যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এমন জরুরী অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে যাতে যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের মাধ্যমে।বাংলাদেশ, বা এর যে কোনো অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপর্যয়ের সম্মুখীন তা হলে তিনি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন। জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হলে তার নিম্নরূপ ফলাফল বা প্রভাব পরিলক্ষিত হয়ে থাকে—


১. জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার পর পরবর্তী কোন ঘোষণা দ্বারা ইহাকে প্রত্যাহার করা যাবে।


২. জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার পর উহাকে সংসদে উপস্থাপন করিতে হইবে এবং ঘোষণার ১২০ দিনের মধ্যে সংসদের প্রস্তার দ্বারা অনুমোদিত না হলে ১২০দিন পর

উহার কোন কার্যকারীতা থাকবে না ।


৩. যদি সংসদ ভেঙ্গে যাওয়া অবস্থায় জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয় অথবা ঘোষণার ১২০ দিনের মধ্যে সংসদ ভেঙ্গে যায় তাহলে সংসদ পুনগঠিত হওয়ার পর প্রথম বৈঠকের তারেখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সংসদের প্রস্তাব দ্বারা উক্ত ঘোষণা অনুমোদিত না হলে ৩০ দিন পর উহার কোন কার্যকারীতা থাকবে না ।


৪. জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার সাথে সাথে সংবিধানের ৩৬,৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলো স্থগিত হয়ে যাবে এবং যতদিন জরুরী অবস্থা বলবৎ থাকবে ততদিন পর্যন্ত উক্ত অধিকারগুলো স্থগিত থাকবে। ফলে নির্বাহী বিভাগ উল্লেখিত মৌলিক অধিকারসমূহের পরিপন্থি যে কোন কাজ করিতে পারিবে। জাতীয় সংসদও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি যে কোন আইন প্রণয়ন করিতে পারিবে। জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের পর এ সমস্ত মৌলিক অধিকারগুলি আপনা আপনি পুনরুজ্জীবিত হবে ।


৫. জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার পর প্রেসিডেন্ট আদেশ দ্বারা যে কোন মৌলিক অধিকারকে স্থগিত করতে পারবে। এবং প্রেসিডেন্ট আদেশ দ্বারা বাকী ১২ টি মৌলিক অধিকারকে বা যে কোনটিকে স্থগিত করতে পারবে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৫ বার জরুরী অবস্থা জারী করা হয়েছে এবং ৫ বারই ১২টি অধিকার বলবৎকরণ স্থগিত করা হয়েছে। সুতরাং বলা যায় যে, বাংলাদেশ সংবিধানে এমন বিধান করা হয়েছে যাতে জরুরী অবস্থার সময় সবগুলো মৌলিক অধিকারকেই অর্থহীন করে দেয়া যায় ।


উৎসঃ

  • সাংবিধানিক আইন-এডভোকেট তফাজ্জল হোসেন
  • বাংলাদেশে জরুরী অবস্থা, সংবিধান সংশোধন ও বিবিধ আইনের-সাংবিধানিক ভাষ্য- গাজী শামছুর রহমান.


Post a Comment

0 Comments