প্রশ্নমালা–
আদালতের সহজাত ক্ষমতা বলতে আপনি কী বুঝেন? কখন এ প্রকার ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায় এবং আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায় না আলোচনা করুন।
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা কখন একটি মামলায় মঞ্জুর করা যেতে পারে?-আলোচনা করুন।
আদালতের সহজাত ক্ষমতা কি
(What is the inherent power of a court?)
আদালতের সহজাত ক্ষমতা বা অন্তর্নিহিত ক্ষমতা(Inherent power of court) ন্যায় বিচারের স্বার্থে দেওয়ানী আদালতের একটি অলিখিত ক্ষমতা যা প্রয়োগের মাধ্যমে আদালত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হয়। কোন বিচারপ্রার্থী ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত না হওয়ার জন্য দেওয়ানী আদালতকে একটি বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। The Code of Civil Procedure, 1908 এর ১৫১ ধারাতে বলা আছে, ন্যায় বিচারের প্রয়োজনে অথবা আদালতের পরোয়ানার অপব্যবহার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদানের ব্যাপারে আদালতের যে অন্তর্নিহিত ক্ষমতা রয়েছে, অত্র আইনের কোন বিধান দ্বারা তা সীমাবদ্ধ বা কোনভাবে প্রভাবিত হবে না।
Manohar Lal Chopra vs Rai Bahadur Rao Raja Seth Hiralal (1961) মামলায় বলা হয়েছে যে, অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আদালতের উপর অর্পণ করা হয়নি। এই ক্ষমতা পক্ষদ্বয়ের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করতে গিয়ে আদালত সহজাত বা জন্মগতভাবে পেয়েছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন।
Abu Sama Vs. Abu Sayed(1995)মামলায় বলা হয়েছে যেখানে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তির জন্য অন্য কোন প্রতিকার নেই সেখানে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আদালতের হাতকে শক্তিশালী করেছে । অন্তর্নিহিত ক্ষমতা প্রয়োগ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সন্তুষ্ট হয় যে ন্যায় বিচারের স্বার্থে এটা প্রয়োজন ।
যখন আদালতের সহজাত ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায়
(When Can A Court Exercise Inherent Powers?)
নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সাধারণতঃ আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায় —
(১) মোকদ্দমা, মামলা, আপিল, রিভিসন যেক্ষেত্রে যাহা প্রযোজ্য একত্রে বিচার শুনানী করা,
(২) মামলা-মোকদ্দমা নিষ্পত্তি স্থগিত রাখা;
(৩) মামলা-মোকদ্দমার শুনানী মূলতবী রাখা;
(8) সুবিধার অজুহাতে পাল্টা মোকদ্দমা নিবারণ;
(৫) দরিদ্র হিসাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের অনুমতি প্রদান;
(৬) ১৪৪ ধারার বিধানাবলী ছাড়াও পুনরুদ্ধার অনুমোদন;
৭) সঠিক মোকদ্দমায় একটি পক্ষকে যুক্ত করা অথবা পক্ষসমূহের স্থান পরিবর্তন করা;
(৮)মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আপিল করা হলে তার বৈধ প্রতিনিধিকে মোকদ্দমায় যুক্ত করার জন্য আপিলকারীকে অনুমতি প্রদান;
(৯) মোকদ্দমার পক্ষ করার জন্য তৃতীয় পক্ষের আবেদন;
(১০) আদালতের বাহিরে কুৎসা প্রকাশ করিয়া আদালত অবমাননার জন্য সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে কারাদণ্ড ও শাস্তি প্রদান;
(১১) ন্যায় বিচারের প্রয়োজনে আদালতের আদেশ প্রদান স্থগিত রাখা অথবা ইহা কার্যকরীকরণ স্থগিত রাখা;
(১২) ১৫২ ধারার আওতাভুক্ত করা হয় নাই এমন ডিক্রি বা আদেশ সংশোধন;
(১৩) নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়া কাহাকেও কোন কিছু করা হইতে বিরত রাখা বা করিতে বাধ্য করা;
(১৪) যে ক্ষেত্রে ৪১ আদেশের ২৩(১) বিধি অথবা ৪১ আদেশের ২৫ বিধি প্রযোজ্য নহে, সেই ক্ষেত্রে মামলা-মোকদ্দমা পুনঃপ্রেরণ;
(১৫) ডিক্রির উদ্দেশ্যে ও সাক্ষ্যের বিপরীতে কার্যকারণ ও ডিক্রির ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা;
(১৬) যখন ১০ ধারার আওতায় আসেনা তখন মামলা-মোকদ্দমা স্থগিত রাখা;
(১৭) ১১ ধারার আওতায় আসেনা এমন মোকদ্দমার ক্ষেত্রে রেসজুডিকাটা নীতির প্রয়োগ;
(১৮) আদালতের অবৈধ আদেশ বাতিল ও প্রত্যাহার করা।
ছোট করে বললে বলা যায় যে The Code of Civil Procedure, 1908 এর ধারা-১৫১ মতে, আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা কেবল ন্যায়বিচারের প্রয়োজনে অথবা আদালতের পরোয়ানার অপব্যবহার প্রতিরোধে করা যাবে, অন্যথায় নয়। এটির অতিরিক্ত কোন নির্দেশ এই ধারাতে নেই। এই ধারা অনুযায়ী দুইটি ক্ষেত্রে আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায়। যেমন-
(১) ন্যায় বিচারের প্রয়োজনে; এবং
(২) আদালতের পরোয়ানার অপব্যবহার প্রতিরোধ করার জন্য।
এই অন্তর্নিহিত ক্ষমতার তাৎপর্য বিশ্লেষণে বিভিন্ন আদালতের নজিরে উল্লেখ আছে, যেসব ক্ষেত্রে বিচারকার্য পরিচালনায় আইনের কোন বিধি প্রযোজ্য সেইসব ক্ষেত্রে আদালতকে অবশ্য বিধি অনুযায়ী চলতে হবে। বিধির বিপরীতে কোন পদ্ধতি অবলম্বনের স্বাধীনতা আদালতের নেই। কারণ, আদালত বিচারক হলেও আইনের অধীন যেক্ষেত্রে পদ্ধতিগত বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট বিধান নেই, কেবল সেক্ষেত্রে আদালত ন্যায়বিচারের প্রয়োজনে অবস্থানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এই অবস্থাতেও আদালতকে আরও একটি নীতি মেনে চলতে হবে। তদবস্থায় আদালতকে ন্যায়পরায়ণতা নীতি মেনে চলতে হয়। ন্যায়পরায়ণতা সর্বদাই আইনের অনুসরণ করে। "Equity follows the law" ন্যায়পরায়ণতার একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি। অতএব আদালত তদবস্থায় এমন কোন ব্যবস্থা নিতে পারবেন না যা অত্র আইনে বর্ণিত বিধিগুলির পরিপন্থি। তাকে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যা এই আইনে বর্ণিত বিধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আদালতকে অন্তর্নিহিত ক্ষমতার বলে কোন অবস্থাতেই স্বেচ্ছাচারী হওয়ার বা খামখেয়ালীভাবে কোন কিছু করার অধিকার দেওয়া হয়নি।
কোন অবস্থাতে আদালত অন্তর্নিহিত ক্ষমতা বলে ব্যবস্থা নিতে পারবেন তার উল্লেখ বিভিন্ন আদালতের নজিরে আছে। আবার কোন অবস্থাতে অন্তর্নিহিত ক্ষমতা বলে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না তার নির্দেশও বিভিন্ন নজিরে আছে।
আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায় না
(When inherent power cannot be exercised)
নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সাধারণত আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায় না—
(ক) বিধিতে নিষিদ্ধ করা হইয়াছে এমন কোন কিছু করিবার ব্যাপারে আদালতের কোন সহজাত ক্ষমতা নাই;
(খ) যে সমস্ত বিষয় বিচার এখতিয়ারের বাহিরে রাখা হইয়াছে;
(গ) যেখানে আবেদনকারীর জন্য বিধির জন্য কোথাও প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে;
(ঘ) অন্তর্নিহিত ক্ষমতা প্রয়োগ করিলে উহা যদি আইনের মূলনীতির সাথে বিবাদমান হয়;
(ঙ)সুবিচারের জন্য অথবা আদালতের কার্যধারার অপব্যবহার রোধ করিবার জন্য তাহা প্রয়োগ হয়।
খ) যখন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা যায়:
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৩ ধারায় বর্ণিত আছে, মামলার যে কোন পর্যায়ে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা যায় এবং তা The Code of Civil Procedure, 1908 দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। The Code of Civil Procedure, 1908 এর ৩৯ আদেশের ১ বিধিতে উল্লেখ আছে, যদি কোন মামলায় এফিডেফিট দ্বারা কিংবা অন্য কোন ভাবে প্রমাণিত হয় যে—
(ক) কোন মোকদ্দমায় বিরোধীয় কোন সম্পত্তি মোকদ্দমার কোন পক্ষ কর্তৃক অপচয়, ক্ষতিগ্রস্থ বা হস্তান্তরিত হওয়ার বা কোন ডিক্রিজারীতে অন্যায়ভাবে বিক্রয় হওয়ায় ঝুঁকির সম্মুখীন, অথবা
(খ) বিবাদী তার পাওনাদারকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে তার সম্পত্তি অপসারণ বা হস্তান্তর করার হুমকি বা ইচ্ছা
প্রকাশ করছে,
সেক্ষেত্রে আদালত অনুরূপ কার্যরোধ করার জন্য আদেশ দিয়ে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করতে পারে, অথবা মোকদ্দমা না হওয়া পর্যন্ত বা পুণরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত উক্ত সম্পত্তি অপচয়, ক্ষতিগ্রস্থ করণ, হস্তান্তর, বিক্রয়, অপসারণ বা সমর্পণ করতে স্থগিত ও বারণ করার উদ্দেশ্যে আদালত যেরূপ উপযুক্ত মনের করেন, সেরূপ আদেশ প্রদান করতে পারে।
0 Comments