জন্মের বৈধতা(Legitimacy) ও স্বীকৃতি(acknowledgment)
আলোচ্য বিষয়:
- মুসলিম আইনে জন্মের বৈধতার(Legitimacy) স্বীকৃতি(acknowledgment) কাকে বলে?
- কোন কোন ক্ষেত্রে সম্ভাব্য পিতা কর্তৃক পিতৃত্বের স্বীকৃতি সন্তানের বৈধতা নিরূপণের জন্য প্রাসঙ্গিক এবং কার্যকর হয় তা মামলার ফলাফলের আলোকে আলোচনা করুন।
- কিভাবে পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয় এবং বৈধতার স্বীকৃতির ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করুন।
জন্মের বৈধতা(Legitimacy) ও স্বীকৃতি(acknowledgment)
পিতা ও সন্তানের মধ্যকার আইনগত সম্পর্ক হলো পিতৃত্ব, এই শর্তে যে সন্তানটি বৈধ । মাতা ও সন্তানের মধ্যে আইনগত সম্পর্ক হলো মাতৃত্ব, সন্তানটি বৈধ হোক বা না হোক । কেবল মাতা পিতার বৈবাহিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কোন সন্তানের পিতৃত্ব প্রমাণিত হতে পারে । বিবাহটি বৈধ বা অনিয়মিত হতে পারে কিন্তু তা অবশ্যই অবৈধ হতে পারবে না। কোন সন্তানকে বৈধ হতে হলে সে অবশ্যই কোন পুরুষ এবং সেই পুরুষের স্ত্রীর সন্তান হতে হবে, অন্যায় বা অবৈধ কিছুর ফলে সন্তান হলে তা অবৈধ সন্তান বলে গণ্য হবে সে সন্তানকে বৈধ করা যাবে না। কোন নারীর গর্ভ থেকে কোন সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে কেবল এর প্রমাণ দ্বারাই মাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় । কোন সন্তান অবৈধ হলেও মাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ।
মুসলিম আইনে সন্তানের বৈধতা সম্পর্কে অনুমান এবং ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১১২ ধারার মধ্যে একটি প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব রয়েছে। সাক্ষ্য আইনের ১১২ ধারা মুসলিম আইনের ঐ বিধানকে অতিক্রম করেছে। এ সম্পর্কিত এলাহাবাদ হাইকোর্ট এর একটি মামলায় প্রশ্ন উঠেছে । এলাহাবাদ হাইকোর্ট স্থির করেন যে, ধারাটি মুসলিম আইনের বিধানকে অতিক্রম করেছে এবং এটা কেবল মুসলমানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। লাহর হাইকোর্টও এই একই অভিমত ব্যক্ত ও গ্রহণ করেন । অযোধ্যার চিফ কোর্ট ঘোষণা করেন যে, যদি ১১২ ধারাটি মুসলমানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ও তবু তা কোন অনিয়মিত বিবাহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না ।
যেসব ক্ষেত্রে সম্ভাব্য পিতা কর্তৃক পিতৃত্বের স্বীকৃতি সন্তানের বৈধতা নিরূপণের জন্য প্রাসঙ্গিক এবং কার্যকর
অথবা
জন্মের বৈধতা সম্পর্কে অনুমান (Presumptions of legitimacy)
(ক) মুসলিম আইন অনুসারে :
১. বিবাহের০৬ মাসের মধ্যে কোন সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে সন্তানটি অবৈধ হবে না
পিতা সন্তানটিকে বৈধ বলে দাবি করেন।
২. পিতা সন্তানটিকে লি'আন দ্বারা অস্বীকার না করলে, বিবাহের তারিখ হতে ছ
মাস পর ভূমিষ্ঠ সন্তানটিকে বৈধ বলে অনুমান করা হবে।
৩. লি'আন( স্বামী কর্তৃক কোন সাক্ষা ছাড়া নিজ স্ত্রীর উপর ব্যভিচারের আনীত
অভিযোগ) দ্বারা অস্বীকার না করলে, বিবাহ বিচ্ছেদের দুই বছরের মধ্যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে সন্তানটিকে বৈধ বলে অনুমান করা হবে।
(খ) যে ঘটনা থেকে মাতা পিতার মধ্যে বিবাহের অস্তিত্বটিকে অনুমান করা যায়, ঐ ঘটনাবলি থেকে সন্তানের বৈধতা অনুমিত হয় ।
(গ) বিবাহিত দম্পত্তির মিলনের সুযোগ ছিল না, তা প্রমাণ করতে না পারলে সন্তানটিকে অবৈধ বলা যাবে না।
(ঘ) সন্তানের মায়ের সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল এ মর্মে মৃত পিতার বিবৃতি থাকলে তা থেকে বিবাহের অস্তিত্ব ও সন্তানের বৈধতা অনুমান করা যেতে পারে ।
সন্তানের বৈধতা একটি মর্যাদা, যা কিছু বিষয় বা ঘটনার ফলে প্রতিষ্ঠিত । পক্ষান্তরে বৈধকরণ হলো একটি কার্যক্রম, যা এইরূপ মর্যাদা সৃষ্টি করে যে মর্যাদা পূর্বে ছিল না। যেক্ষেত্রে একটি বৈধ বিবাহের অস্তিত্ব স্পষ্টত প্রমাণ করা যাবে না বা যেক্ষেত্রে সন্তানটি বিবাহের ছয় মাসের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে কেবল সেসব ক্ষেত্রে এরূপ কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজন হয়ে থাকে । এমন কি পক্ষদ্বয়ের মধ্যে বৈধ বিবাহের সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ না থাকলেও পিতা কর্তৃক স্বীকৃত সন্তানকে বৈধ সন্তান হিসাবে গণ্য করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তারই পুত্র এ সম্পর্কে স্পষ্ট স্বীকৃতি থাকতে হবে অর্থাৎ পিতা কর্তৃক সন্তানটিকে তার ঔরসজাত বলে স্বীকৃতি দিতে হবে । যেমন কোন লোক বলতে পারে যে তিনি একজন পালককে প্রতিপালন করেছেন, এটা কোন পিতৃত্বের স্বীকৃতি নয় এবং এ ক্ষেত্রে বিষয়টি কার্যত উল্টো হবে।
স্বীকৃতি কেবল মাত্র কাউকে পুত্র বলে স্বীকার করাই বুঝায় না । এ স্বীকৃতি এমনভাবে করতে হবে যাতে বুঝা যায়, স্বীকৃতি বলতে কেবল অন্যকে তার পুত্র বলে গ্রহণ করাই নয় বরং তার বৈধ সন্তান বলে বোঝাবে। বেঈলীর মতে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সন্তান পুত্র বা কন্যা হতে পারে । কোন সন্তান বৈধ না হলে কেবল স্বীকৃতির মাধ্যমে তাকে বৈধ করা যাবে না । স্বীকৃতির মতবাদটি কেবল সাক্ষ্য আইনের মতবাদই নয়, বরং মিরাস সংক্রান্ত স্থায়ী আইনেরও অংশ বিশেষ । স্বীকৃতি সুস্পষ্ট বা অন্তনির্হিত উভয়ই হতে পারে । স্বীকৃতি সুস্পষ্ট হওয়ার আবশ্যকতা নাই । কোন ব্যক্তি অপর একজনকে অভ্যাসগতভাবে এবং প্রকাশ্যে তাঁর বৈধ পুত্র হিসেবে তাঁর সঙ্গে ব্যবহার করেছে প্রমাণ করতে পারলেই তা থেকে স্বীকৃতির বিষয়টি অনুমান করা চলে। বৈধতার ক্ষেত্রে দাবিদারের পক্ষে সঠিক স্বীকৃতি প্রমাণিত হয়ে থাকলে এবং বিবাহটি বিবাদের বিষয় না হয়ে থাকলে ইহা প্রমাণিত বিবাহ। স্বীকৃতিটি প্রমাণ করার ভার দাবিদারের উপর ন্যস্ত। তবে একবার স্বীকৃতি প্রমাণিত হলে তা অপ্রমাণিত করার ভার তাদের উপর ন্যস্ত হবে যারা এই স্বীকৃতি অস্বীকার করে ।
স্বীকৃতির উপাদান বা শর্তসমূহ (Conditions or elements of legitimacy)
জন্মেও বৈধতার স্বীকৃতি বৈধ ও কার্যকর করতে হলে নিম্নলিখিত উপাদান বা শর্তসমূহ থাকতে হবে :
১. স্বীকৃতিটি এমনভাবে হতে হবে যেন তাতে প্রমাণিত হয় যে স্বীকৃতি প্রদানকারী ব্যক্তি অন্যজনকে কেবল তার সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে চাননি বৈধ সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে চেয়েছেন ।
২. পক্ষদ্বয়ের বয়স এমন হতে হবে যেন স্বীকৃতিদানকারী স্বীকৃতপ্রাপ্ত ব্যক্তির পিতা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
৩. স্বীকৃতপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্ম অবশ্যই জ্বিনার ফলে হবে না। যেমন হওয়া সম্ভব যদি তার মাতাকে গর্ভধারণের সম্ভাব্য সময়কালের মধ্যে কখনো স্বীকৃতিদানকারী ব্যক্তির বৈধ স্ত্রী না হয়ে থাকে অর্থাৎ সে সময় তার মাতার অপর কোন একজনের বৈধ স্ত্রী ছিল, অথবা স্বীকৃতিদানকারী তার মাতাকে তালাক দিয়েছিল এবং তখনো পুন বিবাহের বাধা দূর হয়নি অথবা তার মাতা স্বীকৃতিদানকারীর নিষিদ্ধ ধাপে সম্পর্কিত ছিল। বিবাহটি অপ্রমাণিত হলে সন্তানটি কোন অবিবাহিত মহিলার গর্ভজাত সন্তান বলে বিবেচিত হবে।
৪. স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি অপর কোন ব্যক্তির সন্তান হিসেবে পরিচিত হলে চলবে না।
৫. স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি কর্তৃক স্বীকৃতিটি অস্বীকার করলে চলবে না।
স্বীকৃতির ফলাফল (Effects of legitimacy)
কোন সন্তান বৈধতার স্বীকৃতি দ্বারা নিম্নলিখিত ফলাফল সৃষ্টি হয় :
১. স্বীকৃতিটি বৈধ সন্তানের স্বীকৃতি হলে এবং এই সম্পর্কিত তথ্যগত এবং আইনগতভাবে সম্ভব হলে তাতে স্বীকৃতিদাতার ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ব্যক্তির মাতার মধ্যকার বিবাহ সম্পর্কে অনুমান বণ্ডিত না হলে স্বীকৃতির ফলে ঐ ব্যক্তি স্বীকৃতিদাতার সন্তান হিসেবে তার কাছ থেকে উত্তরাধিকারের সম্পত্তি লাভ করবে।
২. স্বীকৃতির ফলে স্বীকৃতিদাতা এবং স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ব্যক্তির মায়ের বৈধ বিবাহের অস্তিত্ব সম্পর্কে অনুমান সৃষ্টি হয় ।
৩. একবার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়ে থাকলে তা অপরিবর্তনীয় হবে এবং তা রদ করা
যায় না ।
৪. সন্তান পিতার কাছে ভরণপোষণের অধিকারী হয়।
মুসলিম আইনে দত্তক গ্রহণকে স্বীকার করা হয় না। ব্যভিচার নিষিদ্ধ জ্ঞাতির সঙ্গে বা অবিবাহিত নারীর সঙ্গে মিলনের ফলে যে সন্তান জন্ম হয়েছে তাকে স্বীকৃতি দ্বারা বৈধ করা যাবে না। বিবাহটি প্রমাণিত না হলে সন্তানটি অবৈধ সন্তান হিসেবে বিবেচিত হবে। যদি স্ত্রীলোকটি পতিতা হয় এবং দাবিকারীর কথিত পিতার ঘরে এসে তার স্ত্রী হিসেবে নিজেকে দাবি করে, তাহলে দীর্ঘদিনের মিলনের ফলেও বিবাহের অনুমান করা যায় না। তবে লোকটি যদি এই স্ত্রীলোকের গর্ভের সন্তানকে স্বীয় সন্তান হিসেবে স্বীকার করে, তবে তার সঙ্গে ঐ স্ত্রীলোকের বিবাহটি অনুমান করা চলে । তবে যদি সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে সন্তানটিকে জন্মদানকালে তাঁদের মধ্যে কোন বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল না, তবে সন্তানটি অবশ্যই অবৈধ বিবেচিত হবে এবং স্বীকৃতির দ্বারা সন্তানটিকে বৈধ করা যাবে না ।
কিভাবে সম্ভাব্য পিতা কর্তৃক পিতৃত্বের স্বীকৃতি সন্তানের বৈধতা নিরূপণের জন্য প্রাসঙ্গিক এবং কার্যকর হয় তা মামলার মাধ্যমে ফলাফলের আলোচনা :
Syed Habibur Rahman Chowdhury vs Syed Altaf Ali Chowdhury (1921) 23 BOMLR 636 মামলার বিবরণে মামলার বাদী ও আপীলকারী হাবিবুর রহমান চৌধুরী এক ঘোষণা মূলে দাবি করেন যে, তিনি বগুড়ার নবাবের বৈধ পুত্র যিনি ১৯১৫ সালে উত্তরাধিকারহীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। মোকদ্দমাটির বিরোধিতা করা হয় মৃত নবাবের নাতীদের দ্বারা যারা ছিলেন নবাবের বৈধ কন্যার পুত্র এবং দুইজন তার ভ্রাতুষ্পুত্র। আপীলকারী বাদীর দাবি ছিল “বাদী নিঃসন্দেহে মৃত নবাবের সন্তান যার মাতা ছিলেন ইহুদি মজলি চৌহান(Mozelle Cohen) তিনি মুসলমান হন এবং নবাবের সাথে বসবাস করেন। ১৮৯৩ সালে আপীলকারীর জন্ম। নবাবের ঔরষে মজলী চৌহানের গর্ভে ১৮৯১ সালে একটি কন্যা সন্তা্নের জন্ম হয়। আপীলকারী দুইটি ভিত্তির উপর তার দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে চান :
১. যেহেতু মজলি চৌহানকে নবাব বিয়ে করেছিলেন।
২. যেহেতু বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নবাব তাকে বৈধ পুত্র বলে স্বীকার করেছেন।
মামলাটি Greaves J, আদালতে বিচার শুরু হলে মৌখিক সাক্ষ্য ও দলিলি সাক্ষ্য গৃহীত হয় এবং উভয় পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণে কোন বিবাহ প্রমাণিত হয় নাই । ইহার বিপরীতে প্রমাণিত হলো যে, মজিলী চৌহানের অবস্থান কোন পতিতার চেয়ে ভালো ছিল না। নবাব আপীলকারীকে বৈধ পুত্র হিসেবে স্বীকার করেছেন যেভাবে তা আইন অনুযায়ী করা হয় নাই। বিচারক Woodroffe J মন্তব্য ছিল মজিলী চৌহানের দীর্ঘ সম্পর্কের বিষয়টি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ছিল, তা নিছক উপপত্নী হিসেবে পরিচিত। প্রধান বিচারক বলেন যে, আমি মনে করি বিজ্ঞ বিচারক সঠিক নির্ধারণ করেছেন যে, মজিলী চৌহানের সাথে নবাবের বিয়ে হয় নাই। সুতরাং আপীলটি খারিজ হয়ে যায়।
মুসলিম আইনের বিধান মোতাবেক এক্ষেত্রে এটি সুপ্রতিষ্ঠিত হয় যে, কোন ব্যক্তি দ্বারা গঠিত কোন বিবৃতি অবৈধ হিসেবে প্রমাণিত কোন সন্তান বৈধ করতে পারেন । তবে বিবৃতি দাতার কর্তৃত্ব দৃশ্যে স্পষ্ট এবং অকাট্য বিবরণ থাকা চাই।
পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া
(ক) মুসলিম আইন অনুসারে :
১ । বিবাহের ছয় মাসের মধ্যে কোন সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে সন্তানটি অবৈধ হবে যদি না পিতা সন্তানটিকে বৈধ বলে দাবি করেন ।
২ । পিতা সন্তানটিকে লি’আন দ্বারা অস্বীকার না করলে, বিবাহের তারিখ হতে ছয় মাস পর ভূমিষ্ঠ সন্তানটিকে বৈধ বলে অনুমান করা হবে ।
৩ । লি’আন দ্বারা অস্বীকার না করলে, বিবাহবিচ্ছেদের দুই বছরের মধ্যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে সন্তানটিকে বৈধ বলে অনুমান করা হবে ।
(খ) যে ঘটনা থেকে মাতা পিতার মধ্যে বিবাহের অস্তিত্বটিকে অনুমান করা যায়, ঐ ঘটনাবলি থেকে সন্তানের বৈধতা অনুমিত হয় ।
(সঃ) বিবাহিত দম্পতির মিলনের সুযোগ ছিল না, তা প্রমাণ করতে না পারলে সন্তানটিকে অবৈধ বলা যাবে না ।
(ছ) সন্তানের মাছের সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল এ মর্মে মৃত পিতার বিবৃত্তি থাকলে তা থেকে বিবাহের অস্তিত্ব ও সন্তানের বৈধতা অনুমান করা যেতে পারে।
সন্তানের বৈধতা একটি মর্যাদা, যা কিছু বিষয় বা ঘটনার ফলে প্রতিষ্ঠিত। পক্ষান্তরে বৈধকরণ হলো একটি কার্যক্রম, যা এইরূপ মর্যাদা সৃষ্টি করে যে মর্যাদা পূর্বে ছিল না। যেক্ষেত্রে একটি বৈধ বিবাহের অস্তিত্ব স্পষ্টত্ব প্রমাণ করা যাবে না বা যেক্ষেত্রে সন্তানটির হিবাহের ছয় মাসের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে কেবল সেসব ক্ষেত্রে এরূপ কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এমন কি পক্ষদ্বয়ের মধ্যে বৈধ বিবাহের সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ না থাকলেও পিতা কর্তৃক স্বীকৃত সন্তানকে বৈধ সন্তান হিসাবে গণ্য করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তারই পুত্র এ সম্পর্কে স্পষ্ট স্বীকৃতি থাকতে হবে অর্থাৎ পিতা কর্তৃক সন্তানটিকে তার ঔরসজাত বলে স্বীকৃতি দিতে হবে।
যেমন কোন লোক বলতে পারে যে তিনি একজন পালককে প্রতিপালন করেছেন, এটা কোন পিতৃত্বের স্বীকৃতি নয় এবং এক্ষেত্রে বিষয়টি কার্যত উল্টো হবে। স্বীকৃতি কেবলমাত্র কাউকে পুত্র বলে স্বীকার করাই বুঝায় না । এ স্বীকৃতি এমনভাবে করতে হবে হাতে বুঝা যায় স্বীকৃতি বলতে কেবল অন্যকে তার পুত্র বলে গ্রহণ করাই নয় বরং তার বৈধ সন্তান বলে বুঝাবে । বৌলীর মতে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সন্তান পুত্র বা কন্যা হতে পারে ।
কোন সন্তান বৈধ না হলে কেবল স্বীকৃতির মাধ্যমে তাকে বৈধ করা যাবে না। স্বীকৃতির মতবাদটি কেবল সাক্ষ্য আইনের মতবাদই নয়, বরং মিরাস সংক্রান্ত স্থায়ী আইনেরও অংশ বিশেষ। স্বীকৃতি সুস্পষ্ট বা অন্তর্নিহিত উভয়ই হতে পারে। স্বীকৃতি সুস্পষ্ট হওয়ার আবশ্যকতা নাই। কোন ব্যক্তি অপর একজনকে অভ্যাসগতভাবে এবং প্রকাশ্যে তাঁর বৈধ পুত্র হিসেবে তাঁর সঙ্গে ব্যবহার করেছে প্রমাণ করতে পারলেই তা থেকে স্বীকৃতির বিষয়টি অনুমান করা চলে। বৈধতার ক্ষেত্রে দাবিদারের সপক্ষে সঠিক স্বীকৃতি প্রমাণিত হয়ে থাকলে এবং বিবাহটি বিবাদের বিষয় না হয়ে থাকলে ইহা প্রমাণিত বিবাহ। স্বীকৃতিটি প্রমাণ করার তার দাবিদারের উপর ন্যস্ত। তবে একবার স্বীকৃতি প্রমাণিত হলে তা অপ্রমাণিত করার ভার তাদের উপর ন্যস্ত হবে যারা এই স্বীকৃতি অস্বীকার করে।
…………………………
0 Comments