সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

কোন ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারায় আওতায় মোকদ্দমা দায়ের করা যায়? এই ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করার সুবিধা কি? কার বিরুদ্ধে এই ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করা যায় না?

কোন ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারায় আওতায় মোকদ্দমা দায়ের করা যায়? এই ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করার সুবিধা কি? কার বিরুদ্ধে এই ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করা যায় না?


 দখল পুনরুদ্ধার

RECOVERING POSSESSION OF PROPERTY
Possession of Immovable Property


প্রশ্ন: কোন ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারায় আওতায় মোকদ্দমা দায়ের করা যায়? এই ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করার সুবিধা কি? কার বিরুদ্ধে এই ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করা যায় না?


উত্তরঃ

যেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারায় আওতায় মোকদ্দমা রুজু/দায়ের করা যায়(Suit by person dispossessed of immoveable property)

অথবা,

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারার আওতায় মামলা দায়ের/দখল পুনরুদ্ধারের(RECOVERING POSSESSION OF PROPERTY) বিধান


সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন(The Specific Relief Act, 1877) এর ৯ ধারা অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তির দখলচ্যুত ব্যক্তি তাঁর দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মোকদ্দমা রুজু করতে পারেন। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তিকে জোরপূর্বক বা বেআইনিভাবে তাঁর দখলীয় স্থাবর সম্পত্তি হতে বেদখল কিংবা উচ্ছেদ করা হলে সেক্ষেত্রে ৯ ধারার বিধান অনুযায়ী দখলচ্যুত হওয়ার তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে ব্যক্তি তাঁর দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন।


সুতরাং, কোনো ব্যক্তি কোনো সম্পত্তি বেআইনিভাবে দখল করলেও তাকে বেআইনিভাবে দখলচ্যুত করা যাবে না। কেননা- অত্র ৯ ধারায় দখলকার ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, মালিককে নয়। কারণ মালিকের জন্য ৮ ধারা সংরক্ষণ করা আছে।


আমরা এ কথা বলতে পারি যে, যথাযথ আইনগত পন্থা ছাড়া যদি কোনো ব্যক্তিকে তাঁর সম্মতি ব্যতীত স্থাবর সম্পত্তি হতে দখলচ্যুত করা হয়, কেবল সেক্ষেত্রে উক্ত দখলচ্যুত ব্যক্তি তাঁর স্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারার আওতায় দখলচ্যুত তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে এখতিয়াসম্পন্ন দেওয়ানি আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। 


৯ ধারার উপাদান বা শর্তসমূহ

The Specific Relief Act, 1877এর ৯ ধারা বিশ্লেষণ করলে নিম্নেবর্ণিত শর্তসমূহ পাওয়া যায়-


১. বাদী উক্ত স্থাবর সম্পত্তিতে দখলে ছিল এবং তাকে বেদখল করা হয়েছে।

২. বাদীকে দখলচ্যুত করা হবে বেআইনিভাবে।

৩. বাদীর অসম্মতিতে তাকে বেদখল করা হয়।

৪. বাদী তার স্থাবর সম্পত্তি থেকে বেদখল হতে হবে।


উপরিউক্ত শর্তসমূহ পূরণ করলে দখলচ্যুত ব্যক্তি ৯ ধারার অধীনে দখল পুনরুদ্ধারের মামলা দায়ের করতে পারবেন। তবে ৯ ধারায় বাদী(দখলচ্যুত ব্যক্তি)কে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ প্রমাণ করতে হবে। যথা–


১. বাদীর স্থাবর সম্পত্তিতে দখল ছিল

৯ ধারার মামলা দায়েরের এবং প্রমাণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে বাদী উক্ত স্থাবর সম্পত্তিতে দখলে ছিল। এই ধারায় মামলার ক্ষেত্রে উক্ত সম্পত্তিতে বাদীর স্বত্ব বা মালিকানা ছিল কিনা তা বিবেচ্য বিষয় নয়। [Lallu Yeshwant Singh vs Rao Jagdish Singh & Ors, AIR 1968 SC 620]। শুধু দখল নির্ধারণ করে। দখল শব্দটি প্রকৃত দখল, কার্যত: দখল, পরোক্ষ দখল এবং আইনগত দখলকে অন্তর্ভুক্ত করে।


২. বিবাদী কর্তৃক বেদখল

বাদীকে প্রমাণ করতে হবে কিভাবে তাকে বেদখল করা হয়েছে। বাদী এক্ষেত্রে তার পূর্ববর্তী দখল দেখাতে পারবে।


৩. সম্মতি ছাড়া এবং বেআইনিভাবে বেদখল

বেদখল হওয়া ব্যক্তির সম্মতি বা আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া বেদখল করা হলে দখলচ্যুত ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারায় মামলা দায়ের করতে পারবেন।


৪. বেদখলের ৬ মাসের মধ্যে মামলা

তামাদি আইন, ১৯০৮ এর প্রথম তফসিলের ৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ৯ ধারার অধীন স্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধারের মামলা বাদী বেদখল হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে দায়ের করতে পারবেন তবে মামলা ৬ মাস পর দায়ের করলে তামাদি আইনের ৩ ধারানুসারে উক্ত মামলা খারিজ হয়ে যাবে।


বাদী যদি উপরিউক্ত বিষয়গুলো প্রমাণ করতে পারেন তাহলেই আদালত বাদী পক্ষে দখল পুনরুদ্ধারের আদেশ প্রদান করতে পারেন।


ধারা ৯-এর অধীনে মোকদ্দমা করার সুবিধাঃ

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করলে যেসব সুবিধাসমূহ পাওয়া বা ভোগ করা যায় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

ক. উক্তরূপ মোকদ্দমার নালিশি সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ব প্রমাণ করতে হয় না;

খ. নালিশি জমির মূল্যমানের উপর 'Ad-valorem court fee-এর অর্ধেক পরিমাণ দিতে হয়;

গ. নালিশি সম্পত্তি বেদখলের ৬ (ছয়) খাসের মধ্যে এখতিয়ারসম্পন্ন আদলতে মোকদ্দমা দায়ের করা যায়/করলে চলে;

ঘ. উক্ত রূপ নালিশি সম্পত্তির মোকদ্দমা নিষ্পত্তি হয় স্বল্প সময়ের ব্যবধানে; এবং

ঙ. সর্বোপরি এ ধারা অনুসারে দায়ের কৃত মোকদ্দমায় প্রদত্ত কোন ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে কোন আপিল করা যায় না।


যার বিরুদ্ধে ৯ ধারায় মামলা দায়ের করা যায় নাঃ

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারাতেই এর সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়েছে। এই ৯ ধারাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এই ধারার অধীনে নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায় করা যায় না, যেমন-

(ক) সরকারের বিরুদ্ধে অত্র ৯ ধারায় কোনো মোকদ্দমা করা যায় না।

(খ) আইনানুগভাবে অথবা বাদীর সম্মতিতে অথবা আদালতের রায় বাস্তবায়ন করার জন্য যদি স্থাবর সম্মতি থেকে বেদখল করা হয়, সেক্ষেত্রে উক্ত ৯ ধারার বিধান প্রযোজ্য নয়।


(গ) দখলচ্যুতের তারিখ হতে ৬ মাস অতিক্রম হলে সেক্ষেত্রে মোকদ্দমা করা যায় না। তবে দখলচ্যুতির ছয় মাস পরে দখলের জন্য মামলা করা হলে বাদী যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি কোন স্বত্ব বা অধিকারবলে দখল  পেতে অধিকারী তবে বাদী দখল পুনরুদ্ধার করতে পারেন।  

[নজিরঃ এআইআর ১৯৩৯ আসাম ২৩৬]


(ঘ) দখলচ্যুতের বিষয়বস্তু স্থাবর সম্পত্তি না হলে সেক্ষেত্রে মোকদ্দমা করা যাবে না।


সুতরাং, উল্লেখিত ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের উক্ত ৯ ধরার বিধান মতে মোকদ্দমা করা যায় না।





৯ ধারার ডিক্রির রিরুদ্ধে প্রতিকার

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারায় স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে, অত্র ধারায় আদালত যে ডিক্রি বা আদেশে প্রদান করবেন, তার বিরুদ্ধে কোন-(ক) আপিল; অথবা (খ) রিভিউ দায়ের করা যাবে না। তবে আমরা জানি সেক্ষেত্রে আপীল দায়ের করা যায় না, সেক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধির ১১৫ ধারার শর্তপূরণ সাপেক্ষে রিভিশন(Revision) দায়ের করা যায়। সুতরাং ৯ ধারার অধীনে সংক্ষুব্ধ পক্ষের(aggrieved party) প্রতিকার হচ্ছে রিভিশন দায়ের করা। উল্লেখ্য, ৯ ধারা ৮ ধারায় প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না।


উৎসঃ

  • সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ভাষ্য—গাজী শামছুর রহমান
  • সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭— জোবায়ের আহমদ (ফরিদ)
  • সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন— বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া
  • সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন — ড. মোঃ আনসার আলী খান

Post a Comment

0 Comments