প্রশ্ন: সাক্ষ্যের প্রাসঙ্গিকতা বলতে কি বুঝেন? কোন অপরাধজনক ঘটনার পূর্ববর্তী, পরবর্তী আচরণ এবং অজুহাত কিভাবে প্রাসঙ্গিক হয় আলোচনা করুন।
সাক্ষ্যের প্রাসঙ্গিকতা
(Relevant facts)
সাক্ষ্য আইনের ধারা-৩ এর বিধান অনুসারে যখন একটি বিষয় অপর একটি বিষয়ের সাথে কোন না কোনভাবে যুক্ত থাকে তখন একটি বিষয়কে অন্য একটি বিষয়ের প্রাসঙ্গিক (Relevant facts)বলা হয়। অর্থাৎ আদালতে যেসব বিষয় বিচার্য বিষয় নয় বরং যেসব বিষয়ের সাহায্যে বিচার্য বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করতে সহায়তা করে তাই প্রাসঙ্গিক বিষয়। তবে প্রাসঙ্গিক হতে হলে অবশ্যই (ক) গ্রহণযোগ্যতা এবং (খ) বিচার্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত সম্পৃক্ত হতে হবে।
মনে রাখা প্রয়োজন যে, দু'টি বিষয় থাকার কারণে প্রাসঙ্গিক হওয়া সত্ত্বেও সাক্ষ্যকে অপ্রাসঙ্গিক বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।যদি -
- সাক্ষ্য দাতার বক্তব্য অতি দূরবর্তী এবং আনুমানিক হয়;
- যে পক্ষের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া হচ্ছে তা স্বীকার করলে।
মোটকথা, যে বিষয়গুলো সরাসরি বিচার্য নয় অথচ যাদের সাহায্যে বিচার্য বিষয় সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সহজ হয় সেগুলোকে প্রাসঙ্গিক বিষয় বলা হয়ে থাকে। সাক্ষ্য আইনের ৬ থেকে ৫৫ ধারায় প্রাসঙ্গিক বিষয় বা ঘটনার বিবরণ রয়েছে।
সাক্ষ্যের প্রাসঙ্গিকতা নিম্নরূপ:
পূর্ববর্তী, পরবর্তী আচরণ: সাক্ষ্য আইনের ৮ ধারা মোতাবেক যদি কোন
- মামলা;
- বিচার কার্য;
- বিচার্য বিষয়;
- প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে।
উক্ত মামলা বা বিচার কার্যক্রমে কোন পক্ষের বা তার প্রতিনিধির আচরণ এবং যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে তার আচরণ বা অপরাধের সাথে জড়িত কোন অভিযুক্ত ব্যক্তির আচরণ দ্বারা যদি—
- মামলা
- বিচার কার্য সম্পর্কে
- বিচার্য বিষয়
- প্রাসঙ্গিক বিষয় বা
ঘটনা প্রভাবিত করে বা ঘটনা প্রভাবিত হয়। তবে পূর্ববর্তী হোক বা পরবর্তী হোক না কেন ব্যক্তির আচরণ আদালতে প্রাসঙ্গিক বলে বিবেচিত হবে। যেমন-
১। খ কে বিষ দিয়ে হত্যার অভিযোগে ক এর বিচার হচ্ছে। খ- কে যে বিষ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে সেরূপ বিষ খ- এর মৃত্যুর পূর্বে ক সংগ্রহ করেছিল । ইহা প্রাসঙ্গিক।
২। প্রশ্ন হচ্ছে- ক-খ এর উপর দস্যুতা করেছে কি না?
খ- এর উপর দস্যুতা হবার পর ক- এর উপস্থিতিতে গ- বলেছিল “যারা খ- এর উপর দস্যুতা করেছে তাদের ধরতে পুলিশ আসছে” এবং এর পরেই ক- দৌড়ে পালিয়েছে।
এগুলো প্রাসঙ্গিক।
আলোচ্য ধারা অনুসারে অভিপ্রায়, উদ্যোগ এবং আচরণকেও প্রাসঙ্গিক বলে বিবেচনা করা হয়েছে । অভিপ্রায় ব্যতীত কোন কার্য সম্পাদন হয় না যেমন কারণ ব্যতীত কোন ফল হয় না। প্রায় ইহা খোঁজ নেয়া জরুরি হয়ে পড়ে যে অপরাধ সংগঠনের ক্ষেত্রে আসামীর কোন স্বার্থ বা অভিপ্রায় ছিল কি না? এ কারণেই অভিপ্রায় প্রাসঙ্গিক । অপরাধ সংগঠনের পূর্ব চেষ্টা এবং উদ্যোগ সমজাতীয়। যে পক্ষ বিচার্য বিষয় বা প্রাসঙ্গিক বিষয়কে প্রভাবিত করে তার উদ্যোগ পূর্ববর্তী আচরণের একটা দৃষ্টান্ত।
৩ বোম্বে, (১৯৭৮) ১২ মামলায় বলা হয়েছে- সাক্ষ্য আইনের উদ্দেশ্য হ'ল যে ঘটনাগুলি ঘটে বা ঘটে না, তাদের অপরিহার্য পরিপূরক বক্তব্যগুলিকে আদালতের বিবেচনায় গ্রহণীয় করা। এতে বিচারাধীন মামলার বিষয়গুলি সম্বন্ধে সিদ্ধান্তের ভিত্তি হিসাবে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে।
অজুহাত: আদালতে প্রদত্ত সকল সাক্ষ্যই প্রাসঙ্গিক হতে হয় কিন্তু প্রাসঙ্গিকতা সর্বদা গ্রহণীয়তার নিশ্চয়তা বিধান করে না। কোন বিষয় অন্য কোন বিষয়াবলির সাথে মুক্তভাবে কোন বিচার্য বিষয়ের অস্তিত্বকে সম্ভব করে তোলার পরও প্রত্যাখ্যান হতে পারে। যে বিষয় প্রমাণ বা অপ্রমাণ করতে চায় তা বিচার্য বিষয়ের কতটা নিকটবর্তী তার উপর গ্রহণীয়তা নির্ভর করে। পরোক্ষ সমর্থক বিষয়কে গ্রহণীয় করার জন্য নিম্নের দু'টি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে-
১. পরোক্ষ সমার্থক বিষয়কে গ্রহণীয় করার জন্য যুক্তিসংগত সাক্ষ্য দ্বারা প্রতিষ্ঠা লাভ করতে হবে।
২. প্রতিষ্ঠা লাভ করতে উহা তর্কিত বিষয়কে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করতে হবে।
সাক্ষীর অজুহাত বা ALIBI সাক্ষ্য আইনের ১১ ধারায় বিধৃত হয়েছে। আলোচ্য ধারা মতে- সে সকল বিষয় অন্য কোনভাবে প্রাসঙ্গিক নয় তা নিম্নবর্ণিত দু'টি ভাবে প্রাসঙ্গিকতা লাভ করতে পারে। যেমন-
১. যদি সে বিষয়গুলি কোন মামলার বিচার্য বা প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হয়।
যদি সে বিষয়গুলি স্বয়ং কিংবা অন্যকোন বিষয়ের অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতাকে অধিকভাবে সম্ভব বা অসম্ভব করে তোলে।
উদাহরণ: প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে যে ক- কোন অপরাধ করেছে কি না?
পরিস্থিতি এরূপ হয়েছে যে অপরাধটি ক, খ, গ অথবা ঘ এর মাঝে যে কোন একজন করেছে। যে বিষয় হতে প্রতীয়মান হয় যে ক- ব্যতীত অন্য কারও দ্বারা অপরাধটি সংঘটিত হতে পারে না এবং খ, গ অথবা ঘ কারও দ্বারা ঘটনাটি হয় নি তা প্রাসঙ্গিক। সাক্ষ্য আইনের ধারা বিশ্লেষন করলে অজুহাত সাধারণত দু'ধরনের পাওয়া যেতে পারে-
- পূর্ণাঙ্গ অজুহাত
- অপূর্ণাঙ্গ অজুহাত
পূর্ণাঙ্গ অজুহাত: পূর্ণাঙ্গ অজুহাত বলতে এমন এক অবস্থাকে বুঝাবে যার ফলে আসামীর কোন ভাবেই কাজটি করা সম্ভব হতে পারে না। যেমন- কেউ খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত হ'ল। দেখা গেছে যখন খুনটি করা হয়েছে সে সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি অন্য কোন অপরাধের দরুন জেলহাজতে বন্দি ছিল। বন্দি থাকা অবস্থায় বাহিরে খুন তার দ্বারা কোন ভাবেই সম্ভব নয় তাই ইহাকে পূর্ণাঙ্গ অজুহাত হিসাবে বলা যেতে পারে ।
অপূর্ণাঙ্গ অজুহাত: সাধারণভাবে যে কাজটি ঘটা সম্ভব নয় কিন্তু অন্য কোন উপায়ে কাজটি ঘটা সম্ভব হতেও পারে। যেমন- কেউ একজন ঢাকায় কাউকে খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হ'ল। দেখা গেল যে সময় খুন করা হয়েছে তার দু'ঘন্টা আগে ও দু'ঘন্টা পরে সে চট্টগ্রাম ছিল। আপাত দৃষ্টিতে অভিযুক্ত ব্যক্তির দ্বারা খুন করা সম্ভব নয় । কিন্তু সম্ভব হতেও পারে যদি ব্যক্তি দ্রুতগামী কোন বাহনে চড়ে ঢাকায় এসে খুন করে আবার চট্টগ্রাম চলে যায়।
..................
0 Comments