সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

মুসলিম আইন কি কি আইনকে অন্তর্ভুক্ত করে? মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ কর্তৃক আনীত পরিবর্তনসমূহ আলোচনা করুন।(Muslim personal law)

 

মুসলিম আইন কি বলে? বিয়ের কত দিন পর তালাক দেয়া যায়? কত সালে মুসলিম পারিবারিক আইন গৃহীত হয়? মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কে কতটুকু সম্পত্তি পায়?


মুসলিম আইন কি কি আইনকে অন্তর্ভুক্ত করে? মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ কর্তৃক আনীত পরিবর্তনসমূহ আলোচনা করুন।


মুসলিম আইন

কোরআন এবং হাদীসের উপর ভিত্তি করে তথা হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কর্তৃক প্রচারিত আল্লাহ্ তায়ালার ঐশী বাণী এবং হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর কথা ও কাজের উপর ভিত্তি করে যে আইন তৈরী হয়েছে তাই মুসলিম আইন। যেহেতু এ আইনের বেশীর ভাগ অংশ ঐশী তথা আল্লাহ্ প্রদত্ত এ কারণে এ আইনকে ঐশী আইনও বলা হয়। মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের সকল বিষয় আমাদের বাংলাদেশে প্রযোজ্য নয়। ১৯৩৭ সালের মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরীয়ত) প্রয়োগ আইন দ্বারা যে সমস্ত বিষয়ে প্রযোজ্য করা হয়েছে তাই আমাদের বাংলাদেশে আদালতের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করা যায়। মুসলিম ব্যক্তিগত শরীয়া আইনের পাশাপাশি যে সমস্ত বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করেছে এবং যা আমাদের বংলাদেশে মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা নিম্নে বর্ণিত হলোঃ


(১) মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরীয়ত) প্রয়োগ আইন ১৯৩৭;

(২) বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯;

(৩) মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯;

(৪) মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১;

(৫) মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা, ১৯৬১;

(৬) মুসলিম বিবাহ তালাক (রেজিস্ট্রিকরণ) আইন, ১৯৭৪;

(৭) মুসলিম বিবাহ তালাক (রেজিস্ট্রিকরণ) বিধিমালা, ১৯৭৫;

(৮) পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫; এবং

(৯) পারিবারিক আদালত বিধিমালা, ১৯৮৫


সুতরাং, বাংলাদেশে প্রচলিত সকল মুসলিম আইনসমূহকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়: মুসলিম আইন । (১) শরীয়া ভিত্তিক (Traditional) মুসলিম আইন; এবং (২) বিধিবদ্ধ (Statutory)

উপরোক্ত ৯টি আইনের মধ্যে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরীয়ত) প্রয়োগ আইন ১৯৩৭ টি শরীয়া ভিত্তিক তথা কোরআন হাদীসের উপর প্রতিষ্ঠিত। এই আইনটি মুসলিম ঐশী আইনকে বাস্তবায়নের পথ করে দিয়েছে। অন্যান্য আইনগুলো বিধিবদ্ধ মুসলিম আইন। যদিও এ সমস্ত আইনের উৎস হলো শরীয়াভিত্তিক মুসলিম আইন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশটির প্রতিনিধিত্বের নীতি (Doctrine of Representation) তালাকের নোটিশ লিখিতভাবে স্ত্রীকে এবং চেয়ারম্যানকে দেওয়ার বিধান এবং স্ত্রীকে একবার তালাক দিলে তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহের ক্ষেত্রে শরীয়া আইনের যেবিধান তা মান্য না করে পুনরায় স্ত্রীকে নিয়ে স্বামী স্ত্রী হিসাবে বসবাস করার বিধান সাথে প্রবর্তনপূর্বক যে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন প্রণয়ন করা হয় তা আমাদের শরীয়া আইনের বেশ সাংঘর্ষিক। 




মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরীয়ত) প্রয়োগ আইন, ১৯৩৭


বিপরীত কোন প্রথা বা রীতি থাকা সত্ত্বেও উইল বিহীন উত্তরাধিকার উত্তরাধিকাসূত্রে প্রাপ্ত অথবা চুক্তি বা দান বা ব্যক্তিগত আইনের অন্য কোন বিধান অনুযায়ী লব্ধ ব্যক্তিগত সম্পত্তিসহ নারীদের বিশেষ সম্পত্তি, বিবাহ, তালাক, ইলা, জিহার, লিয়ান, খোলা ও মুবারতসহ বিবাহ ভংগ, খোরপোষ, দেনমোহর, অভিভাবকত্ব, দান, অছি, অছি সম্পত্তি ও (দাতব্যালয়) দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য ও ধর্মীয় সম্পত্তি ব্যতীত ওয়াকফ সংক্রান্ত সকল প্রশ্ন (কৃষি জমি সম্পর্কিত প্রশ্ন ব্যতিরেকে) যে সকল মামলায় পক্ষগণ মুসলিম, সে সকল মামলার সিদ্ধান্ত বিধি মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শীরয়ত) অনুসারে হবে।


অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন

১৮৯০ সালের অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন অনুসারে নাবালক ছেলে ও মেয়ের এবং তাদের সম্পত্তির আইনগত অভিভাবক নিযুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা করে। কাউকে আইনগত অভিভাবক নিযুক্ত করা হলে তাকে আদালতে অনুমতি সাপেক্ষে নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হয়। নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির বিষয়ে আইনগত অভিভাবক নিয়োগ এবং নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তরের অনুমতি সহকারী জজ বা সিনিয়র সহকারী জজ আদালত পরিচালনা করে থাকে ।


মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১


মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ মুসলিম শরীয়া আইনের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনয়ন করেছে। পরিবর্তণসমূহ নিম্নরূপ-


(১) প্রতিনিধিত্বের নীতি(Doctrine of Representation)

উক্ত আইনের ৪ ধারায় প্রতিনিধিত্ব নীতি (Doctrine of Representation) প্রবর্তন করা হয়েছে এবং উক্ত নীতি অনুসারে দাদা মারা যাবার পূর্বে বাবা মৃত্যুবরণ করলে বাবা যে সম্পত্তি প্রাপ্ত হতেন, নাতি এবং নাতনী সেই পরিমাণ জমির অংশীদার হবেন। যেমন- ক দাদা, খ পুত্র এবং গ প্রপুত্র। দাদা মৃত্যুবরণ করার পূর্বে খ মৃত্যুবরণ করলো। এ অবস্থায় ‘গ’ ‘ক’ এর নিকট হতে ‘খ’ যে অংশ প্রাপ্ত হতেন তা প্রাপ্ত হবেন। কিন্তু শরীয়া আইন অনুযায়ী সম্পত্তি পাওয়ার কথা দাদার।


(২) তালাক পরবর্তী স্ত্রীকে গ্রহণ সংক্রান্ত


শরীয়া আইনের বিধান অনুযায়ী কোন স্ত্রীকে তালাক প্রদান করার পর সেই স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করতে হলে সে স্ত্রীকে পুনরায় তৃতীয় ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তার সাথে যৌন মিলন শেষে সেখানে বিবাহ বিচ্ছেদ হলেই কেবল প্রথম স্বামী পুনরায় বিবাহ করতে পারবে। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ এই বিধানটির সংশোধন আনয়ন করে। এই আইনের অধিনে ১ম বার বা ২য় বার বিবাহ বিচ্ছেদ হলে উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ না করেই পূর্বের স্ত্রীকে বিবাহ করা যাবে। তবে ৩য় বার বিবাহ বিচ্ছেদ হলে সেক্ষেত্রে স্বামীকে পুনরায় তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিবাহ করতে হলে শরীয়া আইনে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

(৩) স্ত্রীকে তালাক প্রদানে নোটিশের বিধান


শরীয়া আইনে স্ত্রীকে তালাক প্রদান করতে হলে লিখিত আকারে সে তালাক প্রদান করার কোন বিধান নেই। মৌখিকভাবে তালাক উচ্চারণ করলেই তা নির্দিষ্ট সময়ান্তে কার্যকর হয়ে যায়। কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুসারে মৌখিক তালাকের পরিবর্তে তা লিখিতভাবে প্রদান করার বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। স্ত্রীকে তালাক দিতে হলে তালাকের একটি কপি স্ত্রীকে এবং অন্য একটি কপি স্ত্রীর সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান/মেয়রকে প্রদান করতে হবে। চেয়ারম্যান এবং ক্ষেত্রমতে মেয়র তালাকের নোটিশ প্রাপ্তির পর সালিশ কাউন্সিল গঠন করে উভয়পক্ষকে রিকনসিলিয়েশন বা পুনর্মিলন করে দেয়ার চেষ্টা করবেন। যদি পুনর্মিলনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তাহলে ৯০ দিন অতিক্রান্তে সেই তালাক কার্যকর হয়ে যাবে ।



তালাক কখন কার্যকর হবে


শরীয়া আইনে তিন তালাক উচ্চারণ করার সাথে সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়। তবে বাংলাদেশে প্রচলিত আইনে তালাক প্রদান করতে হলে তার কপি স্ত্রী বা স্বামীকে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারম্যান বা মেয়রকে প্রদান করতে হয়। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তালাক কখন কার্যকর হবে। তালাক প্রদান করার পর সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান তালাকের কপি প্রাপ্ত হয়ে সালিশী কাউন্সিল গঠন করার পর ৯০দিন অতিক্রান্তে তালাক কার্যকর হবে, অর্থাৎ শরীয়া আইনের বিধান অনুসারে যেদিন তালাক দিবে সেদিন হতেই তালাক কার্যকর হবেনা।

খসড়া



Post a Comment

0 Comments