দলিল বাতিল বা বিলোপ [THE CANCELLATION OF INSTRUMENTS]
প্রশ্ন:
- দলিল বাতিল বলতে আপনি কি বোঝেন?
- কি কি কারণে এবং কে এইরুপ দলিল বাতিলের প্রতিকার পেতে পারেন?
- দলিল রদ বা বাতিল বলতে আপনি কি বুঝেন? কে এবং কি কি কারণে দলিল বাতিল চাইতে পারে?
দলিল বাতিল বা রদ
(Cancellation of Instrument)
সাধারণ অর্থে দলিল বাতিল বলতে কোন দলিলকে অকার্যকর এবং অবৈধ বলে ঘোষণা করা। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারায় কোন ব্যক্তি বাতিল বা বাতিলযোগ্য কোন দলিলকে বাতিল করার জন্য আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে ।
বাতিল বা বাতিযোগ্য কোন দলিলের কারণে কোন ব্যক্তি যেন ভবিষ্যতে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় তার রক্ষাকবজ হিসেবে ৩৯ ধারায় আদালতকে দলিল বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। দলিল বাতিলের প্রতিকার সুরক্ষামূলক বিচার নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। কারণ বাতিল বা বাতিলযোগ্য দলিল যদি বাতিল না করে চালু রাখা হয় তাহলে তা ভবিষ্যতে গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই ভবিষ্যত ক্ষতি থেকে সুরক্ষা হিসেবে কোন ব্যক্তিকে বাতিল বা বাতিলযোগ্য দলিল বাতিল বলে ঘোষণা করার জন্য আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। আদালত তার বিবেচনামূলক ক্ষমতা প্রয়োগ করে এমন দলিলকে বাতিল বা বাতিলযোগ্য ঘোষণা করতে পারে। ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারায় বলা হয়েছে–
যখন কোন ব্যক্তি এরুপ আশংকা করে যে, তার বিরুদ্ধে লিখিত কোন দলিল বাতিল না করে চালু রাখা হয় তাহলে তা ভবিষ্যতে গুরুতর ক্ষতির কারণ হবে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সেই দলিল বাতিল বা বাতিলযোগ্য ঘোষণার জন্য মামলা দায়ের করতে পারে এবং আদালত তার ইচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে (Discretionary Power) উক্ত দলিল অর্পণ ও বাতিলের জন্য আদেশ প্রদান করতে পারে ।
উদারণঃ
'ক' 'খ' কে জমি প্রদান করে। 'খ' তা 'গ' এর নামে উইল করে মারা যায়। এরপর 'ঘ' জমির দখল গ্রহণ করে এবং এই মর্মে একটি জাল দলিল পেশ করে যে, তার পক্ষে জিম্মাদার হিসাবে 'খ' কে উক্ত জমি হস্তান্তর করা হয়েছিল। 'গ' এই জাল দলিল বাতিলের জন্য আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে।
সুতরাং দলিল বাতিল হলো একটি আইনগত অধিকার বা প্রতিকার যা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের অধীন বাদী দেওয়ানী আদালতে প্রার্থনা করতে পারে যদি দলিলটি বাদীর বিরুদ্ধে বাতিল বা বাতিলযোগ্য হয় বা যদি দলিলটি অবিকল অবস্থায় রেখে দেওয়া হয় তাহলে তা ভবিষ্যতে বাদীর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
দলিল বাতিলের শর্তসমূহ বা উপাদানসমূহ-
১. কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি লিখিত দলিল বাতিল অথবা বাতিলযোগ্য হতে হবে;
২. দলিলদাতার নিকট দলিলটির অস্তিত্ব ক্ষতির কারণ হওয়ার যুক্তিসঙ্গত আশঙ্কা থাকবে।
৩. দলিলের অস্তিত্ব দলিলদাতার গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে হবে;
৪. দলিলটি বিলোপ করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে হবে;
৫. দলিলটি জাল অথবা প্রতারণামূলক হতে হবে;
৬.আংশিক দলিল বাতিলের ক্ষেত্রে বাতিলকৃত অংশ অন্যান্য অংশ হতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও পৃথক হবে;
৭. দলিলের বিষয় অবগত হওয়ার পর ৩ (তিন) বৎসরের মধ্যে মামলা করতে হবে এবং ৮. দলিল বিলোপ করার মামলার বাদীকে পরিস্কার হাতে আবেদন করতে হবে।
যে দলিল বাতিলের মোকদ্দমা করতে পারে:
৩৯ ধারার অধীন দলিল বাতিলের মোকদ্দমা দুই শ্রেণীর ব্যক্তি করতে পারে-
১। যার বিরুদ্ধে কোন দলিল বাতিল বা বাতিলযোগ্য;
২। এরুপ বাতিল বা বাতিলযোগ্য দলিল যার ক্ষতির কারণ হতে পারে ।
দলিল বাতিলের মোকদ্দমা দায়েরের জন্য উক্ত দলিলের পক্ষ হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই । যে ক্ষেত্রে বাদী উক্ত দলিলের পক্ষ না সেই ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে বাতিল বা বাতিলযোগ্য দলিলটি চালু রাখা হলে ভবিষ্যতে তা তার জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। ৩৯ ধারার অধীন প্রতিকার দেওয়ার প্রধান ভিত্তি হলো যদি কোন বাতিল বা বাতিলযোগ্য দলিল অবিকল অবস্থায় রাখা হয় তাহলে তা কোন ব্যক্তিকে ক্ষতি করার সম্ভবনা আছে। দলিল বাতিলের প্রতিকার মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে আদালত দেখবে উক্ত দলিল কোন ব্যক্তির ক্ষতির কারণ কিনা। শুধুমাত্র যে ব্যক্তি উক্ত দলিল দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে সেই ব্যক্তি দলিল বাতিলের মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে। যেমন 'ক' এবং 'খ' এর মধ্যে সম্পদিত কোন দলিল যেটা 'গ' এর উপর বাধ্যকর নয়, উক্ত দলিলটি 'গ' এর মোকদ্দমায় বাতিল বলে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। বরং আদালত এই মর্মে ঘোষণা দিতে পারে যে দলিলটি 'গ' এর জন্য কোন ক্ষতি করবে না। এই ক্ষেত্রে 'গ' ৪২ ধারায় দলিলটি যে তার জন্য ক্ষতিকর হবে না মর্মে ঘোষণা চেয়ে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে।
যে সকল কারণে দলিল বাতিলের আবেদন করা যায়
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ অনুযায়ী দলিল বাতিলের আবেদন করতে হলে নিম্নলিখিত তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে;
১। বিরোধীয় দলিলটি বাদীর বিরুদ্ধে বাতিল বা বাতিলযোগ্য হতে হবে;
২। বাদীর যুক্তিসঙ্গত আশঙ্কা থাকবে যে, দলিলটি অবিকল থাকলে ভবিষ্যতে তা বাদীর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে;
৩। মোকদ্দমার প্রেক্ষাপট মূল্যায়ন করে যদি আদালত মনে করে যে ন্যায় বিচারের স্বার্থে বাদী দলিল বাতিলের প্রতিকার পেতে পারে, তাহলে আদালত তার বিবেচনামূলক ক্ষমতা প্রয়োগ করে দলিলটি বাতিলের ডিক্রী দিতে পারে।
দলিল বাতিলের ডিক্রী পেতে বাদীকে যে সকল বিষয়গুলি প্রমাণ করতে হবে:
সুতরাং দলিল বাতিলের মোকদ্দমায় বাদীকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো প্রমাণ করতে
হবে;
১। বাতিল বা বাতিলযোগ্য দলিল
দলিল বাতিলের মোকদ্দমায় বাদী প্রমাণ করবে যে দলিলটি তার বিরুদ্ধে বাতিল বা বাতিলযোগ্য। যে ব্যক্তি দলিল বাতিলের আবেদন করেছে তার উক্ত দলিলের পক্ষ হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। দলিল বাতিলের প্রতিকার যে ব্যক্তি উক্ত দলিলের পক্ষ নয় সেও পেতে পারে যদি দলিলটি তার বিরুদ্ধে বাতিল বা বাতিলযোগ্য হয়।
২। ক্ষতির আশংকা
দলিল বাতিলের মোকদ্দমায় বাদী প্রমাণ করবে যে, যদি বাতিল বা বাতিলযোগ্য দলিলটি অবিকল অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়, তাহলে দলিলটি তার মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। দলিলটি মারাত্মক ক্ষতি করবে কিনা তা মোকদ্দমার প্রক্ষাপট বিবেচনা করে আদালত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
৩। আদালতকে সন্তুষ্ট করা
৩৯ ধারার অধীন আদালতের দলিল বাতিলের ক্ষমতা বিবেচনামূলক। মোকদ্দমার প্রেক্ষাপট মূল্যায়ণ করে যদি আদালত মনে করে যে, ন্যায় বিচারের স্বার্থে বাদী দলিল বাতিলের প্রতিকার পেতে পারে, তাহলে আদালত দলিলটি বাতিলের ঘোষণা দিতে পারে। সুতরাং আদালতকে সন্তুষ্ট করা অতীব প্রয়োজন ।
বিরোধীয় দলিলে পক্ষ আছেন এমন কোন ব্যক্তি কি শুধুমাত্র দলিলটি জাল এবং তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে ঘোষণামূলক ডিক্রীর প্রার্থনায় মামলা দায়ের করতে পারেন।
যে আইনের অধীন দলিল বাতিলের মোকদ্দমা করতে হবে
সাধারণ অর্থে দলিল বাতিল বলতে কোন দলিলকে অকার্যকর এবং অবৈধ বলে আদেশ দেওয়া। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারায় কোন ব্যক্তি বাতিল বা বাতিলযোগ্য কোন দলিলকে বাতিল করার জন্য আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে। দলিল বাতিল হলো একটি তত্ত্বগত অধিকার বা প্রতিকার যা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের অধীন বাদী দেওয়ানী আদালতে প্রার্থনা করতে পারে যদি দলিলটি বাদীর বিরুদ্ধে বাতিল বা বাতিলযোগ্য হয় বা যদি দলিলটি অবিকল অবস্থায় রেখে দেওয়া হয় তা ভবিষ্যতে বাদীর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়।
সুতরাং রেজিস্ট্রিকৃত একখানা দলিলের কোন পক্ষ ঐ দলিল বাতিল করতে চাইলে তাকে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারার অধীন দলিল বাতিলের মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। তবে এই ক্ষেত্রে বাদী কে নিম্নলিখিত তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে।
১। বিরোধীয় দলিলটি তার (বাদীর) বিরুদ্ধে বাতিল বা বাতিলযোগ্য;
২। তার (বাদীর) যুক্তিসঙ্গত আশঙ্কা আছে যে, দলিলটি অবিকল থাকলে তার গুরুতর ক্ষতির আশংকা আছে;
৩। মোকদ্দমার প্রেক্ষাপট মূল্যায়ণ করে যদি আদালত মনে করে যে ন্যায় বিচারের স্বার্থে বাদী দলিল বাতিলের প্রতিকার পেতে পারে, তাহলে আদালত দলিলটি বাতিলের ঘোষণা দিতে পারে ।
শুধুমাত্র দলিলটি ভূয়া এবং বাধ্যকর নয় মর্মে মামলা করা যায় কিনা:
৩৯ ধারার অধীন দলিল বাতিলের মোকদ্দমা দুই শ্রেণীর ব্যক্তি করতে পারে;
১। যার বিরুদ্ধে কোন দলিল বাতিল বা বাতিলযোগ্য
২। এরুপ বাতিল বা বাতিলযোগ্য দলিল যার ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারায় বাদীকে শুধুমাত্র দলিল বাতিল করার জন্য দেওয়ানী আদালতে মোকদ্দমা দায়েরের অধিকার দেওয়া হয়েছে, দলিলটি ভূয়া এবং বাধ্যকর নয় মর্মে ঘোষণা চেয়ে কোন মামলা করা অধিকার দেওয়া হয়নি। প্রশ্ন হলো ৩৯ ধারার অধীন বাদীকে দলিল বাতিলের মোকদ্দমা দায়ের ছাড়া শুধুমাত্র দলিলটি ভূয়া এবং তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে ঘোষণা চেয়ে মোকদ্দমা করার অধিকার অন্যকোন ধারায় দেওয়া হয়েছে কিনা
যে ব্যক্তি দলিল বাতিলের আবেদন করেছে তার উক্ত দলিলের পক্ষ হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ দলিল বাতিলের মোকদ্দমার ক্ষেত্রে বাদী উক্ত দলিলের পক্ষ হতে পারে আবার নাও হতে পারে। দলিল বাতিলের আবেদন ছাড়া শুধুমাত্র দলিলটি
ভুয়া এবং তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে বাদী আবেদন করতে পারবে কিনা তা নিম্নলিখিত ২ টি বিষয় দ্বারা নির্ধারণ করা যায়;
১। বাদী উক্ত দলিলের পক্ষ কিনা?
২। দলিলটি শুরুতে বাতিল | Void ab initio] কিনা?
দলিলের পক্ষ এমন ব্যক্তি কর্তৃক মোকদ্দমা দায়ের
দলিলের পক্ষ নয় এমন ব্যক্তি কর্তৃক দায়েরকৃত দলিল বাতিলের মোকদ্দমা এবং দলিলের পক্ষ আছে এমন ব্যক্তি কর্তৃক দায়েরকৃত দলিল বাতিলের মোকদ্দমার মধ্যে পার্থক্য আছে। যে ক্ষেত্রে দলিল বাতিলের মামলায় বাদী উক্ত দলিলের পক্ষ, সেই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাদীর উপর দলিলটি বাধ্যকর নয় মর্মে ঘোষণা চেয়ে মোকদ্দমা দায়ের করা পর্যাপ্ত প্রতিকার না বরং দলিলটি বাতিল করা প্রয়োজনীয় প্রতিকার যদি না দলিলটি শুরুতে বাতিল হয়। অর্থাৎ বাদী বিরোধীয় দলিলের পক্ষ হলে, তিনি শুধুমাত্র দলিলটি ভুয়া এবং তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে না বরং তাকে একই সাথে দলিলটি যে বাতিল তা চেয়ে মোকদ্দমা দায়ের করতে হয়। শর্ত হলো যদি দলিলটি শুরুতে বাতিল না হয়।
দলিল বাতিল করার জন্য মোকদ্দমা এবং দলিলটি ভূয়া এবং বাদীর উপর বাধ্যকর নয় মর্মে ঘোষণামূলক মামলার মধ্যে পার্থক্য আছে। যে ক্ষেত্রে বাদী দলিলের পক্ষ সেই ক্ষেত্রে বাদীকে ৩৯ ধারার অধীন দলিল বাতিল এবং ৪২ ধারার অধীন দলিলটি তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। এই ক্ষেত্রে বাদী ৩৯ ধারার অধীন দলিল বাতিলের প্রতিকার না চেয়ে শুধুমাত্র ৪২ ধারার অধীন দলিলটি তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে মোকদ্দমা দায়ের করলে তা রক্ষণীয় না ।
আলোচ্য প্রশ্নে বলা হয়েছে বাদী বিরোধীয় দলিলে একজন পক্ষ। সুতরাং তিনি শুধুমাত্র দলিলটি জাল এবং প্রতারণামূলক এবং তা তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে ৪২ ধারার অধীন ঘোষণামূলক ডিক্রীর জন্য মামলা করতে পারে না এবং মোকদ্দমাটি রক্ষণীয় না। এই ক্ষেত্রে তাকে প্রথমে ৩৯ ধারার অধীন দলিল বাতিল এর আবেদনসহ ৪২ ধারার অধীন দলিলটি জাল বা তার উপর বাধ্য নয় মর্মে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে ।
আব্দুল হামিদ বনাম ড. সাদেক আলী আহম্মেদ (২১ ডিএলআর ৫০৭) মোকদ্দমায় বলা হয়েছে, যে ক্ষেত্রে বাদী তর্কিত দলিলের পক্ষ সেক্ষেত্রে দলিলটি বাদীর উপর বাধ্য নয় বা দলিলটি জাল মর্মে শুধু ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করলে চলবে না; সাথে সাথে উক্ত দলিলটি বাতিলের আবেদনও করতে হবে।
দলিলের পক্ষ না এমন ব্যক্তি কর্তৃক মোকদ্দমা দায়ের
সুলতানা বেগম এবং অন্যান্য বনাম আবুল কামাল এবং অন্যান্য মামলায়(৪৩ ডিএলআর ১৯৯১,১৭৭) বলা হয়েছে, যে মামলায় বাদী দলিলের পক্ষ না, সেই ক্ষেত্রে বাদী দলিল বাতিলের আবেদন করতে বাধ্য নয় বরং সে শুধুমাত্র ঘোষণা চাইতে পারে যে উক্ত দলিল তার কোন ক্ষতি করবে না বা দলিলটি তার জন্য বাধ্যকর নয়। এই ক্ষেত্রে মোকদ্দমাটি ৩৯ ধারায় না ৪২ ধারার অধীন তা বিবেচ্য নয়। অর্থাৎ দলিলের পক্ষ না হলে শুধুমাত্র দলিলটি বাদীর উপর বাধ্যকর না মর্মে ঘোষণা চেয়ে ৪২ ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করা যায়।
দলিলটি শুরুতে বাতিল [Void ab initio] কিনা?
শামসুদ্দিন আহম্মেদ বনাম বেগম আরাফাত(৪৩ ডিএলআর ৫২) মামলায় সিদ্ধান্ত হয় যে, দলিলটি প্রথম থেকেই বাতিল হলে সেক্ষেত্রে দলিল বাতিলের প্রার্থনা ছাড়াই শুধুমাত্র ৪২ ধারায় ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যায়। সেক্ষেত্রে বাদী দলিলের পক্ষ থাকলেও তাকে দলিল বাতিলের জন্য ৩৯ ধারায় মামলা করতে হবে না বরং সে দলিলটি তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে ঘোষণা চেয়ে ৪২ ধারায় ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে। সামছুল আলী শাহ বনাম সৈয়দ হাসান শাহ এবং অন্যান্য (১৬ ডিএলআর (এসসি) ৩৩০)- মোকদ্দমায় বিবাদী পক্ষের আইনজীবী আপীলে দাবী করে যে নামজারী বাতিল, অবৈধ এবং বাদীর উপর বাধ্যকর নয় মর্মে ঘোষণামূলক মোকদ্দমায় ডিক্রী দেওয়া যায় না, যদি না বাদী এই মর্মে আবেদন করে যে, দান এবং দানপত্রটি বাতিল। সাক্ষ্য প্রমাণে আদালত দেখে যে দানপত্রটি প্রথমে বাতিল প্রকৃতির [Void ab initio]। তখন আদালত সিদ্ধান্ত দেয় যে যেখানে কোন দলিল বাতিল এবং বাদীর উপর বাধ্যকর নয় মর্মে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা হয়, সেই মামলায় যদি আদালত দেখে যে দলিলটি প্রথমে বাতিল প্রকৃতির [Void ab initio] সেই ক্ষেত্রে কোন দলিল বাতিলের আবেদন না করলেও মোকদ্দমাটি ৪২ ধারায় রক্ষণীয়।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারায় বাদীকে দলিল বাতিল করার আবেদন দায়ের করার অধিকার দিয়েছে। কিন্তু ৩৯ ধারায় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারার মত ঘোষণামূলক প্রতিকার চাওয়ার কোন বিধান নেই বরং ৩৯ ধারা বাদীকে দলিল বাতিল ছাড়াও অন্যকোন প্রতিকার প্রার্থনা করার অনুমতি দিয়েছে। এই ক্ষেত্রে বাদী যদি দলিলের পক্ষ হয় তাহলে ৩৯ ধারা অনুযায়ী সর্বপ্রথম দলিলটি বাতিলের জন্য আবেদন করবে এবং ৪২ ধারার অধীন দলিলটি যে তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে ঘোষণা চেয়ে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে।
চিত্তরঞ্জন চক্রবর্তী বনাম মো: আব্দুর রব মামলায়([ ৪৯ ডিএলআর (এডি) ৯৬) সুপ্রীম কোর্ট সিদ্ধান্ত দেয় যে, স্বত্ব ঘোষণার সাথে পরিপূর্ণ প্রতিকার পাওয়ার পথের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বাদীর মূল্যানুপাতিক কোর্ট ফি প্রদান করে দলিল বাতিলের প্রার্থনা করার দরকার ছিল।
সুতরাং দলিল বাতিল করার আবেদন ছাড়া শুধুমাত্র দলিলটি ভূয়া এবং তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে না, যদি বাদী উক্ত দলিলের পক্ষ হয়ে থাকে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষাপটে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত উল্লেখ করা যেতে পারে;
১। বাদী যদি দলিলের পক্ষ হয় তাহলে সে দলিলটি জাল এবং তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে ৪২ ধারার অধীন শুধুমাত্র ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে না যদি না দলিলটি প্রথমে বাতিল হয়। এই ক্ষেত্রে সে ৪২ ধারায় দলিলটি জাল এবং তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে এবং ৩৯ ধারায় দলিল বাতিলের প্রার্থনা এক সাথে করতে পারে।
২। যে ক্ষেত্রে বাদী দলিলের পক্ষ কিন্তু দলিলটি শুরুতে বাতিল ছিল, সেই ক্ষেত্রে বাদী শুধুমাত্র দলিলটি জাল এবং তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে ৪২ ধারার অধীন মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে। এই ক্ষেত্রে ৩৯ ধারার অধীন দলিল বাতিলের আবেদন না করলেও চলবে। অর্থাৎ যে ক্ষেত্রে দলিলটি শুরুতে বাতিল সেখানে বাদী দলিলের পক্ষ থাকুক বা না থাকুক, সেই ক্ষেত্রে বাদী দলিলটি জাল এবং তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে ঘোষণা চেয়ে শুধুমাত্র ৪২ ধারার অধীন মোকদ্দমা রুজু করতে পারে।
৩। যে ক্ষেত্রে বাদী দলিলের পক্ষ না সেক্ষেত্রে বাদী শুধুমাত্র দলিলটি জাল এবং তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে ৪২ ধারার অধীন মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে।
খসড়া
0 Comments