সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

গ্রেফতার বলতে কি বুঝেন? গ্রেফতার সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা। (arrest in details)

  

আটক কাকে বলে, তল্লাশি কাকে বলে, গ্রেফতারের পদ্ধতি, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কি, তল্লাশি কত প্রকার, পুলিশ গ্রেফতার করলে করণীয়, গ্রেফতার কত প্রকার, দন্ডবিধি কাকে বলে,

প্রশ্ন: গ্রেফতার বলতে কি বুঝেন? গ্রেফতারের পূর্বে, গ্রেফতারের সময় এবং গ্রেফতারের পরবর্তী কার্যক্রম বিস্তারিত আলােচনা করুন। 


প্রশ্ন: গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির দেহ তল্লাশি সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করুন। গ্রেফরকালে জনসাধারণ সাহায্য করতে বাধ্য কী? আলােচনা করুন। 



প্রশ্ন: গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির আইনানুগ অধিকার আলােচনা করুন।

প্রশ্ন: ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৫৪ ধারা অনুসারে পলিশ কখন বিনা পরােয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেন? আলােচনা করুন।


প্রশ্ন: একজন আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারীর পরে যদি তাকে গ্রেপ্তার করা না যায় অথবা সেই আসামী যদি স্বেচ্ছায় উপস্থিত না হয় তাহলে তার বিচারের জন্য কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে- আলোচনা করুন।



গ্রেফতার


ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪৬ (১) ধারা এবং পিআরবি বিধি ৩১৬ অনুসারে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়ে থাকে। উল্লিখিত আইন অনুসারে যুক্তিসংগত অভিযােগের প্রেক্ষিতে আইনানুগভাবে কোন ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ করে নিজ হেফাজতে বা সরকারি হেফাজতে নেওয়াকেই গ্রেফতার বলে। কোন ব্যক্তিকে পরােয়ানাসহ বা বিনা পরােয়ানায় গ্রেফতার করা যেতে পারে। পিএলডি ১৯৬৩ এসসি ১০৯ মামলায় বলা হয়েছে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশ অফিসার কোন ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে আটক কিংবা তার শরীর স্পর্শ করলেই যথেষ্ট হবে। এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তি তার কথা বা কাজ দ্বারা গ্রেফতারকারী অফিসারের নিকট নিজেকে সমর্পণ করলেও তা গ্রেফতার বলে ধরা হবে।


গ্রেফতারের পূর্বে করণীয়:

১. যাকে গ্রেফতার করা হবে তার নাম, ঠিকানা সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করা। 

২. পরােয়ানাসহ গ্রেফতারের ক্ষেত্রে গ্রেফতারী পরােয়ানা অবশ্যই সাথে রাখবেন এবং প্রয়ােজনবােধে প্রদর্শন করবেন। 

৩. পিআরবি প্রবিধান ৩১৭ অনুসারে বিনা পরােয়ানায় গ্রেফতারের ক্ষেত্রে যাকে গ্রেফতার করা হবে তার গ্রেফতার যুক্তিসংগত কিনা তা বিবেচনা করবেন।

৪. যাকে গ্রেফতার করা হবে সে ব্যক্তি যেন পালিয়ে যেতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। 

৫. যাকে গ্রেফতার করা হবে তার বাড়িঘরের চারদিকে প্রয়ােজনবােধে পাহারার ব্যবস্থা করবেন।

৬. পিআরবি প্রবিধান ৩১৭ অনুসারে অপ্রয়ােজনীয় এবং অনাবশ্যক গ্রেফতারহতে নিজেকে বিরত রাখবেন ।


 গ্রেফতারের সময় করণীয়


১. ফৌজদারী কার্যবিধি ৪৬ ধারা মােতাবেক যাকে গ্রেফতার করা হবে তার দেহ স্পর্শ বা আটক করে গ্রেফতার করবেন।

২ ফৌজদারী কার্যবিধি ৪৭ ধারা মােতাবেক যাকে গ্রেফতার করা হবে সে ব্যক্তি যে স্থানে প্রবেশ করেছে সে স্থানে প্রবেশ করে গ্রেফতার করবেন। 

৩. ফৌজদারী কার্যবিধি ৪৮ ধারা মােতাবেক উক্ত স্থানে প্রবেশের অনুমতি না পেলে দরজা জানালা ভেঙ্গে প্রবেশ করবেন এবং গ্রেফতার করবেন। 

৪. ফৌজদারী কার্যবিধি ৪৯ ধারা মােতাবেক কোন স্থানে আইনসংগতভাবে প্রবেশের পর আটকা পড়লে উক্ত স্থানের দরজা-জানালা ভেঙ্গে বের।

৫. ফৌজদারী কার্যবিধি ৫০ ধারা মােতাবেক গ্রেফতারকালে যতটুকু শক্তি প্রয়ােগ করা প্রয়ােজন তার অধিক শক্তি প্রয়ােগ করা যাবে না।

৬. পিআরবি প্রবিধান ৩১৮ অনুসারে যাকে গ্রেফতার করা হবে সে ব্যক্তি সরকারি জনহিতকর কাজে নিয়ােজিত থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যােগাযােগ করে গ্রেফতারের ব্যবস্থা করবেন। 

৭. গ্রেফতারের পর কার্যবিধির ৫২ ধারা মােতাবেক কোন স্ত্রী লােকের দেহ তল্লাশির প্রয়ােজন হলে পুলিশ অফিসার অপর একজন স্ত্রীলােক দ্বারা দেহ তল্লাশি করাবেন।


গ্রেফতারের পর করণীয়


১. গ্রেফতারের পর কার্যবিধির ৫১ ধারা মােতাবেক গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির দেহ তল্লাশি করে পরিধেয় বস্ত্র ব্যতীত তার নিকট হতে প্রাপ্ত সকল কিছুর একটি তালিকা প্রস্তুত করে নিজ হেফাজতে রাখবেন।


২. কার্যবিধির ৫৩ ধারা মােতাবেক গ্রেফতার কার্যকর করার পর গ্রেফতারকৃত কোন অপরাধীর নিকট কোন অস্ত্র থাকলে পুলিশ তা নিজ হেফাজতে  নিবেন এবং জব্দ তালিকায় উল্লেখ করে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করবেন। 


৩. গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৭ (২).৬৩, ৭৬, ১৬৯, ১৭০, ৪৯৬ ও ৪৯৭ ধারা মােতাবেক জামিন দেয়া গেলে জামিননামা ও মুচলেকার মাধ্যমে জামিনে মুক্তি দিবেন। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে জামিন দেয়া হলে এখতিয়ারাধীন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট এ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

৪ গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে কার্যবিধির ৬০ ধারা মােতাবেক ম্যাজিস্ট্রেট বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট হাজির করবেন কার্যবিধির ৬১ ধারা মােতাবেক গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে প্রেরণ করতে হবে। 

৫. পিআরবি প্রবিধান ৩১৯ এবং ৩২০ অনুসারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য হলে তার ইউনিট অফিসারকে অবহিত করতে হবে।

৬. পিআরবি প্রবিধান ৩২১ মােতাবেক গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। 

৭. গ্রেফতার করার সময় কোন ব্যক্তি গ্রেফতার কার্যে বাধা দিলে বা পলায়ন করার চেষ্টা করলে গ্রেফতারকারী দণ্ডবিধির ২২৫, ২২৫-খ ও ২২৪ ধারা অনুসারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।


গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির দেহ তল্লাশি


ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৫১, ৫২ এবং ৫৩ ধারায় দেহ তল্লাশি সম্পর্কে আলােকপাত করা হয়েছে। আলােচ্য আইনের- 

১। ৫১ ধারা অনুসারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে যখন আইনত মুক্তি দেয়া যায় না তখন তার দেহ তল্লাশি করে তার পরিধেয় বস্ত্র ব্যতীত প্রাপ্ত মালামালের একটি তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। প্রাপ্ত মালামাল ৫২৩ ধারা অনুসারে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এআইআর ১৯৬০ পাটনা ৫৮২ মামলায় বলা হয়েছে তলাশির ক্ষেত্রে সাক্ষীর সাক্ষ্য বিশ্বাসযােগ্য মনে না হলে বাদী পক্ষের মামলা গ্রহণযােগ্য নাও হতে পারে। 


২। ৫২ ধারা মােতাবেক গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মহিলা হলে তার শালীনতার প্রতি লক্ষ্য রেখে অপর একজন মহিলা দ্বারা তল্লাশি করতে হবে। এআইআর ১৯৬২ এসসি ১১৮৯ মামলায় বলা হয়েছে পুরুষের সামনে নারীর দেহ তল্লাশি করা চলবে না। এআইআর ১৯৬২ এসসি ১১৮৯ মামলার রায়ে বলা হয়েছে সুপ্রীম কোর্ট নারীর সন্ত্রম রক্ষা করতে বদ্ধ পরিকর।

৩। ৫৩ ধারা অনুসারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নিকট কোন অস্ত্র থাকলে জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে তা হেফাজতে নিতে হবে এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে আদালতে প্রেরণের সময় জব্দ তালিকায় উল্লিখিত অস্ত্র আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। এআইআর ১৯৩১ ক্যাল.৬০১ মামলায় বলা হয়েছে গ্রেফতারের সময় পুলিশ অফিসার আসামীর কাছে পাওয়া সব অবৈধ অস্ত্র ও দ্রব্যাদি নিজ হেফাজতে নিবেন।




গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির আইনানুগ অধিকার

বাংলাদেশ সংবিধান, ফৌজদারী কার্যবিধি আইন, পিআরবি ইত্যাদির আলােকে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির আইনানুগ অধিকারসমূহ নিয়ে আলােচিত হলো-


১. ফৌজদারী কার্যবিধির ৮০ ধারা মােতাবেক গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে গ্রেফতারী পরােয়ানাসহ আটক করলে পরােয়ানা দেখাতে হবে। 


২. বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিকেল ৩৩ (১) অনুসারে বিনা পরােয়ানায় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের কারণ জানাতে হবে।


৩. গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে কার্যবিধির ৫৭ (২), ৫৯ (৩), ৬৩, ৭৬, ১৬৯,১৭০, ৪৯৬, ৪৯৭ ধারা এবং শিশু আইনের ৪৮ ধারা অনুসারে জামিন দেয়া গেলে জামিননামা ও মুচলেকাসহ জামিনে মুক্তি দিবেন। পিআরবি প্রবিধান ৩২১ অনুসারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি অসুস্থ্য হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। শিশু আইনের ৫০ ধারা অনুসারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি শিশু হলে প্রবেশন অফিসারকে জানাতে হবে এবং শিশু আইনের ৪৯ ধারা অনুসারে জামিনে মুক্তি না দিলে তাকে নিরাপদ হেফাজতের ব্যবস্থা করতে হবে। 


৬. পিআরবি প্রবিধান ৩৩০ অনুসারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মহিলা, শিশু, অতিবৃদ্ধ বা দুর্বল হলে হাতকড়া পরানাে যাবে না। 


৭. ফৌজদারী কার্যবিধির ৫১ ধারা অনুসারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির দেহ তলাশি করে পরিধেয় বস্ত্র ব্যতীত অন্যান্য মালামালের একটি জব্দ তালিকা প্রস্তুত করবেন এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে একটি তালিকা সরবরাহ করার ব্যবস্থা করবেন।


৮. ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৫২ ধারা অনুসারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মহিলা হলে তার শালীনতার প্রতি লক্ষ্য রেখে দেহ তল্লাশি করবেন। এআইআর ১৯৬২ এসসি ১১৮৯ মামলায় বলা হয়েছে পুরুষের সামনে নারীর দেহ তল্লাশি করা চলবে না। এআইআর ১৯৬২ এসসি ১১৮৯ মামলার রায়ে বলা হয়েছে সুপ্রীম কোর্ট নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে বদ্ধ পরিকর। 


৯. ফৌজদারী কার্যবিধির ৬১ এবং সংবিধান এর ৩৩ (২) অনুসারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে অনধিক ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করতে হবে। এআইআর ১৯৫৫ অল. ১৩৮ ডিবি মামলায় বলা হয়েছে পরিস্থিতি বিবেচনায় যুক্তিসংগত মনে না হলে পুলিশ অফিসার কোন ব্যক্তিকে এক ঘণ্টার জন্য আটকিয়ে রাখাও যুক্তিসংগত হবে না। 


১০. ফৌজদারী কার্যবিধি ৫৩ ধারা মােতাবেক গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নিকট কোন অস্ত্রশস্ত্র থাকলে জব্দ তালিকায় তা উল্লেখ করে ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণের সময় জব্দতালিকাসহ প্রেরণ করবেন। এআইআর ১৯৬৫ এসসি ১০৩৯ চুরির দ্রব্য সন্দেহে যা অধিগ্রহণ করা হবে তা পদ্ধতি মেনে করতে হবে ।





গ্রেফতারকালে জনসাধারণের সাহায্য

ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের বিভিন্ন ধারা অনুসারে জনগণ পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটকে সাহায্য করতে বাধ্য। নিচে আইনানুসারে বিস্তারিত আলােচনা করা হল-


১. ফৌজদারী কার্যবিধি আইন এর ৪২ ধারা অনুসারে নিমােক্ত ক্ষেত্রে জনগণ পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেটকে সহযােগিতা এবং সাহায্য করতে বাধ্য-


  • পুলিশ অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেট যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার জন্য আইনসংগতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছেন সে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার জন্য বা তার পলায়ন প্রতিরােধ করার জন্য।
  • কোথাও শান্তিভঙ্গ হলে তা দমন করার জন্য;
  • শান্তিভঙ্গের সম্ভাবনা দেখা দিলে তা প্রতিরােধ করার জন্য;
  • সরকারি সম্পত্তি যেমন-রেলপথ, খাল বা টেলিগ্রাফ ইত্যাদির ক্ষতিসাধনের চেষ্টা প্রতিরােধের জন্য।

২. ফৌজদারী কার্যবিধি ১২৮ ধারা অনুসারে পুলিশ অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ অনুসারে কার্যবিধির ১২৭ ধারা অনুযায়ী বে-আইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য জনগণের নিকট সাহায্য দাবি করলে জনগণ সাহায্য প্রদানে বাধ্য।


৩. ফৌজদারী কার্যবিধি ১০৩ (১) ধারা অনুসারে পুলিশ অফিসার কোন স্থানে তল্লাশি করার সময় স্থানীয় জনগণের নিকট হতে দুই বা ততােধিক ব্যক্তিকে সাক্ষী হবার জন্য সাহায্য দাবি করতে পারেন বা লিখিত আদেশ দিতে পারেন।


পুলিশ অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেট জনসাধারণের নিকট উপরােক্ত অবস্থায় সাহায্য দাবি করলে জনগণ সাহায্য প্রদানে বাধ্য যদি সাহায্য না করেন তবে দণ্ডবিধি আইনের ১৮৭ ধারা মােতাবেক অপরাধী হিসেবে দণ্ডনীয় হবেন। ৩ অল, ২০১ মামলায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক ব্যক্তি ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ অফিসারের যুক্তিযুক্ত সাহায্যের দাবিতে সহায়তা করবেন। ৩৩ ক্রিএলজে ৭৩৬ মামলায় বলা হয়েছে এই ধারার আওতায় সম্ভাব্য সহযােগিতা করা হতে বিরত থাকা দণ্ডবিধি আইনের ১৮৭ ধারা অনুযায়ী অপরাধ।



বিনা পরােয়ানায় গ্রেফতার

ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৫৪ ধারা অনুসারে পুলিশ অফিসার বিনা পরােয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেন। যে সকল ক্ষেত্রে পুলিশ অফিসার বিনা পরােয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেন তা নিয়ে প্রদত্ত হলো-


১. আমলযােগ্য অপরাধে জড়িত ব্যক্তি বা যার বিরুদ্ধে এরূপ অপরাধে জড়িত বলে অভিযােগ করা হয়েছে বা সংবাদ পাওয়া গেছে। ২৯ ডিএলআর ২৫ এসসি মামলায় বলা হয়েছে আমলযােগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ৫৪ ধারা মােতাবেক একজন পুলিশ বিনা পরােয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেন। 


২. আইনসংগত কারণ ব্যতীত যার নিকট ঘর ভাঙ্গার যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে। 


৩. ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে বা সরকারি আদেশে যাকে অপরাধী হিসেবে ঘােষণা করা হয়েছে। 


৪. যার নিকট চোরাই বা অপহৃত মাল পাওয়া যায় বা যে ব্যক্তি এরূপ মাল সম্পর্কে কোন অপরাধ করেছে বলে যুক্তিসংগতভাবে সন্দেহ করা হয়েছে। 


৫. পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছে বা যে ব্যক্তি আইনসংগত হেফাজত হতে পলায়ন করেছে বা পলায়নের চেষ্টা করেছে। 


৬. প্রতিরক্ষা বাহিনী হতে পলায়নকারী ব্যক্তি হিসেবে যুক্তিসংগতভাবে সন্দেহ করা হলে। 

৭. যে কাজ বাংলাদেশে করলে অপরাধী বলে বিবেচিত হতাে বাংলাদেশের বাহিরে ঐরূপ কাজ করেছে বা কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তি বা জড়িত বলে যার বিরুদ্ধে অভিযােগ করা হয়েছে। 


৮. শর্তসাপেক্ষে ৫৬৫ (৩) ধারায় মুক্তিপ্রাপ্ত আসামী যদি মুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে

৯. যাকে গ্রেফতার করার জন্য অন্য কোন পুলিশ অফিসারের নিকট হতে অনুরােধ পত্র পাওয়া গেছে।


এআইআর ১৯২৬ পাট, ৫৬০ মামলায় বলা হয়েছে ৫৪ ধারায় বর্ণিত পরিস্থিতির একটাও যদি বর্তমান না থাকে তবে উক্ত ধারার আওতায় গ্রেফতার অবৈধ হবে।    ৩ পিএলডি ৬৬০ সিন্ধু মামলায় বলা হয় ভারতে কত খুনের জন্য পাকিস্তানের করাচিতে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিবর্তনমূলক আটকাদেশ পাওয়া হয় গ্রেফতারের ২ মাসের বেশি সময় পরে নিবর্তন বৈধ বলে আদালত মত প্রকাশ করেন। 


ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৫৪ ধারা অনুসারে পুলিশ জনগণকে বিনা পরােয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেন। নিচের ধারাটি মনে রাখার সুবিধার্থে সংক্ষেপে CIPSODERA মুখস্ত রাখলেই তা আয়ত্বে আনা যাবে । CIPSODERA এর পূর্ণরূপ নিম্নে প্রদত্ত হলো

CIPSODERA

C = Cognizable Offence 

I=Instrument or Implements of House Breaking

P=Proclaimed Offender 

S=Stolen Property 

O=Obstruction in Police work 

D=Deserter from Armed Force 

E=Extradition Offence

R=Released Convict

A = Arrest on Requisition


আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরওয়ানা জারীর পরে যদি তাকে গ্রেপ্তার করা না যায় অথবা সেই আসামী যদি স্বেচ্ছায় উপস্থিত না হয় তবে তার বিচারের জন্য পদক্ষেপ 


আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারীর পর যদি তাকে গ্রেপ্তার করা না যায় বা যদি সে স্বেচ্ছায় উপস্থিত না হয় তাহলে বিচারের জন্য তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপসমূহ সম্পর্কে ফৌজদারী কার্যবিধির ৮৭, ৮৮ এবং ৩৩৯(খ) ধারায় বিধান করা হয়েছে যা নিম্নরূপ- 


(১) যার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরওয়ানা জারী করা হয়েছে সে যদি পলাতক থাকে অথবা আত্মগােপন করে থাকে বলে আদালতের বিশ্বাস হয়, তবে আদালত লিখিতভাবে হুলিয়া জারী করতে পারবেন।


(২) আদালত একটি নির্দিষ্ট স্থানে হুলিয়া জারীর দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে। পলাতক আসামীকে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিবেন।


(৩) হুলিয়া নিম্নলিখিতভাবে জারী করতে হবে-

 

  • উক্ত ব্যক্তি সাধারণত যেখানে বাস করে সেই শহরে বা গ্রামের প্রকাশ্য স্থানে উহা জনসমক্ষে পাঠ করতে হবে।
  • উক্ত ব্যক্তি সাধারণত যেখানে বাস করে সেই বাড়ী অথবা বাস্তুভিটা অথবা শহর অথবা গ্রামের প্রকাশ্য স্থানে উহা লটকিয়ে দিতে হবে।
  • হুলিয়ার একটি কপি আদালত ভবনের প্রকাশ্য স্থানে লটকিয়ে দিতে হবে।


(8)হুলিয়া জারীর পর আদালত ৮৮ ধারা মােতাবেক হুলিয়াধীন ব্যক্তির স্থাবর ও । অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিতে পারবে।


(৫) উপরােক্তভাবে ৮৭ এবং ৮৮ ধারায় কার্যক্রম গ্রহণ করার পরও যদি আদালতের বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, আসামীকে যাতে গ্রেপ্তার ও বিচারে সােপর্দ করা না হয় সেজন্য পলায়ন করেছে বা আত্মগােপন করেছে এবং তাকে গ্রেপ্তারের আশু সম্ভাবনা নেই, সেক্ষেত্রে অপরাধটি আমলে গ্রহণকারী আদালত বহুল প্রচারিত কমপক্ষে দু’টি বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত আদেশ দ্বারা উক্ত ব্যক্তিকে আদেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেই আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিবেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উক্ত নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে তার অনুপস্থিতিতে তার বিচার আদালত করতে পারবে।


খসড়া

Post a Comment

0 Comments