এজাহার বলতে কি বুঝেন? এজাহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করুন।
এফআইআর/এজাহার[First Information Report (FIR)]
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৫৪ ধারা, পিআরবি প্রবিধান ২৪৩ অনুসারে যখন কোন ধর্তব্য অপরাধ সংগঠনের বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ-এর নিকট কোনাে সংবাদদাতা প্রথমে যে সংবাদ দেন তা বিপি ফরম নং-২৭,বাংলাদেশ ফরম নং-৫৩৫৬ মােতাবেক থানার সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে সংবাদদাতাকে পাঠ করে শুনিয়ে তার স্বাক্ষর গ্রহণ করার পর অফিসার ইনচার্জ নিজ নাম, স্বাক্ষর ও সিলমােহর দেন। উক্ত রেকর্ডকৃত তথ্যকে First Information Report (FIR) বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বলা হয়।
এজাহার লিখিত হতে পারে আবার মৌখিকও হতে পারে। এজাহারকে দুটি কারণে একটি মূল্যবান দলিল হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। যেমন-
১.এজাহারের ফলে সরকারি শক্তি অপরাধের বিরুদ্ধে সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
২. যেহেতু এজাহার ঘটনার প্রথম বিবরণ সেহেতু এজাহারের অস্তিত্ব ঘটনাকে পরবর্তীকালে নতুনভাবে সাজানাের পথ রুদ্ধ করে দেয়।
৩১ ডিএলআর ৬৯ এসসি মামলায় বলা হয়েছে একটি মােকদ্দমার এজাহার সর্বাগ্রে লিপিবদ্ধ হয় বলে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এটা আদালতকে বাদীপক্ষের মােকদ্দমার ধরন, মােকাদ্দামা শুরুর সময় এবং পরবর্তীতে কোন অলংকরণ করা হয়েছে কি না সেটা মিলিয়ে দেখা অথবা মােকদ্দমার কার্যক্রম ভিন্ন পথে যাচ্ছে কিনা সেটা অবলােকন করতে সহায়তা করে। এজাহারে যদি কোন ব্যক্তিকে আসামী হিসেবে নাম দেয়া না হয় এবং বিচারের সময় যদি তার নাম সাক্ষ্য দ্বারা দেয়া হয় তবে তা অগ্রহণযােগ্য বলে বিবেচিত হবে বা বিশ্বাসযােগ্য হবে না । উল্লেখ্য, সাক্ষ্য ৩৫ ধারা অনুযায়ী এজাহার(FIR) আদালতে প্রাসঙ্গিক।
এফআইআর(FIR) হওয়ার শর্তাবলি/বৈশিষ্ট্য
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৫৪ ধারা অনুসারে নিম্নলিখিত শর্তাদি পূরণ হলেই কেবল এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করা যেতে পারে। যেমন–
১.আমলযােগ্য অপরাধ সম্পর্কে একটি সংবাদ
২.থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট যদি মৌখিক সংবাদ দেয়া হয় তবে তিনি ইহা লিখে দিবেন বা তার নির্দেশেই লিখিত হবে।
৩.এরূপ লিখিত হলে সংবাদদাতাকে লিখিত বিবৃতি পড়ে শুনাতে হবে।
৪.সংবাদদাতা কর্তৃক বিবৃতিটি সাক্ষরিত হতে হবে।
৫.নির্ধারিত ফর্মে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক রক্ষিত বইয়ে সংবাদের সারমর্ম লিপিবদ্ধ করতে হবে।
FIR মূলত দুই প্রকার।
ক.মৌখিক FIR এবং
খ. লিখিত FIR।
সংবাদদাতার মৌখিক বিবরণীর ভিত্তিতে থানার অফিসার ইনচার্জ কর্তৃক যে এফআইআর রুজু করা হয় তাকে মৌখিক FIR বলা হয়।
কোনাে কোনাে বিশেষ ক্ষেত্রে বাদী কর্তৃক প্রেরিত লিখিত দরখাস্তকে থানার অফিসার ইনচার্জ এফআইআর হিসেবে গণ্য করতে পারেন। কোনাে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতেও অভিযােগ বা নালিশি পিটিশন দাখিল করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আদালত অভিযােগটি সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জকে প্রাথমিক তদন্তপূর্বক বা সরাসরি এফআইআর হিসেবে গণ্য করার আদেশ দিতে পারেন। এ ধরনের এফআইআরকে লিখিত FIR বলা হয়। এ প্রসঙ্গে Guruswami Naidu v. Guruswami Naidu; AIR 1951 Mad 812 মামলায় বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি থানায় গিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে এ মর্মে খবর দেন যে, ঐ থানা এলাকার মধ্যে একটি গুরুতর অপরাধ অনুষ্ঠিত হয়েছে তবে এ খবরকে এজাহার বলে গণ্য করা উচিত।
কোন ধরনের সংবাদকে এফআইআর হিসেবে গণ্য করা যাবে না
পিআরবি প্রবিধান(Police Regulations Bengal)- ২৪৩ (ঘ, ঞ), এবং কার্যবিধি আইনের ১৫৪ ধারা অনুসারে নিম্নবর্ণিত সংবাদ এফআইআর হিসেবে গণ্য করা যাবে না। যেমন—
১. ডাকযােগে প্রেরিত পত্র;
২. এসএমএস;
৩. টেলিফোন/মােবাইল ফোনে প্রেরিত তথ্য;
৪. নাম, ঠিকানা ও স্বাক্ষরবিহীন আবেদন;
৫. ফ্যাক্স বার্তা;
৬. ই-মেইল;
৭. পত্রপত্রিকার রিপাের্ট;
৮. পিআরবি প্রবিধান ২৫৪ এ উল্লিখিত ক্ষেত্রসমূহ।
PLD 1960 Lahore 917 মামলায় বলা হয়েছে, টেলিগ্রাম বা টেলিফোনে প্রেরিত খবরকে এজাহার বলা যায় না।
First Information Report (FIR)এফআইআর নেয়ার পদ্ধতি [procedure to file FIR]
১. ঘটনার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির নিকটস্থ ব্যক্তি, যিনি ঘটনা সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত এমন সুস্থ, সচেতন, সুবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি স্বপ্রণােদিত হয়ে অফিসার ইনচার্জের নিকট এফআইআর দায়ের করতে পারবেন। অফিসার ইনচার্জ ঘটনাস্থলে প্লেন পেপারে এজাহার গ্রহণ করতে পারবেন।
২. ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারা মােতাবেক লিখিত অথবা মৌখিক যেভাবেই সংবাদ আসুক না কেন, থানার অফিসার ইনচার্জ নিজে অথবা তার নির্দেশ মােতাবেক অন্য কোনাে অফিসার থানায় রক্ষিত রেজিস্টার বহিতে পিআরবি রুল ২৪৩- এ প্রদত্ত নির্দেশনা মােতাবেক বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক বিপি ফরম নং ২৭-এ এফআইআর লিপিবদ্ধ করবেন।
৩. থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনাস্থলে সাদা কাগজে এফআইআর গ্রহণপূর্বক থানায় প্রেরণ করে এজাহার রেকর্ড করবেন।
৪. রেকর্ডকৃত তথ্য সংবাদদাতাকে পাঠ করে শুনিয়ে তাতে সংবাদদাতার স্বাক্ষর/টিপসহি গ্রহণ করবেন।
৫. থানার অফিসার ইনচার্জ কর্তৃক উক্ত এফআইআর-এ তারিখসহ স্বাক্ষর ও সিলমােহর প্রদান করবেন।
৬. এফআইআর সংবাদদাতার নিজ বর্ণনা মােতাবেক লিপিবদ্ধ করবেন।
৭. ঘটনা সংগঠনের এবং থানায় এফআইআর দায়ের করার মধ্যকার সময়ের উপযুক্ত ব্যাখ্যা এফআইআর-এ উল্লেখ করবেন।
৮. বাদী এবং আসামিদের নাম- ঠিকানা পূর্ণাঙ্গভাবে সংশ্লিষ্ট কলামে লিপিবদ্ধ করবেন।
৯. সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা এবং অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিবরণী সংশ্লিষ্ট কলামে উল্লেখ করবেন।
১০. ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ও শনাক্তকৃত অভিযুক্ত অপরাধী এবং তাদের সহয়তাকারী ব্যক্তিদের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করবেন।
এফআইআর-এর মূল উপাদানসমূহ[Essential Elements OF F.I.R.]
এফআইআর রুজু করার সময় অবশ্যই নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ(fundamental elements) নিশ্চিত করতে হবে: কি ঘটনা, কে করেছে, কীভাবে করেছে, কোথায় করেছে, কখন করেছে,কে দেখেছে, কী দেখেছে, কে সহায়তাকারী ছিল ইত্যাদি উল্লেখ থাকবে।
এফআইআর(F.I.R.) এ পূর্ণাঙ্গ তথ্য সন্নিবেশ করতে ১১W পদ্ধতিতে সংবাদদাতাকে পরীক্ষা করা যেতে পারে। ১১W পদ্ধতি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-
First Information Report (FIR) ফরম পূরণকালে লক্ষণীয় বিষয়সমূহ
FIR ফরম পূরণের সময় ফরমে উল্লিখিত সকল কলাম যথাযথভাবে পূরণসহ নিম্নে বর্ণিত তথ্যসমূহ সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। যেমন।—
১.থানা ও জেলার নাম।(Name of the Police Station & District).
২. মামলার মাসিক ক্রমিক নম্বর ও বাৎসরিক ক্রমিক নম্বর।
৩. এজাহার গ্রহণের তারিখ ও সময়
৪. এজাহার থানা হতে কোর্ট/পুলিশ সুপার অফিসে প্রেরণের তারিখ ও সময়।
৫. ঘটনাস্থলের নাম, অবস্থান, থানা হতে দুরত্ব ও দিক, মৌজা/বিট নম্বর।
৬. সংবাদদাতা/অভিযােগকারির নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর (জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে, পরিচয়পত্র নম্বর)
৭. অভিযুক্তের নাম ও ঠিকানা।
৮. ধারাসহ অভিযােগ এবং লুষ্ঠিত মালের বিবরণসহ তালিকা।
৯. তদন্তের জন্য গৃহীতব্য ব্যবস্থা এবং এজাহার রেকর্ডে বিলম্বের কারণ।
১০. মামলার বিচার শেষে ফলাফল সন্নিবেশ করার জন্য নির্দিষ্ট কলাম খালি রাখা। মামলা রেকর্ডিং অফিসারের স্বাক্ষর, তারিখ, পদমর্যাদা ও বিপি নম্বর।
১১. লিখিত ও মৌখিক উভয় প্রকার এজাহারের ক্ষেত্রে সংবাদদাতার স্বাক্ষর/টিপসহি এবং এজাহার গ্রহণকারীর স্বাক্ষর।
১২.বাদীর পক্ষে যিনি এজাহার নিয়ে আসবেন তাকে পুলিশ অফিসারের সামনে লিখিত দিতে হবে। আহুত ব্যক্তি উল্লেখ করবেন যে, আমি বাদীর স্বাক্ষর চিনি মর্মে শনাক্ত করে নাম ঠিকানাসহ স্বাক্ষর করবেন। এক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী তদন্তকালে তার জবানবন্দি গ্রহণ করতে হবে।
FIR লেখার সময় লক্ষণীয় বিষয়
First Information Report (FIR) লেখার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলাে লক্ষ্য রাখতে হবে—
১. ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ও শনাক্তকৃত অভিযুক্ত অপরাধী এবং তাদের সহায়তাকারী ব্যক্তিদের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা।
২. প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামিদের নাম, পরিচয় ও ঠিকানা প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর প্রথম পাতার ২ নং কলামে অন্তর্ভুক্ত করা।
৩. পরােক্ষভাবে জড়িত অপরাধী এবং সন্ধিগ্ধদের নাম ২য় পৃষ্ঠার বিবরণীতে বিস্তারিত উল্লেখ করা।
৪. ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী, আহত, নিহত, ক্ষতিগ্রস্ত, ভিকটিমদের পূর্ণনাম- পরিচয় ও ঠিকানা বিবরণীতে উল্লেখ করা।
৫. ডাকাতি, দস্যুতা, চুরি মামলায় লুষ্ঠিত/ চোরাই মালামালের শনাক্তকরণ চিহ্নসহ বিস্তারিত বিবরণ, আনুমানিক মূল্য ইত্যাদি উল্লেখ করা।
৬. আহত-নিহত ব্যক্তির আহত-নিহতের কারণ,আঘাতের কারণে জখমের ধরন,আঘাতের জন্য ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের বিবরণ উল্লেখ করা।
৭. ডাকাতি, দস্যুতাসহ সংঘবদ্ধ অপরাধীদের কৃত অপরাধে কর্মপদ্ধতি (Modus Operandi) শারীরিক গঠনের বিবরণ, আচরণ, কথিত ভাষা, বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন পােশাক, আনুমাকি বয়স, ব্যবহৃত অস্ত্র আগমন-প্রস্থানের রাস্তা, অপরাধীদের সংখ্যা, কতক্ষণ অবস্থান করেছিলেন ইত্যাদি বিবরণে উল্লেখ করা।
৮. দাঙ্গা-হাঙ্গামা, দূর্ঘটনা ইত্যাদি ঘটনার ক্ষেত্রে মােট ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ এবং পরিমাণ উল্লেখ করা।
৯. ঘটনার সময় বাদী, ভিকটিম ও সাক্ষীদের ঘটনাস্থলে উপস্থিতির কারণ, তাদের অবস্থানস্থল, আসামিদের শনাক্তকরণের মাধ্যম এবং কে, কীভাবে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হয়েছে ইত্যাদি বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করা।
১০. অনেক মামলার ঘটনার বাদী বা সাক্ষীগণ অপরাধীর শারীরিক, পােশাক,পরিচ্ছদ, ভাষা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের বর্ণনা প্রদান করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে এজাহারে বাদী বা সাক্ষীগণ পরবর্তীতে সন্ধিগ্ধ ব্যক্তিকে দেখলে চিনতে পারবে মর্মে এহাজারে উল্লেখ করতে হবে। তা না হলে পরবর্তীতে শনাক্তকরণ মহড়া আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
১১. অপরাধীদের কৃত অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাসহ উল্লেখ করা।
FIRএর ত্রুটি-বিচ্যুতি
১. এফআইআর দায়ের করার সময় কী ঘটনা, কে করেছে, কীভাবে করেছে, কোথায় করেছে, কখন করেছে, কে দেখেছে, কী দেখেছে, কে সহায়তাকারী ছিল’-এ বিষয়গুলাে নিশ্চিত করা। এফআইআরে এ সকল বিষয়ের একটিরও অনুপস্থিতি বড় ত্রুটি।
২. এফআইআর রেকর্ড করে বাদীকে পাঠ করে না শােনানাে।
৩. থানায় উপস্থিত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কর্তৃক এফআইআর রেকর্ড না করা।
৪. ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এবং চোরাই/লুষ্ঠিত মালামালের শনাক্তকরণ চিহ্ন, আনুমানিক মূল্যসহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা উল্লেখ না করা।
৫. বাদীর ভাষা পরিবর্তন করা।
৬. একাধিক দিনে সংঘটিত ঘটনায় একটি মামলা রুজু করা।
৭. আহত/নিহত ব্যক্তির আহত/নিহতের করণ, ব্যবহৃত অস্ত্রের ধরন এবং জখমের প্রকৃতি উল্লেখ না করা।
৮. এফআইআর রুজুতে বিলম্বের কারণ উল্লেখ না করা।
৯. অসতর্ক জিজ্ঞাসাবাদ ও তাড়াতাড়ি এজাহার করতে গিয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয় বাদ পড়া।
১০. না-বােধক এবং পরস্পরবিরােধী কথা লিপিবদ্ধ করা।
১১. অপরাধ প্রক্রিয়া উল্লেখ না করা।
১২. অভিযুক্তের সার্বিক বর্ণনা এবং শনাক্তকরণ চিহ্ন বাদ পড়া।
১৩. সাক্ষীদের অবস্থান বা চাক্ষুষ সাক্ষীর নাম বাদ পড়া।
১৪ চোরাই মালের মূল্য বা ক্ষতির মূল্য উল্লেখ না করা।
১৫ অপরাধীর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আচরণ উল্লেখ না করা।
এফআইআর-এর সাক্ষ্য-মূল্য
এজাহার বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণীকে জিআর মামলার। ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হলেও আদালতে ইহা মৌলিক সাক্ষ্য বলে বিবেচিত হয় না। এ কারণে শুধু এজাহার বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি বা দণ্ড দেয়া যায় না। তথাপিও সাক্ষ্য আইনের বিভিন্ন ধারানুযায়ী এজাহার বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর সাক্ষ্যগত মূল্য নিচে আলােচনা করা হলো—
১. সাক্ষ্য আইনের ৭ ধারা অনুসারে এজাহার বিচার্য ঘটনার উপলক্ষ, কারণ,পরিমাণ বা ফলাফল হিসেবে আদালতে প্রাসঙ্গিক।
২. সাক্ষ্য আইনের ৮ ধারা মােতাবেক এজাহার বিচার্য ঘটনায় বাদীর আচরণ হিসেবে আদালতে প্রাসঙ্গিক।
৩. সাক্ষ্য আইন-এর ৩২ ধারা মতে FIR-কে Relevant and Supporting Evidence হিসেবে গণ্য করা হয়। ঘটনা স্মরণ রাখার স্বার্থে বাদী। এফআইআর-এর একটি কপি সংরক্ষণ করতে পারবেন।
৪. সাক্ষ্য আইনের ৩৫ ধারা অনুসারে কর্তব্য সম্পাদনকালে সরকারি দলিলে লিপিবদ্ধ বিষয় হিসেবে এজাহার আদালতে ব্যবহার করা যায়।
৫. সাক্ষ্য আইনের ১৪৫ ধারা মতে এজাহার বাদীর সাক্ষ্যের অসংগতি বা বৈপরিত্য প্রমাণ করার জন্য আদালতে ব্যবহার করা যায়।
৬. সাক্ষ্য আইনের ১৫৭ ধারা অনুসারে এজাহার বাদীর সাক্ষ্যের সত্যতা প্রমাণ বা সমর্থন করার জন্য আদালতে ব্যবহার করা হয়।
সুতরাং এজাহারকে স্বতন্ত্র সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করার সুযােগ নাই তবে বিচারকগণ বিচারকালে কোর্টে সাক্ষ্য প্রদানের সময় থানায় প্রদত্ত এজাহারের সাথে বাদীর প্রদত্ত জবানবন্দির অসঙ্গতিসমূহকে তার বিপক্ষে ব্যবহার করতে পারেন। কাজেই এফআইআর রুজুর সময় যথাযথ সতর্কতার সাথে প্রয়ােজনীয় সকল তথ্য সন্নিবেশিত করতে হবে।
৩৫ ডিএলআর ২৪৩ মামলায় বলা হয়েছে এজাহারকে প্রকৃত সাক্ষ্য বলে বিস্তৃতভাবে উল্লেখ করা হলে আদালতের অন্যায় হবে। ৪ বিএসডি ১৪৪ মামলায় বলা হয়েছে এজাহারকে স্বতন্ত্র সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। ১৩ ডিএলআর ৩ এসসি মামলায় বলা হয়েছে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী কোন মামলায় স্বতন্ত্র সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না এবং অন্য সাক্ষ্যের অনুপস্থিত থাকলে এর উপর ভিত্তি করে দণ্ডাদেশ দেয়া যাবে না। এআইআর ১৯৪২ পাট ১১৩ মামলায় বলা হয়েছে এজাহারে প্রদত্ত বিবৃতি স্বতন্ত্র সাক্ষ্য নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ফরিয়াদি যে কেস প্রদর্শন করেছেন তা আদালতে জানানােই এফআইআর এর মূল লক্ষ্য।
FIR প্রেরণ পদ্ধতি
পিআরবি প্রবিধান ২৪৬ অনুসারে FIR থানায় রেকর্ড হওয়ার পরপরই এর মূল কপি অনতিবিলম্বে বিশেষ বাহক মারফত কগনিজেন্স ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করতে হবে। একই সঙ্গে প্রথম কার্বন কপি পুলিশ সুপারের নিকট এবং একটি স্পষ্ট কপি (কার্বন কপি নয়) সার্কেল এএসপিকে প্রেরণ করতে হবে।
sources:
ফৌজদারী কার্যবিধির ভাষ্য : গাজী শামছুর রহমান
ফৌজদারী কার্যবিধি : প্রফেসর মোঃ জহুরুল হক
ফৌজদারী মামলা পরিচালনা পদ্ধতি: বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া
তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং ম্যাজিস্ট্রেটের করণীয়:বিচারপতি মোঃ আজিজুল হক
তদন্ত নীতিমালা ও কিছু প্রস্তাবনা: মোঃ কুতুব উদ্দিন
শতাধিক বছরের ক্রিমিনাল কেস রেফারেন্স:এ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন।
অপরাধ তদন্ত নির্দেশিকা:বাংলাদেশ পুলিশ
0 Comments