সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

স্বীকৃতি ও স্বীকারােক্তি বলতে কি বুঝেন? স্বীকৃতি ও স্বীকারােক্তির পার্থক্য আলােচনা করুন? পুলিশের নিকট প্রদত্ত স্বীকারােক্তি কতটুকু আদালতে গ্রহণযােগ্য- আলােচনা করুন।[Distinction between admission and confession]

স্বীকৃতি ও স্বীকারােক্তি বলতে কি বুঝেন? স্বীকৃতি ও স্বীকারােক্তির পার্থক্য আলােচনা করুন? পুলিশের নিকট প্রদত্ত স্বীকারােক্তি কতটুকু আদালতে গ্রহণযােগ্য- আলােচনা করুন।[Distinction between admission and confession]





স্বীকৃতি ও স্বীকারােক্তি বলতে কি বুঝেন? স্বীকৃতি ও স্বীকারােক্তির পার্থক্য আলােচনা করুন? পুলিশের নিকট প্রদত্ত স্বীকারােক্তি কতটুকু আদালতে গ্রহণযােগ্য- আলােচনা করুন।


স্বীকৃতি

[Admission]

স্বীকৃতি[Admission] বিচারিক কার্যক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা আদালতের কাজকে সহজ করে দেয়। সাক্ষ্য আইনের ১৭ ধারা অনুসারে মামলার কোন পক্ষ বা তার প্রতিনিধি বা মামলার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তির মৌখিক বা লিখিত বিবৃতি যা আদালতকে বিচার্য বিষয়(fact in issue) বা প্রাসঙ্গিক বিষয়(relevant fact) সম্পর্কে কোন অনুমানের ইংগিত প্রদান করে যার মাধ্যমে আদালতকে সিদ্ধান্তে পৌছাতে সহায়তা করে তাকে স্বীকৃতি (Admission) বলা হয়।[An admission is a statement, oral or documentary, which suggests any inference as to any fact in issue or relevant fact, and which is made by any of the persons, and under the circumstances, hereinafter mentioned.]

এ প্রসঙ্গে Basant Singh vs Janki Singh And Ors;1967 AIR 341 মামলায় বলা হয়েছে যে, মামলার কোন পক্ষ কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও যাচাইকৃত আরজিতে উল্লিখিত স্বীকৃতি অন্য মামলায় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে কিন্তু এরূপ স্বীকৃতি চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করা যাবে না এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষ তা অসত্য প্রমাণ করার সুযােগ পাবে। 

এ প্রসঙ্গে সাক্ষ্য আইনের ২০ ধারায় বলা আছে যে,মামলার কোনো পক্ষ বিবাদভুক্ত কোন বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রকাশ্যভাবে যে সকল ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে, তাদের বিবৃতিকে(Statements) স্বীকৃতি বলা হয়।[Statements made by persons to whom a party to the suit has expressly referred for information in reference to a matter in dispute are admissions.]


স্বীকৃতির শর্তসমূহ 

[Conditions Of  admission]

১. স্বীকৃতিকে মৌখিক বা দালিলিক(oral or documentary) বিবৃতি হতে হবে। 

২. এরূপ মৌখিক বা দালিলিক বিবৃতিগুলো বিচার্য বা প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে কোন অনুমানের ইঙ্গিত বহন করবে।

৩. যোগ্য ব্যক্তি (মামলার পক্ষ ইত্যাদি)কোন স্বীকৃতি প্রদান করবেন। 

৪. সাক্ষ্য আইনের বিধান অনুসারে যথাযথ পরিস্থিতিতে স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।

৫. স্বীকৃতি যে ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি প্রদান করে তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু তার পক্ষে ব্যবহার করা যায় না। 



নিম্নলিখিত ব্যক্তি সাক্ষ্য আইনের ১৮ ধারা মােতাবেক স্বীকৃতি প্রদান করতে পারেন: 

ক. মামলার পক্ষ (বাদী এবং বিবাদী)

খ. প্রতিনিধিত্বমূলক মামলার ক্ষেত্রে যারা এক পক্ষে আছেন তাদের একজনের স্বীকৃতি অপরের উপর বাধ্যকর হবে। 

গ. পক্ষের প্রতিনিধি। 

ঘ. মামলার বিষয়বস্তুতে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি।

ঙ. যার নিকট হতে স্বার্থ প্রাপ্তি ঘটেছে সে ব্যক্তি।

কার স্বীকৃতি আদালতে প্রাসঙ্গিক: 

সাক্ষ্য আইনের একাধিক ধারায় কোন কোন। ব্যক্তির স্বীকৃতি আদালতে প্রাসঙ্গিক তা আলােচনা করা হয়েছে। নিম্নে তা প্রদত্ত হল

ক. সাক্ষ্য আইনের ১৮ ধারা অনুসারে মামলার পক্ষ, তার প্রতিনিধি বা | প্রতিনিধিত্বমূলক চরিত্রে বাদী।

খ. সাক্ষ্য আইনের ১৯ ধারা অনুসারে মামলার কোন পক্ষের বিপরীতে যে সকল অবস্থা বা দায়িত্ব প্রমাণ করা প্রয়ােজন তাদের প্রদত্ত স্বীকৃতি প্রাসঙ্গিক। 

গ. সাক্ষ্য আইনের ২০ ধারা অনুসারে মামলার কোন পক্ষ বিবাদমান কোন বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য যে সকল ব্যক্তির প্রতি দায়িত্ব দেয়া হয় তাদের বিবৃতি স্বীকৃতি হিসাবে প্রাসঙ্গিক ।

ঘ. সাক্ষ্য আইনের ২২ ধারা অনুসারে দলিলে অন্তর্ভুক্তের বিষয়ে যে পক্ষ দলিল প্রমাণ করতে চায় সে পক্ষের কোন ব্যক্তির মৌখিক বিবৃতি স্বীকৃতি হিসাবে প্রাসঙ্গিক।

ঙ.সাক্ষ্য আইনের ২৩ ধারা মােতাবেক দেওয়ানী মামলার কোন পক্ষ বা পক্ষের প্রতিনিধি কর্তৃক প্রদত্ত স্বীকৃতি আদালতে প্রাসঙ্গিক। 


স্বীকারােক্তি: এ বিষয়ে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। ক্লিক করুন এই লিঙ্ক 



স্বীকারােক্তির অনেকগুলাে অংশ থাকতে পারে-

> অপরাধ করা সম্পর্কে স্বীকারােক্তি করতে পারে । 

> অপরাধ করার উদ্দেশ্য, প্রেরণা, প্রস্তুতি, সুযােগ, প্ররােচনা, অভিপ্রায়।

প্রকাশ করতে পারে। 

> ব্যবহৃত অস্ত্র, উক্ত অস্ত্র লুকিয়ে রাখা সম্পর্কে তথ্য এবং এর পরবর্তী আচরণ বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করতে পারে ।

কোন ব্যক্তির স্বীকারােক্তি আদালতে প্রাসঙ্গিক হতে হলে নিম্ন বর্ণিত বিষয়াদি অবশ্যই থাকতে হবে

> স্বীকারােক্তি অবশ্যই অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক হতে হবে ।

> নিজেকে জড়িয়ে স্বীকারােক্তি দিতে হবে। এ বিষয়ে A. Nagesia v. Bihar, A.I.R.. 1966 S.C. 119 মামলায় বলা হয়েছে নিজেকে অপরাধের সাথে না জড়িয়ে কোন স্বীকারােক্তি করলে তা স্বীকারােক্তি হিসেবে গণ্য হবে না।

 > স্বতঃস্ফূর্ত হতে হবে, ৩ বিএলডি ১৯৮৩ (২০৬), আঃ রশিদ বনাম রাষ্ট্র মামলায় বলা হয়েছে দোষ স্বীকার যদি সঠিক এবং স্বেচ্ছা প্রণােদিত হয় তবে তার উপর ভিত্তি করে শাস্তি প্রদান করা যাবে। 

> সত্য হতে হবে, পিএলডি ১৯৫৭ (এসসি) ইন্ড ৫৫৫ মামলায় বলা হয়েছে দোষ স্বীকৃতি কেবল স্বেচ্ছা প্রণােদিত হলেই চলবে না উহা সঠিক হতে হবে। 

> উহা অপরাধীকে/অপরাধীদেরকে দোষী বলে সাব্যস্তকরণের জন্য যথেষ্ট হবে।


পুলিশের নিকট স্বীকারােক্তি: 

সাক্ষ্য আইনের ২৫ ধারা অনুসারে- অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি পুলিশের নিকট তার দোষ স্বীকার করলে তার বিরুদ্ধে তা আদালতে প্রমাণ করা যাবে না। পিসিডি ১৯৬০ পিএসএল ১৩৭ মামলায় বলা হয়েছে পুলিশ  অফিসারের নিকট বিবৃত দোষ স্বীকার আসামীর বিরুদ্ধে প্রমাণ করা হয় না  কিন্তু তার  পক্ষে প্রমাণ করা যায়। 

পুলিশের নিকট দোষ স্বীকার প্রমাণ করা যায় না কারণ এ উপমহাদেশে প্রথম আইন কমিশন বলেন যে, পুলিশ আসামীদের পীড়ন করে দোষস্বীকার নিয়ে থাকেন । কয়েক বৎসর পূর্বে ভারতীয় আইন কমিশন প্রায় অনুরূপ মত প্রকাশ করেন। এর কারণেই পুলিশের নিকট স্বীকারােক্তি গ্রহণীয় হয় না। ৯ ডিএলআর (এসসি) ১১ মামলায় বলা হয়েছে -আসামী স্বেচ্ছায় গিয়ে থানায় দোষ স্বীকার করে এবং থানা পুলিশ তা লিপিবদ্ধ করে। এ বিবরণ ও সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণীয় নয়। 



পুলিশ হেফাজতে আসামীর স্বীকারােক্তির প্রমাণ

সাক্ষ্য আইনের ২৫ ধারা মতে কোন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষ স্বীকার করে পুলিশের নিকট কোন জবানবন্দি দিলে তা আদালতে গ্রহণীয় হবে না তবে আলােচ্য আইনের ২৬ ধারা অনুসারে যদি দোষ স্বীকার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে করা হয় তবে তা আসামীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে। ২২ ডিএলআর (২৭৯)১৯৭০ মামলায় বলা হয়েছে দোষ স্বীকারমূলক বিবৃতি আদালত কক্ষে গৃহীত হয়েছে। সেসময় পলিশ অফিসারগণ উপস্থিত ছিল। দোষ স্বীকার গৃহীত হয়েছে। কোন অবস্থাতেই পলিশ অফিসারের নিকট প্রদত্ত স্বীকারােক্তি গ্রহণযােগ্য নয় তা ঠিক নয় । ২৩ ডিএলআর ২৭৯ মামলার রায়ে বলা হয়েছে সমস্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় আদালত যদি মনে করেন যে গৃহীত স্বীকারােক্তি স্বেচ্ছামূলক এবং প্রকৃতই সত্য তবে তা গ্রাহ্য করা যেতে পারে এবং স্বীকারােক্তি প্রদানকারীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে।

আসামীর কতটুকু স্বীকারােক্তি আদালতে গ্রহণযােগ্য: নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে আসামীর স্বীকারােক্তি আদালতে গ্রহণযােগ্য হয়:


ক. ফৌজদারী মামলায় কোন অভিযুক্ত আসামী কোন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকটভয়-ভীতি, হুমকি বা প্রলােভন ব্যতীত স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করলে ফৌজদারী কার্যবিধি আইন ১৬৪ ও ৩৬৪ ধারা এবং সাক্ষ্য আইনের ২৪-৩০ ধারা ও পি.আর.বি, এর ৪৬৭ বিধি মতে আদালতে প্রাসঙ্গিক। 


খ. আসামী পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে যদি ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে স্বীকারােক্তি প্রদান করে তবে সাক্ষ্য আইনের ২৬ ধারা মতে আদালতে গ্রহণযােগ্য।


গ. অভিযুক্ত আসামীর নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাটি উঘাটিত হয়েছে এবং তার দেখানাে মতে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বস্তু, দ্রব্য বা আলামত উদ্ধার হলে যে অংশ উদ্ঘাটিত হয়েছে সেটুকু সাক্ষ্য আইনের ২৭ ধারা মােতাবেক আদালতে প্রাসঙ্গিক। ডিএলআর (ডব্লিউপি) ৩৪, জিয়ানকো বনাম রাষ্ট্র মামলায় বলা হয়েছে বিবৃতির প্রেক্ষিতে যতটুকু উদঘাটন করা হয় ২৭ ধারা কেবল আসামীর ঐ অংশটুকু গ্রহণ করে।


২২ ডিএলআর ৫২৭, কিতাব আলী বনাব রাষ্ট্র মামলায় বলা হয়েছে যে, দোষ স্বীকার ২৪,২৫,২৬ ধারা অনুসারে অগ্রহণীয় তবে যখন স্বীকারের প্রেক্ষিতে উদঘাটিত করা হয়। তা গ্রহণীয় । ৯ ডিএলআর (ডব্লিউপি) ৫, খান বনাম রাষ্ট্র মামলায় বলা হয়েছে পুলিশ। অফিসারের নিকট দোষ স্বীকৃতির প্রেক্ষিতে কোন কিছু উদ্ধার হয়ে থাকলে তা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণীয় ।





স্বীকৃতি ও স্বীকারোক্তির মধ্যে পার্থক্য

[Distinction between admission and confession] 


স্বীকৃতি

[admission]

স্বীকারােক্তি

[confession]

১.সাক্ষ্য আইনের ১৭ ধারায় স্বীকৃতি সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে।

১.কিন্তু স্বীকারােক্তির সরাসরি কোন সংজ্ঞা সাক্ষ্য আইনে প্রদান করা হয়নি।  সাক্ষ্য আইনের ২৪ ধারায়  স্বীকারোক্তির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

২. মামলার কোন পক্ষ বা পক্ষের।প্রতিনিধি বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির লিখিত বা মৌখিক বিবৃতি যা আদালতে বিচার্য বা প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্তের সূচনা করে তাকে স্বীকৃতি বলে।

২. অভিযুক্ত ব্যক্তি মামলায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগ সম্পর্কে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে কোন মৌখিক বা লিখিত বিবৃতি প্রদান করলে তাকে। স্বীকারােক্তি বলা হয়।

৩.স্বীকৃতি সাধারণত দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হয়।

৩. কিন্তু স্বীকারােক্তি সাধারণত ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হয়।

৪. আদালতে স্বীকৃতি ব্যক্তির পক্ষ্যে কাজ করে থাকে।

৪.স্বীকারােক্তি ব্যক্তির বিপক্ষে কাজ করে।

৫. স্বীকৃতি আদালতকে বিচার্য বিষয় বা প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহায়তা করে।

৫. স্বীকারােক্তি সর্বদা গ্রহণযােগ্য নাও হতে পারে

৬. ব্যক্তি নিজে বা অন্য কেউ তার পক্ষে স্বীকৃতি প্রদান করতে পারেন

৬. স্বীকারােক্তি সর্বদা ব্যক্তি নিজেই করতে হয়।

৭. ইহা স্বেচ্ছায় প্রদত্ত হবে কিনা সে সম্পর্কে কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

৭. ইহা অবশ্যই ব্যক্তি কর্তৃক স্বেচ্ছায় প্রদত্ত হবে।

৮. সকল স্বীকৃতিসমূহ স্বীকারােক্তি বলে বিবেচিত হয় ।

৮. সকল স্বীকারােক্তি স্বীকৃতি নাও হতে পারে।

৯. স্বীকৃতিদাতা কর্তৃক না হয়ে অন্য কারাে সম্পর্কে হতে পারে।

৯. স্বীকারােক্তি অবশ্যই ব্যক্তি সম্পর্কে হয়ে থাকে।




Post a Comment

0 Comments