সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

স্বীকারােক্তি বলতে কি বুঝেন? এটি কি এককভাবে আসামীকে শাস্তি প্রদানের ভিত্তি হতে পারে? Can a confession be the basis for convicting the accused?

স্বীকারােক্তি বলতে কি বুঝেন? এটি কি এককভাবে আসামীকে শাস্তি প্রদানের ভিত্তি হতে পারে? Can a confession be the basis for convicting the accused?



 

প্রশ্ন: স্বীকারােক্তি বলতে কি বুঝেন? স্বীকারােক্তি, তা জুডিশিয়াল বা এক্সট্রা জুডিশিয়াল, প্রত্যাহারকৃত বা অপ্রত্যাহারকৃত যাই হােক না কেন, এটি কি এককভাবে আসামীকে শাস্তি প্রদানের ভিত্তি হতে পারে?


স্বীকারোক্তি কি আসামিকে শাস্তি প্রদানের একমাত্র ভিত্তি হতে পারে? যদি হয়, তবে কখন? পুলিশের সামনে কৃত স্বীকারোক্তি সাক্ষ্য গ্রহণ যোগ্য? যদি হয়, কতদূর পর্যন্ত এবং কোন পরিস্থিতিতে? 

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারা মতে পুলিশের কাছে বিবৃতি এবং ১৬৪ ধারা মতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বিবৃতির সাক্ষ্য মূল্য কি? মামলার বাদী পক্ষ  ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় বিবৃতি মামলার পক্ষে ব্যবহার করতে পারে কি? কখন একজন আসামী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি করে? একজন আসামীকে কি শুধু স্বীকারোক্তির জন্য বা সহযোগীর বিবৃতির জন্য দোষী সাব্যস্ত করা যায়? আলোচনা করুন। 


স্বীকারোক্তি বা দোষ স্বীকার(Confession) ফৌজদারী মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়। এটি মূলত কোন অপরাধের প্রত্যক্ষ বা স্পষ্ট বিবৃতি।  ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের  ধারা ২৪ থেকে ৩০ ধারা বিশ্লেষণ করলে স্বীকারোক্তির যে সংজ্ঞা ফুটে ওঠে তা মূলত অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক নিজের দোষ স্বীকার করে বক্তব্য দেওয়াকে বুঝানো হয়। তবে স্বীকারোক্তি বা দোষ স্বীকার(Confession)কে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে হলে অভিযুক্ত কর্তৃক বক্তব্যটি সাক্ষ্য আইনের শর্তসমূহ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৩,১৬৪ ও ৫৫৩ ধারার যে বিধান আছে তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে, তবেই সেটা যথাযথ গ্রহণযোগ্য স্বীকারোক্তি বলে গণ্য করা হবে। এক্ষেত্রে স্বীকারোক্তি  প্রদানকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে উক্ত স্বীকারোক্তি প্রমাণ(Evidence) হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। 

স্বীকারােক্তি

What is confession?


স্বীকারোক্তি (Confession) বলতে কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক তার বিরুদ্ধে আনীত  অপরাধের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এমন এক স্বীকৃতি (Admission) বা বক্তব্য বা ইঙ্গিতবহ বিবৃতি প্রদান করাকে বুঝায় যে বিবৃতির মাধ্যমে স্বেচ্ছায় একটি অপরাধ স্বীকার করে নেওয়া হয়। এরূপ স্বীকারােক্তির দ্বারা অপরাধটি পুরাপুরিভাবে কিংবা তার সারমর্ম স্বীকার করা যেতে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র অপরাধকে স্বীকার করে অপরাধের সঙ্গে সংযােগ সাধন অস্বীকার করলে তাকে স্বীকারােক্তি বলা যাবে না।


এ প্রসঙ্গে Sir James Stephen তাঁর Digest "Law of Evidence" গ্রন্থে বলেন যে, স্বীকারোক্তি হলো যে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে যেকোনো সময় সে ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত স্বীকৃতি  যাতে  যা বিবৃত হয় বা  যে ইঙ্গিত  প্রদত্ত হয়, তা হতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, তিনি কথিত অপরাধ সংঘটন করেছেন।

Professor Wigmore বলেন, স্বীকারোক্তি হলো কোন ফৌজদারী   মোকদ্দমায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজের যে অভিযোগ আনা হয়েছে সে বিষয়ে অথবা এর কোনো গুরুত্বপূর্ণ অংশের বিষয়ে পরিষ্কার ভাষায় অভিযুক্ত ব্যক্তির উক্ত অপরাধের সত্যতা স্বীকার।


Pakala Narayan Swami Vs. King Emperor reported in AIR 2939 PC 47(52)  মামলায় Lord Atkin বলেছেন যে, দোষ স্বীকারমূলক বক্তব্য অবশ্যই দোষ স্বীকার করবে অথবা যে সকল ঘটনা অপরাধ সংঘটন করে সেই সকল বিষয় স্বীকার করবে। তবে  দোষ স্বীকারমূলক বক্তব্যে দোষ স্বীকার আত্মরক্ষামূলক বক্তব্য দিলে তাদের শিকার মূলক বক্তব্য বলে গণ্য হবে না। কোন বক্তব্য অস্বীকার কিনা তা নির্ধারণ করতে সমস্ত বক্তব্যটি একসাথে পড়তে  হবে।


Queen-Empress v. Babu Lal (1884) 6 All 509 মামলায় বলা হয়েছে যে, দোষ স্বীকার বা স্বীকারোক্তি হলো  ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত কোন স্বীকৃতি যা প্রকাশ করে যে উক্ত ব্যক্তি অপরাধটি সংঘটন করেছে।


উল্লেখ্য, কোন স্বীকারােক্তি  গ্রহণযোগ্য হতে হলে সেক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইনের ২৪ হতে ৩০ ধারায় বর্ণিত শর্তসমূহ পূরণ করতে হয়। কাজেই স্বীকারােক্তি প্রধানত ফৌজদারী বিষয়ক মামলাসমূহের ক্ষেত্রেই বিশেষভাবে প্রযােজ্য হয়ে থাকে। আরও যদি স্পষ্ট করে বলা যায়, দোষ  স্বীকারোক্তি ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং শুধু স্বীকারোক্তি দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে থাকে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে  নিজেকে জড়িয়ে স্বেচ্ছায় সুস্থ মস্তিষ্কে কোন প্রকার ভয়-ভীতি, প্রতিশ্রুতিতে প্রভাবিত না হয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার বিধান অনুযায়ী কোনো প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের যে বিবৃতি প্রদান করে থাকে তাই মূলত স্বীকারোক্তি। এই স্বীকারোক্তি দুই ধরনের হতে পারে। একটি ভালো বিচারিক স্বীকারোক্তি বা যুদিশিয়াল কনফেশন; এবং অন্যটি বিচারবহির্ভূত স্বীকারোক্তি বা এক্সট্রা যুদিশিয়াল কনফেশন। এখানে এ দুটো বিষয় একটু আলোচনা করা প্রয়োজন। কেননা এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য এর সংজ্ঞা জানা থাকা দরকার।


আসামি যখন তার দোষ বা অপরাধ স্বীকারোক্তি ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতের নিকট প্রদান করে তখন তাকে বিচারক স্বীকারোক্তি বা বিচারিক অপরাধ  স্বীকারোক্তি বলা হয়।


যে দোষ স্বীকারমূলক বক্তব্য ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতের নিকট প্রদান করে না কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অজ্ঞাতে অন্য কোনো ব্যক্তির নিকট প্রদান করে তবে তাকে বিচারবহির্ভূত অপরাধ স্বীকারোক্তি বলা হয়।




একটি স্বীকারোক্তি তখনই প্রাসঙ্গিক হবে-

  • যদি এই ধরনের কোনো প্রলোভন, হুমকি বা প্রতিশ্রুতি দ্বারা সৃষ্ট ছাপ সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলার পরে করা হয়;
  • যদি এটি একজন পুলিশ অফিসারকে না করা হয়; বা
  • যদি অভিযুক্ত কোন পুলিশ অফিসারের হেফাজতে থাকা অবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে এটি করা হয়।[Khalil @ Khalilur Rahman and others Vs. State, 2008, 37 CLC (HCD) [6743]








স্বীকারােক্তি কি আসামীকে শাস্তি প্রদানের ভিত্তি হতে পারে ?


সাক্ষ্য আইনের ২৪ থেকে ৩০ ধারা পর্যন্ত স্বীকারোক্তির যে আলোচনা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করলে এটা পাওয়া যায় যে, সাক্ষ্য হিসেবে স্বীকারোক্তির প্রাসঙ্গিকতা কিংবা স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করে শাস্তি  প্রদান করা-এক বিষয়  নয়। কেননা কোন স্বীকারোক্তি সাক্ষ্য হিসেবে প্রাসঙ্গিক হতে পারে কিংবা শাস্তি প্রদানের একমাত্র ভিত্তি নাও হতে পারে। এ প্রসঙ্গে ৪৯ DLR পৃষ্ঠা নম্বর ৪০৩৭ এ বলা আছে যে, কোনো আসামির দোষ স্বীকার করলে তা নিরপেক্ষ সাক্ষী দ্বারা সমর্থিত না হলে উক্ত দোষ স্বীকার এর উপর ভিত্তি করে আসামিকে শাস্তি দেওয়া যায় না।


তবে একথা ঠিক যে, কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অপরাধ যদি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন সাক্ষীর সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত  হয় তবে তাকে শাস্তি প্রদান করা যাবে। একথা সত্য যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ স্বীকার না করলেও অন্তত একজন নির্ভরযােগ্য সাক্ষীর সাক্ষ্যের মাধ্যমে অপরাধীর বিরুদ্ধে আনীত অপরাধ প্রমাণ না করা পর্যন্ত শুধুমাত্র স্বীকারােক্তি, তা জুডিশিয়াল বা এক্সট্রা জুডিশিয়াল, প্রত্যাহারকৃত বা অপ্রত্যাহারকৃত যাই হােক না কেন তার উপর ভিত্তি করে আসামীকে শাস্তি প্রদানের ভিত্তি হতে পারে কিনা সে বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। 


এককভাবে শাস্তি প্রদানের পক্ষে State  vs. Suman Saha; 61 [2009] HCD 35 মামলায় হাইকোর্ট এই অভিমত দিয়েছেন যে, দোষ স্বীকারমূলক বক্তব্য, যদিও আংশিক সত্য বা মিথ্যা হোক, অন্য কথায় অপরাধের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করে না, সেই স্বীকারোক্তি যে প্রদান করেছেন তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য(Evidence) হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং এই ধরনের স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করে দণ্ড বহাল রাখতে বাধা নেই। 


আবার এককভাবে আসামিকে শাস্তি প্রদানের বিপক্ষে রায় দিয়েছেন এমন মামলার উদাহরণ টানা যায়। রাষ্ট্র বনাম শফিক;৪৩  ডি এল আর( এডি) ২০৩ মামলায় বলা হয়েছে যে, ফৌজদারি কার্যবিধির 164 ধারায় লিপিবদ্ধ কৃত বিবৃতি কোন  চূড়ান্ত সাক্ষ্য নয়। সুতরাং কোন বিষয়ের সত্যতা নির্ধারণের জন্য এটা কোন চূড়ান্ত সাক্ষ্য হতে পারে না। অন্য কথায় বলা যায় ফৌজদারি কার্যবিধির 164 ধারায় লিপিবদ্ধ কৃত বিবৃতি কোন দন্ড প্রদান এর একক ভিত্তি হতে পারে না। অভিযুক্ত ব্যক্তি যে সাক্ষ্য দিয়েছে তা অনুসরণ করানোর জন্য এই বিবৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে। 


 এ প্রসঙ্গে 19 BLD (HCD) 419; রাষ্ট্র বনাম হাসান আলী মামলায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, It is unsafe to base conviction of an accused on his extra judicial confession alone.


14 BLD (HCD) 477; দুলা মিয়া ওরফে নুরুল ইসলাম এবং অন্যান্য বনাম রাষ্ট্র মামলায় বলা হয়েছে যে, A retracted confession requires independent and reliable corroboration before it is accepted and acted upon.


রাষ্ট্র বনাম মােসলেম মামলায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, “স্বীকারােক্তি আসামীর শাস্তি প্রদানের ভিত্তি হতে পারে যদি তা সত্য ও স্বেচ্ছায় প্রদত্ত এবং অন্যান্য সাক্ষী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়”।


উপরের সিদ্ধান্তের আলােকে বলা যায় যে, আসামীকে শাস্তি প্রদান করতে হলে শুধুমাত্র আসামীর স্বীকারােক্তির উপর ভিত্তি করে তাকে শাস্তি প্রদান করা উচিত নয় বরং শাস্তি প্রদান করতে হলে আসামীর প্রদত্ত স্বীকারােক্তি অন্যান্য সাক্ষীর দ্বারা সমর্থিত হতে হবে। 


অন্যদিকে 55 DLR 137: জাকির হােসেন বনাম রাষ্ট্র মামলায় বলা হয়েছে যে, “পরবর্তীতে প্রত্যাহার করা হলেও এ প্রত্যাহারকৃত স্বীকারােক্তি আসামীর শাস্তি প্রদানের ভিত্তি হতে পারে যদি তা সত্য এবং স্বেচ্ছায় প্রদত্ত হয়।


কোন আসামী দোষ স্বীকার করলে তা নিরপেক্ষ সাক্ষী দ্বারা সমর্থিত না হলে উক্ত দোষ স্বীকারের উপর ভিত্তি করে আসামীকে শাস্তি দেওয়া যায় না (49 DLR 407)।


তবে দোষস্বীকার যদি স্বেচ্ছায় প্রদত্ত হয় ও দোষ স্বীকারের বিষয় বস্তু ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত হয় সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র স্বীকারােক্তির উপর ভিত্তি করে আসামীকে শাস্তি প্রদান করা যায়। এরূপ ক্ষেত্রে অন্য কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য না থাকলেও শাস্তি প্রদানে আইনগত কোন বাধা নাই। 


এ প্রসংগে 48 DLR 58৪ তে বর্ণিত সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। উক্ত সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারার বিধান মােতাবেক প্রদত্ত স্বীকারােক্তির উপর নির্ভরশীল হতে হলে তা কেবলমাত্র স্বেচ্ছায় প্রদত্ত হলে চলবে না। অবশ্য সত্য হতে হবে। স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি স্বেচ্ছায় প্রদত্ত ও সত্য হলে তা গ্রহণযােগ্য।


অতএব বলা যায় যে, স্বীকারােক্তি সত্য ও স্বেচ্ছায় প্রদত্ত না হলে শুধুমাত্র স্বীকারােক্তি, জুডিশিয়াল বা এক্সট্রা জুডিশিয়াল, প্রত্যাহারকৃত বা অপ্রত্যাহারকৃত যাই হােক না কেন তা এককভাবে আসামীকে শাস্তি প্রদানের ভিত্তি হতে পারে না।


Post a Comment

0 Comments