সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

দন্ডবিধি আইন ১৮৬০ কিভাবে ধর্ষণকে সংজ্ঞায়িত করে? ধর্ষণের উপাদান কি কি? ধর্ষণের শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করুন। ধর্ষণ ও ব্যভিচারের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করুন।


দন্ডবিধি আইন ১৮৬০ কিভাবে ধর্ষণকে  সংজ্ঞায়িত করে? ধর্ষণের  উপাদান কি কি? ধর্ষণের শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করুন। ধর্ষণ ও ব্যভিচারের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করুন।


How does  Penal Code-1860 define Rape? What are the elements of Rape? Discuss about  the punishment of rape. Distinguish between rape and adultery.

ধর্ষণ [Rape] 

যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা তাঁর অনুমতি বা সম্মতি ব্যতিরেকে কিংবা মৃত্যু বা আঘাতের ভয় দেখিয়ে সম্মতি নিয়ে অথবা যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সম্মতির জন্য প্রতারণার মাধ্যমে নারীকে বুঝিয়েছে যে, সে তার স্ত্রী,১৪ বছরের কম বয়স্ক নারীর সম্মতি নিয়ে বা সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে/ যৌন সঙ্গম করলে তা ধর্ষণ বলে গণ্য করা হয়। [দন্ডবিধি ৩৭৫ ধারা]

উল্লেখ্য, বিবাহিত জীবনেও যৌন সঙ্গমে স্ত্রীর প্রত্যক্ষ আগ্রহের অভাব থাকা সত্ত্বেও সঙ্গম/ ঘুমন্ত নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন কিংবা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন/ পাগল নারীর সাথে যৌন সঙ্গম করাও  ধর্ষণের আওতায় পড়বে। তাছাড়া, কোন ব্যক্তি মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে স্ত্রী বলে আশ্বস্ত করে এবং স্বামী হিসেবে  উক্ত নারীর সামরিক সম্মতি নিয়েও যৌন-সহবাস করলেও তা  ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে। ১৯৬১ (১)  ক্রিএলজে ৬৮৯ মামলায় বলা হয়েছে যে, ধর্ষণ সংঘটনের জন্য বীর্যপাতের জন্য পূর্ণাঙ্গ লিঙ্গ অনুপ্রবেশ  বা সতীচ্ছেদ ছিন্ন করার আবশ্যক হয় না। Vulva অথবা Pudendum এর Labia Majora মধ্যে বীর্যপাত করে অথবা বীর্যপাত না করে লিঙ্গ অনুপ্রবেশ করলেই অথবা অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা করলেই তা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হবে। 

মোটকথা, কোন নারীর সম্মতি ছাড়া বা নারীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কিংবা কোনো প্রতারণার মাধ্যমে সম্মতিপূর্বক যৌন সঙ্গমের হলো ধর্ষণ। ধর্ষণ এমন এক ধরনের যৌন আক্রমণ যা মূলত পুরুষের পুরুষত্বের কারণে সমাজে দেখা যায়।

ব্যতিক্রম: কোন পুরুষ কর্তৃক তাঁর স্ত্রীর সাথে যৌন সহবাস, উক্ত স্ত্রীর বয়স ১৩ বছরের কম না হলে তা নারী ধর্ষণ বলে গণ্য করা যাবে না।

ধর্ষণের  উপাদান [Elements of Rape]

দন্ডবিধি-১৮৬০এর  ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের পাঁচটি উপাদান দেখতে পাওয়া যায়। নিচে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

১। অভিযুক্ত ব্যক্তিটির কোন নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সহবাস বা যৌন সম্পর্ক স্থাপন।

২। নারীর সম্মতি বিহীন যৌনসঙ্গম। 

৩। মৃত্যু বা আঘাতের ভয় দেখিয়ে কোন নারীর সম্মতি আদায়পূর্বক  যৌনসঙ্গম।

৪। কোন নারীর সম্মতি নিয়ে যৌনসঙ্গম। এখানে উল্লেখ্য যে, তার (নারীর) সম্মতিক্রমে, যে ক্ষেত্রে ব্যক্তিটি জানে যে, তুমি তোমার স্বামীর নন এবং  তিনি(নারী) এই বিশ্বাসে সম্মতি দান করে যে, তিনি (পুরুষটি)  এমন কোন ব্যক্তি যার সাথে তিনি  আইনানুগভাবে বিবাহিত অথবা তিনি নিজেকে তার সাথে আইনানুগভাবে বিবাহিত বলে বিশ্বাস করেন।

৫। ১৪ বছরের কম বয়স্ক নারীর সম্মতি নিয়ে কিংবা সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা।

 তাছাড়া উক্ত ধারা পর্যালোচনান্তে ধর্ষণের আরো কিছু উপাদান পাওয়া যায়। যেমন- 

 ১।  অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে  ভিকটিম অর্থাৎ নারীদের কোন বৈবাহিক সম্পর্ক থাকবে না। 

২। অভিযুক্ত ব্যক্তি কোন নারীর সাথে যৌন সঙ্গম করবে। যোনিপথে লিঙ্গ অনুপ্রবেশ করলে বা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলেই তা ধর্ষণ  বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে বীর্যপাত বা সতীচ্ছেদ ছিন্ন করার আবশ্যকতা নেই।

 

ধর্ষণের শাস্তি [Punishment for Rape]

দন্ডবিধির ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের শাস্তি নিম্নোক্তভাবে দেওয়ার বিধান আছে । আসুন বিধানগুলো দেখিঃ

 ১। যে ব্যক্তি  ধর্ষণ করে, সেক্ষেত্রে  ভিকটিম  নারী ঐ ব্যক্তির স্ত্রী না হলে, সেই ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো বর্ণনা ও মেয়াদের কারাদণ্ড এমনকি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা যাবে। [ভিকটিম নারী অভিযুক্ত ব্যক্তির স্ত্রী না হলে]

 ২। ভিকটিম নারী অভিযুক্ত ব্যক্তির স্ত্রী হলে এবং উক্ত স্ত্রীর বয়স ১২ বছরের কম হলে, সেক্ষেত্রে ধর্ষণের শাস্তি ০২ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদ ও বর্ণনার কারাদণ্ড  বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। [ভিকটিম নারী অভিযুক্ত ব্যক্তির স্ত্রী হলে]

 এ ধরনের ধর্ষণকে বৈবাহিক ধর্ষণ [Marital Rape] বলা যায়। যদিও এ ধরনের অপরাধ খুব একটা দেখা যায় না। কেননা, আমাদের দেশের মেয়েদের বিবাহের বয়স নূন্যতম ১৮ বছর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রীর সাথে জোরপূর্বক যৌনসঙ্গমের মতো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশেই এমনটা দেখা যায় যে, স্ত্রী  যদি কোন কারণে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে অস্বীকৃতি  জানানো সত্ত্বেও স্বামী যদি জোরপূর্বক যৌনসঙ্গম করে তবে এটাকে ধর্ষণের পর্যায়ে ফেলছে। ভাইরে আপনারা তো বুঝতেই পারচ্ছেন যে, বিবাহিত লাইফে [Conjugal life] স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে  সম্পর্ক  ভালো না থাকলেই এহেন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

 ধর্ষণ ও ব্যভিচারের মধ্যে পার্থক্য [ Difference between Rape and Adultery]

পার্থক্যসমূহ

ধর্ষণ [Rape]

ব্যভিচার [Adultery]

টার্মগত

ধর্ষণের ইংরেজি প্রতিশব্দ Rape যা ল্যাটিন শব্দ Rapere থেকে এসেছে।

ব্যভিচারের ইংরেজি প্রতিশব্দ Adultery যা ল্যাটিন Adulterāre শব্দ থেকে এসেছে।

ধারাগত 

দন্ডবিধির ৩৭৫ ও ৩৭৬ ধারাতে যথাক্রমে ধর্ষণ সংজ্ঞা ও ধর্ষণের শাস্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

দন্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় ব্যভিচারের সংজ্ঞা ও শাস্তির বিধান বর্ণিত হয়েছে।

 সংজ্ঞাগত 

কোন নারীর  সম্মতি ছাড়া বা  নারীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কিংবা কোনো প্রতারণার মাধ্যমে সম্মতিপূর্বক   যৌন সঙ্গমের  হলো ধর্ষণ।

যদি কোন নারী বা পুরুষ তাঁর স্বামী বা স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া অন্য কারো সাথে বিবাহ বহির্ভূত যৌনতাই [যা ধর্ষণ নয়] হলো ব্যভিচার।

সম্মতিগত 

নারী ধর্ষণের ক্ষেত্রে সাধারণত নারীর সম্মতি থাকে না, তবে সম্মতি থাকলেও তা ভয়-ভীতি দেখিয়ে আদায় করা হয়।

ব্যভিচারের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত নারী-পুরুষ উভয়েই সম্মতির ভিত্তিতেই এ কাজ সংঘটিত হয়ে থাকে।

প্রকৃতিগত 

ধর্ষণ  বিবাহিত বা অবিবাহিত নারীর ক্ষেত্রে   সংঘটিত হতে পারে।

ব্যভিচার শুধুমাত্র বিবাহিত নারী- পুরুষের ক্ষেত্রে সংঘটিত হয়। অর্থাৎ ব্যভিচারের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত নারী অবশ্যই অন্যের স্ত্রী হতে হবে।

বৈবাহিক অবস্থা

দন্ডবিধি অনুযায়ী বিবাহিত লাইফেও ১৩ বছরের কম বয়স্ক স্ত্রীর  সাথে যৌন সঙ্গম ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে।

বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সংঘটিত যৌন সঙ্গম ব্যভিচারের পর্যায়ে পড়ে না।

জামিনগত

সাধারণত Rape [ধর্ষণ] জামিনযোগ্য একটি অপরাধ। তবে আঘাত বা মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে সম্মতি আদায়পূর্বক ধর্ষণের ক্ষেত্রে জামিন অযোগ্য অপরাধ। 

ব্যভিচার সর্বদা  জামিনযোগ্য একটি অপরাধ।

 শাস্তিগত 

দন্ডবিধি-১৮৬০ অনুযায়ী ধর্ষণের ক্ষেত্রে ভিকটিম নারী যদি অভিযুক্ত ব্যক্তির স্ত্রী না হয়  তবে সেই ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো বর্ণনা ও মেয়াদের কারাদণ্ড এমনকি অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। 

আবার  ভিকটিম নারী যদি অভিযুক্ত ব্যক্তির ১২ বছরের কম  বয়স্ক স্ত্রী হয়, সেক্ষেত্রে ধর্ষণের শাস্তি ০২ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদ ও বর্ণনার কারাদণ্ড  বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।

ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে অভিযুক্ত পুরুষকে অনাধিক ৫ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদ ও বর্ণনার কারাদণ্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যাবে। কিন্তু এ কাজে সহায়তাকারী হিসেবে ঐ নারীকে  শাস্তির আওতায় আনা যাবে না।



Post a Comment

0 Comments