সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

“আদালতের এখতিয়ার” ও “দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা” বলতে কী বোঝায়? আইনের বিধান উল্লেখপূর্বক ব্যাখ্যা দাও। অথবা “এখতিয়ার ও দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা” ব্যাখ্যা করো।


“আদালতের এখতিয়ার” ও “দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা” বলতে কী বোঝায়? আইনের বিধান উল্লেখপূর্বক ব্যাখ্যা দাও।
অথবা
“এখতিয়ার ও দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা” ব্যাখ্যা করো।

“আদালতের এখতিয়ার” ও “দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা” বলতে কী বোঝায়? আইনের বিধান উল্লেখপূর্বক ব্যাখ্যা দাও। অথবা “এখতিয়ার ও দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা” ব্যাখ্যা করো।

এখতিয়ার কি

এখতিয়ার (Jurisdiction) একটি আরবি শব্দ যার আক্ষরিক অর্থ ইচ্ছা/ ইচ্ছা করা/অধিকারক্ষেত্র/ আইনগত ক্ষমতা। অর্থাৎ কোন কাজের প্রতি এখতিয়ার দেয়া মানে ঐ কাজে আপনার ইচ্ছার প্রতিফলন।এখানে আপনি ঐ কাজটি করতেও পারেন ,আবার নাও করতে পারেন। সাধারণভাবে এটিকেই এখতিয়ার বলে।

কিন্তু আইনি পরিভাষায় এখতিয়ার বলতে আদালতের কোন মোকদ্দমা শোনা, নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা ও এক্ষেত্রে বিচারপূর্বক সিদ্ধান্ত দেওয়া এবং বিচারের ক্ষমতা প্রয়োগ করাকে বোঝায়।

এখতিয়ার হলো আদালতে সেই ক্ষমতা যার দ্বারা আদালত তাঁর নিকট যে বিষয় নিয়ে মোকদ্দমা করা হয়েছে সেটা নিষ্পত্তি করতে পারে কিংবা আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য পেশকৃত কোন বিষয় আমলে নিতে পারে।

মূলত, যে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে আদালতের এখতিয়ার আছে বলে গণ্য হবে যদি যে মোকদ্দমা দায়ের করা হয়েছে তা বিচার করতে এবং যে আদেশ প্রার্থনা করা হয়েছে তা মঞ্জুরের এখতিয়ার আদালতের থাকে।

ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আদালত তাঁর এই অধিকার অর্জন করতে পারে বা তাঁর এই অধিকার সীমাবদ্ধও করতে পারেন।

অতএব, এখতিয়ার বিষয়টি বিস্তারিত জানতে আমাদেরকে কোন মোকদ্দমা স্থান বা মূল্য বা কোন বিষয়ের প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যাখ্যা করতে হবে। আসুন নিচে দেওয়ানী আদালত সমূহের এখতিয়ারের প্রকারভেদ দেখিঃ

এখতিয়ারের প্রকারভেদ 


১. আর্থিক এখতিয়ার [Pecuniary Jurisdiction][ধারা-৬]
২. আঞ্চলিক বা স্থানিক এখতিয়ার [ধারা-১৬]
৩. বিষয়বস্তুগত এখতিয়ার [Subjective Jurisdiction][ধারা-৯]

৪. আদি এখতিয়ার [ধারা:১৫-২০]
৫. আপীল এখতিয়ার [ধারা:৯৬-১১২এবং অর্ডার:৪১-৪৫]


১.আর্থিক এখতিয়ার (Pecuniary Jurisdiction)[ধারা-৬]

আপনি একটি মামলা কোন আদালতে দায়ের করবেন তা নির্ভর করে মামলার ধরন (আর্থিক মূল্যমান) ও আদালতগুলোর উপর অর্পিত ক্ষমতার উপর। অর্থাৎ আদালত কি মূল্যমানের বা সর্বোচ্চ টাকার মামলার আমলে নিবেন সেই এখতিয়ার আইন বা রাষ্ট্র তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এবার আসুন দেখে নেওয়া যাক আইনের ধারাঃ


আর্থিক এখতিয়ার (Pecuniary Jurisdiction)[ধারা-৬]

উল্লিখিত আদালতগুলোর মধ্যে কোন আদালতে কি ধরনের মোকদ্দমা প্রাথমিকভাবে দায়ের করা যাবে  সে বিষয়ে দেওয়ানী কার্যবিধির ১৫ ধারায়  উল্লেখ করা  হয়েছে-

আর্থিক এখতিয়ার (Pecuniary Jurisdiction)[ধারা-১৫]; cpc; banglalawshub;


২.  আঞ্চলিক বা স্থানিক এখতিয়ার [Territorial Jurisdiction] [ধারা ১৬-২০]:

কোন সময় সম্পত্তি বিষয়ক [স্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার/ বাটোয়ারা/রেহেন পরিশাধ/স্বত্ব নির্ণয়/ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি] কোন মামলা আদালতে দায়ের করতে গেলে দেখবেন যে,  আপনার সম্পত্তি যে এলাকার সীমারেখার মধ্যে আছে সেই এলাকার আদালতে আপনাকে ঐ মামলাটি করতে হবে। আসুন বিস্তারিত নিচে দেখিঃ

Place of Suing(আঞ্চলিক বা স্থানিক এখতিয়ার [Territorial Jurisdiction] [ধারা ১৬-২০]


৩. বিষয়বস্তুগত এখতিয়ার [Subjective Jurisdiction][ধারা ৯]:

দেওয়ানী আদালতগুলো কোন ধরনের মোকদ্দমার বিচার করতে পারে বা করার এখতিয়ার আছে তা ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আপনি যদি পরিবার সংক্রান্ত কোন জটিলতার আইনি সমাধান চান তবে তার বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন এ সংক্রান্ত বিষয়ে আপনাকে পারিবারিক আদালতেই যেতে হবে। দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ ধারা মোতাবেক, বারিত[বাতিল/নিষিদ্ধ] না হলে দেওয়ানী আদালত সব ধরনের দেওয়ানী মোকদ্দমার যেমন নাগরিকের ব্যক্তিগত অধিকার, বাধ্যবাধকতা সম্পর্কিত মামলা অর্থাৎ সম্পত্তির অধিকার, চুক্তি বহাল রাখা, বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা ইত্যাদি] বিচার কাজ করতে পারবেন। আইনে তা-ই বলা আছে এবং এর এখতিয়ার আরও দেওয়া আছে।

ধারা-৯ নিষেধ না থাকলে আদালত সকল প্রকার দেওয়ানী মামলার বিচার করবেন। (Right to Property or Right to Office)


৪. আদি এখতিয়ার [Original Jurisdiction][ধারা -১৫]

Civil courts Acts-1887 এর ১৮ ধারা ও দেওয়ানী কার্যবিধির ১৫ ধারা মোতাবেক দেওয়ানী আদালতসমূহের আদি এখতিয়ার বা Original Jurisdiction নির্ধারিত হয়। আইনের এসবএখতিয়ার বলে সকল দেওয়ানী আদালত তাদের আদি এখতিয়ারভুক্ত মামলা আমলে নিয়ে বিচার কাজ করে থাকেন এবং রায় প্রদান করে থাকেন। সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট এর ১৮ ধারা মোতাবেক জেলা জজ বা যুগ্ম জেলা জজ এর আদি এখতিয়ার দেওয়ানী কার্যবিধির ১৫ ধারার বিধান অনুযায়ী দেওয়ানী আদালত কর্তৃক আমলযোগ্য সকল মামলায় বিস্তৃত। মামলা গ্রহণের দিক বিবেচনায় দেওয়ানী আদালতের আদি এখতিয়ার ২ প্রকার- মূল মোকাদ্দমা গ্রহণ ও আপীল গ্রহণ। আসুন আইন দুটোতে কি বলা আছে দেখিঃ

আদি এখতিয়ার [Original Jurisdiction][ধারা -১৫]



৫. আপীল এখতিয়ার [Appellate Jurisdiction]

Civil courts Acts-1887 এবং The Code of Civil Procedure, 1908 মোতাবেক জেলা জজ ও হাইকোর্ট বিভাগ তাঁর অধীনস্থ দেওয়ানী আদালতসমূহের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল শুনতে পারেন এবং নিষ্পত্তি করতে পারেন। ধারা:৯৬-১১২এবং অর্ডার:৪১-৪৫তে এ বিষয়ে  এখতিয়ার প্রদান করা হয়েছে। 

তাছাড়া আদালতের আরো কিছু এখতিয়ার রয়েছে।যেমন-

৬.রিভিশন/পুনরীক্ষণ এখতিয়ার 
[Revision Jurisdiction ][ধারা:১১৫]
৭.রিভিউ/পুনঃ বিবেচনা এখতিয়ার [Review Jurisdiction][ধারা:১১৪ এবং অর্ডার ]
৮.রেফারেন্স [ধারা:১১৩]
৯. আদালতের সহজাত ক্ষমতা [ধারা:১৫১]
১০. প্রশাসনিক এখতিয়ার
[Administrative Jurisdiction]

এক নজরে দেওয়ানী আদালতের এখতিয়ারসমূহ



দেওয়ানী প্রকৃতির মামলাঃ

Civil courts Acts-1887 দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দেওয়ানী আদালতসমূহ দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা গ্রহণ ও বিচার নিষ্পত্তি করে থাকেন। তাছাড়া দেওয়ানী মামলাগুলো কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে বিচার করতে হবে তা ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে । এই কার্যবিধির ৯ ধারায় দেওয়ানী মামলাসমূহ দেওয়ানী আদালতগুলি বিচার করবেন সে সম্পর্কে বলা আছে। উত্তর ধারা মতে,যেসব মোকদ্দমা সম্পত্তি বা পদের অধিকার বিষয়ে সেসকল মোকদ্দমা কে দেওয়ানী প্রকৃতির মোকদ্দমা বলা হয় এবং দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা বিচার করার এখতিয়া রদেওয়ানী আদালতের থাকবে। উল্লেখ্য যেসকল মামলা বিচারকার্য গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বারিত হবে সেসকল মামলার বিচারকার্য দেওয়ানী আদালতসমূহ করতে পারবেন না। 

সহজ কথায়,যদি কোন আইন দ্বারা কোন দেওয়ানী মামলার বিচারকার্য করতে বারণ বা নিষেধ করা হয় তবে সে ক্ষেত্রে তা দেওয়ানী আদালত বিচার করতে পারবেন না। এ প্রসঙ্গে Vanatan Muthuraja VS ramalingam (1997) NCC , পৃ. ১৪৩ , অনু. ৩ তে ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট উল্লেখ করেন “দেওয়ানী কার্যবিধির অধীনে যে সকল মামলা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা থাকবে সেসকল মামলা ছাড়া সকল দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা অবশ্যই দেওয়ানী আদালতসমূহ বিচারকার্য সম্পাদন করার এখতিয়ার রাখেন।”

দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা সম্পর্কে উক্ত ধারার ব্যাখ্যাতে বলা হয়েছে যে, সম্পত্তি বা পদের অধিকার সম্পর্কে যেসকল মামলা উত্থাপিত হয় সেসকল মামলাই দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা বলে বিবেচিত হবে। যেমন, সম্পত্তির দখল,মালিকানা সংক্রান্ত মোকদ্দমা, ঘোষণামূলক মোকদ্দমা, ভরণপোষণের মোকদ্দমা, অভিভাবকত্ব বা পিতৃত্ব নির্ধারণের জন্য মামলা ইত্যাদি দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা। তাছাড়াও কোন চু্ক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন করা বা ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মোকদ্দমাগুলোও দেওয়ানী প্রকৃতির মোকদ্দমা।

আবার কোন সরকারি-বেসরকারি বা অন্য যেকোন ধরণের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীদের পদ সংক্রান্ত যেকোনো মামলা দেওয়ানী প্রকৃতির মোকদ্দমা বলে গণ্য হবে । এখানে বলে রাখা ভালো যে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানসমূহের কোন পদাধিকারী ব্যক্তির পদের বৈধতা বা অপসারণ বা অবসর সংক্রান্ত যেকোন মোকদ্দমার নিষ্পত্তির জন্য গ্রহণ ও বিচার করতে পারেন দেওয়ানী আদালত। তবে কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণভাবে  ধর্মীয় রীতিনীতি বা উপজাতির বিষয় যেমন- কোন মসজিদে ইমামের নামাজ পড়ার রীতি বা কোন মন্দিরের বা উৎসর্গীকৃত সম্পত্তির সেবাইত বা পুরোহিতদের পূজা পরিচালনা সংক্রান্ত কোন মামলা বা সাধারণভাবে রাজনৈতিক সম্পর্কে কোন মোকদ্দমা, বাকস্বাধীনতা সমাবেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে কোন মোকদ্দমা দেওয়ানী আদালত বিচারকার্য সম্পাদন করতে পারবেন না । কিন্তু কোন ওয়াকফের অধীনে পরিচালিত সম্পত্তি সংক্রান্ত যে মামলা তা দেওয়ানী প্রকৃতির বলে বিবেচিত হবে ।

সংক্ষেপে বললে বলা যায় যে, দেওয়ানী আদালত কর্তৃক কোন মামলা বিচার করার এখতিয়ার প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই দুটি শর্ত (মামলাটি অবশ্যই দেওয়ানী প্রকৃতির হতে হবে এবং ব্যক্ত অব্যক্ত যেকোনো মামলাটি আমলে গ্রহণ করতে আদালত আইন দ্বারা বাহিত হবে না।) পূরণ করতে হবে।

******



 







Post a Comment

0 Comments