সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারিত হলে আইনি প্রতিকার (জাভাস্ক্রিপ্ট কোড পাবেন)

অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারিত হলে আইনি প্রতিকার(জাভাস্ক্রিপ্ট কোড পাবেন)

(consumer protection laws for online shopping) 

অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারিত হলে আইনি প্রতিকার(consumer protection laws online shopping)


বর্তমানে অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছেযে, অনলাইনে পণ্য কিনে ৭ থেকে ১২ শতাংশ মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।(online consumer protection)

গবেষণা প্রদিবেদনে দেখা গেছে, পুরুষরাই অনলাইন কেনাকাটায় বেশি প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এরমধ্যে পুরুষ ৭.৩৮ এবং নারী ৩.৬৯ শতাংশ প্রতারিত হচ্ছে। তাই অনেকের মতো আপনিও যদি অনলাইনে পণ্য কিনে প্রতারিত হন তাহলে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণাদি সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের(সংশ্লিষ্ট সাইট বা ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ ) বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। আজকের আলোচনায় এ বিষয়গুলো  নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান  করবো।(facebook online shopping sites, online shop facebook group)


আদালতে মামলা :

অনলাইনে পণ্য বা সেবা কিনে আপনি যদি প্রতারিত হন তাহলে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায়(Cheating and dishonestly inducing deliver of property) আপনি মামলা করতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে যে কাজটি করতে হবে যে তা হলো, যে প্রতিষ্ঠান থেকে অনলাইনে প্রতারিত হয়েছেন তার সংশ্লিষ্ট সাইট নেম এবং কী ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ (রশিদ বা ক্যাশমেমো বা লেনদেনের স্ক্রীনশট) সংগ্রহ করতে হবে।(penal code section 420)

তারপর আপনি থানায় এজাহার দায়ের করে মামলা করতে পারেন অথবা সরাসরি মুখ্য বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট বা (মহানগর এলাকা হলে মুখ্য মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে) আদালতেও মামলা দায়ের করতে পারেন। 

এবার আপনার অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে আদালত দেখবেন এবং অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ পাঠাবেন।

 এক্ষেত্রে আপনার অভিযোগের সত্যতা যদি আদালত আদালতে প্রমাণিত হয় তবে আদালত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় অর্থদণ্ড বা ৭ বছরের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হতে পারে।(Penal Code, 1860)


ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ  :

আবার আপনি অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণার হলে দেশের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তার আইন-২০০৯ এর ধারা ৭৬ (১) অনুযায়ী অভিযোগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে অনলাইনে পণ্য  বা সেবা ক্রয়ের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগসহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্ধারিত ফর্মে লিখিত অভিযোগনামা দাখিল করতে হবে। (the consumers' Right Protection Act, 2009)

এই ফরম আপনি ওয়েবসাইট থেকে অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট (http://dncrp.portal.gov.bd) থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন অথবা ভোক্তা অধিকার ভোক্তা অধিকারের কার্যালয়ে গিয়ে সংগ্রহ করতে পারেন।
 

ওয়েবসাইটে কনটেন্ট চুরি বন্ধ করতে রাইট ক্লিক ডিজেবল (Right Click Disable) করার পদ্ধতি(ডাউনলোড লিংক)


এরপর সকল প্রমাণাদিসহ লিখিত অভিযোগনামা আপনি ইচ্ছে করলে ইমেইলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কার্যালয়ে পাঠাতে পারেন। আবার আপনি পোস্ট অফিসের মাধ্যমেও পাঠাতে পারেন। 

এরপর অভিযোগনামা আমলে নিয়ে অধিদপ্তর দুই পক্ষের শুনানি শেষে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে অর্থদণ্ড প্রদানের আদেশ দিতে পারেন। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে ভোক্তা অধিকারের অধ্যাদেশ অনুযায়ী জরিমানা হিসেবে যে টাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় করা হবে তার ২৫ শতাংশ প্রতারনার শিকার বা ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাকে প্রদান করা হয়ে থাকে। 

ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ এর ৪৪ ধারায় প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অনূর্ধ্ব ১ বছরের  কারাদণ্ড এবং অনধিক ২ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের দণ্ডিত করতে পারেন. 



নিচে অধিদপ্তর অধিদপ্তরের নির্ধারিত অভিযোগ ফরম এর চিত্র দেওয়া হলঃ
ভোক্তা অধিকারে আবেদন ফরম
ভোক্তা অধিকারে আবেদন ফরম



অভিযোগ যেভাবে দায়ের করবেনঃ



সংশ্লিষ্ট পেইজ/গ্রুপ/কোন ওয়েসাইট/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগ অভিযোগ অবশ্যই লিখিত আকারে দাখিল করতে হবে। এক্ষেত্রে অভিযোগকারী তাঁর নাম ঠিকানা(পিতা-মাতার নাম সহ), ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশাও উল্লেখ করতে হবে।


তারপর লিখিত অভিযোগ নামা অধিদপ্তরের ফ্যাক্স/ই-মেইল/ওয়েব সাইট/ বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে পাঠাতে পারেন। আবার ডাক বিভাগের  মাধ্যমেও অভিযোগ পাঠাতে পারেন।


অভিযোগনামা সাথে অবশ্যই পণ্য বা সেবা ক্রয় রশিদ স্ক্রীনশট সংযুক্ত সংযুক্ত থাকতে হবে।



"Cyber Crime Department"এ জানানোঃ


অনলাইনে কেনাকাটা সময় যদি আপনার সাথে প্রতারণা করা হয় তবে সেটি সাইবার ক্রাইম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই আপনি প্রতারিত হলে সরকারের "Cyber Crime Department" কে জানাতে পারেন। তারা পরবর্তীতে আপনার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বর্তমানে সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট এ বিষয়ে খুবই তৎপর রয়েছে।

যেহেতু আমাদের দেশে বিভিন্ন পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে  বিক্রয় আইন-১৯৩০ দ্বারা  নিয়ন্ত্রিত হয়, আপনি ইচ্ছে করলে এই আইনের আওতায় প্রতারণার প্রতিকার পেতে পারেন।

তাছাড়া চুক্তি আইন এর মাধ্যমেও প্রতারণার প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। এ জন্য এ আইনে থাকা ‘ক্যাভিয়াট এম্পটর’ ( ক্রেতা সাবধান নীতি) এর মূল কথা স্বরণ রাখতে হবে। অর্থাৎ  একজন ক্রেতাকেই খেয়াল দিতে হবে। তাই আমরা যারা গ্রাহক বা ভোক্তার তাদেরকেই সঠিক প্রতিষ্ঠান দেখে অনলাইনে কেনাকাটা করার জন্য অনুরোধ করা হল। এক্ষেত্রে আমরা আর একটু দেখতে পারি যে কিভাবে সঠিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা যায়ঃ

১. যারা প্রতারণা করে থাকে তারা প্রায় সময়ই বিখ্যাত বা সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট নকল করে থাকে। খেয়াল করে না দেখলে মনে হবে সেই কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট এটি।

২. এরা কখনো কখনো বানানে বাা ডিজাইন পরিবর্তন করে তাদের ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকে। তাই আপনি আপনার কাংখিত প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইটে ব্রাউজ করার আগে অবশ্যই এর বানান ও ডিজাইনের দিকে খেয়াল দিতে খেয়াল করতে হবে।

৩. মনে রাখা উচিত কোন সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হুটহাট তাদের লোগো ডিজাইন বা সাইটের বানান পরিবর্তন করেন না।

৪. আবার আপনি একটু খেয়াল করে দেখলে আপনি নিজেই বুঝবেন যে কোনটি সঠিক ওয়েবসাইট বা নকল। 

৫. আপনি যখন কোন ওয়েব অ্যাড্রেস-এ ঢুকবেন তখন যদি দেখেন যে আপনার ব্রাউজিং ওয়েব অ্যাড্রেস-এওয়েব এড্রেসে http এর সঙ্গে s না থাকলে অর্থাৎ https নেই বা ওয়েবসাইটটি কোন র‍্যানডম নাম্বার রয়েছে তখনি বুঝবেন যেটি ফেইক একটি ওয়েবসাইট। এরা প্রতারণার জন্য ফাঁদ পেতে আছে।


প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়


১. ট্রাস্টেড সাইট গ্রুপ বা পেজ ছাড়া কেনাকাটা করা উচিত নয়।

২. অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে আগে পণ্য পরে টাকা অর্থাৎ ক্যাশ অন ডেলিভারি নিতে পারেন।

৩. আবার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান রিটার্ন পলিসি না থাকলে অর্ডার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

৪. কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য গ্রহণ করার সময়  ডেলিভারি ম্যান এর সামনেই পণ্য চেক করে নেওয়া  উচিত।

৫. আবার ফেসবুক পেজ থেকে পণ্য কেনার আগে অবশ্যই সে পেজের রিভিউ পড়ে দেখা উচিত.।আবার রিভিউগুলো ফেক কি না সেটাও যাচাই করে দেখা উচিত।

৬. চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ না হয় বাস্তবতার নিরিখে পণ্যের দাম যাচাই করে অফার গ্রহণ করুন যা আসলেই বর্তমান সময়ের সাথে এই দামে দিতে পারে কিনা তা বিবেচনা করা একজন ভোক্তা হিসেবে  আপনার  জানা প্রয়োজন।

৭. আর যদি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আপনি প্রতারিত হয়ে থাকেন তবে সাথে সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিন। ধন্যবাদ.... 








Post a Comment

0 Comments